তাদের হাসির কলকলানিতে আমাদের মনে কৌতূহল জাগে। গুটিকয় মেয়ে লাফ-দড়ি নিয়ে লাফাচ্ছে, কয়েকটা ছেলে ক্রিকেট খেলায় নিমগ্ন, কিছু বাচ্চা দৌড়াদৌড়ি করছে, কেউবা আবার একপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বড় খেলার মাঠ জুড়ে স্কুলের বন্ধুদের কার্যকলাপ দেখছে।

পুণে জেলার দৌন্দ তালুকে পারির গ্রাইন্ডমিল গান প্রকল্পের জন্য শ্যুটিং এবং রেকর্ডিং পর্ব সেদিনকার মত গুটিয়ে ফেরার সময়ে মালথান গ্রামের ইয়েওলে বস্তির জেলা পরিষদ প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের হাসির শব্দে আমরা আকর্ষিত হই।

একদিকে ক্রিকেট খেলা চলেছে, সে খেলায় চূড়ান্ত উৎসাহ নজরে আসে এবং যে ছেলেটির হাতে এখন ব্যাট সে ক্যামেরা বাগিয়ে আমাদের অগ্রসর হতে দেখে, কিন্তু ঝটিতি বোলারের দিকে চোখ ফেরায় এবং বলে সজোরে বাড়ি মারে। ফিল্ডাররা বল ধরার জন্য দৌড় লাগায়।

কয়েকটি মেয়ে আমাদের চারপাশে ভিড় করে। গান করার ব্যাপারে তাদের একটু উৎসাহ দেওয়া দরকার, প্রথম প্রথম একটু লজ্জা পাচ্ছিল তারা। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে তারা একে অন্যকে আশ্বস্ত করল এবং তারা যে গান ঠিকাঠাক গাইছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিল। পারির সদস্য জিতেন্দ্র মাইদ পড়ুয়াদের একটা খেলা শেখালেন, নাচগান করতে করতে একটা বৃত্ত তৈরি করতে হবে এবং তিনি যা যা বলবেন এবং করে দেখাবেন সবকিছু তাদের হুবহু করে দেখাতে হবে।

ভিডিও দেখুন: ‘এসো আমার ছোট্ট পুতুল, তোমায় আমি গণনা শেখাই’, এই গান গাইছে পুণে জেলার দৌন্দ তালুকের ইয়েওলে বস্তির জেলা পরিষদ প্রাথমিক স্কুলের মেয়েরা

তাদের শিক্ষিকা সুনন্দা জগদলে আমাদের জানান, “লেখাপড়ার সময় শেষ হয়ে গেলে তাদের আমরা খেলাধুলার জন্য একঘন্টা সময় দিই।” স্কুলের অধ্যক্ষ, সন্দীপ রাসাল কার্যালয় এবং শ্রেণিকক্ষগুলো আমাদের ঘুরিয়ে দেখান। তিনি বলেন, “এখানে একটা কম্পুটারও আছে। স্কুলবাড়িতে আমরা সংস্কার এবং রঙের কাজও করছি, আপনারা যেভাবে পারেন আমাদের সাহায্য করুন।” আমাদের তিনি নিয়ে যান পাশেই একটা ছাঊনি দেওয়া জায়গায়। এই জায়গাটার নাম তিনি দিয়েছেন, তাঁদের ‘আধুনিক’ রান্নাঘর – পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থান, বস্তা নয় বরং টিনের পাত্রে আনাজ মজুত করে রাখা হয়েছে – এইখানেই স্কুলের মিড-ডে মিল বা মধ্যাহ্নভোজন রাঁধা হয়।

বিদ্যালয়ে মোট ৪৩ জন পড়ুয়া – ২১ জন মেয়ে এবং ২২ জন ছেলে, তাদের বয়স ৬ থেকে ১০-এর মধ্যে। ১ম শ্রেণি থেকে ৪র্থ শ্রেণি সবগুলোতেই মোটামুটি ১০ জন করে পড়ুয়া। এদের অধিকাংশই মালথান গ্রামের, কয়েকজন পাশের গ্রাম মুগাঁও থেকে এসেছে। রাসাল আমাদের জানান, “মালথানে দশম শ্রেণি অবধি পড়াশোনার জন্য একটা উচ্চ বিদ্যালয় আছে। আমাদের এই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ওখানে পড়তে যায়।”

একটা নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরি হচ্ছে – ঘরটা একটু অবিন্যস্ত অবস্থায় রয়েছে, মেঝের ওপর রঙের কৌটো ছড়ানো আছে। দূরের কোনায়, পুরোনো শাড়ি দিয়ে তৈরি দোলনা-বিছানায় একটি শিশু নিদ্রামগ্ন। “ও আমার ছোট মেয়ে। আমাদের বড় মেয়েটিও এই স্কুলেই পড়ে,” সুনন্দা বলেন। বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং শিক্ষিকা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী; যৌথভাবে তাঁরা এই স্কুল পরিচালনা করেন, স্পষ্ট এক গর্ববোধ তাঁদের মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয় ঘিরে, তাঁদের আশা আগামী দিনে এখানে আরও উন্নতি সাধিত হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী বলতে তাঁরা দু’জন। এখান থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দৌন্দ শহরে তাঁদের নিবাস, নিজেদের গাড়ি করে প্রতিদিন স্কুলে আসেন তাঁরা।

Young boys standing together outside school
PHOTO • Binaifer Bharucha
Girls skipping under the tree on their school playground
PHOTO • Binaifer Bharucha

বিদ্যালয়ের ২১ জন ছাত্রী এবং ২২ জন ছাত্র প্রতিদিন দুপুরে একঘন্টার ক্রীড়া বিরতির সময় মাঠে এসে ভিড় করে

এখন ব্যাট করার পালা কার, তাই নিয়ে ইতিমধ্যেই খুদে ক্রিকেটারদের মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেছে। তাদের মধ্যে থেকে একজন ঝটপট মাথা খাটিয়ে বুদ্ধি দিল বাইরে থেকে অতিথিরা এসেছেন, তাঁদের সামনে নিজেদের সংযত থাকা আশু কর্তব্য। অতএব এ যাত্রা যুদ্ধের সমাপ্তি হল, নিজেদের মধ্যে মল্লযুদ্ধের প্রবল সম্ভাবনা এড়ানো গেল।

৩টে নাগাদ খেলার পর্ব মিটলে শিক্ষিকা মহোদয়া তাদের উদ্দেশ্যে হাঁক পেড়ে আসবাবপত্র গুছিয়ে নিতে, শ্রেণিকক্ষ থেকে তাদের ব্যাগ, জলের বোতল সরিয়ে ফেলতে এবং লাফ-দড়ি, ব্যাট, বল ইত্যাদি যথাযথ স্থানে রাখতে আদেশ দিলেন। সবাই হাত লাগাল। ছাত্রী এবং ছাত্ররা সকলেই নীরবে কাজকর্ম সেরে ফেলল এবং মাঠে এসে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াল। তারপর রোজকার নিয়মমাফিক গুরুগম্ভীর গলায় ‘বন্দে মাতরম’ গাইতে শুরু করল।

Teachers standing outside school
PHOTO • Samyukta Shastri

সুনন্দা জগদলে এবং তাঁর স্বামী সন্দীপ রাসাল স্পষ্ট এক গর্ববোধ নিয়ে যৌথভাবে এই স্কুল পরিচালনা করেন

গানের শেষে ‘ভারত মাতা কী জয়’ শ্লোগানে কেমন যেন তাল কেটে গেল এবং সব গুলিয়ে গেল, শিক্ষক তাতে ভয়ানক রেগে যান। জগদলে আবার করে ঠিকমত শ্লোগান দেওয়ার আদেশ দেন এবং উঁচু শ্রেণির পড়ুয়াদের হাল ধরতে বলেন। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ভালো ফল পাওয়া গেল, অবশেষে প্রার্থনা সভা ভঙ্গ হল। ব্যস তারা এবার অধ্যক্ষের চারপাশে এসে ভিড় করল অত্যন্ত জরুরি এক প্রশ্ন নিয়ে: “স্যার, আজ আমাদের বাড়ির কাজে কী করতে হবে?”

“আজ আমরা সংখ্যা গণনা শিখেছি। তোমাদের শেখা সংখ্যার স্তর অনুযায়ী তোমরা ১০০ অথবা ৫০০ পর্যন্ত সবকটা সংখ্যা লিখবে,” রাসাল বুঝিয়ে দেন। বিদ্যালয়ের সব বয়সের সকল পড়ুয়ার জন্য একটা শ্রেণিকক্ষই বরাদ্দ – ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্তরের কথা ওই সংখ্যার তারতম্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে।

“স্যার, আমরা ১ লক্ষ পর্যন্ত গণনা শিখেছি, আমরা কী তবে ১ লক্ষ পর্যন্তই লিখব?” অবশ্যই ৪র্থ শ্রেণির এক বড় ছাত্রের কাছ থেকে এই প্রশ্ন আসে।

ততক্ষণে মা-বাবারা আসতে শুরু করেন এবং পড়ুয়ারা তাঁদের সাইকেল স্কুটার এবং মোটরবাইকের পেছনে চেপে বাড়ি ফেরে। বাকি পড়ুয়ারা মাঠে বসে অপেক্ষা করে তাদের মা-বাবাদের জন্য। আমরাও বিদায় নিই, সেদিন তারা আমাদের জীবনে যে আনন্দ এনে দিল তা আমরা সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসি।

বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

ਨਮਿਤਾ ਵਾਇਕਰ ਇੱਕ ਲੇਖਿਕਾ, ਤਰਜਮਾਕਾਰ ਅਤੇ ਪੀਪਲਸ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ ਵਿਖੇ ਪ੍ਰਬੰਧਕੀ ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਉਹ 2018 ਵਿੱਚ ਪ੍ਰਕਾਸ਼ਤ 'The Long March' ਨਾਵਲ ਦੀ ਰਚੇਤਾ ਹਨ।

Other stories by Namita Waikar
Photographs : Binaifer Bharucha

ਬਿਨਾਈਫਰ ਭਾਰੂਚਾ ਮੁੰਬਈ ਅਧਾਰਤ ਫ੍ਰੀਲਾਂਸ ਫ਼ੋਟੋਗ੍ਰਾਫ਼ਰ ਹਨ ਅਤੇ ਪੀਪਲਸ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ ਵਿਖੇ ਫ਼ੋਟੋ ਐਡੀਟਰ ਹਨ।

Other stories by Binaifer Bharucha
Photographs : Samyukta Shastri

Samyukta Shastri is an independent journalist, designer and entrepreneur. She is a trustee of the CounterMediaTrust that runs PARI, and was Content Coordinator at PARI till June 2019.

Other stories by Samyukta Shastri
Editor : Sharmila Joshi

ਸ਼ਰਮਿਲਾ ਜੋਸ਼ੀ ਪੀਪਲਸ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ ਦੀ ਸਾਬਕਾ ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ ਅਤੇ ਕਦੇ ਕਦਾਈਂ ਲੇਖਣੀ ਅਤੇ ਪੜ੍ਹਾਉਣ ਦਾ ਕੰਮ ਵੀ ਕਰਦੀ ਹਨ।

Other stories by Sharmila Joshi
Translator : Smita Khator

ਸਮਿਤਾ ਖਟੋਰ ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ (ਪਾਰੀ) ਦੇ ਭਾਰਤੀ ਭਾਸ਼ਾਵਾਂ ਦੇ ਪ੍ਰੋਗਰਾਮ ਪਾਰੀਭਾਸ਼ਾ ਭਾਸ਼ਾ ਦੀ ਮੁੱਖ ਅਨੁਵਾਦ ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਅਨੁਵਾਦ, ਭਾਸ਼ਾ ਅਤੇ ਪੁਰਾਲੇਖ ਉਨ੍ਹਾਂ ਦਾ ਕਾਰਜ ਖੇਤਰ ਰਹੇ ਹਨ। ਉਹ ਔਰਤਾਂ ਦੇ ਮੁੱਦਿਆਂ ਅਤੇ ਮਜ਼ਦੂਰੀ 'ਤੇ ਲਿਖਦੀ ਹਨ।

Other stories by Smita Khator