তিনি যে খোদ পুলিশ স্টেশনের সামনেই তাঁর স্ত্রীকে আক্রমণ করছেন, সেটা যেন তাঁর কাছে কোনও ব্যাপারই ছিল না। হৌসাবাঈ পাটিলের মাতাল স্বামী তাঁকে নির্দয়ের মতো পেটাতে শুরু করলেন। স্মৃতির পরত সরিয়ে হৌসাবাঈ বললেন, “মারের চোটে আমার পিঠটা টনটন করছিল। এসব ঘটছিল ভবানী নগরের [সাংলী জেলার] ছোট্ট পুলিশ স্টেশনের সামনেই।” কিন্তু সেইসময় থানায় চারজন পুলিশের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র দু’জন। “বাকি দু’জন মধ্যাহ্ন ভোজন সারতে বেরিয়েছিলেন।” তারপর তাঁর উন্মত্ত স্বামী “একটা বড় পাথর তুলে নিলেন। ‘আমি এই পাথর দিয়েই তোকে মেরে ফেলব’, বলে তিনি গর্জন করছিলেন।”

এই কাণ্ডকারখানা দেখে থানার ভেতর থেকে দু’জন পুলিশ তড়িঘড়ি ছুটে এলেন। “তাঁরা আমাদের ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা করছিলেন।” হৌসাবাঈয়ের দাদা - যিনি সেসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন – তাঁকে হৌসাবাঈ বলছিলেন যে তিনি নিজে এইরকম অত্যাচারী স্বামীর বাড়িতে আর ফিরতে চান না। “বললাম আমি যাবো না, আমি কিছুতেই যাবো না। আমি এখানেই থাকবো, আপনি আমাকে আপনার বাড়ির পাশে মাথা গোঁজার জন্য একটা ছোট্ট জায়গা দিন। স্বামীর সঙ্গে তার বাড়িতে গেলে নির্ঘাত মরব, তার পরিবর্তে, আমি এখানেই থাকব এবং যেভাবে পারি বেঁচে থাকব... আমি তার আঘাত আর সইতে চাই না।” দাদা অবশ্য বোনের এই কাতর প্রার্থনা কানে তোলেন নি।

পুলিশ এই দম্পতিকে দীর্ঘক্ষণ অনেক পরামর্শ দিয়ে বুঝিয়েসুঝিয়ে, অবশেষে, সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে একটি ট্রেনে তুলে দিলেন। “তাঁরা এমনকি আমাদের টিকিটটাও কেটে আমার হাতে দিয়ে দিলেন। তাঁরা আমার স্বামীকে বলেছিলেন – স্ত্রী তোমার সঙ্গে থাকুক এইটা যদি চাও, তাহলে তার সঙ্গে ভালো আচরণ করো, তার যত্নআত্তি করো। ঝুটঝামেলা কোরো না।”

ইতিমধ্যে, হৌসাবাঈয়ের কমরেডরা থানা লুঠ করে সেখানে সাকুল্যে যে চারটি রাইফেল ছিল, তা তুলে নিয়েছেন; এইকারণেই তো তিনি, তাঁর জাল ‘স্বামী’ এবং ‘দাদা’ মিলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য আক্ষরিক অর্থেই এই মর্মান্তিক নাটকটি মঞ্চস্থ করেছিলেন। সেটা ছিল ১৯৪৭ সাল, তাঁর বয়স তখন ১৭, তিন বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়ে গেছে এবং তখন তিনি শিশুপুত্র সুভাষের জননী। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে নানান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য হৌসাবাঈ ছোট্ট সুভাষকে তার এক মাসির কাছে রেখে আসতেন। আজ প্রায় ৭৪ বছর পরেও তিনি জাল স্বামীর উপর যারপরনাই বিরক্ত, এমন জোরে তিনি হৌসাবাঈকে পিটিয়েছিলেন যে তাঁদের কলহ একেবারে আসল ঠেকছিল! তাঁর বয়স এখন ৯১, মহারাষ্ট্রের সাংলী জেলার ভিটা গ্রামে বসে তিনি আমাদের গল্পটি বলছেন। “আমার চোখ আর কান এখন [এই বয়সে] একটা বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবুও আমি সবকিছু নিজের মুখেই তোমাদের বলব।”

ভিডিও দেখুন: অসীম সাহসী স্বাধীনতা সংগ্রামী হৌসাতাঈ নিজের জীবনের কথা বলছেন

‘বাক্সের উপর কিছুতেই ঘুমিয়ে পড়া যাবে না, বাক্সটাকে ডুবে যেতে দেওয়াও চলবে না। আমি দিব্যি ভালো সাঁতার কাটতে পারি, কিন্তু এ তো একটা বহতা নদী। আর মান্ডোভী মোটেই কোনো ছোটো নদী নয়’

হৌসাবাঈ পাটিল এই দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। তিনি এবং এই নাটকে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য কুশীলবরা ছিলেন বিপ্লবী তুফান সেনার (ঝঞ্ঝা বাহিনী বা টাইফুন বাহিনী) সদস্য। ১৯৪৩ সালে মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে প্রতি সরকার বা সমান্তরাল আঞ্চলিক, স্বাধীন, আন্ডারগ্রাউন্ড সরকার স্থাপিত হয়েছিল, এই তুফান সেনা ছিল সেই প্রতি সরকারের সশস্ত্র বাহিনী। কুন্ডল গ্রামের প্রশাসনিক ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্র থেকে এই প্রতি সরকার প্রায় ৬০০ (বা তারও বেশি) গ্রামকে নিয়ন্ত্রণ করত। হৌসাবাঈয়ের পিতা ছিলেন এই প্রতি সরকারের প্রধান, কিংবদন্তী বিপ্লবী নানা পাটিল।

১৯৪৩-১৯৪৬ সালে সাতারা জেলায় যে বিপ্লবীদের দলটি ব্রিটিশ সরকারের ট্রেন আক্রমণ, পুলিশের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন এবং সরকারি ডাক বাংলোগুলোতে অগ্নিসংযোগ করে হৌসাবাঈ (তিনি হৌসাতাঈ নামেই অধিক পরিচিত; মারাঠি ভাষায় দিদিকে সম্মান দিয়ে ‘তাঈ’ নামে সম্বোধন করা হয়) ছিলেন সেই দলেরই সদস্য। (সেইসময়ে, এই ডাক বাংলোগুলি পোস্ট অফিস, সরকারি কাজে আসা কর্মকর্তাদের অতিথিনিবাস, আবার, কখনও কখনও, অস্থায়ী আদালত হিসেবেও ব্যবহৃত হত)। ১৯৪৪ সালে তৎকালীন পর্তুগিজ শাসনের অধীনস্থ গোয়ায় এক আন্ডারগ্রাউন্ড কর্মসূচিতে হৌসাবাঈ অংশগ্রহণ করেন, মধ্যরাতে একটি ভাসমান কাঠের বাক্সের উপর চেপে মান্ডোভী নদী পার করেন, তাঁর কমরেডরা পাশে পাশে সাঁতার কেটে নদী পার হয়েছিলেন। অথচ তিনি মনে করেন, “আমি দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে [আমার তুতো ভাই] বাপু লাডের সঙ্গে খুব সামান্যই কিছু করতে পেরেছি। আমি মোটেই বিশাল কিছু বা মহৎ কাজ করি নি।”

তিনি জানাচ্ছেন, “আমার মা মারা যান যখন আমার তিন বছর বয়স, ইতিমধ্যেই আমার বাবা দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এর আগেও, তিনি জ্যোতিবা ফুলে এবং পরবর্তীকালে, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি তালাতি -র [গ্রামের হিসাবরক্ষক] চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে [সম্পূর্ণরূপে] যোগদান করেছিলেন... উদ্দেশ্য ছিল আমাদের নিজস্ব স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা। একইসঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের উপর এমন মারাত্মকভাবে আঘাত হানা যে আমরা তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতে পারি।”

নানা পাটিল ও তাঁর সহকর্মীদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা বের হল। “তাঁদের কাজ এবার আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই চালিয়ে যেতে হল।” নানা পাটিল গ্রামে গ্রামে ঘুরে, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে জনগণকে বিদ্রোহের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। “[তারপর] তিনি আবার লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রায় ৫০০ সহযোদ্ধা এবং তাঁদের সকলের নামেই গ্রেফতারি পরোয়ানা বের হয়েছিল।”

A photograph of Colonel Jagannathrao Bhosle (left) & Krantisingh Veer Nana Patil
Hausabai and her father Nana Patil

বাঁদিকে: ১৯৪০-এর দশকের একটি ছবিতে হৌসাবাঈয়ের পিতা নানা পাটিল ‘আজাদ হিন্দ সেনার’ (নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাহিনী) কর্ণেল জগন্নাথরাও ভোঁসলের (সৈনিকের পোশাকে) সঙ্গে।ডানদিকে: হৌসাবাঈ (ডানদিকে) তাঁর দুই জা যশোদাবাঈ (বাঁদিকে) এবং রাধাবাঈয়ের (কেন্দ্রে) সঙ্গে স্বাধীনতার কিছুকাল পরে তোলা একটি ছবিতে

সরকারের বিরুদ্ধে এই চরম অবাধ্যতার মূল্য তো দিতেই হবে। ইংরেজরা নানা পাটিলের জমিজমা এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল। তিনি যখন আত্মগোপন করে আছেন, তাঁর পরিবার তখন চরম অত্যাচার সহ্য করছিল।

“ইংরেজ সরকার আমাদের বাড়ি বাজেয়াপ্ত করে নিল। তারা যখন আমাদের বাড়িতে এসে হানা দিল, আমরা তখন রান্নায় ব্যস্ত ছিলাম – উনুনে তখন ভাকরি আর বেগুন বসানো ছিল। আমাদের জন্য একটা মাত্র ঘর শুধু রাখা হল। আমার ঠাকুমা, আমি, আমার পিসি... এতজন মিলে আমরা সেই একটা ঘরেই থাকতে বাধ্য হয়েছি।”

ব্রিটিশরা হৌসাবাঈয়ের পরিবারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলামে তোলার চেষ্টা করে, কিন্তু একটাও গ্রাহক পাওয়া যায়নি। তিনি স্মৃতিচারণ করছেন যে, “প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় দাওয়ান্ডি -র আয়োজন হত, গ্রামের ঘোষক তারস্বরে ঘোষণা করতেন: ‘নানা পাটিলের জমিজমা, সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করা হবে।’ [কিন্তু] গ্রামের মানুষ বলতেন, কেনই বা আমরা নানার জমি কিনতে যাবো? তিনি লুটপাটও করেননি এবং কাউকে হত্যাও করেননি।”

তবে, “আমরা কিন্তু আমাদের সেই জমি চাষ করতে পারিনি... [তাই] রোজগারের জন্য আমাদের অন্য পথ দেখতে হল। রোজগার মানে বোঝেন তো? এর মানে হল অন্য লোকেদের জন্য কাজ করা।” কিন্তু সাধারণ মানুষ আমাদের কাজ দিয়ে ব্রিটিশ সরকারের রোষের ভাগীদার হতে চান না। “তাই গ্রামে আমাদের কোনও কাজই জুটল না।” তারপর, তাঁর এক মামা তাঁদের একজোড়া বলদ এবং সঙ্গে গরুর গাড়ি দিলেন। “যাতে আমরা এই বলদ জোতা গাড়ি ভাড়া খাটিয়ে কিছু টাকা রোজগার করতে পারি।”

“আমরা গুড়, চীনেবাদাম, জোয়ার ইত্যাদি এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতাম। যদি গরুর গাড়ি নানার গ্রাম ইয়েদে মচ্ছিন্দ্রা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টাকারি গ্রামে যায়, তাহলে আমরা পেতাম তিন টাকা। আর যদি কারাদ [২০ কিলোমিটার দূরে] যায়, তাহলে আয় হত পাঁচ টাকা। সাকুল্যে এইটুকুই [ভাড়া বাবদ আমাদের আয়]।
Yashodabai (left), Radhabai (mid) and Hausatai. They are her sisters in law
PHOTO • Shreya Katyayini

হৌসাবাঈ মনে করেন, তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ‘খুব সামান্য তুচ্ছ কিছু কাজ’ করতে পেরেছেন

"আমার ঠাকুমা জমি থেকে কিছু তুলে আনতেন। আমি আর আমার পিসি বলদগুলোকে খাওয়াতাম। আমাদের গাড়িটি [এবং জীবন] এই বলদ দুটোর উপর নির্ভরশীল, তাই তাদের ঠিক করে খাবার দিতেই হত। গ্রামবাসীরা আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন না। মুদি আমাদের নুন পর্যন্ত বেচতেন না, [বলতেন] ‘অন্য কোথা থেকে কিনে নাও।’ কখনও কখনও, অযাচিত হয়েই আমরা অন্যদের শস্য পেষাই করে দেওয়ার কাজ করতে যেতাম এই আশায় যদি রাতে খাওয়ার জন্য কিছু জুটে যায়। আমরা উমব্রিয়াছ্যা ডোড্যা [ফিকাস রাসেমোসা বা ভারতীয় যজ্ঞডুমুর ফল] তুলে আনতাম, তারপর এটাই রান্না করে খাওয়া হত।”

নিষিদ্ধ প্রতি সরকারে হৌসাবাঈয়ের দায়িত্ব ছিল প্রধানত তথ্য সংগ্রহের। তিনি এবং তাঁর অন্যান্য সহযোদ্ধারা আগামী হামলাগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খবর জোগাড় করতেন, যেমন ভাঙ্গি গ্রামের (বর্তমানে সাতারা জেলায়) একটি সরকারি ডাক বাংলোয় অগ্নিসংযোগ করা হয়। “তাঁদের দায়িত্ব ছিল - কতজন পুলিশ এসেছে, কখন তারা আসে এবং যায় ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা,” জানাচ্ছেন হৌসাবাঈয়ের পুত্র, পেশায় উকিল, সুভাষ পাটিল। “বাংলোগুলোতে আগুন লাগাতেন অন্যান্য বিপ্লবীরা।” এই এলাকায় অনেক ডাকবাংলো ছিল। “সবকটাই তাঁরা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন,” সুভাষের কাছ থেকে জানা যায়।

হৌসাবাঈয়ের মতো এই আন্ডারগ্রাউন্ড সরকারে আরও মহিলা বিপ্লবী ছিলেন? জবাবে তিনি জানান, হ্যাঁ। শালুতাঈ [শিক্ষকের স্ত্রী], লীলাতাঈ পাটিল, লক্ষ্মীবাঈ নায়েকওয়াড়ি, রাজমতী পাটিল - [এঁরা] হলেন আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা কয়েকজন মহিলা সদস্য।

হৌসাবাঈয়ের বেশিরভাগ বিপ্লবী কার্যকলাপে সঙ্গী ছিলেন ‘শেলার মামা’ এবং কিংবদন্তী বিপ্লবী জি. ডি. বাপু লাড। ‘শেলার মামা’ ছিল তাঁর কমরেড কৃষ্ণা সালুংকীর ডাকনাম। (আসল শেলার মামা ছিলেন ১৭ শতকের এক বিখ্যাত মারাঠা যোদ্ধা)।

প্রতি সরকার ও তুফান সেনার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাপু লাড, “সম্পর্কে আমার মাসতুতো দাদা,” তিনি বললেন। “বাপু আমাকে হামেশাই এই বার্তা পাঠাতেন – ‘বাড়িতে বসে থেকো না!’ বাপু আর আমি ভাই ও বোন হিসেবে কাজ করতাম। লোকে অবশ্য সন্দেহ করতে ছাড়ত না! তবে আমার স্বামী জানতেন যে বাপু এবং আমার মধ্যে সত্যিই ভাই ও বোনের সম্পর্ক আছে। আমার স্বামীর নামেও  গ্রেফতারি পরোয়ানা বেরিয়েছিল। আমরা যখন গোয়ায় গেলাম কাজে, তখন শুধুমাত্র বাপু আর আমিই গিয়েছিলাম।”

গোয়ার বিপ্লবী কর্মসূচিটি ছিল তাঁদের এক সহযোদ্ধার মুক্তিকে ঘিরে, তুফান সেনার জন্য গোয়া থেকে অস্ত্রশস্ত্র সাতারায় নিয়ে আসার সময় পর্তুগিজ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। “বাল জোশী নামে এক কর্মী ছিল, যে অস্ত্র লুঠ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিল। তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে এমন একটা সম্ভাবনা ছিল। বাপু বললেন, ‘আমরা তাকে জেল থেকে মুক্ত না করে ফিরব না’।”

Hausatai and her family
PHOTO • Namita Waikar
Hausatai (left) and Gopal Gandhi
PHOTO • Shreya Katyayini

হৌসাতাঈ তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গতবছর এবং (ডানদিকে) পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা মহাত্মার নাতি গোপাল গান্ধী হৌসাতাঈ এবং অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান জানাতে ২০১৭ সালের জুন মাসে কুন্ডলে এসেছিলেন

‘বোন’ পরিচয় দিয়ে হৌসাবাঈ জেলে গিয়ে জোশীর সঙ্গে মোলাকাত করলেন। জেল থেকে পালানোর পরিকল্পনার বিবরণ “লেখা একটি [ছোট্ট] কাগজ আমি আমার চুলের খোঁপায় লুকিয়ে নিয়েছিলাম।” একই সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব ছিল যেসব অস্ত্র পুলিশের হাতে এসে পৌঁছায়নি, সেগুলোকে তুফান সেনার জন্য সংগ্রহ করা। ফলে সব মিলিয়ে ফেরাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

“পুলিশরা যেহেতু আমাকে আগেই দেখেছে, অতএব সহজেই চিনতে পারবে।” তাই রেলপথের পরিবর্তে তাঁরা নদীপথে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন। “কিন্তু মান্ডোভী নদীতে কোনো নৌকা ছিল না, এমনকি ছোট মাছ ধরার ডিঙিও ছিল না। বুঝতে পারলাম যে সাঁতার কেটেই নদী পারাপার হতে হবে। নইলে ধরা পড়ার সমুহ সম্ভাবনা। কিন্তু পার করবই বা কেমন করে? [আমরা আবিষ্কার করলাম] মাছ ধরার জালের ভিতরে একটি বড়ো কাঠের বাক্স রাখা আছে।” ভাসমান এই বাক্সের উপরে উপুড় হয়ে শুয়ে সেদিন মাঝরাতে তিনি পাশাপাশি সাঁতরে পার হওয়া কমরেডদের সাহায্যে নদী পেরিয়েছিলেন।

“বাক্সের উপর কিছুতেই ঘুমিয়ে পড়া যাবে না, বাক্সটাকে ডুবে যেতে দেওয়াও চলবে না। আমি দিব্যি ভালো সাঁতার কাটতে পারি, কিন্তু এ তো একটা বহতা নদী। আর মান্ডোভী মোটেই কোনো ছোটো নদী নয়। [আমাদের দলের] সদস্যরা সাঁতার কাটছিলেন... তাঁরা মাথায় শুকনো জামাকাপড় পেঁচিয়ে নিয়েছেন – নদী পেরিয়ে উঠে পরতে হবে।” অবশেষে এইভাবে তাঁরা নদী পার করলেন।

“[তারপর] আমরা বনজঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললাম... দুই দিন ধরে। যাইহোক কোনোমতে আমরা পথ খুঁজে পেলাম। বাড়ি ফিরে আসতে আমাদের ১৫ দিন সময় লেগেছিল।”

বাপু এবং হৌসাবাঈ নিজেরা অস্ত্র নিয়ে আসেননি, তবে সেগুলোকে সাতারায় নিয়ে আসার বন্দোবস্ত করে এসেছিলেন। বেশ কিছুদিন পরে জোশীও জেল থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কাজ শেষে পারি-র সদস্যদের বেরনোর তোড়জোড় করতে দেখে জ্বলজ্বলে চোখে, হৌসাবাঈ আমাদের জিজ্ঞেস করলেন: “তাহলে এবার তোমরা আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে তো?”

“কোথায়, হৌসাবাঈ?”

“কেন, তোমাদের সবার সঙ্গে কাজ করার জন্য!” হাসতে হাসতে হৌসাবাঈ বলে উঠলেন।


বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

ਪੀ ਸਾਈਨਾਥ People’s Archive of Rural India ਦੇ ਮੋਢੀ-ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਉਹ ਕਈ ਦਹਾਕਿਆਂ ਤੋਂ ਦਿਹਾਤੀ ਭਾਰਤ ਨੂੰ ਪਾਠਕਾਂ ਦੇ ਰੂ-ਬ-ਰੂ ਕਰਵਾ ਰਹੇ ਹਨ। Everybody Loves a Good Drought ਉਨ੍ਹਾਂ ਦੀ ਪ੍ਰਸਿੱਧ ਕਿਤਾਬ ਹੈ। ਅਮਰਤਿਆ ਸੇਨ ਨੇ ਉਨ੍ਹਾਂ ਨੂੰ ਕਾਲ (famine) ਅਤੇ ਭੁੱਖਮਰੀ (hunger) ਬਾਰੇ ਸੰਸਾਰ ਦੇ ਮਹਾਂ ਮਾਹਿਰਾਂ ਵਿਚ ਸ਼ੁਮਾਰ ਕੀਤਾ ਹੈ।

Other stories by P. Sainath
Translator : Smita Khator

ਸਮਿਤਾ ਖਟੋਰ ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ (ਪਾਰੀ) ਦੇ ਭਾਰਤੀ ਭਾਸ਼ਾਵਾਂ ਦੇ ਪ੍ਰੋਗਰਾਮ ਪਾਰੀਭਾਸ਼ਾ ਭਾਸ਼ਾ ਦੀ ਮੁੱਖ ਅਨੁਵਾਦ ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਅਨੁਵਾਦ, ਭਾਸ਼ਾ ਅਤੇ ਪੁਰਾਲੇਖ ਉਨ੍ਹਾਂ ਦਾ ਕਾਰਜ ਖੇਤਰ ਰਹੇ ਹਨ। ਉਹ ਔਰਤਾਂ ਦੇ ਮੁੱਦਿਆਂ ਅਤੇ ਮਜ਼ਦੂਰੀ 'ਤੇ ਲਿਖਦੀ ਹਨ।

Other stories by Smita Khator