“বিউটি পার্লার যাওয়া কেন খামোখা? শুধু বাজারহাট ঘুরে ঘুরে পয়সা খসানোর তাল।”

বিউটি পার্লারে গেলেই যে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখে, সে কথা জানালেন মোনিকা কুমারী। চার সদস্যের তাঁর পরিবারটি পূর্ব বিহারের খৈরমা গ্রামে থাকে, জামুই শহর থেকে কিলোমিটার তিনেক দূরে। আত্মীয়দের কথা গায়ে না মেখে ইচ্ছেমতো ভুরু তোলা, ঠোঁটের উপরের লোম সাফাই করা এবং ফেশিয়াল ম্যাসেজ করাতে যান ২৫ বছর বয়সী মোনিকা। তাঁর স্বামী ঊর্ধ্বতন প্রজন্মের মতো সন্দেহবাতিক নন, পঞ্চায়েত অফিসে কাজ করা এই মানুষটি তো স্ত্রীকে বিউটি পার্লার অবধি পৌঁছে দিয়েও আসেন।

শুধু মোনিকাই নন, বরং জামুই সদর এবং জামুই জেলায় অবস্থিত তার আশপাশের শহর ও গ্রামের অসংখ্য তরুণী ও মহিলারা চটজলদি সাজগোজ করতে পাড়ি জমান নিকটতম পার্লারে।

“যখন এসব শুরু করি, তখন মোটে ১০টা পার্লার ছিল। এখন তো মনে হয় হাজারখানেক আছে,” গত ১৫ বছরে কেমন করে জামুইয়ের প্রসাধন ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে, সেকথাই বলছিলেন প্রমীলা শর্মা।

বিবাহ লেডিজ বিউটি পার্লারের মালিক প্রমীলা, এটি ৮৭,৩৫৭ জনসংখ্যা বিশিষ্ট জামুই শহরের প্রধান সড়কের উপরেই অবস্থিত। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই হয় কৃষি কিংবা চাষবাসের আনুষঙ্গিক কাজে নিযুক্ত।

Pramila Sharma owns and runs the Vivah Ladies Beauty Parlour in Jamui town.
PHOTO • Riya Behl
There is a notice pinned outside stating ‘only for women’
PHOTO • Riya Behl

বাঁদিকে: জামুই শহরে বিবাহ লেডিজ বিউটি পার্লারটি চালান প্রমীলা শর্মা। ডানদিকে: ‘শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য’ লেখা একটি বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো আছে বাইরে

একদিকে সাইকেলের দোকান, অন্যদিকের দুটি দোকান নাপিত ও দর্জির, তারই মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রমীলার পার্লারটি। চুল-কাটা, থ্রেডিং (সুতো দিয়ে ভুরু তোলা), মেহেন্দি, ওয়াক্সিং, ফেশিয়াল ও মেক-আপ — প্রসাধনী সেবার পসরা এখানে ১৬ আনা — যার লোভে ৩০ কিলোমিটার দূর আলিগঞ্জ ব্লকের লক্ষ্মীমপুর ও ইসলামনগর গ্রাম থেকে এসে হাজির হন খদ্দেররা।

এ অঞ্চলে প্রচলিত অঙ্গিকা, মৈথিলি তথা মগহী ভাষায় কাজ চালিয়ে নিতে কোনও অসুবিধা হয় না প্রমীলার, যে কারণে খদ্দেরাও বেশ সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

বিহারের একপ্রান্তে এমন একটি বিউটি পার্লার চালানোর অর্থ আদতে পিতৃতন্ত্রের সঙ্গে বিরামহীন সংঘর্ষ। “বিয়েশাদির আগে [এখানকার] মেয়েরা মা-বাবার মর্জিমাফিক বেঁচে থাকে, আর বিয়ের পর স্বামীর ইচ্ছেমতো,” বলে উঠলেন প্রমীলা। এই কারণেই তাঁর পার্লারে পুরুষের উপস্থিতি বারণ এবং বাইরের একটি বোর্ডে স্পষ্ট লেখা রয়েছে ‘শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য’। ভিতরে প্রত্যেকেই মহিলা, আবহাওয়াটা যেন ঠিক সেই কারণেই অন্তরঙ্গ এবং নিরাপদ। বাচ্চাকাচ্চা ও রান্নার রেসিপি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা, বিয়েশাদি নিয়ে চলে তর্কাতর্কি, সহমর্মিতার সঙ্গে গৃহীত হয় দাম্পত্য কলহের দাস্তান। “ভিতর ভিতর সে যতই টানাপোড়েন চলুক না কেন, অধিকাংশ সময়ই বাড়িতে সেসব কথা কইতে পারে না মেয়েরা,” জানালেন প্রমীলা, “কিন্তু এখানে যা ইচ্ছে তাই বলা যায় মুখ ফুটে।”

এ যেন একাধারে একটি বৈশিষ্ট্য ও আবেগ, এই কারণেই খদ্দেররা আর অন্য কোথাও যান না। “পার্লার যাব বলে জামুইয়ে এলে এই একটাই জায়গায় ফিরে ফিরে আসি,” পরিচিত পরিসরের প্রতি তাঁর টানের কথা জানালেন প্রিয়া কুমারী (২২)। পার্লার মালিকের খুনসুটি কিংবা আলতো বকাঝকা, উত্তরোত্তর যেন আরোই অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠে পরিবেশ। জামুই ব্লকের খৈরমা নিবাসী প্রিয়ার লব্জে, “আমাদের সকল হাঁড়ির খবর রাখেন উনি, দিব্যি হাসি-মজাক করেন।”

Khushboo Singh lives in Jamui town and visits the parlour for a range of beauty services.
PHOTO • Riya Behl
Pramila in her parlour with a customer
PHOTO • Riya Behl

বাঁদিকে: হরেক রকমের প্রসাধনী পরিষেবা পেতে পার্লারে এসে হাজির হন জামুই শহরবাসী খুশবু সিং। ডানদিকে: পার্লারে এক খদ্দেরের সঙ্গে প্রমীলা

মহারাজগঞ্জ প্রধান সড়কের উপর সদা ব্যস্ততায় মুখর একটি কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স রয়েছে, প্রমীলার পার্লারটি তারই একতলায় অবস্থিত। মাস গেলে বাতায়নবিহীন ঘুপচি এই কামরাটির জন্য ৩,৫০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। তিনটি দেওয়াল জুড়ে সারি দিয়ে আঁটা রয়েছে আয়না, যার উপর কাঁচের ক্যাবিনেটে ভিড় করেছে লক্ষ্ণীর ভাঁড়, নরম নরম টেডি বিয়ার, স্যানিটারি প্যাডের প্যাকেট ও হাজারো প্রসাধন সামগ্রী। ছাদ থেকে ঝুলছে প্লাস্টিকের ফুল, প্রসাধনী বিদ্যায় তাঁর জ্ঞানের সাক্ষ্য দিচ্ছে কমলা ও মাটিরঙা দেওয়াল জুড়ে সাজিয়ে রাখা ফ্রেমবন্দি শংসাপত্র।

সদর দরজা দিয়ে একজন খদ্দের ঢুকলেন হলুদ পর্দা সরিয়ে। মহিলার বয়স ৩০, কাপড়জামা বেশ ধোপদুরস্ত। বাইরে রাতের খাবার সারবেন, তার আগে তাই ঠোঁটের উপরকার লোম তোলাবেন, ভ্রুজোড়াও নিখুঁত করা চাই। দোকানের ঝাঁপ ফেলার সময় হয়ে এসেছে বটে, কিন্তু প্রসাধনী কারবারে সময় নিয়ে কিন্তুকিন্তু করলে বিপদ — খদ্দের হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। অগত্যা, সেই মহিলাকে বসিয়ে গল্পগুজব জুড়ে দিলেন প্রমীলা, জেনে নিলেন সেদিনকার উপলক্ষ্য। পরে অবশ্য তিনি জানিয়েছিলেন, “হাম থোড়া হাসি মজাক করেঙ্গে কি স্কিন মেঁ আন্দার সে নিখার আয়ে [খদ্দেরকে ইচ্ছে করে হাসাই যাতে তাঁর অন্তর হতে জেল্লা ফুটে ওঠে]।”

প্রমীলার জবানে উঠে এল প্রসাধনী ব্যবসার অনিশ্চয়তার কথা, “একেকদিন ভুরু ছাঁটাতে ২৫ জনেরও বেশি মহিলারা এসে হাজির হন। অথচ অন্যদিন জনা পাঁচেক খদ্দেরও মেলে না।” বিয়ের কনের সাজগোজ করার কাজে ডাক পেলে দৈনিক ৫,০০০ টাকা কিংবা তারও বেশি রোজগার হয়। “আগে আগে অসংখ্য বিয়েবাড়ি থেকে ডাক পেতাম, কিন্তু আজকাল তো অধিকাংশ মহিলা নিজে নিজেই ফোন ঘেঁটে [ভিডিও দেখে] সাজগোজ সেরে নেয়,” বলে উঠলেন তিনি। তাই পরিষেবাটা আরও মনোগ্রাহী করতে একটি যৌথ অফারের কথা ভেবেছেন প্রমীলা: মোটে ৩০ টাকায় সুন্দর হয়ে উঠবে দুটো ভুরু, তারই সঙ্গে মিলবে নির্লোম ঠোঁটের উপর।

বয়স্ক মহিলাদের এখানে নিয়ে আসা আরও কঠিন। প্রমীলার কথায় ওঁর মায়ের মতো প্রবীণ প্রজন্মের মহিলারা কালেভদ্রে আসেন তাঁর পার্লারে, “ভুরু ছাঁটা বা চুল কাটা, জীবনে কখনোই এসব করায়নি আমার মা। বুঝতেই চায় না কেন আমরা বগলে ওয়াক্সিং করাই, উল্টো বলে যে, ‘এটাই প্রকৃত আমি, ঈশ্বর আমাকে এভাবেই বানিয়েছেন, কোন দুঃখে এসব বদলাবো শুনি?’”

The parlour is centrally located in a busy commercial complex in Jamui town.
PHOTO • Riya Behl
Pramila threading a customer's eyebrows
PHOTO • Riya Behl

বাঁদিকে: জামুই শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি ব্যস্ত কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের ভিতর অবস্থিত প্রমীলার পার্লার। ডানদিকে: সুতো দিয়ে এক খদ্দেরের ভুরু তুলছেন প্রমীলা

বিকেল ৫টা বাজতেই দুই কিশোরী মেয়েকে নিয়ে দোকানে ঢুকলেন এক মা। তাবাস্সিম মালিক নাম তাঁর, এসে বসলেন প্রমীলার পাশে। ওদিকে দুই মেয়ে ততক্ষণে হিজাব খুলে কালো ভিনাইল ঢাকা নাপিতের চেয়ারে উঠে বসেছে। পাশেই একটি কমলা রঙের টেবিলে সাজানো আছে প্রসাধনের পসরা — কাঁচি, চিরুনি, মোম গরম করার যন্ত্র, স্তূপাকৃতি ভিজিটিং কার্ড, ভুরু তোলার দুই গুলি সুতো, পাউডারের বোতল এবং স্ব-স্বস্থানে বিরাজমান হরেক রকমের লোশন।

“আপনার তিন মেয়ে না? একটির বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন নাকি?” প্রমীলার এ সওয়ালে প্রমাণ হয়ে গেল যে সত্যি সত্যিই খদ্দেরদের জীবনের নাড়িনক্ষত্র জানেন তিনি।

“ও পড়াশোনা করছে,” জবাব দিলেন তাবাস্সিম, “ইস্কুলটা পাশ করুক আগে, তারপর ওসব ভেবে দেখব।”

সোফায় বসে বসে মাথা নাড়লেন প্রমীলা। তাবাস্সিমের সঙ্গে আড্ডা মারতে মারতে নজর রাখছিলেন দুই সাগরেদ টুনি ও রানির উপর, কাজ শিখতে আসা মেয়ে দুটি আপাতত একে একে তাবাস্সিমের দুই মেয়ের চুল কাটার জোগাড়ে লেগেছে। প্রথমে পালা ১২ বছর বয়সী জস্মিনের, হাল ফ্যাশনের ‘ইউ-কাট’ ছাঁদে চুল কাটাতে ইচ্ছুক কিশোরীটি, খরচা হবে ৮০ টাকা। তার সামনেই ঘুরঘুর করতে থাকা টুনি ও রানির দিকে আদেশ ছুঁড়লেন প্রমীলা: “ইউয়ের আকারটা না ফুটে ওঠা অবধি চুল থেকে কাঁচি তুলবে না।” তড়িঘড়ি ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন দুই নবীশ।

Pramila also trains young girls like Tuni Singh (yellow kurta) who is learning as she cuts 12-year-old Jasmine’s hair.
PHOTO • Riya Behl
The cut hair will be sold by weight to a wig manufacturer from Kolkata
PHOTO • Riya Behl

বাঁদিকে: অল্পবয়সী মেয়েদের প্রশিক্ষণও দেন প্রমীলা, ঠিক যেমন জস্মিনের (১২) চুল কাটার মধ্যে দিয়ে কাজ শিখছেন টুনি সিং (হলুদ কুর্তা গায়ে)। কাটা চুলগুলি ওজন করে কলকাতার এক পরচুলা প্রস্তুতকারীকে বিক্রি করা হবে

শিষ্যরা একজনের চুল কাটলেও দ্বিতীয় বোনের চুল কিন্তু খোদ প্রমীলাই কাটবেন। উঠতি সাগরেদের হাত থেকে ভারি ধাতব কাঁচিখান নিয়ে মনোনিবেশ করলেন কিশোরীর কেশরাশিতে, শুরু হল দক্ষ হাতে কাটছাঁট ও হাল ফ্যাশনের ছাঁটের পালা।

১৫ মিনিটের মধ্যেই কাম তামাম হল, ঈষৎ ঝুঁকে মেঝে থেকে চুলের লম্বা গোছা কুড়িয়ে নিয়ে সাবধানে বেঁধে রাখলেন রানি রাবার ব্যান্ড দিয়ে। এগুলি পরে ওজন করে কলকাতার এক পরচুলা প্রস্তুতকারীর কাছে বিক্রি করা হবে, রেলপথে ঘণ্টা বারো লাগে সেখানে যেতে।

মা-মেয়ে পার্লার থেকে বেরিয়ে যেতেই প্রমীলা বলে উঠলেন, “আসছে বছর আবার দেখা হবে এদের সঙ্গে। বছরে মোটে একবার, ঈদের আগে আসে।” খদ্দেরদের চেনা, তাঁদের পছন্দ-অপছন্দ মনে রাখা এবং টুকটাক আড্ডা মারা — এ সবই তাঁর ব্যবসায়িক মুন্সিয়ানা।

তবে এ ব্যবসায়ীর জীবনটা কিন্তু শুধুই মাসকারা আর ব্লাশের মধ্যেই আটকে নেই। ভোররাত ৪টেয় উঠে ঘরকন্নার কাজ সামলান; প্রিয়া ও প্রিয়াংশু - দুই সন্তান ইস্কুলে যাবে, তাদের তৈরি করার দ্বায়িত্বটাও প্রমীলার একার ঘাড়ে। তাঁর পার্লারটি যে শপিং কমপ্লেক্সে, সেখানে জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই, তাই ঘর থেকে বেরোনোর সময় ১০ লিটার জল ভরে নেন। “জলের কল না থাকলে পার্লার চালানো যায় বলুন?” জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

Pramila brings around 10 litres of water with her from home as there is no running water in the shopping complex where the parlour is located.
PHOTO • Riya Behl
Tunni and Pramila relaxing while waiting for their next customer
PHOTO • Riya Behl

বাঁদিকে: পার্লারটি যে শপিং কমপ্লেক্সে, সেখানে জলের সরবরাহের ব্যবস্থা নেই, তাই ঘর থেকে বেরোনোর সময় ১০ লিটার জল ভরে নেন প্রমীলা। ‘জলের কল না থাকলে পার্লার চালানো যায় বলুন?’ জিজ্ঞেস করলেন তিনি। ডানদিকে: খানিক জিরিয়ে নিতে নিতে পরের খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করছেন টুনি ও প্রমীলা

সকাল ১০টা বাজলেই খুলে যায় বিবাহ লেডিজ বিউটি পার্লার, বন্ধ হয় ১১ ঘণ্টা পর। ছুটিছাটা বলতে প্রমীলার যদি রোগজ্বালা হয় কিংবা বাড়িতে কোনও অতিথি আসেন। স্বামী রাজেশের সঙ্গে রোজ ১০টার আগেই কাজে বেরোন। স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে করে পৌঁছে দিয়ে তবেই নিজের দোকানে যান রাজেশ, পার্লার থেকে তাঁর দোকানের দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়। সগর্বে জানালেন প্রমীলা: “আমার বর একজন শিল্পী। সাইনবোর্ড আর ব্রিজে আঁকে, গ্রানাইট পাথর খোদাই করে, ডিজেরা যে টেম্পোতে চড়ে গানবাজনা করে আর যে পটগুলো লোকে বিয়েশাদির বারাতে ইস্তেমাল করে — এগুলোর নকশা বানায়, আরও নানান জিনিস করে মানুষটা।”

যেদিন যেদিন পার্লার বন্ধ করতে একটু দেরি হয় প্রমীলার, সেই দিনগুলোয় নিজের দোকানের বাইরেই ইয়ার-দোস্তদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটান তিনি।

প্রমীলার কথায়: “এই কারবারে রোববার বলে কিছু নেই। পড়শি-টড়শি কেউ সাজগোজ করতে আমার ঘরে এলে আমি ওদের থেকেও টাকা নিই!” খদ্দের যদি খামোখা দরদাম করে বা মুখের উপর বলে দেয় যে পয়সাকড়ি দেবই না, কড়া হাতে তাদের মোকাবিলা করেন তিনি: “খদ্দের যদি অসভ্য হয়, তৎক্ষণাৎ তেনাদের বুঝিয়ে দিই কত ধানে কত চাল।”

বিবাহ লেডিজ বিউটি পার্লারের এই মালকিন জন্মেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কয়লা-শহর দুর্গাপুরে। বাবা ছিলেন ইস্টার্ন কোলফিল্ডস্ লিমিটেডের ফোরম্যান (কর্মীদের সর্দার), সুতরাং আট সদস্যের পরিবারটি একাহাতেই সামলাতেন প্রমীলার মা। প্রতিবছর তিন ভাই ও দুই বোন - নিজের পাঁচ ভাইবোনের সঙ্গে জামুইয়ে দাদু-দিদিমার বাড়িতে ঘুরতে আসতেন প্রমীলা।

২০০০ সালে, ১২ শ্রেণি পাশ করার পরে রাজেশের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পাকাপাকিভাবে জামুইয়ে চলে আসেন প্রমীলা। স্বামী কাজে বেরিয়ে যাচ্ছেন, বাচ্চারাও ইস্কুলে, বিয়ের সাত বছর পর প্রমীলা টের পেলেন যে এভাবে একলাটি হয়ে বাড়িতে পড়ে থাকা তাঁর ধাতে নেই। তখনই বিউটি পার্লার খোলার কথা মগজে দানা বাঁধে। রাজেশের পূর্ণ সহায়তা ছিল এতে, বড্ড সুবিধা হয়েছিল তাই। প্রমীলার কথায়: “খদ্দেররা এলে তাদের সঙ্গে কথা বলি, হাসিঠাট্টা চলে; এতেই, [একাকীত্বের] ধকলটা পুরো কেটে যায়।”

Pramila posing for the camera.
PHOTO • Riya Behl
Pramila's husband Rajesh paints signboards and designs backdrops for weddings and other functions
PHOTO • Riya Behl

বাঁদিকে: ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছেন প্রমীলা। ডানদিকে: প্রমীলার স্বামী রাজেশ সাইনবোর্ড এবং বিয়েশাদির তথা অন্যান্য বিচিত্রানুষ্ঠানে ব্যবহৃত পটভূমিকা আঁকেন

২০০৭ সালে শেখার ইচ্ছে থাকলেও প্রসাধনী বিদ্যায় প্রশিক্ষিত হওয়ার তেমন একটা উপায় ছিল না, তবে জামুইয়ে দুটো জায়গার খোঁজ পান। ৬,০০০ টাকা দিয়ে আকর্ষক পার্লারে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ ও ফ্রেশ লুক পার্লারে ২,০০০ টাকার আরেকটা কোর্স: দুটোর খরচাই বহন করেছিল তাঁর পরিবার।

১৫ বছর হতে চলল এ কারবারে নিবিষ্ট আছেন মানুষটি, নিয়মিতভাবে আজও তিনি বিহারের এ প্রান্ত হতে সে প্রান্তে ছুটে যান বিভিন্ন কসমেটিক্স ব্র্যান্ডের দ্বারা আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিতে। তবে এর উল্টোটাও সত্যি, তাঁর কথায়, “৫০জনেরও বেশি মহিলাকে নিজে হাতে প্রশিক্ষিত করেছি, অনেকেই নিজের পার্লার খুলেছেন। কয়েকটা এই আশেপাশের গাঁয়েই।”

সাক্ষাৎকার প্রায় শেষ হওয়ার মুখে, আবার করে লাল লিপস্টিকটা চড়িয়ে নিলেন প্রমীলা। তারপর হাতে তুলেন নিলেন কাজলের একটি ক্রেয়ন, পার্লারের টকটকে লাল সোফায় গা এলিয়ে দেওয়ার আগে কৃষ্ণঘন হয়ে উঠল তাঁর চোখদুটি।

“আমি সুন্দরী নই বটে, তবে চাইলে আমার ছবি তুলতেই পারেন,” বলে উঠলেন প্রমীলা।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

ਰੀਆ ਬਹਿਲ, ਪੀਪਲਸ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ (ਪਾਰੀ) ਦੀ ਪੱਤਰਕਾਰ ਅਤੇ ਫ਼ੋਟੋਗ੍ਰਾਫ਼ਰ ਹਨ। ਪਾਰੀ ਐਜੂਕੇਸ਼ਨ ਵਿੱਚ ਸਮੱਗਰੀ ਸੰਪਾਦਕ ਦੇ ਰੂਪ ਵਿੱਚ ਉਹ ਵਿਦਿਆਰਥੀਆਂ ਦੇ ਨਾਲ਼ ਰਲ਼ ਕੇ ਵਾਂਝੇ ਭਾਈਚਾਰਿਆਂ ਦੇ ਜੀਵਨ ਦਾ ਦਸਤਾਵੇਜੀਕਰਨ ਕਰਦੀ ਹਨ।

Other stories by Riya Behl
Devashree Somani

ਦੇਵਸ਼੍ਰੀ ਸੋਮਾਨੀ ਇੰਡੀਆ ਫੈਲੋ ਪ੍ਰੋਗਰਾਮ ਦੇ ਮੌਜੂਦਾ ਸਮੂਹ ਵਿੱਚ ਇੱਕ ਸੁਤੰਤਰ ਪੱਤਰਕਾਰ ਹੈ।

Other stories by Devashree Somani
Editor : Priti David

ਪ੍ਰੀਤੀ ਡੇਵਿਡ ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਇੰਡੀਆ ਦੇ ਇਕ ਪੱਤਰਕਾਰ ਅਤੇ ਪਾਰੀ ਵਿਖੇ ਐਜੁਕੇਸ਼ਨ ਦੇ ਸੰਪਾਦਕ ਹਨ। ਉਹ ਪੇਂਡੂ ਮੁੱਦਿਆਂ ਨੂੰ ਕਲਾਸਰੂਮ ਅਤੇ ਪਾਠਕ੍ਰਮ ਵਿੱਚ ਲਿਆਉਣ ਲਈ ਸਿੱਖਿਅਕਾਂ ਨਾਲ ਅਤੇ ਸਮਕਾਲੀ ਮੁੱਦਿਆਂ ਨੂੰ ਦਸਤਾਵੇਜਾ ਦੇ ਰੂਪ ’ਚ ਦਰਸਾਉਣ ਲਈ ਨੌਜਵਾਨਾਂ ਨਾਲ ਕੰਮ ਕਰਦੀ ਹਨ ।

Other stories by Priti David
Translator : Joshua Bodhinetra

ਜੋਸ਼ੁਆ ਬੋਧੀਨੇਤਰਾ, ਪੀਪਲਜ਼ ਆਰਕਾਈਵ ਆਫ਼ ਰੂਰਲ ਇੰਡੀਆ (ਪਾਰੀ) ਵਿੱਚ ਭਾਰਤੀ ਭਾਸ਼ਾਵਾਂ ਦੇ ਪ੍ਰੋਗਰਾਮ ਪਾਰੀਭਾਸ਼ਾ ਦੇ ਸਮੱਗਰੀ ਮੈਨੇਜਰ ਹਨ। ਉਨ੍ਹਾਂ ਨੇ ਜਾਦਵਪੁਰ ਯੂਨੀਵਰਸਿਟੀ, ਕੋਲਕਾਤਾ ਤੋਂ ਤੁਲਨਾਤਮਕ ਸਾਹਿਤ ਵਿੱਚ ਐੱਮਫਿਲ ਕੀਤੀ ਹੈ। ਉਹ ਬਹੁਭਾਸ਼ਾਈ ਕਵੀ, ਅਨੁਵਾਦਕ, ਕਲਾ ਆਲੋਚਕ ਹੋਣ ਦੇ ਨਾਲ਼-ਨਾਲ਼ ਸਮਾਜਿਕ ਕਾਰਕੁਨ ਵੀ ਹਨ।

Other stories by Joshua Bodhinetra