রমার কাছে ১লা এপ্রিল ২০২২-এর সকালটা ছিল আর পাঁচটা সকালের মতোই। বাড়ির কাছেই গ্রামের যে কুয়োটি আছে, ভোর ৪.৩০টে বাজতে না বাজতেই রোজকার মতো জল ভরতে সেখানে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। তারপর কাপড়চোপড় কাচা, ঘরদোর সাফাই সেরে নিয়ে মায়ের সঙ্গে কাঞ্জি খাওয়ার পালা। সব সামাল দিয়ে অবশেষে কাজে বেরোন রমা, গন্তব্য নিজের গাঁ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে দিন্দিগাল জেলার বেদসান্দুর তালুকের নাটচি অ্যাপারেল কারখানা। অবশ্য, সন্ধ্যা নামার আগেই মহিলা সহকর্মীদের সঙ্গে নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন ইতিহাসের খাতায় – অবশেষে কাপড়ের কলে বিগত এক বছর ধরে চলতে থাকা যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অধ্যায়টির ইতি হয়।
“সত্যি বলতে কি, মনে হচ্ছে যেন অসাধ্য সাধন করেছি,” দিন্দিগাল চুক্তি প্রসঙ্গে রমার বক্তব্য। ইস্টম্যান এক্সপোর্টস নিয়ন্ত্রিত তামিলনাড়ুর দিন্দিগাল জেলার কল-কারখানায় চলতে থাকা লিঙ্গভিত্তিক হিংসা ও হেনস্থার অবসান ঘটাতে সেদিন স্বাক্ষরিত হয় এই চুক্তিটি – একদিকে ছিল তিরুপ্পুর কেন্দ্রিক ইস্টম্যান এক্সপোর্টস গ্লোবাল ক্লোদিং (নাটচি অ্যাপারেলের মালিক যারা), অন্যদিকে তামিলনাড়ু টেক্সটাইল অ্যান্ড কমন লেবার ইউনিয়ন (টিটিসিইউ)।
যুগান্তকারী এই চুক্তিটির সমর্থনে লিখিত রূপে একটি ইবিএ, অর্থাৎ ‘এনফোর্সিবল্ ব্র্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্ট’-এর কথা মেনে নেয় এইচ অ্যান্ড এম (H&M) নামের বহুজাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি, যাতে টিটিসিইউ এবং ইস্টম্যান এক্সপোর্টসের এই সমঝোতাটি বলবৎ করা যায়। এইচ অ্যান্ড এমের সদর দফতর সুইডেনে, তাদের হয়ে জামাকাপড় তৈরি করে ইস্টম্যান এক্সপোর্টসের অন্তর্ভুক্ত নাটচি অ্যাপারেল কোম্পানি। ফ্যাশন দুনিয়ায় চলতে থাকা লিঙ্গভিত্তিক হিংসার বিরুদ্ধে স্বাক্ষরিত বাণিজ্যিক চুক্তির ইতিহাসে এটি দ্বিতীয়।
টিটিসিইউ হল দলিত মহিলাদের পরিচালিত টেক্সটাইল শ্রমিকদের একটি সংগঠন, যার সদস্য রমা আজ চার বছর ধরে নাটচি অ্যাপারেলে কাজ করছেন। “এরকম একটা ব্র্যান্ড [এইচ অ্যান্ড এম] যে দলিত মহিলা শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে চুক্তি করবে, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি,” জানালেন তিনি, “হাজারটা অন্যায় করার পর অবশেষে একটা সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।” ট্রেড ইউনিয়ন ও এইচ অ্যান্ড এমের এই সমঝোতাটি ভারতের ইতিহাসে প্রথম, এনফোর্সিবল্ ব্র্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্ট বা ইবিএ। ইস্টম্যান এক্সপোর্টস যদি টিটিসিইউকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে, তাহলে আইনানুগ এই চুক্তিটির আওতায় তাদের সরবরাহকারী সংস্থাটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে এইচ অ্যান্ড এম।
সমঝোতাটা হল বটে, তবে বড্ড দেরি করে। একটা গোটা বছর পেরিয়ে গেছে, ধর্ষণ শেষে খুন হয়েছিলেন নাটচি অ্যাপারেলে কর্মরত দলিত বস্ত্র শ্রমিক জেয়াশ্রী কাথিরাভেল (২০)। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে খুন হওয়ার আগে মাসের পর মাস কারখানার কর্মকর্তার হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন জেয়াশ্রী। কর্মকর্তাটি যে সামাজিক রূপে প্রভাবশালী জাতির মানুষ, অর্থাৎ তথাকথিত উচ্চবর্ণ, সেটা বলাই বাহুল্য। তাঁর বিরুদ্ধে এই অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের পর নাটচি অ্যাপারেল এবং তাদের অভিভাবক সংস্থা ইস্টম্যান এক্সপোর্টসের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠে ক্ষোভের আগুন। ভারতের বৃহত্তম পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম এই প্রতিষ্ঠানটি এইচ অ্যান্ড এম, গ্যাপ ও পিভিএইচের মতো বহুজাতিক ফ্যাশন কোম্পানিদের সরবরাহ করে। জেয়াশ্রী খুন হওয়ার পর উক্ত ফ্যাশন কোম্পানিগুলির কাছে বিচারের দাবি জানায় ইউনিয়ন, শ্রমিক সমিতি ও মহিলা সংগঠনগুলির একটি বিশ্বজোড়া জোট। বলা হয়, “কাথিরাভেল পরিবারের উপর উত্তরোত্তর বেড়ে চলছে ইস্টম্যান এক্সপোর্টসের জোর-জবরদস্তি,” সুতরাং ওই বহুজাতিক সংস্থাগুলি যেন অচিরেই “পদক্ষেপ” নেয়।
তবে জেয়াশ্রীর সঙ্গে যা কিছু ঘটেছিল, তা কিন্তু মোটেও কোনও বিরল ঘটনা নয়। তাঁর মৃত্যুর পর নাটচি অ্যাপারেলে তাঁদের সঙ্গে ঘটতে থাকা হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে একে একে এগিয়ে আসেন অসংখ্য মহিলা শ্রমিক। মুখোমুখি দেখা করতে চাননি অনেকে, কিন্তু পারির সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা বলেছিলেন তাঁরা।
বস্ত্র শ্রমিক কোশলা (৩১) জানালেন: “[পুরুষ] সুপারভাইজাররা উঠতে বসতে অপমান করে আমাদের। কাজে যেতে একটু দেরি হলে বা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় মালপত্তর না বানাতে পারলেই চিল্লামিল্লি করত আমাদের উপর, আর চলত অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ।” দলিত জাতির এই শ্রমিক ক্লাস ১২ পাশ করার পর বস্ত্রশিল্পের দুনিয়ায় পা রাখেন, আজ থেকে বছর দশেক আগে। “সুপারভাইজাররা সবচেয়ে বেশি অত্যাচার করে দলিত শ্রমিকদের উপরেই – বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যের থেকে একচুলও এদিক-সেদিক হলে আর নিস্তার নেই! ‘মোষ’, ‘কুত্তি’, ‘বাঁদর’, মুখে যা আসত তা উগরে দিত। এমনকি কয়েকজন কর্মকর্তা তো আমাদের গায়ে হাত দিতেও চেষ্টা করত হরদম, এছাড়াও চলত আমাদের পোশাক-আশাক নিয়ে আজেবাজে কথা কিংবা ধরুন মেয়েদের শরীর নিয়ে নোংরা নোংরা চুটকি।”
নিজের রোজগারে আরও পড়াশোনা করবেন এই ভেবে গ্র্যাজুয়েশনের পর কারখানায় কাজে যোগ দেন লতা। (তাঁর মতো শ্রমিকেরা দৈনিক আট ঘণ্টা খেটে মাত্র ৩১০ টাকা হাতে পান)। কিন্তু সেখানে চলতে থাকা নারকীয় পরিস্থিতি তাঁকে বিচলিত করে তোলে। “মরদ ম্যানেজার, সুপারভাইজার, মিস্ত্রি – সব্বাই গায়ে হাত দিত আমাদের, আর নালিশ জানানোর মতোও কেউ ছিল না,” বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন তিনি।
লতার কথায়: “ধরুন কোনও মেকানিক আপনার সেলাইমেশিন সারতে এল, সে তখন আপনার গায়ে হাত দেবে, যৌন সুবিধে নিতে চাইবে। আপনি মানা করলে সে আপনার যন্তরটা সারাবেই না, তখন নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা মেনে উৎপাদন করা মাথায় উঠবে আপনার – ওমনি আপনাকে শাপশাপান্ত করার সুযোগ পেয়ে যাবে সুপারভাইজার আর ম্যানেজার। কখনও কখনও তো সুপারভাইজার মহিলা শ্রমিকদের পাশেই দাঁড়িয়ে পড়বে আর গায়ে গা ঘসতে থাকবে।” নিজের গ্রাম থেকে রোজ ৩০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কাজে আসেন লতা।
লতার থেকে জানা গেল, বিচারের কোনও রাস্তাই নাকি খোলা ছিল না মহিলাদের কাছে: “নালিশটা কার কাছে ঠুকবে বলুন তো? উঁচু জাতির মরদ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে এক দলিত মেয়ে, কে-ই বা মানবে সেকথা?”
“নালিশ জানানোর মতো আর আছেই বা কে বলুন তো?” সেই একই সওয়াল করলেন থিভ্যা রাকিনি (৪২)। টিটিসিইউয়ের রাজ্য সভাপতি হওয়ায় নাটচি অ্যাপারেলে চলতে থাকা লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। জেয়াশ্রীর মৃত্যুর আগে, ২০১৩ সালে দলিত মহিলাদের পরিচালনায় একটি স্বতন্ত্র শ্রমিক সংগঠন রূপে আত্মপ্রকাশ করে টিটিসিইউ। লৈঙ্গিক হিংসার বিরুদ্ধে টিটিসিইউয়ের ছত্রছায়ায় জোট বাঁধেন তামিলনাড়ুর শ্রমিকেরা। ১২টি জেলা জুড়ে কোয়েম্বাটোর, দিন্দিগাল, ইরোড ও তিরুপ্পুরের বস্ত্রশিল্পে কর্মরত প্রায় ১১,০০০ শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব করে এই ট্রেড ইউনিয়নটি। সদস্যদের ৮০ শতাংশই কাজ করেন বস্ত্র ও পোশাক শিল্পে। এছাড়াও পোশাকের কারখানায় চলতে থাকা জাতভিত্তিক হিংসা ও মাইনে চুরির বিরুদ্ধেও তাঁরা লড়াই করছেন।
“চুক্তিটার আগে অবধি [নাটচির] কারখানায় কোনও যথাযথ অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি [ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি] ছিল না,” জানালেন থিভ্যা। দলিত শ্রমিক মিনি জানালেন যে খাতায়কলমে একখানা আইসিসি ছিল বটে, তবে ওরা শুধু মহিলাদের উপর চোটপাট করেই খান্ত দিত। ২৮ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম থেকে রোজ কাজে আসেন মিনি। “কোথায় আমাদের নালিশগুলো শুনবে, তা না উল্টে আমাদেরকেই জ্ঞান দিত কেমনভাবে বসতে হবে, কেমন পোশাক-আশাক পরতে হবে, এইসব,” বলে উঠলেন মিনি, “আমাদের তো বাথরুমেও যেতে দিত না ওরা, জোর করে ওভারটাইম করাত, মায় পাওনা ছুটিগুলোও কেড়ে নিত।”
জেয়াশ্রী হত্যার পর যে আন্দোলনটি শুরু হয়, সেখানে যৌন হিংসার বিরুদ্ধে লড়া ছাড়াও বাথরুমে যেতে না দেওয়া, গায়ের জোরে বাড়তি সময় খাটানো ইত্যাদি নানান বিষয়ে সরব হয় টিটিসিইউ।
থিভ্যা জানালেন, “কোম্পানিটা তো ইউনিয়ন-বিরোধী, তাই সংগঠনের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সেটা গোপন রাখেন মহিলারা।” তবে জেয়াশ্রী খুন হতেই বাঁধ ভাঙে প্রতিবাদের। কোম্পানির হাজার চোখরাঙানি সয়েও সংগ্রামের পথে হাঁটেন রমা, লতা ও মিনির মতো অগুনতি শ্রমিক মহিলারা। একবছরেরও বেশি সময় ধরে অজস্র মিছিলে হাঁটেন প্রায় দুশো মহিলা শ্রমিক। জাস্টিস ফর জেয়াশ্রী আন্দোলনের দিকে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির নজর কাড়তে একের পর এক জবানবন্দি দিতেন থাকেন তাঁরা।
শেষমেশ এবছর এপ্রিলে এইচ অ্যান্ড এমের সঙ্গে এনফোর্সিবল্ ব্র্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্টে দস্তখত করে টিটিসিইউ সহ আরও দুটি সংগঠন যারা আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের সরবরাহ শৃঙ্খলায় চলতে থাকা নির্যাতন ও হেনস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল – এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স (এএফডাব্লিউএ) ও গ্লোবাল লেবার জাস্টিস-ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস্ ফোরাম (জিএলজে-আইএলআরএফ)।
এই তিনটি সংগঠনের তরফ থেকে একটি যৌথ প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে যে ভারতের ইতিহাসে দিন্দিগাল চুক্তিটিই সর্বপ্রথম এনফোর্সিবল্ ব্র্যান্ড অ্যাগ্রিমেন্ট। এছাড়াও এটি “দুনিয়ার প্রথম ইবিএ যেটিতে পোশাক কারখানা ও তাদের জন্য বস্ত্র তৈরি করে যারা সেই কল-কারখানাগুলিও স্থান পেয়েছে।”
দস্তখতকারী প্রতিটি পক্ষই কথা দিয়েছে “যাতে লিঙ্গ, জাতি ও পরিযান-বিষয়ক বৈষম্য দূর করা হয়; যাতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়; এবং বস্ত্রশিল্পের ক্ষেত্রে যাতে পারস্পরিক সম্মানের রীতি কায়েম হয়।”
বিশ্বব্যাপী প্রচলিত শ্রম-মান বলবৎ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের হিংসা ও হেনস্থা বিধি সংক্রান্ত নির্দেশ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে এই চুক্তিটি। এর ফলে সুরক্ষিত হবে দলিত মহিলা শ্রমিকদের অধিকার, তাঁদের সংগঠিত হওয়ার ও ইউনিয়ন গড়ে তাতে যোগদান করার অধিকার। যাবতীয় নালিশ যথাযথভাবে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি অবধি পৌঁছানো এবং সেগুলি খতিয়ে দেখে সমাধানের ব্যবস্থা কমিটি যাতে করতে পারে, সেই প্রক্রিয়াটিও এই চুক্তির মাধ্যমে জোরদার হবে। উপরন্তু এই চুক্তির বিষয়বস্তু যাতে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা হয় সেটা সুনিশ্চিত করতে নজরদারি চালাবে স্বাধীন মূল্যায়নকারীদের দল, এবং কোথাও কোনও গড়বড় হলে এইচ অ্যান্ড এমের তরফে ব্যবসায়িক স্তরে তার মাসুল গুনতে হবে ইস্টম্যান এক্সপোর্টসকে।
নাটচি অ্যাপারেল ও ইস্টম্যান স্পিনিং মিলসে (দিন্দিগালে অবস্থিত) কর্মরত মোট ৫,০০০ শ্রমিকের প্রত্যেকেই দিন্দিগাল চুক্তিটির আওতায় পড়ছেন। তাঁদের সিংহভাগই মহিলা এবং দলিত। থিভ্যার বললেন, “এই বন্দোবস্তটির ফলে বস্ত্রশিল্পে কর্মরত মহিলাদের কাজের পরিবেশ উন্নত হবে। দলিত মহিলা শ্রমিকেরা সংগঠিত হলে যে কী করতে পারে, এটা তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ।”
“আমার সঙ্গে বা জেয়াশ্রীর মতো আমার অন্যান্য বোনদের সঙ্গে যা যা হয়েছে, ওসব নিয়ে আর দুঃখ করি না,” বললেন মল্লি (৩১), “ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাঁচতে চাই, যাতে এই চুক্তিটির বলে বলীয়ান হয়ে এটা নিশ্চিত করতে পারি যে জেয়াশ্রীর মতো দুর্দশা আর কারও না হয়।”
ইতিমধ্যেই এই চুক্তিটির প্রভাব দেখা যাচ্ছে। “বন্দোবস্তটা হওয়ার পর থেকে কাজের পরিবেশে অনেকটা বদল এসেছে। বাথরুম যাওয়া আর দুপুরে খাওয়ার জন্য ছুটি মিলছে সময়মতো। কেউ আর আমাদের ছুটিছাটা আটকাচ্ছে না – বিশেষ করে শরীর খারাপ হলে। জোরজবরদস্তি অতিরিক্ত কাজও আর করতে হয় না। সুপারভাইজাররা আগের মতো মহিলাদের হেনস্থা করে না। এমনকি নারী দিবস আর পোঙ্গালের সময় তো কর্মীদের মধ্যে মণ্ডা-মিঠাই অবধি বিলোচ্ছে!” জানালেন লতা।
রমা সত্যিই খুশি। “পরিস্থিতি বদলেছে। সুপারভাইজাররা বেশ ইজ্জত দিয়ে কথা বলে আমাদের সঙ্গে।” শ্রমিক আন্দোলন চলাকালীন একটানা কাজ করেছেন তিনি, ঘণ্টায় ৯০টিরও বেশি অন্তর্বাস সেলাই করতেন। এ হেন খাটাখাটনির ফলে পিঠে বড্ড ব্যথা হয়, তবে তাঁর মতে এটা বদলানোর নয়, “এই জাতীয় কল-কারখানায় কাজ করলে এসব তো নিত্য লেগেই থাকে।”
সন্ধ্যা নেমেছে, এবার পালা কোম্পানির বাসে চেপে বাড়ি ফেরার, “শ্রমিকদের জন্য আরও অনেক কিছু করার আছে,” এই বলে শেষ করলেন রমা।
এই প্রতিবেদনে যে সকল বস্ত্র শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে গোপনীয়তা রক্ষার্থে তাঁদের নামগুলি পরিবর্তন করা হয়েছে।
অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)