সে এমন এক দেশে থাকে যেখানে হাসপাতালে অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়, যেখানে চুল্লি নিজেই নিজের আগুনে পুড়ে ছাই হয়। হায় রে ইসমাইল... মানুষটা কেমন কাটা ছাগলের মতো ছটফট করছিল, একটিবার শুধু একটিবার নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য! সে থাকত এমন এক দেশে যেখানে ডাক্তারের কপালে জোটে কারাবাস, আর চাষিদের প্রাপ্য দেশদ্রোহীর তকমা। হায় রে সাতরাজার ধন নাজিয়া... হায় রে সোহরাব... হায় রে আয়লীন... কোন জাদুবলে সে এবার দুমুঠো ভাত জোগাড় করবে ওদের জন্য? এমন এক দেশে বাস তার, যেখানে মানুষের ঠাঁই খরচের খাতায় আর গরু সাক্ষাৎ ঈশ্বর। যাও বা একচিলতে জমি ছিল ওর, সেটাও তো বেচে দিতে বাধ্য হয়েছে ওর শোহরের চিকিৎসার জন্য... কোথায় গুঁজবে মাথাটুকু ও এরপর?

সে এমন এক দেশে থাকে যেখানে মূর্তি, শৌচালয় আর নাগরিকত্বের ঝুটা প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে একের পর এক গণহত্যা জায়েজ হয়ে যায়, কেউ তেমন পাত্তা দেয় না। কবরস্থানের সামনে অনন্ত লাইন, মাতমের মেলা বসেছে যেন... লাইনের শেষটুকুর দেখা যদিও বা ওর নসীবে থাকে, কিন্তু এই যে দিনরাত এক করে যারা কবর খুঁড়ছে, তাদের পারিশ্রমিক ও মেটাবে কেমন করে? সে এমন এক দেশে থাকে যেখানে চশমা আঁটা বাবুবিবিরা মহার্য্য কফিতে চুমুক দিতে দিতে তর্ক জোড়ে – সমাজব্যবস্থা কি আজকেই মুখ থুবড়ে পড়েছে, নাকি আদতে তা শুরু থেকেই পঙ্গু ছিল?

পাগলের মতো কাঁদছিল সোহরাব। কুঁকড়ে পাথর হয়ে গিয়েছিল নাজিয়া। এসব দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে মায়ের ছেঁড়া ওড়নাটা ধরে টানছিল আয়লীন। অ্যাম্বুল্যান্সওয়ালা আরও ২,০০০ টাকা লাগবে বলে গালাগাল পাড়ছিল। পড়শিরা বলছিল ওর শোহরের লাশটাকে ও যেন একদম না ছোঁয়। গতকাল রাতেই কারা যেন এবড়োখেবড়ো অক্ষরে "শালা কাটার বাচ্চা" লিখে রেখে গেছে ওর দুয়ারে। লোকজন ভয়ে ভয়ে ফিসফিস করছিল আবার নাকি লকডাউন হবে।

ওদের পাড়ার রেশন দোকানের মালিককে গতকাল পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। সে নাকি ৫০ বস্তা চাল বেআইনি ভাবে মজুত করে রেখেছিল। কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারায় সোহরাব। বাবার কাফনটা ছাড়তেই চাইছিল না নাজিয়া,  কোনাটা এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছিল যে ওর আঙুল থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ছিল। বিদায় বিদায় লালচে বেলায় চাঁদপোড়া অশরীর। চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়েছিল আয়লীন। ও এমন এক দেশে থাকে যেখানে নিলামের হাঁকে বিকোয় সবকিছুই, তা সে হোক রোগহর টিকা বা রেলগাড়ি বা মন্ত্রী এমনকি সদ্যোজাত শিশুও।

একফালি ধানের খেত ছিল ওর। আজ তাও গেছে, তবে শিশি ভরা ফলিডল এখনও রাখা আছে বাইরের ছাউনিটার তলায়, ঠিক সেই জায়গায় যেখানে ইসমাইল তার দুধসাদা জোব্বাটা ভাঁজ করে রাখতো সযত্নে। মানুষটা ওদের গাঁয়ের মুয়াজ্জিন ছিল কিনা। এক এক করে ওর আম্মি, শোহর, ভাইজান, সব্বাইকে কেড়ে নিয়েছে আনকোরা এই নতুন অসুখ... তবে জীবনের মসজিদে মিহরাব আর ক্বিবলা হয়ে ফুটে আছে ওর তিন সন্তান। ৯ বছরের নাজিয়া, ১৩ বছরের সোহরাব, আর ৬ মাসের ছোট্ট ফুটফুটে আয়লীন। পরের সিদ্ধান্তটা নেহাতই সহজ ওর জন্য, তাই না?

Look my son, there’s a heart in the moon —
With a million holes all soft mehroon.

ঘুমঘুমি খোকা মোর মড়কের চাঁদ  —
আঁঝলা জনমে তার ঝাঁঝরা নিষাদ।


লাল বুনো লাল, উড়কি সকাল, গোসলের নোনা জল —
মেহফিলে তার হাসুহানার কথা রাখে ফলিডল।


Hush my darling, learn to be brave —
Sleep like a furnace, sing like a grave.

ফুলকি মা তোর রঙ মেলানোর আরশিমুখর দিনে,
লাশকাটি মন বিরসা তখন অবেলার কেরোসিনে।


This land is a cinder,
Thirsty cylinder,
Trapped like a mirror in the dream of a shard —
We are but a number,
Hungry November,
Black like a rose or a carrion bird.


জঠর জোড়া
পুতুলপোড়া
মসনবী ওই হাওয়ার কল!
আগুন কালো হেঁই সামালো
সাত শাহিনের শিশমহল।


God is a vaccine,
God is a pill,
God is a graveyard’s unpaid bill.

পোড়ামাটি রাত। শাঁখের করাত। কবরে ঘুমর হবো মেহরুনি গন্ধে।
তবু কাটি সিঁধ। বকেয়া রশিদ। কানামাছি খোদা মোর ওষুধের ছন্দে।


Ballad of a bread,
Or a sky in a scar-tissue
marching ahead.

বেদুইনা কয়,
"নুসরতে নিশিডাকে
হবো অসময়।"


Red is a nusrat,
Red is a tomb,
Red is a labourer’s cellophane womb.

ভাঙা নোলকের মতো শ্যাওলা
রাঙা পলিথিনে ঢাকা কবরে  —
আমি অসুখের মতো একলা
"ইতি ব্যঙ্গমা" লেখা শহরে।


PHOTO • Labani Jangi

চেনা কাফনের মতো সন্ধ্যা,
এঁটো চুপকথা একরত্তি  —
আমি খুঁজি তাই নিশিগন্ধা,
মিছে ঘরকুনো তিনসত্যি।


Death is a ghoomāra, hush baby hush!
Look to the flames, how silhouettes blush

আয় ঘুম, যায় ঘুম, আঁজলা শিরিন  —
জন্ম জানাজা মোর, রঙ আলাদিন।


সুধন্য দেশপাণ্ডের কণ্ঠে মূল কবিতাগুলি শুনুন।

(সুধন্য দেশপাণ্ডে জন নাট্য মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ও পরিচালক, একই সঙ্গে তিনি লেফ্টওয়ার্ড বুকস্-এর একজন সম্পাদকও।)

**********

শব্দার্থ

ফলিডল : কীটনাশক বিষ

মাতম : বিলাপ, শোক

কাফন : শবদেহ ঢাকা দেওয়ার কাপড়

জোব্বা : ঢিলেঢালা আলখাল্লা

মুয়াজ্জিন : মসজিদের মিনার থেকে নামাজের ডাক দেয় যে

মিহরাব : ক্বিবলার দিকনির্দেশক মসজিদের অর্ধচন্দ্রাকৃতি নকশাবিশেষ

ক্বিবলা : কাবা শরিফের অভিমুখ

মেহফিল : মিলনায়তন

মসনবী : দোহার ছন্দে বাঁধা ফারসি কবিতা

শাহিন : বাজপাখি

ঘুমর : রাজস্থানী লোকনৃত্য

মেহরুনি : মেরুন বর্ণ বিশিষ্ট

নুসরত : বিজয়, সাহায্য, প্রতিরোধ

শোহর : স্বামী

শিরিন : সুন্দর, মধুর, কোমল

জানাজা : কবর দেওয়ার আগের নামাজ

Poems and Text : Joshua Bodhinetra

ਜੋਸ਼ੁਆ ਬੋਧੀਨੇਤਰਾ, ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ (ਪਾਰੀ) ਵਿੱਚ ਭਾਰਤੀ ਭਾਸ਼ਾਵਾਂ ਦੇ ਪ੍ਰੋਗਰਾਮ ਪਾਰੀਭਾਸ਼ਾ ਦੇ ਸਮੱਗਰੀ ਮੈਨੇਜਰ ਹਨ। ਉਨ੍ਹਾਂ ਨੇ ਜਾਦਵਪੁਰ ਯੂਨੀਵਰਸਿਟੀ, ਕੋਲਕਾਤਾ ਤੋਂ ਤੁਲਨਾਤਮਕ ਸਾਹਿਤ ਵਿੱਚ ਐੱਮਫਿਲ ਕੀਤੀ ਹੈ। ਉਹ ਬਹੁਭਾਸ਼ਾਈ ਕਵੀ, ਅਨੁਵਾਦਕ, ਕਲਾ ਆਲੋਚਕ ਹੋਣ ਦੇ ਨਾਲ਼-ਨਾਲ਼ ਸਮਾਜਿਕ ਕਾਰਕੁਨ ਵੀ ਹਨ।

Other stories by Joshua Bodhinetra
Paintings : Labani Jangi

ਲਾਬਨੀ ਜਾਂਗੀ 2020 ਤੋਂ ਪਾਰੀ ਦੀ ਫੈਲੋ ਹਨ, ਉਹ ਵੈਸਟ ਬੰਗਾਲ ਦੇ ਨਾਦਿਆ ਜਿਲ੍ਹਾ ਤੋਂ ਹਨ ਅਤੇ ਸਵੈ-ਸਿੱਖਿਅਤ ਪੇਂਟਰ ਵੀ ਹਨ। ਉਹ ਸੈਂਟਰ ਫਾਰ ਸਟੱਡੀਜ ਇਨ ਸੋਸ਼ਲ ਸਾਇੰਸ, ਕੋਲਕਾਤਾ ਵਿੱਚ ਮਜ਼ਦੂਰ ਪ੍ਰਵਾਸ 'ਤੇ ਪੀਐੱਚਡੀ ਦੀ ਦਿਸ਼ਾ ਵਿੱਚ ਕੰਮ ਕਰ ਰਹੀ ਹਨ।

Other stories by Labani Jangi