সোনা দেখলেই তিনি চিনতে পারেন। রফিক পাপাভাই শেখ-এর কথায় “আমার হাতে সোনার গয়না রাখলে আমি দেখেই বলে দিতে পারি সেটা কত ক্যারাটের। আমি হলাম একজন জোহ্‌রি ” (জহুরি; রফিক নিজে একজন অলংকার শিল্পী)। শিরুর-সাতারা হাইওয়ের উপর অবস্থিত পডভি গ্রামে বসে আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলাম। এখানে খুব শিগগির তিনি একটা রেস্তোরাঁ খুলবেন – অর্থাৎ আরেকবার হয়তো তিনি হাতে সোনা পেতে চলেছেন!

আমাদের গাড়ি পুণে জেলার সীমান্ত বরারব দৌণ্ড তহসিলের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা এই হোটেলটি দেখতে পেলাম। উজ্জ্বল রঙ করা খুপরির মতো দেখতে একটা কাঠামো: উপরটা জুড়ে লাল-সবুজে লেখা ‘হোটেল সেলফি’। আমরা গাড়ি ঘুরিয়ে সাঁ করে ফিরে এলাম। এমন একটা জায়গা না দেখে মোটেই যাওয়া যায় না!

রফিক জানালেন, “আমি আসলে আমার ছেলের জন্য রেস্তোরাঁটি তৈরি করেছি। আমি সেই জহুরিই রয়ে যাব। আমার মনে হল ছেলের জন্য এই কাজটা মন্দ হবে না। এই হাইওয়ে জুড়ে সারাক্ষণই গাড়ি চলে, চা জলখাবারের জন্য পথচলতি মানুষকে থামতেই হয়।” আর পাঁচটা দোকানের মতো তাঁর দোকানটি অবশ্য একেবারে হাইওয়ের গায়ে নয়, বরং বেশ কিছুটা জায়গা ছেড়ে কাঠামোটি নির্মাণ করা হয়েছে। সুতরাং সওয়ারিরা নিজেদের যানবাহন দোকানের সামনে দাঁড় করাতে পারবেন - ঠিক যেমনটা আমরা করলাম।

PHOTO • P. Sainath

রফিক শেখ , পেশায় অলংকার শিল্পী এবং এই হোটেলের মালিক - আর না , এটা মোটেই সেলফি নয়!

সাতারায় অনুষ্ঠিত এক সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে দৌড়নোর সময় – ‘সেলফি’- হোটেলের এই অভিনব নামের আকর্ষণেই আমরা গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে এসেছিলাম শুনে রফিক বেশ খুশি হলেন। তিনি হো হো করে হেসে উঠে ছেলের দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন, যেন বা বলতে চাইছিলেন ‘আমি বলেছিলাম যে নামটা জুতসই হবে’! হোটেলের নামটা তিনি নিজেই বেছেছেন।

না, আমরা মোটেই এই ছোট্ট রেস্তোরাঁর সামনে সেলফি নিতে ব্যস্ত রফিকের কোনো ছবিই তুলিনি।

সেটা বড্ড গতে বাধা, হাস্যকর একটা ব্যাপার হত। আর তাছাড়া তাতে তাঁর এই অনন্য হোটেলটি থেকে দৃষ্টি যেত সরে। সেলফি নাম দিয়ে একটা হোটেল একদিন নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও ঠিক খুলত! না হয় সেটা রফিকের হাতেই হল! অন্তত আমরা এই প্রথম ‘সেলফি’ নামের একটা হোটেল চোখে দেখলাম। (গ্রামীণ ভারতের অধিকাংশ জায়গাতেই রেস্তোরাঁ, খাবারের জায়গা, ধাবা এবং চায়ের দোকান সাধারণত ‘হোটেল’ নামেই পরিচিত)।

হোটেলটা খোলা হলেই সওয়ারি, পথচলতি মানুষ, পর্যটকরা হোটেলের সামনে সেলফি তোলার অদম্য বাসনা মোটেই ত্যাগ করতে পারবেন না! খাবারদাবারের চেয়ে সেলফি’র আকর্ষণ যে বেশি হবে, তা বলাই বাহুল্য! চা জলখাবার ভুলে গেলেও সেলফি বড়ো বালাই, আপনি সেটাকে সঙ্গে নিয়ে তবেই ফিরবেন। বিখ্যাত গানের দল ইগলস্‌-এর সেই পঙ্‌ক্তিটা অন্যভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে এই হোটেল সেলফি-র প্রেক্ষিতে: যতই যাও হোটেল ছেড়ে, হোটেল আসে পিছু পিছু।

আমি নিশ্চিত জানি, একদিন রফিক শেখের হোটেল সেলফি মানুষের ভিড়ে গমগম করবে। রফিক নিজেও সেটা জানেন। তিনি যে পাকা জহুরি, সোনা চেনেন!

অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

ਪੀ ਸਾਈਨਾਥ People’s Archive of Rural India ਦੇ ਮੋਢੀ-ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਉਹ ਕਈ ਦਹਾਕਿਆਂ ਤੋਂ ਦਿਹਾਤੀ ਭਾਰਤ ਨੂੰ ਪਾਠਕਾਂ ਦੇ ਰੂ-ਬ-ਰੂ ਕਰਵਾ ਰਹੇ ਹਨ। Everybody Loves a Good Drought ਉਨ੍ਹਾਂ ਦੀ ਪ੍ਰਸਿੱਧ ਕਿਤਾਬ ਹੈ। ਅਮਰਤਿਆ ਸੇਨ ਨੇ ਉਨ੍ਹਾਂ ਨੂੰ ਕਾਲ (famine) ਅਤੇ ਭੁੱਖਮਰੀ (hunger) ਬਾਰੇ ਸੰਸਾਰ ਦੇ ਮਹਾਂ ਮਾਹਿਰਾਂ ਵਿਚ ਸ਼ੁਮਾਰ ਕੀਤਾ ਹੈ।

Other stories by P. Sainath
Translator : Smita Khator

ਸਮਿਤਾ ਖਟੋਰ ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ (ਪਾਰੀ) ਦੇ ਭਾਰਤੀ ਭਾਸ਼ਾਵਾਂ ਦੇ ਪ੍ਰੋਗਰਾਮ ਪਾਰੀਭਾਸ਼ਾ ਭਾਸ਼ਾ ਦੀ ਮੁੱਖ ਅਨੁਵਾਦ ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਅਨੁਵਾਦ, ਭਾਸ਼ਾ ਅਤੇ ਪੁਰਾਲੇਖ ਉਨ੍ਹਾਂ ਦਾ ਕਾਰਜ ਖੇਤਰ ਰਹੇ ਹਨ। ਉਹ ਔਰਤਾਂ ਦੇ ਮੁੱਦਿਆਂ ਅਤੇ ਮਜ਼ਦੂਰੀ 'ਤੇ ਲਿਖਦੀ ਹਨ।

Other stories by Smita Khator