খর্বকায় ঘাসে ইতস্তত পড়ে রয়েছে সাদাটে ছিট-ছিট বাদামি পালক।

ফিকে হয়ে আসা আলোয়, গোল গোল ঘুরে উদগ্রীব হয়ে খুঁজছিলেন রাধেশ্যাম বিশনোই। মনে একটাই আশা, যেন তাঁর আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়। জোরগলায় বলে উঠলেন, “পালকগুলো দেখে তো খুঁটে খুঁটে ছাড়ানো বলে মনে হচ্ছে না।” তারপর না জানি কাকে একটা ফোন করলেন, “আপনি আসছেন তো? মনে তো হচ্ছে যা ভাবছি সেটাই ঠিক...”

মাথার উপর, অশনি সংকেত হয়ে গুনগুন করে চলেছে ২২০ কিলোভোল্টের হাই টেনশন (এইচটি) তার। প্রেক্ষাপটে ঘনায়মান সন্ধ্যার আকাশ, থেকে থেকে চিড়বিড় শব্দ করে উঠছে কালো কালো তারগুলো।

তিনি যে তথ্য সংগ্রাহক, একথা ভোলেননি রাধেশ্যাম। চট করে বেরিয়ে এল ক্যামেরা, টপাটপ তুলে ফেললেন অকুস্থলের ছবি — লাগাতার ক্লোজ-আপ (কাছ থেকে তোলা) ও মিড-শট (মাঝারি দূরত্বের আলোকচিত্র) তুলে গেলেন।

তার পরদিন, সাত সকালেই হাজির হলাম ঘটনাস্থলে — গঙ্গা রাম কি ধনি জনপদ থেকে এক কিলোমিটার দূর, কাছেই জয়সলমীর জেলার খেতোলাই।

নাহ্, সন্দেহের আর কোনও অবকাশ রইল না। এগুলো গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডেরই (জিআইবি) পালক, স্থানীয় মানুষজন যাকে গোডাওন বলে ডাকেন।

Left: WII researcher, M.U. Mohibuddin and local naturalist, Radheshyam Bishnoi at the site on March 23, 2023 documenting the death of a Great Indian Bustard (GIB) after it collided with high tension power lines.
PHOTO • Urja
Right: Radheshyam (standing) and local Mangilal watch Dr. S. S. Rathode, WII veterinarian (wearing a cap) examine the feathers
PHOTO • Priti David

বাঁদিকে: ২৩শে মার্চ ২০২৩, হাই-টেনশন বৈদ্যুতিক তারে গোঁত্তা খেয়ে জান খুইয়েছে একটি গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড (জিআইবি), সেটাই নথিবদ্ধ করতে অকুস্থলে পৌঁছেছেন ডাব্লিউআইআই গবেষক এম. ইউ. মহিবুদ্দিন ও স্থানীয় প্রকৃতিবিদ রাধেশ্যাম বিশনোই। ডানদিকে: পালক পরীক্ষা করতে ব্যস্ত ডাব্লিউআইআই প্রাণীচিকিৎসক ডাঃ এস. এস. রাঠোর (টুপি মাথায়), সেটাই দাঁড়িয়ে দেখছেন রাধেশ্যাম ও জনৈক স্থানীয় বাসিন্দা মাঙ্গিলাল

২৩শে মার্চ ২০২৩, অকুস্থলে পৌঁছে গেলেন বন্যপ্রাণী-চিকিৎসক ডাঃ শ্রাবণ সিং রাঠোর। প্রমাণস্বরূপ পালকগুলি খুঁটিয়ে দেখে জানালেন, “হাই-টেনশন তারের সঙ্গে গোঁত্তা খেয়েই যে মৃত্যু হয়েছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দেখে তো মনে হচ্ছে আজ থেকে দিন তিনেক আগের ঘটনা, অর্থাৎ ২০শে মার্চ [২০২৩]।”

২০২০ থেকে এটা নিয়ে গোডাওনের চতুর্থ লাশ পরীক্ষা করে দেখছেন ভারতের বন্যপ্রাণ প্রতিষ্ঠানে (ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া বা ডাব্লিউআইআই) কর্মরত ডাঃ রাঠোর। এই প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক (এমওইএফসিসি) তথা বিভিন্ন রাজ্যের বন্যপ্রাণ দফতরের প্রযুক্তি বিষয়ক বিভাগ। “প্রত্যেকটা লাশই এইচটি তারের নিচে পাওয়া গেছে। সুতরাং এই দুঃখজনক মৃত্যুর সঙ্গে বিদ্যুতের তার যে সরাসরি যুক্ত, সেটা একদম পরিষ্কার,” জানালেন তিনি।

যে পাখিটি মারা গেছে, সেটি মারাত্মকভাবে বিপন্ন গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড (আর্দেওতিস নিগ্রিসেপস্)। পাঁচ মাসের ভিতর এটা নিয়ে দুখানা পাখি উড়তে উড়তে হাই-টেনশন তারে ধাক্কা খেয়ে মরেছে। রাধেশ্যামের জবানে: “২০১৭ [যে বছর থেকে উনি ট্র্যাক করা শুরু করেছেন] থেকে এটা নিয়ে ৯টি পাখি মরল।” পেশায় কৃষক এই মানুষটি কাছেই থাকেন, জয়সলমীর জেলার সাংক্রা ব্লকের ধোলিয়া গাঁয়ে। নিবেদিতপ্রাণ প্রকৃতিপ্রেমী তিনি, পেল্লায় এই পাখিটিকে চোখে চোখে রাখেন সারাক্ষণ। তিনিও জানালেন, “যত গোডাওন মরেছে, অধিকাংশই এইচটি তারের নিচে।”

বন্যপ্রাণ (সংরক্ষণ) আইন, ১৯৭২ -এর প্রথম অনুসূচীতে নিবন্ধিত আছে জিআইবি পাখির নাম। একদা ভারত ও পাকিস্তানের তৃণভূমি জুড়ে রাজত্ব করত যারা, আজ মোটে ১২০-১৫০টির মতো পড়ে আছে। পাঁচটি রাজ্য জুড়ে খাপছাড়াভাবে দেখা মেলে তাদের। কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানার মিলনস্থলে ৮-১০টি পাখি দেখা গেছে। এছাড়া চারটি মাদি পাখি আছে গুজরাতে।

তবে সবচাইতে বেশি সংখ্যক গোডাওন এই জয়সলমীর জেলাতেই রয়েছে। বন্যপ্রাণ জীববিজ্ঞানী ডঃ সুমিত ডুকিয়ার কথায়, “প্রায় ১০০ কিলোমিটার তফাতে দুটো জায়গায় বাস করে এরা — একটা পোকরানের কাছে, আরেকটা মরুভূমি জাতীয় অরণ্যে।” গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডের প্রাকৃতিক বাসস্থান, অর্থাৎ পূর্ব রাজস্থানের তৃণভূমি জুড়ে এই পাখিগুলির সন্ধান করে ফেরেন ডঃ ডুকিয়া।

Today there are totally only around 120-150 Great Indian Bustards in the world and most live in Jaisalmer district
PHOTO • Radheshyam Bishnoi

আজ মোটে ১২০-১৫০টির মতো গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড বেঁচে আছে এ দুনিয়ায়, মূলত জয়সলমীর জেলাতেই দেখা মেলে তাদের

'We have lost GIB in almost all areas. There has not been any significant habitat restoration and conservation initiative by the government,' says Dr. Sumit Dookia
PHOTO • Radheshyam Bishnoi

ডাঃ সুমিত ডুকিয়ার বক্তব্য: ‘প্রায় সব অঞ্চল থেকেই জিআইবি লোপ পেয়েছে। সরকার থেকে বড়ো মাপের বাসস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা বা সংরক্ষণের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা — কোনওটাই হয়নি’

সোজাসাপটা ভাষায় তিনি বললেন, “প্রায় সব অঞ্চল থেকেই জিআইবি লোপ পেয়েছে। সরকার থেকে বড়ো মাপের বাসস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা বা সংরক্ষণের উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা — কোনওটাই হয়নি।” ২০১৫ সাল থেকে জিআইবি রক্ষার্থে যে সংগঠনটি সামাজিক অংশগ্রহণ গড়ে তুলতে খেটে চলেছে, সেই ইকোলজি, রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাস্টেনেবিলিটি (ইআরডিএস) ফাউন্ডেশনে তিনি সাম্মানিক বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতার কাজ করেন।

“এককালে আমি নিজের চোখে দেখেছি, ঝাঁকে ঝাঁকে গোডাওন উড়ে যাচ্ছে আসমানে। এখন একটার বেশি পাখি চোখেই পড়ে না, তাও কালেভদ্রে। আকাশে উড়ছে, এমন দৃশ্য তো ডুমুরের ফুল,” জানালেন সুমের সিং ভাটি। বছর চল্লিশেকের এই মানুষটি একজন স্থানীয় পরিবেশবিদ, জয়সলমীর জেলার পবিত্র বনানী জুড়ে গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড ও তার প্রাকৃতিক বাসস্থান বাঁচাতে সক্রিয়ভাবে লড়ছেন।

একঘণ্টা দূর সাম ব্লকের সৌঁটা গ্রামে থাকেন বটে, কিন্তু গোডাওনের মৃত্যুসংবাদ পেয়েই দৌড়ে এসেছেন দুর্ঘটনাস্থলে। একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে আছেন অন্যান্য স্থানীয় মানুষজন ও বিজ্ঞানীর দল।

*****

একশ মিটার দূরত্বেই দেগ্রাই মাতার দেউল, সেখানে প্লাস্টার অফ প্যারিসে নির্মিত একটি প্রমাণ সাইজের গোডাওনের মূর্তি রয়েছে। দড়ি দিয়ে ঘেরা, সুউচ্চ বেদিতে একলা দাঁড়িয়ে থাকা এই মূর্তিটি প্রধান সড়ক থেকে দেখা যায়।

প্রতিবাদের প্রতীক স্বরূপ এটিকে স্থাপন করেছেন স্থানীয় মানুষজন। “এখানে প্রাণ হারানো জিআইবি-র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল সেটা,” জানালেন তাঁরা। ফলকের গায়ে হিন্দিতে লেখা আছে: ‘১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২০, দেগ্রাই মাতার মন্দিরের নিকটে হাই-টেনশন তারের সাথে ধাক্কা খেয়েছিল একটি মাদি গোডাওন পাখি। এই সৌধটি তারই স্মৃতিতে নির্মিত।’

Left: Radheshyam pointing at the high tension wires near Dholiya that caused the death of a GIB in 2019.
PHOTO • Urja
Right: Sumer Singh Bhati in his village Sanwata in Jaisalmer district
PHOTO • Urja

বাঁদিকে: ধোলিয়ার সন্নিকটে হাই-টেনশন তারের দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছেন রাধেশ্যাম, ২০১৯ সালে একটি গোডাওনের (জিআইবি) প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল এই তার। ডানদিকে: জয়সলমির জেলায় তাঁর গ্রাম সৌঁটায় সুমের সিং ভাটি

Left: Posters of the godawan (bustard) are pasted alongwith those of gods in a Bishnoi home.
PHOTO • Urja
Right: The statue of a godawan installed by people of Degray
PHOTO • Urja

বাঁদিকে: বিশনোই জনজাতির একটি বাড়ির দেওয়ালে দেবদেবীর ছবির পাশে সাঁটা রয়েছে গোডাওনের পোস্টার। ডানদিকে: গোডাওনের এই মূর্তিটি স্থাপন করেছেন দেগ্রাইয়ের মানুষজন

লুপ্ত হতে বসেছে জিআইবি, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের বাসস্থান — সুমের সিং, রাধেশ্যাম সহ জয়সলমীরের অন্যান্য বাসিন্দাদের কাছে এটি চারিধারের পরিবেশের উপর পশুপালক সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব হওয়ার করাল প্রতীক। ঠিক যে কারণে ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে যাযাবর জীবন ও জীবিকা।

“‘উন্নয়নের’ নামে কত ভয়ানক ক্ষতি হয়ে চলেছে আমাদের সব্বার,” বলে উঠলেন সুমের সিং, “এই উন্নয়ন কার জন্য?” খাঁটি কথা বলেছেন বটে, ১০০ মিটার দূরেই একটি সৌরশক্তি কেন্দ্র আছে, মাথার উপর দিয়ে ছুটে চলেছে তার, অথচ তাঁর গাঁয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ যতটা অনিয়মিত, ততটাই অনির্ভরযোগ্য।

গত সাড়ে ৭ বছরে নবায়নযোগ্য শক্তির (রিনিউয়েবল এনার্জি বা আরই) ধারণক্ষমতা (ক্যাপাসিটি) একলাফে ২৮৬ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি করে অচিরাচরিত ও নবায়নযোগ্য শক্তি মন্ত্রক। এছাড়াও গত দশকে, বিশেষ করে গত ৩-৪ বছরে সৌর ও বায়ুনির্ভর - উভয় প্রকারের হাজার হাজার নবায়নযোগ্য শক্তি কেন্দ্র শুরু হয়েছে এ রাজ্যে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আদানি রিনিউয়েবল এনার্জি পার্ক রাজস্থান লিমিটেডের (এআরইপিআরএল) কথা, যারা ভাদলা, যোধপুরে একটি ৫০০ মেগাওয়াট ও ফতেহগড়, জয়সলমীরে একটি ১,৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর পার্ক নির্মাণ করছে। বিদ্যুতের তার মাটির তলা দিয়ে পাতা হবে কিনা, এ কথা ওয়েবসাইট মারফত আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম কোম্পানিকে, কিন্তু এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার সময় সে প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।

এ রাজ্যের সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তা বিশালাকার একটি পাওয়ার লাইনের নেটওয়ার্ক মারফত পৌঁছে যায় জাতীয় গ্রিডে। বাস্টার্ড, ঈগল, শকুন তথা বিভিন্ন পাখির উড়ানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়াছে এই নেটওয়ার্ক। নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পগুলির ফলে সৃষ্টি হবে একটি গ্রিন করিডর, যেটা পোকরান ও রামগড়-জয়সলমীরের জিআইবি বাসস্থান ভেদ করে যাবে।

Solar and wind energy  projects are taking up grasslands and commons here in Jaisalmer district of Rajasthan. For the local people, there is anger and despair at the lack of agency over their surroundings and the subsequent loss of pastoral lives and livelihoods
PHOTO • Radheshyam Bishnoi

রাজস্থানের জয়সলমীর জেলায়, সৌর ও বায়ুশক্তি প্রকল্পের কবলে খোয়া যাচ্ছে তৃণভূমি ও সাধারণ চারণভূমি। চারিধারের পরিবেশের উপর তাঁদের অধিকার হারাচ্ছেন স্থানীয় মানুষেরা, ফলত খোয়া যাচ্ছে রাখালিয়া জীবন ও জীবিকা, ক্রমশ জমে উঠছে রাগ ও হতাশা

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মধ্য এশীয় উড়ানপথের (সেন্ট্রাল এশিয়ান ফ্লাইওয়ে বা সিএএফ) ঠিক মধ্যিখানে পড়ে জয়সলমীর। বছর বছর এই আকাশপথ হয়েই সুমেরু থেকে মধ্য ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশ হয়ে ভারত মহাসাগরে পাড়ি দেয় পরিযায়ী পক্ষিকূল। অভিবাসী প্রজাতির বন্য প্রাণী সংরক্ষক সম্মেলনের (কনভেনশন অন দ্য কনজার্ভেশন অফ মাইগ্রেটরি স্পিসিজ অফ ওয়াইল্ড অ্যানিমালস্) আন্দাজ, ১৮২টি প্রজাতির পরিযায়ী জলজ পাখির ২৭৯টি গোষ্ঠী এই পথ দিয়েই যাতায়াত করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ওরিয়েন্টাল হোয়াইট-ব্যাকড্ শকুন (গিপস্ বেঙ্গলেনসিস), বৃহচ্চঞ্চু ভারতীয় শকুন (গিপস্ ইন্ডিকুস), স্তোলিকস্কাজ বুশচ্যাট (স্যাক্সিকোলা মাক্রোরিঞ্চা), সবুজ মুনিয়া (আমান্দাভা ফরমোসা) ও ম্যাককুইনজ কিংবা হৌবারা বাস্টার্ডের (ক্ল্যামাইদোতিস ম্যাককুইনি) নাম।

রাধেশ্যাম নিজে একজন উৎসাহী ফটোগ্রাফারও, তাঁর দীর্ঘ ফোকাস-সম্পন্ন টেলিফটো লেন্সে ধরা পড়েছে হাড়হিম করা ছবি। “রাত্রিবেলায়, সরোবর ভেবে পেলিকানরা কেমনভাবে উড়তে উড়তে সৌরপ্যানেলের উপর এসে বসে, সেটা দেখেছি। কাচের উপর পা পিছলে চিরতরে জখম হয়ে যায় অসহায় পাখিগুলো।”

হাই-টেনশন তার কেবলই যে বাস্টার্ড পাখির প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে তা নয়, ২০১৮ সালে ভারতের বন্যপ্রাণ প্রতিষ্ঠানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে: জয়সলমীরের মরুভূমি জাতীয় উদ্যান তথা আশপাশের এলাকা মিলিয়ে ৪,২০০ বর্গকিলোমিটারের উপর বাৎসরিক ৮৪,০০০টি পাখি মারা গেছে। “এই প্রজাতিটির [গোডাওন] পক্ষে এমন উচ্চমাত্রায় মৃত্যু-হার সহ্য করা না-মুমকিন, অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে তারা।”

বিপদ শুধু আসমানেই ওঁৎ পেতে নেই কিন্তু, জমিনেও সে বিদ্যমান। সাধারণ তৃণভূমি, ওরান (স্থানীয় নাম) বা পবিত্র বনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে, ৫০০ মিটার বাদে বাদে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ২০০ মিটার উঁচু বায়ুকল (উইন্ডমিল)। হেক্টরের পর হেক্টর চলে গেছে পাঁচিল-ঘেরা সৌরকেন্দ্রের কব্জায়। যে পবিত্র বনানীতে গাছের একখান ডালও কাটা নিষেধ — এ বিষয়ে সমস্ত সম্প্রদায় একমত — সেখানে আজ নবায়নযোগ্য শক্তির রমরমা। ফলত পশু চরানোর কামকাজ সাপ-লুডোয় রূপান্তরিত হয়েছে আজ। বেড়ার চারিদিক ঘুরে, বায়ুকল এড়িয়ে, সংশ্লিষ্ট মাইক্রোগ্রিডের পাশ কাটিয়ে হেঁটে যায় রাখালের দল — আগের মতো আর সোজাপথে হাঁটা যায় না।

Left: The remains of a dead griffon vulture in Bhadariya near a microgrid and windmill.
PHOTO • Urja
Left: The remains of a dead griffon vulture in Bhadariya near a microgrid and windmill.
PHOTO • Vikram Darji

বাঁদিকে: ভাদারিয়ায় একটি হাওয়াকল ও তার মাইক্রোগ্রিডের পাশেই পড়ে আছে মৃত গ্রিফন শকুনের দেহাবশেষ। ডানদিকে: গোডাওন পাখিদের সুরক্ষিত রাখতে তাদের ট্র্যাক করে বেড়ান রাধেশ্যাম বিশনোই

“সকাল-সকাল বেরোলে তবেই সন্ধে নাগাদ বাড়ি ফিরতে পারি,” জানালেন ধনী (শুধু এই নামটাই ব্যবহার করেন তিনি)। বাড়িতে চারটে গরু ও পাঁচটা ছাগল আছে, তাদের জন্য ঘাস আনতে জঙ্গলে যেতে বাধ্য হন ২৫ বছরের ধনী। “পশুগুলোকে নিয়ে বনে গেলে মাঝেমধ্যেই ওই তারগুলো থেকে শক খাই।” স্বামী বারমের শহরে পড়াশোনা করেন, তাই ৮, ৫ ও ৪ বছরের তিনটি ছেলে ও ছ’বিঘা (প্রায় ১ একর) জমির পুরো দায়িত্বটাই ধনীর একার ঘাড়ে।

রাসলা গাঁয়ের দেগ্রাইয়ের (জয়সলমীর, সাম ব্লক) গ্রামপ্রধান মুরিদ খান জানাচ্ছেন: “সওয়ালগুলো আমাদের বিধায়ক আর জেলা কমিশনারের (ডিসি) কানে তোলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু লাভের লাভ কিসুই হয়নি।”

“আমাদের পঞ্চায়েতে ছ-সাতটা হাই-টেনশন তার পেতেছে,” জানালেন তিনি, “আমাদের ওরানের [পবিত্র বনানী] মধ্যিখানে। ওদের যদি জিজ্ঞেস করি, ‘ভাই, আপনাদের কে ইজাজৎ দিয়েছে শুনি?’, সঙ্গে সঙ্গে জবাব আসে, ‘তোমাদের অনুমতি থোড়াই না লাগবে আমাদের’।”

২৭শে মার্চ, ২০২৩, দুর্ঘটনার দিনকতক পর লোকসভায় এ প্রশ্নটি উঠলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী কুমার চৌবে জবাব দেন: গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ডের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্থানগুলি অচিরেই জাতীয় উদ্যানে (এনপি) পরিণত হবে।

তেমন বাসস্থানের সংখ্যা দুই — একটি ইতিমধ্যেই জাতীয় উদ্যান রূপে চিহ্নিত, এবং আরেকটি সামরিক জমির মধ্যে পড়ছে। অথচ বাস্টার্ড বিহঙ্গকূল আজও নিরাপদ নয়।

*****

১৯শে এপ্রিল ২০২১, একটি লিখিত আবেদনের জবাবে আমাদের সর্বোচ্চ আদালত হুকুম দেয়: “গুরুত্বপূর্ণ তথা সম্ভাব্য বাস্টার্ডসঙ্কুল এলাকায়, যেখানে যেখানে মাথার উপরকার তার মাটির তলা দিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে দেখা গিয়েছে, সেখানে একবছরের মধ্যেই তেমনটা করা হোক, এবং ততদিন অবধি এযাবৎ পাতা ওভারহেড তার থেকে ডায়ভার্টার [প্লাস্টিকের চাকতি, যার প্রতিফলিত আলোয় সতর্ক হয় পাখিরা] ঝুলিয়ে রাখা হোক।”

সুপ্রিম কোর্টের আদেশনামায় ১০৪ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক তার ভূগর্ভস্থ হওয়ার কথা রাজস্থানে, এবং ১,২৩৮ কিলোমিটার তার জুড়ে ডায়ভার্টার বসানোর কথা।

'Why is the government allowing such big-sized renewable energy parks in GIB habitat when transmission lines are killing birds,' asks wildlife biologist, Sumit Dookia
PHOTO • Urja
'Why is the government allowing such big-sized renewable energy parks in GIB habitat when transmission lines are killing birds,' asks wildlife biologist, Sumit Dookia
PHOTO • Urja

বন্যপ্রাণ জীববিজ্ঞানী সুমিত ডুকিয়ার সওয়াল, ‘বৈদ্যুতিক তারে ধাক্কা খেয়ে একের পর এক পাখি প্রাণ হারাচ্ছে, তা সত্ত্বেও জিআইবি-র বাসস্থানে এমন বিশালাকার নবায়নযোগ্য শক্তি-উদ্যান বানানোর ইজাজৎ কেমন করেই বা দিল সরকার?’

এপ্রিল ২০২৩, একে একে কেটে গেছে দুটো বছর, সর্বোচ্চ আদালতের হুকুম তোয়াক্কা না করে মাথার উপরেই রয়ে গেছে হাই-টেনশন তার, এবং কয়েক কিলোমিটার বই প্লাস্টিক-ডায়ভার্টারের বসেনি। প্রধান সড়কের আশপাশে, অর্থাৎ জনসাধারণ ও সংবাদমাধ্যমের নজর যেখানে, সেসব জায়গা বাদে ডায়ভার্টারের টিকিটিও দেখা যায় না কোথাও। বন্যপ্রাণ জীববিজ্ঞানী সুমিত ডুকিয়ার কথায়: “আমাদের হাতে যেটুকু গবেষণামূলক তথ্য আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে সত্যি সত্যিই বার্ড ডায়ভার্টার বসালে তারে গোঁত্তা খাওয়ার ঘটনা বিশাল পরিমাণে কমে যায়। সুতরাং, তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে এই মৃত্যুটা চাইলে আটকানোই যেত।”

বসুধার বুকে এই এলাকাটিই গোডাওন পাখির একমাত্র নীড়, অথচ নিজগৃহেই সে মরতে বসেছে আজ। তবে হ্যাঁ, আমরা কিন্তু হা-পা গুটিয়ে বসে নেই! দেশি পশুপাখি ছেড়ে বিলিতি প্রজাতির জন্য ঘর বাঁধতে ছুটেছি হন্যে হয়ে — রাজকীয় একটি পঞ্চবর্ষীয় পরিকল্পনায় ২২৪ কোটি টাকা খুইয়ে আফ্রিকার চিতা আনা হচ্ছে ভারতবর্ষে। বিশেষ উড়োজাহাজ চেপে আসার খরচা, তাদের জন্য নিরাপদ ঘেরাটোপ, উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা বসানো, ওয়াচটাওয়ার গড়ে তোলা বাবদ ধার্য হয়েছে ওই বিপুল টাকা। তাছাড়া বেঙ্গল টাইগার তো আছেই, যাদের জনসংখ্যা তো বাড়ছেই, আবার ২০২২ সালে তাদের জন্য হাত খুলে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে।

*****

বিহঙ্গ প্রজাতির এক বৃহদাকার সদস্য এই গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড, উচ্চতা এক মিটার, ওজন প্রায় ৫-১০ কেজি। বছর গেলে মোটে একটি করে ডিম পাড়ে এরা, তাও আবার খোলা আকাশের তলে। এ তল্লাটে বুনো কুকুরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তাই বাস্টার্ড পাখির ডিম মোটেও সুরক্ষিত নয়। এখানে একটি প্রকল্প চালাচ্ছে বোম্বে প্রাকৃতিক ইতিহাস সমাজ (বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি বা বিএনএইচএস), তাদের কার্যক্রম আধিকারিক নীলকান্ত বোধার কথায়: “পরিস্থিতি অত্যন্ত হতাশাজনক। জনসংখ্যাটা জিইয়ে রাখতেই হবে, আর এই প্রজাতিটির জন্য আলাদা করে কিছুটা [অলঙ্ঘনীয়] এলাকা ছেড়েও দিতে হবে।”

প্রজাতিটি স্থলজ, তাই হেঁটে হেঁটে চলাফেরাটাই এদের পছন্দ। তবে কালেভদ্রে ডানা মেললে তাক লেগে যায় — ডানার বিস্তার প্রায় ৪.৫ ফুট, ওজনদার কলেবর, মরু আসমান দিয়ে ভেসে চলে অনন্তের সন্ধানে।

'The godawan doesn’t harm anyone. In fact, it eats small snakes, scorpions, small lizards and is beneficial for farmers,”' says Radheshyam
PHOTO • Radheshyam Bishnoi

‘গোডাওন কারও ক্ষতি করে না। বরং ছোটখাট সাপ, কাঁকড়াবিছে, ক্ষুদ্র টিকটিকি, এসব খেয়ে চাষিদের উপকারই করে,’ জানালেন রাধেশ্যাম

Not only is the Great Indian Bustard at risk, but so are the scores of other birds that come through Jaisalmer which lies on the critical Central Asian Flyway (CAF) – the annual route taken by birds migrating from the Arctic to Indian Ocean
PHOTO • Radheshyam Bishnoi

গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড ছাড়াও বিপন্ন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, যারা মধ্য এশীয় উড়ানপথ (সেন্ট্রাল এশিয়ান ফ্লাইওয়ে বা সিএএফ) দিয়ে সুমেরু থেকে ভারত মহাসাগরের দিকে উড়ে যায় বছর বছর — অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পরিযানপথের ঠিক মধ্যিখানে অবস্থিত জয়সলমীর

রাজকীয় এই পাখির চোখদুটির মাথার দুইপাশে স্থিত, তাই সিধাসিধি তারা দেখতে পায় না। ফলত, হয় সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে মাটি থেকে ৩০ মিটার কিংবা তারও উঁচুতে টাঙানো হাই-টেনশন তারে, অথবা চেষ্টা করে এক্কেবারে শেষ মুহূর্তে বাতাসে পাক কেটে পথ পরিবর্তন করার। কিন্তু বিশালবপু ডাবল পঞ্জাব লরি যেমন হুট করে বাঁক নিতে অক্ষম, ঠিক তেমনই জিআইবির পক্ষে উড়তে উড়তে হঠাৎ করে দিশা পাল্টানো কঠিন — তাই ওদের মাথা কিংবা ডানার একাংশ তারে গিয়ে লাগে। “তারে লেগে তড়িদাহত যদি নাও বা হয়, সাধারণত মাটিতে থুবড়েই জান খোয়ায় বেচারারা,” বলে উঠলেন রাধেশ্যাম।

২০২২-এ যখন রাজস্থান হয়ে ভারতে হামলা করে পঙ্গপালের ঝাঁক, “তখন গোডাওনের কৃপায় খানকতক খেত-খামার রক্ষা পেয়েছিল, হাজার হাজার পঙ্গপাল খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছিল ওরা,” স্মৃতিচারণ করছিলেন রাধেশ্যাম। তারপর একথাও বললেন, “গোডাওন কারও ক্ষতি করে না। বরং ছোটখাট সাপ, কাঁকড়াবিছে, ক্ষুদ্র টিকটিকি, এসব খেয়ে চাষিদের উপকারই করে।”

তিনি এবং তাঁর পরিবার নিজেদের ৮০ বিঘা জমির উপর মূলত গওয়ার (শুঁটি-জাতীয় একপ্রকারের সবজি) এবং বাজরা চাষ করেন। শীতকালে বৃষ্টি হলে তবেই তৃতীয় কোনও ফসলের কথা ভাবেন তাঁরা। রাধেশ্যামের কথায়, “ভাবুন দেখি, যদি ১৫০টার বদলে হাজার হাজার জিআইবি থাকত, তাহলে পঙ্গপালের মতো ভয়ানক বিপর্যয়গুলো কত সহজেই না এড়ানো যেত।”

অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র একটি এলাকার দেখভাল করলেই গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড এবং তার বাসস্থানকে সুরক্ষিত রাখা যায়। রাঠোরের বক্তব্য: “এটুকু প্রচেষ্টা আমরা করতেই পারি। এমন কিছু কাঠখড় পোড়াতে হবে না। আদালত তো মাটির তলা দিয়ে তার পাতার এবং নতুন কোনও হাই-টেনশন তারের অনুমতি না দেওয়ার হুকুম দিয়েইছে। সবকিছু খতম হয়ে যাওয়ার আগে সরকার বাহাদুর সুস্থির হয়ে একটু ভাবনাচিন্তা করুক।”


প্রতিবেদনটির কাজে অমূল্য হসহায়তা করেছেন বায়োডায়ভার্সিটি কোলাবোরেটিভের সদস্য ডঃ রবি চেল্লাম, তাঁর প্রতি লেখকের অশেষ কৃতজ্ঞতা।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Priti David

ਪ੍ਰੀਤੀ ਡੇਵਿਡ ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਇੰਡੀਆ ਦੇ ਇਕ ਪੱਤਰਕਾਰ ਅਤੇ ਪਾਰੀ ਵਿਖੇ ਐਜੁਕੇਸ਼ਨ ਦੇ ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਉਹ ਪੇਂਡੂ ਮੁੱਦਿਆਂ ਨੂੰ ਕਲਾਸਰੂਮ ਅਤੇ ਪਾਠਕ੍ਰਮ ਵਿੱਚ ਲਿਆਉਣ ਲਈ ਸਿੱਖਿਅਕਾਂ ਨਾਲ ਅਤੇ ਸਮਕਾਲੀ ਮੁੱਦਿਆਂ ਨੂੰ ਦਸਤਾਵੇਜਾ ਦੇ ਰੂਪ ’ਚ ਦਰਸਾਉਣ ਲਈ ਨੌਜਵਾਨਾਂ ਨਾਲ ਕੰਮ ਕਰਦੀ ਹਨ ।

Other stories by Priti David
Photographs : Urja

ਉਰਜਾ, ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ ਵਿਖੇ ਵੀਡੀਓ-ਸੀਨੀਅਰ ਅਸਿਸਟੈਂਟ ਐਡੀਟਰ ਹਨ। ਉਹ ਇੱਕ ਦਸਤਾਵੇਜ਼ੀ ਫਿਲਮ ਨਿਰਮਾਤਾ ਹਨ ਅਤੇ ਸ਼ਿਲਪਕਾਰੀ, ਰੋਜ਼ੀ-ਰੋਟੀ ਅਤੇ ਵਾਤਾਵਰਣ ਦੇ ਮੁੱਦਿਆਂ ਨੂੰ ਕਵਰ ਕਰਨ ਵਿੱਚ ਦਿਲਚਸਪੀ ਰੱਖਦੀ ਹਨ। ਊਰਜਾ ਪਾਰੀ ਦੀ ਸੋਸ਼ਲ ਮੀਡੀਆ ਟੀਮ ਨਾਲ ਵੀ ਕੰਮ ਕਰਦੀ ਹਨ।

Other stories by Urja
Photographs : Radheshyam Bishnoi

ਰਾਜਸਥਾਨ ਦੀ ਪੋਕਰਨ ਤਹਿਸੀਲ ਦੇ ਢੋਲੀਆ ਪਿੰਡ ਦੇ ਵਾਸੀ ਰਾਧੇਸ਼ਿਆਮ ਬਿਸ਼ਨੋਈ ਜੰਗਲੀ ਜੀਵ ਫੋਟੋਗ੍ਰਾਫ਼ਰ ਅਤੇ ਕੁਦਰਤਵਾਦੀ ਹੈ। ਉਹ ਗ੍ਰੇਟ ਇੰਡੀਅਨ ਬਸਟਰਡ (ਗੋਡਾਵਣ) ਅਤੇ ਇਸ ਖੇਤਰ ਵਿੱਚ ਪਾਏ ਜਾਣ ਵਾਲੇ ਹੋਰ ਪੰਛੀਆਂ ਅਤੇ ਜਾਨਵਰਾਂ ਦੀ ਟ੍ਰੈਕਿੰਗ ਕੀਤੇ ਜਾਣ ਅਤੇ ਸ਼ਿਕਾਰ ਤੋਂ ਬਚਾਉਣ ਲਈ ਹਰ ਸੰਭਵ ਯਤਨ ਕਰਦੇ ਹਨ।

Other stories by Radheshyam Bishnoi

ਪੀ ਸਾਈਨਾਥ People’s Archive of Rural India ਦੇ ਮੋਢੀ-ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਉਹ ਕਈ ਦਹਾਕਿਆਂ ਤੋਂ ਦਿਹਾਤੀ ਭਾਰਤ ਨੂੰ ਪਾਠਕਾਂ ਦੇ ਰੂ-ਬ-ਰੂ ਕਰਵਾ ਰਹੇ ਹਨ। Everybody Loves a Good Drought ਉਨ੍ਹਾਂ ਦੀ ਪ੍ਰਸਿੱਧ ਕਿਤਾਬ ਹੈ। ਅਮਰਤਿਆ ਸੇਨ ਨੇ ਉਨ੍ਹਾਂ ਨੂੰ ਕਾਲ (famine) ਅਤੇ ਭੁੱਖਮਰੀ (hunger) ਬਾਰੇ ਸੰਸਾਰ ਦੇ ਮਹਾਂ ਮਾਹਿਰਾਂ ਵਿਚ ਸ਼ੁਮਾਰ ਕੀਤਾ ਹੈ।

Other stories by P. Sainath
Translator : Joshua Bodhinetra

ਜੋਸ਼ੁਆ ਬੋਧੀਨੇਤਰਾ, ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ (ਪਾਰੀ) ਵਿੱਚ ਭਾਰਤੀ ਭਾਸ਼ਾਵਾਂ ਦੇ ਪ੍ਰੋਗਰਾਮ ਪਾਰੀਭਾਸ਼ਾ ਦੇ ਸਮੱਗਰੀ ਮੈਨੇਜਰ ਹਨ। ਉਨ੍ਹਾਂ ਨੇ ਜਾਦਵਪੁਰ ਯੂਨੀਵਰਸਿਟੀ, ਕੋਲਕਾਤਾ ਤੋਂ ਤੁਲਨਾਤਮਕ ਸਾਹਿਤ ਵਿੱਚ ਐੱਮਫਿਲ ਕੀਤੀ ਹੈ। ਉਹ ਬਹੁਭਾਸ਼ਾਈ ਕਵੀ, ਅਨੁਵਾਦਕ, ਕਲਾ ਆਲੋਚਕ ਹੋਣ ਦੇ ਨਾਲ਼-ਨਾਲ਼ ਸਮਾਜਿਕ ਕਾਰਕੁਨ ਵੀ ਹਨ।

Other stories by Joshua Bodhinetra