“যমুনার সঙ্গে আমাদের নাড়ির যোগ। আজন্মকাল নদীর পাড়ে বসবাস করে এসেছি আমরা।”

তাঁর পরিবারটির সঙ্গে নদীর বন্ধন যে কতখানি নিবিড়, সেটাই বলছিলেন বিজেন্দর সিং। বহু প্রজন্ম ধরে মাল্লা (মাঝি) সম্প্রদায়ের এই মানুষজন দিল্লির যমুনা সংলগ্ন প্লাবনভূমিতে থেকেছেন, লাঙল চষেছেন। ১,৩৭৬ কিলোমিটার লম্বা এই নদীটির ২২ কিলোমিটার পড়ে ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরেটরির মধ্যে, এখানে ৯৭ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত তার প্লাবনভূমি।

বিজেন্দর সহ পাঁচ হাজারেরও অধিক চাষির কাছে পাট্টা রয়েছে, অর্থাৎ ৯৯ বছর অবধি এ জমির মালিকানা তাঁদের।

কিন্তু বুলডোজার এসে চিরকালের মতো পাল্টে দিয়ে যায় সমস্ত হিসেব-নিকেশ।

জানুয়ারি ২০২০ সালের হাড়কাঁপানো হিমের মধ্যে, প্রস্তাবিত একখান বায়োডাইভারসিটি (জীববৈচিত্র্য) উদ্যানের জন্য জমিন ফাঁকা করবে বলে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে পৌরসংস্থার বুলডোজার, নিমিষে মাটিতে মিশে যায় ঘাম ঝরানো ফসল। তড়িঘড়ি পরিবার সমেত কাছেই গীতা কলোনির একটি ভাড়াবাড়িতে গিয়ে মাথা গোঁজেন বিজেন্দর।

স্ত্রী আর তিনটি ছেলের (প্রত্যেকেরই বয়স ১০ বছরের কম) মুখে চাট্টি নুনভাত তুলে দিতে শহরে গাড়ি চালানো শুরু করেন এই রাতারাতি জীবিকা খুইয়ে বসা ৩৮ বছরের চাষিটি। তবে উনি একা নন, জমিন ও রুজিরুটি হারানো অসংখ্য মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় রংমিস্তিরি, মালি, পাহারাদার বা মেট্রো স্টেশনে সাফাইকর্মীর কাজ খুঁজতে।

“লোহা পুল থেকে আইটিও-র রাস্তায় যাঁরা সাইকেলে করে কচুরি বেচতেন, তাঁদের সংখ্যাটা কতখানি বেড়ে গেছে দেখুন। এঁরা সব্বাই চাষি। জমিন ছিনিয়ে নিলে, একজন চাষি আর কীই বা করতে পারে?” সওয়াল করলেন বিজেন্দর।

PHOTO • Shalini Singh
PHOTO • Kamal Singh

বাঁদিকে: যমুনার প্লাবনভূমির অন্তর্গত এই বেলা এস্টেটে হরেক কিসিমের ফসল ফলাতেন কৃষকেরা। বায়োডাইভারসিটি পার্ক বানানো হবে বলে ২০২০ সালে প্রথমবার যেসব খেত-খামারের উপর বুলডোজার চলেছিল, তার মধ্যে এটি অন্যতম। ডানদিকে: নভেম্বর ২০২০, পুলিশ-পাহারায় দিল্লির বেলা এস্টেটের ফসল মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বুলডোজার

তার কয়েকমাস বাদেই, ২৪শে মার্চ ২০২০-এ দেশ জুড়ে নেমে আসে লকডাউন, উত্তরোত্তর বেড়ে চলা অভাব-অনটনে তলিয়ে যেতে থাকে পরিবারটি। বিজেন্দরের মেজছেলে (তখন ৬ বছর বয়স ছিল তার) সেরেব্রাল পলসিতে ভোগে, তার মাসিক ওষুধপত্রের জোগান দিতে দিতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। তাঁদের পরিবার সহ যে ৫০০টি মোট পরিবার বিতাড়িত হয়েছিল যমুনার তীর থেকে, ভিটেমাটি-রুটিরুজি এক নিমেষে হয়েছিল হাতছাড়া — তাদের পুনর্বাসনের জন্য কুটোটাও নাড়েনি রাজ্য প্রশাসন।

“অতিমারির আগে ফুলকপি, সবুজ লঙ্কা, সর্ষে, ফুল ইত্যাদি বেচে ৮,০০০-১০,০০০ টাকা কামাতাম প্রতি মাসে,” বলে উঠলেন কমল সিং। স্ত্রী, ১৫ বছর বয়সি একটি মেয়ে ১৬ ও ১২ বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর মতো একজন কৃষক যে এই কদিন আগেও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচেছিলেন, কণ্ঠভরা শ্লেষ নিয়ে সেকথা জানালেন তিনি।

একটিমাত্র মোষ ছিল তাঁদের, অতিমারির সময় সেটির দুধ বেচেই পেট চালাত কমলের পরিবার। মাসিক ৬,০০০ টাকা আয় হত, ও দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভবের সামিল। তাঁর কথায়, “আমার বাচ্চাগুলোর পড়াশোনার বড্ড ক্ষতি হয়েছিল। যেটুকু সবজি ফলাতাম তা দিয়ে পেটটুকু হয়ত ভরে যেত, কিন্তু ফসল তোলার আগেই ওনারা [আধিকারিকেরা] বুলডোজার চালিয়ে দিলেন, বলেছিলেন যে ওসব নাকি এনজিটির [ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইব্যুনাল] হুকুম।”

এ ধ্বংসলীলার মাসকতক আগে — ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে — এনজিটির থেকে যমুনার প্লাবনভূমি ঘিরে বেড়া দেওয়ার আদেশ পেয়েছিল দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ডিডিএ), যাতে ওই স্থানে একটি বায়োডাইভারসিটি পার্ক বানানো যায়। এছাড়া একটি সংগ্রহশালারও পরিকল্পনা ছিল।

“খদর — সবচাইতে উর্বর ভূমি — ঘিরে হাজার হাজার মানুষের পেট চলত নদীর ভরসায়, ওনাদের কী হবে শুনি?” স্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করলেন বলজিৎ সিং। (পড়ুন: ওরা বলে দিল্লিতে নাকি কোনও চাষি নেই? ) এই ৮৬ বছরের মানুষটি দিল্লির কৃষক সমবায় বহুমুখী সমিতির (দিল্লি পেসান্টস্ কোপারেটিভ মাল্টিপার্পাস সোসাইটি) সাধারণ সম্পাদক। ৪০ একর জমি তিনি ইজারায় দিয়েছেন কৃষকদের। “একের পর এক জীববৈচিত্র্য উদ্যান বানিয়ে যমুনার থেকে ফায়দা লুঠতে চায় সরকার,” বললেন তিনি।

PHOTO • Courtesy: Kamal Singh
PHOTO • Shalini Singh

বাঁদিকে: স্ত্রী ও তিন সন্তানের সঙ্গে, ৪৫ বছর বয়সি কৃষক কমল সিং। অতিমারির চলাকালীন ২০২০র শীতে পেট চালাবেন বলে যেটুকু সবজি ফলিয়েছিলেন, তার পুরোটাই নষ্ট করে দেয় ডিডিএর বুলডোজার। ডানদিকে: ইজারায় জমি নিয়ে বহু প্রজন্ম ধরে যমুনার প্লাবনভূমিতে চাষ করে আসছেন দিল্লির কৃষকেরা

অনেকদিন ধরেই চাষিদের জমিজমা ছেড়ে চলে যেতে বলছে ডিডিএ। ‘পুনরুদ্ধার’ ও ‘পুনরুজ্জীবিত’ করার নামে ওঁদের ঘরদোর গুঁড়িয়ে দিতে বুলডোজার নিয়ে হাজির হয়েছিল কর্তৃপক্ষ, সে আজ এক দশক আগেকার কথা।

স্বপ্নটা বেশ মনকাড়া বটে — ‘বিশ্বমানের’ নগর হবে দিল্লি, নদীর ধারের জমি সহজলভ্য রিয়েল এস্টেট বাদে আর কিছুই নয়। যমুনা সংলগ্ন চাষিদের সবজি খেতের আগেও এ খোয়াবের মাশুল চুকিয়েছেন অনেকে। অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় ফরেস্ট সার্ভিস আধিকারিক মনোজ মিশ্রের কথায়: “ডেভেলাপার বাবুরা এই প্লাবনভূমি দেখলেই ভাবেন, এ জায়গাটা বুঝি উন্নয়নের অপেক্ষায় দিন গুনছে — দুঃখটা ওখানেই।”

*****

পৃথিবীর প্রথম ‘শ্রেণিতে’ যে নগরের বাস, সেখানে ঠাঁই মেলে না হতভাগ্য কৃষকের। অবশ্য কোনদিনও মেলেনি।

সাতের দশকে এশিয়ান গেমসের সময় হস্টেল এবং ক্রীড়াঙ্গন বানাতে কব্জা করা হয় এ প্লাবনভূমি একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল। অথচ এ নগরের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী যে উক্ত এলাকাটি ইকোলজিকাল জোন হিসেবে চিহ্নিত, সেসব পাত্তা দেয়নি কেউ। তার পরপরই, ৯০এর শেষভাগে প্লাবনভূমি তথা নদীবক্ষে একে একে গড়ে উঠতে থাকে আইটি পার্ক, মেট্রোরেলের ডিপো, এক্সপ্রেস সড়ক, অক্ষরধাম মন্দির ও কমনওয়েল্থ গেমসের ভিলেজ। “যদিও ২০১৫ সালে এনজিটি হুকুম দিয়েছিল যে ফ্লাডপ্লেনের উপর ইমারত খাড়া করা যাবে না,” জানালেন মিশ্র।

যমুনার চাষিদের ভাত মেরে গড়া হয়েছে প্রতিটি ইমারত। উচ্ছেদ ও অধিগ্রহণ সফল করতে নেমে এসেছে পাশবিক অত্যাচার। বিজেন্দরের ৭৫ বছর বয়সি বাবা শিব শঙ্করের কথায়, “আমরা বড্ড গরিব তো, তাই এভাবে খেদিয়ে দিল।” এনজিটির আদেশনামা পাওয়ার আগে অবধি এ প্লাবনভূমিতে চাষ করেই জীবন কাটিয়েছেন তিনি: “ভারতের রাজধানী বলে কথা, মিউজিয়াম আর পার্ক বানিয়ে গুটিকয় টুরিস্ট টানবে বলে চাষিদের এভাবে লাথ মেরে তাড়াল।”

একই সঙ্গে গৃহহীন হয়েছেন আরেকদল মানুষ। ভারতবর্ষের ‘উন্নতির’ স্বার্থে যাঁরা নিজের রক্তমাংস ধুলোয় মিশিয়ে গড়ে তুলেছিলেন উপরোক্ত ইমারতের সারি, সেই মজুরেরা কাছেপিঠেই ঝুপড়ি বেঁধে থাকতেন, নদীর পাড় থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে ওঁদেরও। আরে বাবা, খেলাধূলার জন্য ঝাঁচকচকে সব স্টেডিয়াম দালানবাড়ি, ‘জাতীয় ইজ্জতের’ তীর্থক্ষেত্র বলে কথা, সেখানে কী আর ওসব মলিন বস্তি মানায়?

PHOTO • Shalini Singh
PHOTO • Shalini Singh

বাঁদিকে: শিব শঙ্কর ও বিজেন্দর সিং (ছবির পুরোভাগে)। ডানদিকে: বুলডোজার দিয়ে পিষে দেওয়ার আগে যে মাঠে চাষাবাদ করত তাঁর পরিবার, বিজেন্দর আঙুল তুলে দেখাচ্ছেন সেটা

অন্যদিকে বি.এস. সাজওয়ানের বক্তব্য: “এনজিটি [২০১৫ সালে] আদেশ দিয়েছিল যে এলাকাটা যমুনার ফ্লাডপ্লেন রূপে চিহ্নিত হলে সেটার সংরক্ষণ করাটা বাধ্যতামূলক, কারণ জায়গাটা আমারও নয় আপনারও নয়, জায়গাটা নদীর।” এনজিটির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যমুনা পর্যবেক্ষণ সমিতির প্রধান ইনি। সাজওয়ানের মতে ট্রাইব্যুনাল কেবল সেই আদেশটুকুই পালন করেছে।

এর উত্তর মিলল রমাকান্ত ত্রিবেদীর কাছে: “আর আমরা যারা এ মাটির দয়ায় খেয়েপরে বেঁচেছিলাম, আমাদের কী হবে?” যমুনার পাড়ে আজ ৭৫ বছর ধরে বসবাস তথা চাষাবাদ করে আসছেন এই মানুষটি।

এখানে ২৪,০০০ একর জুড়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলান চাষিরা, মূলত দিল্লির বাজারেই বিক্রি হয় সেগুলি। অথচ এনজিটির দাবি, তাঁরা যে খাদ্যশস্য ফলান সেগুলোয় নাকি “নদীর দূষিত পানি ইস্তেমাল হচ্ছে, তাই খাদ্যচক্রে সেসবের উপস্থিতি খুবই বিপজ্জনক।” শিব শঙ্করের মতো অনেকেই এ দাবির কোনও মাথামুণ্ডু খুঁজে পাচ্ছেন না: “তাহলে দশকের পর দশক আমাদের থাকতেই বা দিল কেন, আর শহরের জন্য ফসলই বা ফলাতে দিল কেন?”

শিব শঙ্কর, বিজেন্দর তথা এই এলাকার অন্যান্য মানুষজনের সঙ্গে ২০১৯ সালে প্রথমবার মোলাকাত হয় পারির। জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা তাঁদের জীবিকা কতটা প্রভাবিত, এ বিষয়েই সেবার খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম আমরা। পড়ুন: মহানগর, ক্ষুদ্র কৃষক ও এক মুমূর্ষু নদী

*****

রাষ্ট্রসংঘের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে আগামী পাঁচ বছরে — ২০২৮ নাগাদ বিশ্বের সবচাইতে জনবহুল নগরী হয়ে উঠতে চলেছে দিল্লি। ২০৪১ সালে এ মহনগরের জনসংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২.৮-৩.১ কোটিতে গিয়ে ঠেকতে পারে।

বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চাপ এসে পড়েছে নদীর পাড়, প্লাবনভূমি ও যমুনার পানির উপর। মিশ্র বলছেন, “যমুনা একটি বর্ষানির্ভর নদী, বছরে মোটে তিনটি মাস সে বৃষ্টির জলে পুষ্ট হয়, মাস-পিছু ১০-১৫ দিন।” এ দেশের রাজধানী তার পানীয় জলের জন্য যমুনার উপর কতটা নির্ভরশীল, সে বিষয়ে আলোকপাত করছিলেন তিনি — একমাত্র উৎস ভূগর্ভস্থ পানি, যেটা কিনা যমুনার দ্বারা পুষ্ট।

এ শহরের পূর্ণ নগরায়নের প্রস্তাব এনেছে ডিডিএ, যেটার উল্লেখ রয়েছে২০২১-২০২২ সালের দিল্লির অর্থনৈতিক সমীক্ষা য়।

উক্ত রিপোর্টে এটাও লেখা আছে: “দিল্লির কৃষিকাজ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে...”

PHOTO • Kamal Singh
PHOTO • Kamal Singh

বাঁদিকে: নভেম্বর ২০২০, দিল্লির বেলা এস্টেটের ফলন্ত শস্যের উপর তাণ্ডব চালাচ্ছে দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বুলডোজার। ডানদিকে: কাজ খতম করে ফিরে গেছে ডিডিএর বুলডোজার, পড়ে আছে বিধ্বস্ত সেই মাঠ

মনু ভাটনাগরের মতে ২০২১ পর্যন্ত ৫,০০০-১০,০০০ জন দিল্লিবাসী যমুনার ভরসায় পেট চালাতেন। তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজের (আইএনটিএসিএইচ) প্রাকৃতিক ঐতিহ্য বিভাগের প্রধান পরিচালক। তাঁর উপদেশ, প্লাবনভূমি সৌন্দর্যকরণের কাজে ওই মানুষগুলোকেই বহাল করা উচিত। ২০১৯ সালে দেখা করতে গেলে তিনি জানিয়েছিলেন, “দূষণ যত কমবে, ততই উন্নত হবে মৎস্যচাষের মান, জলক্রীড়ার কথা ভাবাই যেতে পারে। এছাড়াও প্লাবনভূমির ৯৭ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে তরমুজ ইত্যাদি চাষ করা যেতে পারে।” এটা বলে তাঁর লেখা ও আইএনটিএসিএইচ-র দ্বারা প্রকাশিত দিল্লির পরিবেশের দাস্তান (ন্যারাটিভস্ অফ দি এনভাইরনমেন্ট অফ দেলহি) বইটি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ভাটনাগর।

*****

তারপর রাজধানীর বুকে নেমে আসে অতিমারির করাল ছায়া, দুমুঠো ব়্যাশনের জন্য ভিক্ষা করতে বাধ্য হয় গৃহহীন প্রায় ২০০টি পরিবার। ২০২১-এর গোড়া অবধি যাদের মাসিক রোজগার ছিল ৪,০০০-৬,০০০ টাকা, লকডাউনের কবলে যে রোজগার এসে ঠেকে শূন্যে। “দিনে দুবারের বদলে মোটে একবার খেতে পেতাম। দু পেয়ালা চা-ও জুটত না,” জানালেন ত্রিবেদী, “ডিডিএর ওই প্রস্তাবিত পার্কেও কাজ করতে রাজি হয়ে গেছিলাম, অন্তত আমাদের বাচ্চাকাচ্চারা যাতে খেয়েপরে বাঁচতে পারে। আমাদের দেখভাল করা উচিত ছিল সরকারের, আমাদের কি সমান অধিকারটুকুও নেই? জমি নিচ্ছ নাও, কিন্তু রুজিরুটির বন্দোবস্ত তো অন্তত কর।”

মে ২০২০-এ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা হেরে যান তাঁরা, একঝটকায় বাতিল হয়ে যায় সমস্ত ইজারা। আপিল করার জন্য ১ লাখ টাকা লাগত, সেটাও ছিল না ওঁদের কাছে, ফলত বাস্তুচ্যুতি চিরস্থায়ী হয়ে যায়।

বিজেন্দরের কথায়: “লকডাউন এসে অবস্থাটা আরোই খারাপ হয়ে গেছল, দিনমজুরি বা গাড়িতে মাল তোলার কাজগুলোও সব চলে গেল। দরকারি ওষুধপত্র কেনার পয়সাটুকুও ছিল না।” তাঁর বাবাও এটাসেটা কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে শহরে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন।

“অনেক আগেই চাষবাস ছেড়ে অন্য কোনও কামকাজ খোঁজা উচিত ছিল আমাদের। যখন কোত্থাও কোনও খাবারদাবার পড়ে থাকবে না, তখন গিয়ে আনাজের মূল্য আর চাষির দাম টের পাবে লোকে,” প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বললেন তিনি।

*****

এককালে এই চাষি-পরিবারটি যেখানে থাকত, সেখান থেকে ঐতিহাসিক লালকেল্লার দূরত্ব মেরেকেটে দুই কিলোমিটার। দুর্গপ্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রী ফি বছর স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দেন। সে বক্তৃতা শুনতে কোনদিনও টিভি বা বেতারযন্ত্রের প্রয়োজন পড়েনি তাঁদের, জানালেন বিজেন্দর।

“ওদিক থেকে বাতাস বয়, [প্রধানমন্ত্রীর] শব্দগুলো সব ভেসে ভেসে আমাদের কাছে আসে...কিন্তু আমাদের কথাগুলো আর তেনাদের কান অবধি পৌঁছল না কোনওদিন, এটাই যা দুঃখের।”

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Shalini Singh

ਸ਼ਾਲਿਨੀ ਸਿੰਘ ਕਾਊਂਟਰਮੀਡਿਆ ਟਰੱਸਟ ਦੀ ਮੋਢੀ ਟਰੱਸਟੀ ਹਨ ਜੋ ਪਾਰੀ ਪ੍ਰਕਾਸ਼ਤ ਕਰਦੀ ਹੈ। ਦਿੱਲੀ ਅਧਾਰਤ ਇਹ ਪੱਤਰਕਾਰ, ਵਾਤਾਵਾਰਣ, ਲਿੰਗ ਤੇ ਸੱਭਿਆਚਾਰਕ ਮਸਲਿਆਂ 'ਤੇ ਲਿਖਦੀ ਹਨ ਤੇ ਹਾਵਰਡ ਯੂਨੀਵਰਸਿਟੀ ਵਿਖੇ ਪੱਤਰਕਾਰਤਾ ਲਈ 2017-2018 ਵਿੱਚ ਨੀਮਨ ਫ਼ੈਲੋ ਰਹੀ ਹਨ।

Other stories by Shalini Singh
Editor : Priti David

ਪ੍ਰੀਤੀ ਡੇਵਿਡ ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਇੰਡੀਆ ਦੇ ਇਕ ਪੱਤਰਕਾਰ ਅਤੇ ਪਾਰੀ ਵਿਖੇ ਐਜੁਕੇਸ਼ਨ ਦੇ ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਉਹ ਪੇਂਡੂ ਮੁੱਦਿਆਂ ਨੂੰ ਕਲਾਸਰੂਮ ਅਤੇ ਪਾਠਕ੍ਰਮ ਵਿੱਚ ਲਿਆਉਣ ਲਈ ਸਿੱਖਿਅਕਾਂ ਨਾਲ ਅਤੇ ਸਮਕਾਲੀ ਮੁੱਦਿਆਂ ਨੂੰ ਦਸਤਾਵੇਜਾ ਦੇ ਰੂਪ ’ਚ ਦਰਸਾਉਣ ਲਈ ਨੌਜਵਾਨਾਂ ਨਾਲ ਕੰਮ ਕਰਦੀ ਹਨ ।

Other stories by Priti David
Translator : Joshua Bodhinetra

ਜੋਸ਼ੁਆ ਬੋਧੀਨੇਤਰਾ, ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ (ਪਾਰੀ) ਵਿੱਚ ਭਾਰਤੀ ਭਾਸ਼ਾਵਾਂ ਦੇ ਪ੍ਰੋਗਰਾਮ ਪਾਰੀਭਾਸ਼ਾ ਦੇ ਸਮੱਗਰੀ ਮੈਨੇਜਰ ਹਨ। ਉਨ੍ਹਾਂ ਨੇ ਜਾਦਵਪੁਰ ਯੂਨੀਵਰਸਿਟੀ, ਕੋਲਕਾਤਾ ਤੋਂ ਤੁਲਨਾਤਮਕ ਸਾਹਿਤ ਵਿੱਚ ਐੱਮਫਿਲ ਕੀਤੀ ਹੈ। ਉਹ ਬਹੁਭਾਸ਼ਾਈ ਕਵੀ, ਅਨੁਵਾਦਕ, ਕਲਾ ਆਲੋਚਕ ਹੋਣ ਦੇ ਨਾਲ਼-ਨਾਲ਼ ਸਮਾਜਿਕ ਕਾਰਕੁਨ ਵੀ ਹਨ।

Other stories by Joshua Bodhinetra