২২ বছর বয়সী সুষমা মালী আহমদনগর জেলার আধালগাঁও গ্রামে তাঁর তিন বছর বয়সের শিশু কন্যা ও স্বামীর কাছে, ফিরে এসেছেন আট মাস হল, তাঁর স্বামী পেশায় একজন কৃষক। অবশ্য, মে থেকে আগস্ট মাস – এই চারমাসের বার্ষিক বিরতিতে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি তাঁদের তামাশা দলের মালিকপক্ষের সঙ্গে বসে টাকাপয়সা সংক্রান্ত সমস্ত হিসেবনিকেশই সেরে নিয়েছেন। তিনি এই তামাশা দলে নর্তকী হিসেবে কাজ করেন।
এই তামাশা ফড -এর (দল) কর্ণধার মঙ্গলা বানসোডে, টাকাপয়সা সংক্রান্ত হিসেবনিকেশ করার জন্য, সাতারা জেলার কারাভাদি গ্রামে নিজের বাড়িতে, বসার ঘরে চেয়ারে এসে বসেন। দলের সদস্যদের কাছে তিনি মাম্মি বলে পরিচিত। জনা কয়েক লোক হাতে পুরু হিসেবের খাতা নিয়ে মেঝেতে বসে আছেন। দলটির ১৭০ জন সদস্য - শিল্পী, শ্রমিক, গাড়ির ড্রাইভার, ওয়্যারম্যান, ম্যানেজার এবং রাঁধুনি - একের পর এক প্রত্যেক সদস্য ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
৬৬ বছর বয়সী মঙ্গলা বানসোডে, তামাশা শিল্পের কিংবদন্তী শিল্পী, ভিঠাবাঈ নারায়ণগাঁওকারের জ্যেষ্ঠা কন্যা। মঙ্গলাতাই মাত্র সাত বছর বয়স থেকে তাঁর মায়ের ফড -এ কাজ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে, এখানেই তাঁর স্বামী রামচন্দর বানসোডের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় এবং তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ১৯৯৩ সালে একটি ফড শুরু করেন। (তিনি নিজে একজন পরিচালক, প্রযোজক, লেখক এবং অভিনেতা ছিলেন, কিন্তু রুগ্ন, ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে খুব বেশি কাজ করে উঠতে পারেননি)। তাঁর ফড -এর নাম ‘মঙ্গলা বানসোডে এবং নীতীন কুমার তামাশা মণ্ডল’ (নীতীন কুমার তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র)।
যে সকল তামাশা সদস্যদরা একে একে এখন মঙ্গলাতাইয়ের বসার ঘরে ঢুকছেন, তাঁদের একজন হলেন কিরণ বাডে; তিনি ৫০,০০০ টাকা উছল বা অগ্রিম বাবদ নিয়ে ঘর থেকে বেরোন। ফড -এর এই চারমাসের বার্ষিক বিরতিতে এই উছল বা অগ্রিম টাকা তাঁর আহমদনগর জেলায় পাথরদি শহরে সাতজনের সংসারটিকে চালাতে সাহায্য করবে। তাঁর বাবা ও ভাই অন্য আরেকটি তামাশা দলে কাজ করেন।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা এবং বিবাহের মতো পরিস্থিতিতে সাধারণত মানুষ উছল নেন। “কিন্তু, তামাশা দলের মালিকরা উছল দেন যাতে দলের সদস্য ব্যক্তিটি তাঁদের ছেড়ে ভলে না যেতে পারেন।”
কিরণের বেতন মাসিক ১৫,০০০ টাকার একটা অংশ অগ্রিম নেওয়া অর্থ পরিশোধ করার জন্য ব্যয় হবে, ২০১৭-২০১৮ সালের তামাশার মরশুমে, যার জন্য অনুশীলন এবং মহড়া সেপ্টেম্বরে শুরু হবে এবং মে মাসে অনুষ্ঠান শেষ হবে। গানে, নাচে এবং অভিনয়ে পারদর্শী, ২৪ বছর বয়সী কিরণ বলেন, “এই দলে আমি যে পরিমাণ কাজ করি, তাতে আমার এর চেয়ে অনেক বেশি বেতন পাওয়া উচিত!”
কিন্তু তাঁর স্ত্রী তাঁকে তামাশার কাজটি ছেড়ে একটি ভিন্ন চাকরি করার কথা বলায়, তিনি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। তামাশায় তাঁর তীব্র আসক্তি। “আমি তাকে বলেছিলাম যে প্রয়োজন হলে অন্য একজন স্ত্রী আমি জুটিয়ে নেব, কিন্তু ফড ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। তামাশার এই কারাগারে আমি চির জীবন বন্দি হয়ে থাকতে চাই।”
তামাশার মরশুম যখন শুরু হয়, তখন কিরণ প্রতিদিন সিদ্ধা (দৈনিক ভাতা) বাবদ তামাশা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৫০ টাকা পান। বাঁধা কাজের বাইরে, অতিরিক্ত উপরি উপার্জনের জন্য তিনি ইলেক্ট্রিশিয়ান এবং গাড়ি চালক হিসেবেও কাজ করে থাকেন - প্রতিদিন ২০০ টাকা করে প্রতিটা কাজের জন্য আয় করেন তিনি। তামাশার মরশুম শেষ হলে, সব মিলিয়ে মোট উপার্জন বাবদ পাওনা টাকার হিসেবনিকেশ করে, মোট উপার্জন থেকে দৈনিক ভাতার পরিমাণ কেটে নিয়ে তিনি তাঁর বাকি টাকা হাতে পাবেন।
এই চক্রাকার কাঠামোতেই অধিকাংশ তামাশা শিল্পীর অর্থনৈতিক জীবন আবর্তিত হয়: উছল বা অগ্রিম গ্রহণ, এই অর্থ পরিশোধ করার জন্য কাজ করা, আবার আগামী বছরের জন্য অগ্রিম গ্রহণ। তাঁরা ফড বা তামাশা দলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ২১০ দিন কাজের একটি আইনি চুক্তিপত্রের ভিত্তিতে কাজে সম্মত হন। বেতন ছাড়াও, দলের সদস্যরা প্রতিদিন দুবেলার আহার এবং অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক পান, তবে, রূপসজ্জার বা মেকআপের সরঞ্জাম তাঁদের নিজেদের কিনতে হয়।
ফড যখন চার মাসের বার্ষিক বিরতিতে থাকে, সেই সময়ে, তামাশায় কর্মরত শিল্পী ও শ্রমিকরা তাঁদের নিজের নিজের জমিতে কাজ করেন অথবা গাড়ি চালক এবং গৃহ শ্রমিকদের পেশায় নিযুক্ত হন। তামাশার চাকরি থেকে যে আর্থিক সঞ্চয় করতে তাঁরা সক্ষম হন, এই বিরতির সময়ে সেই অর্থ তাঁদের সংসার চালাতে সাহায্য করে।
মঙ্গলাতাইয়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র, তথা এই ফড -এর ম্যানেজার, ৪৫ বছর বয়সী অনিল বানসোডে জানান, দলটিতে মহিলা নৃত্যশিল্পীর সংখ্যা প্রায় ১৬, দলে তাঁদের সবচেয়ে বেশি বেতন প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, “২০১৬-২০১৭ সালের মরশুমে মহিলা নৃত্যশিল্পীর বেতন বাবদ সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে।” সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দর্শক তাঁরাই আকর্ষণ করেন, এবং দর্শকদের কাছ থেকে সর্বাধিক প্রশংসাও তাঁরাই আদায় করে থাকেন। তবে, অনিলের কথায়, একটানা আট মাস তামাশা দলের সঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবেন, এমন নৃত্যশিল্পী খুঁজে পাওয়া মোটেই সহজ নয়। “একমাত্র মোটা টাকা বেতন দিলেই দলে তাঁদের টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়।”
এই মরশুমে সুষমা মালী বেশ কয়েকটি গানে প্রধান নর্তকীর ভূমিকায় ছিলেন। তিনি মাত্র ১২-১৩ বছর বয়সে তামাশা দলে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন, এবং নিজের মাকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে একটি ফড -এ কাজ করতে দেখে তিনি বড় হয়েছেন। তাঁর মা প্রথমে সুষমার তামাশা শিল্পীর পেশা বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন, তিনি চাননি, তিনি যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তামাশার দলে কাজ করতে গিয়ে, তাঁর মেয়েও সেসব কষ্ট ভোগ করুক। তবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা ভেবে সুষমা এই কাজ নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। “আমার স্বামীও [পেশায় একজন কৃষক] আমাকে ফড -এ কাজ করতে দিতে চায় না, কিন্তু আট বছরের এক ভাই এবং তিন বছরের কন্যা সন্তানকে মানুষ করার গুরু দায়িত্ব আছে আমার উপর,” তিনি বলেন। সুষমা নিজেও চান না তাঁর কন্যা ভবিষ্যতে এই পেশায় প্রবেশ করুক, এবং তিনি মেয়েকে জানাননি যে তিনি পেশায় তামাশা দলের নর্তকী।
অনেকেই মা বাবা অথবা বড় দাদা দিদিদের তামাশায় কাজ করতে দেখে তামাশা দলে যোগ দেন। অনেকেই তামাশাকে কৃষি শ্রমিকের কাজের তুলনায় অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল পেশা হিসেবে বিবেচনা করেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে ফড -এর কাজ তাঁদের শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে এবং সমাজে মর্যাদা ও প্রতিপত্তি এনে দেবে।
সাঙ্গলী জেলার দুবল ধূলাগাঁও গ্রামের শারদা খাডের মত মানুষদের পরিবারের জন্য অবশ্য ফড -টাই নিজের বাড়ির মতো হয়ে উঠেছে। শারদা নিজে নৃত্যশিল্পী এবং তামাশার ভাগ নাট্য (লোক নাটক) অংশের অভিনেত্রী। তাঁর এক পুত্র তবলচি, অন্য আরেক ছেলে ওয়্যারম্যানের পেশায় নিযুক্ত আছেন, এবং তাঁর স্বামী নিজে অভিনেতা। তামাশার কাজটাই তাঁদের জন্য নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে উঠে আসে। কৃষি শ্রমিক বা খেত মজুর হিসাবে, তাঁদের আত্মীয়রা এই কাজ করে সাকুল্যে দৈনিক ২০০ টাকা উপার্জন করেন, তার উপর প্রতিদিন যে কাজ পাওয়া যাবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।
কিন্তু ফড -এর কাজ থেকে আয়ের নিশ্চয়তা শুধু শুধু আসে না, তার জন্য মূল্য দিতে হয় বৈকি। শারদা বলেন, প্রতিদিন একটি নতুন গ্রামে গিয়ে তাঁবু খাটানোর কাজ আর যাই হোক, আরামদায়ক মোটেই নয়। এর সঙ্গে আছে কাজের অনির্দিষ্ট সময়সূচী, গভীর রাত অবধি চলতে থাকা কাজের চাপ, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া এবং জীবনধারণের জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
ফড -এর কাজ থেকে আয়ের নিশ্চয়তা শুধু শুধু আসে না, তার জন্য মূল্য দিতে হয় বৈকি। প্রতিদিন একটি নতুন গ্রামে গিয়ে তাঁবু খাটানো, কাজের অনির্দিষ্ট সময়সূচী, গভীর রাত অবধি চলতে থাকা কাজের চাপ, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, জীবনধারণের জন্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ – এবং, প্রায়শই অশ্লীল মন্তব্য
পুরুষ দর্শকমন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে থেকে প্রায়শই চটুল মন্তব্য, অশ্লীল ইশারা সম্মুখীন হতে হয় মহিলা শিল্পীদের। শারদা মাঝেমাঝে তাঁদের প্রশ্ন করেন, যে এইরকম অভব্য আচরণ তাঁরা কেন করেন, তাঁদের বাড়িতেও তো তাঁদের মা বোনেরা আছে। দর্শকদের উত্তর: “কিন্তু আমাদের বাড়ির মহিলারা আপনাদের মতো তামাশার স্ত্রীলোকের মত আচরণ করেন না!” এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন কেন তিনি এমন কাজ করেন না যেখানে পুরুষের সামনে নৃত্যের প্রয়োজন হয় না। শারদা উত্তর দেন, “কিন্তু এটাও তো একটা চাকরি!”
তামাশার দলের পুরুষ সদস্যদেরও তীক্ষ্ণ মন্তব্যের মুখোমুখি হতে হয়। অনিল স্মরণ করেন ছোটবেলার কথা, যখন তিনি শিশুমাত্র, তখন তাঁদের গ্রামের মানুষজন তাঁকে ও তাঁর ভাইবোনদের “নাচনেওয়ালি মেয়ের সন্তান” বলে হেয় করতেন।
* * *
প্রায় পুরো তামাশা শিল্পটাই নগদ লেনদেনের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তামাশার দলগুলির মালিকরা নিজেরাই শতকরা ৪-৫ শতাংশ মাসিক সুদের হারে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। “ব্যাংক আমাদের ঋণ দেয় না। আমরা ফড -এর মরশুমের সময় আগামী আট মাস ধরে মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া এই ঋণ পরিশোধ করে থাকি,” জানাচ্ছেন আরেকটি তামাশা দলের মালিক এবং মঙ্গলাতাইয়ের ভাই কৈলাশের পুত্র মোহিত নারায়ণগাঁওকর।
অবশ্য, মঙ্গলাতাইয়ের দল ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছে, কারণ তাঁকে ঋণ প্রদানের যোগ্য বলে গণ্য করা হয়। এই দল হল হাতে গোনা খুব সামান্য কয়েকটি তামাশা দলের একটি, যাদের তামাশা চালানোর নিজস্ব যাবতীয় সরঞ্জাম আছে এবং যাদের জমে থাকা কোনও ঋণ নেই বাজারে। দলের সদস্যদের সংখ্যা এবং মোট উপার্জনের নিরিখে বিচার করতে গেলে, গ্রামীণ মহারাষ্ট্রে ব্যবসারত তামাশা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে এটি অন্যতম বৃহৎ। প্রতি বছরই, মঙ্গলার ফড -এর মোট ব্যবসা সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি টাকায়। পশ্চিম মহারাষ্ট্রে ৭০ - ১৫০ জন সদস্য বিশিষ্ট ৩০ - ৪০ টিরও বেশি তামাশার দল রয়েছে বলে জানান, পুণে শহর নিবাসী চিত্রসাংবাদিক সন্দেশ ভান্ডারে, যিনি তামাশা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সম্প্রদায়কে নিয়ে একটি বই রচনা করেছেন। তিনি জানান, ২০ – ২২ জন সদস্য নিয়ে গঠিত প্রায় ২০০টি ফড পশ্চিম মহারাষ্ট্রে ব্যবসা করলেও পুরো তামাশা মরশুম জুড়ে অবশ্য এই দলগুলি অনুষ্ঠান করে না।
সেপ্টেম্বর থেকে মে মাস - ব্যবসার এই মরশুমে একটি ফড সাধারণত দুটি উপায়ে অর্থ উপার্জন করে। ‘টিকিট কেটে শো’ দেখার পালা শুরু হয় দশেরা উৎসবের পর থেকে। সাধারণত একটা টিকিটের দাম ৬০ টাকার কাছাকাছি। প্রবেশ মূল্য বা টিকিটের বিনিময়ে অনুষ্ঠান দেখার পর্বটি চলে মার্চ / এপ্রিল মাসে গুড়ি পডওয়া পার্বণের সময় পর্যন্ত।
প্রবেশ মূল্য বা টিকিটের বিনিময়ে অনুষ্ঠান করতে হলে কমপক্ষে ১,০০০ টিকিট ক্রেতা প্রয়োজন যাতে অনুষ্ঠান করার সমস্ত খরচ উঠে আসে। দর্শকদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ পুরুষ, তাঁরা সাধারণত, যে গ্রামে তামাশা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই গ্রামের অথবা আশেপাশের গ্রামগুলির বাসিন্দা। অনুষ্ঠান চলে প্রায় ৫ – ৬ ঘন্টা, তবে রাত ১১টা অথবা মধ্যরাতের পর শুরু হলে রাত প্রায় ২টো বা ৩টের মধ্যে শেষ হয়।
তামাশার অনুষ্ঠান খোলা মাঠের মতো উন্মুক্ত স্থানে পরিবেশিত হয়; ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে শ্রমিকদের তৎপরতায় মঞ্চ নির্মিত হয়। প্রতিটি দল প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান করে। কোনও কোনও গ্রামে, তামাশার দলটি ‘ সাকালচি হাজেরি’ নামের একটি ২ / ৩ ঘন্টার সংক্ষিপ্ত প্রভাতী অনুষ্ঠান পরিবেশন করে থাকে।
অর্থ উপার্জনের দ্বিতীয় পথটি হল, যখন বাৎসরিক যাত্রা (বাৎসরিক গ্রামীণ মেলা) অনুষ্ঠানের সময় তামাশা প্রদর্শন করার জন্য গ্রামের যাত্রা কমিটিগুলি (প্রতিটি গ্রামের নিজস্ব যাত্রা কমিটি আছে) তামাশার দলগুলিকে ভাড়া করে আনে। বৃহৎ দলগুলির ক্ষেত্রে প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা সুপারি বা অগ্রিম অর্থ দিয়ে বায়না করতে হয়।
বায়না করা সুপারি অনুষ্ঠানের সময় টিকিট বিক্রির গুমটি থাকে না; যে কেউ এসে অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। মোহিত বলেন, “২০১৭ সালের মে মাসে শেষ হওয়া তামাশার মরশুমে আমরা প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা মুনাফা হিসেবে উপার্জন করলেও, দলের কর্মীদের আমরা উছল বা অগ্রিম দিতে গিয়ে এই টাকা ব্যয় করেছি। পাছে শিল্পীরা অন্য দলে চলে যান এই ভয়ে আমাদের পক্ষে উছল দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই।”
টিকিট কেটে অনুষ্ঠান তথা সকলের জন্য উন্মুক্ত সুপারি অনুষ্ঠান - উভয়ই খরার বছরগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রামের মানুষদের হাতে খরচ করার জন্য টাকা মোটেই থাকে না তখন। মোহিত জানান, “কিন্তু শিল্পীদের বেতন তো দিতেই হবে, এছাড়া তাঁরা প্রতি বছর বেতনের পরিমাণে বৃদ্ধি করার দাবি করেন। এই ক্ষতির ব্যয়ভার মালিকপক্ষ বহন করতে বাধ্য হয়।”
কিন্তু মুনাফাটাই যে মুখ্য বিষয় নয়, এই ব্যাপারে মঙ্গলা এবং মোহিত উভয়েই সহমত পোষণ করেন। মোহিতের কথায়, “প্রধান উদ্দেশ্য হল জনতা যেন আমাদের ফড -কে মনে রাখেন। “তামাশা শিল্প যেন বেঁচে থাকে।” মঙ্গলাতাই বলেন তামাশার ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে তাঁর একমাত্র অনুপ্রেরণা তামাশা শিল্পের সঙ্গে তাঁর পরিবারের নামকে অক্ষয় রাখা। তাঁর সংযোজন, “আমাদের উপার্জিত অর্থ আমরা আমাদের শিল্পী এবং শ্রমিকদের মধ্যে ভাগ করে দিই। এর থেকে আমরা কিছুই পাই না।”
কিন্তু তামাশা থেকে অবসরের পর কী হবে? ৪৮ বছর বয়সী শারদা বলেন, “মাসিক ৩০০০ টাকা পেনশন হিসেবে ভাতা আমাদের পাওয়ার কথা [সরকারের কাছ থেকে, যদিও এই ভাতা পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েছে।] কিন্তু এই ভাতার অর্থ কি যথেষ্ট? আমার শরীর যতদিন সায় দেবে আমি এই কাজ চালিয়ে যাব। তারপর, ভরণপোষণের জন্য সন্তানদের উপর আমাকে নির্ভর করতে হবে।”
পুনশ্চ: এই তামাশা দলটির ২০১৭ সালের মরশুম শুরু হয় বীড জেলার ভালভাড গ্রামে ১৭ই সেপ্টেম্বর একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন বিভাগের কাছ থেকে মঙ্গলা বানসোডে বিগত ৯ই অক্টোবর সৃজনশীল শিল্প [ক্রিয়েটিভ আর্টস] বিভাগে ভায়োশ্রেষ্ঠ সন্মান (জাতীয় পুরস্কার) ২০১৭ অর্জন করেছেন।
বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর