উচ্চকোটির ফ্যাশন, চটুল ফাস্ট ফ্যাশন, যৌনতা।
বড়োলোকের ভ্রমণ, মধ্যবিত্তের ভ্রমণ, ভ্রমণ আর ভ্রমণ!
মিম, ট্রেন্ডিং হুক স্টেপ নাচের ভঙ্গি, কখনও মজাদার কখনও ভয়াবহ যত ফিল্টার।

অনলাইনে নজর কাড়ে এই ধরনের ‘কনটেন্ট’ই। পারি’র ঝুলিতে তেমন কিছু নেই, তবুও সোশ্যাল মিডিয়ার সর্পিল জগতে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ দর্শককে আকৃষ্ট করতে, এবং ধরে রাখতে, সক্ষম হয়েছি আমরা। কীভাবে? খুব সরল কিন্তু প্রায় অব্যবহৃত একটা উপায়ে: তথ্যসমৃদ্ধ, শক্তিশালী আখ্যান তৈরি করার ক্ষমতা।

নানান ধরনের দর্শকের উপর পারি’র গ্রামীণ সাংবাদিকতা কেমন প্রভাব ফেলতে পেরেছে, বছরের শেষে তারই একটা সালতামামি দেওয়া হল এখানে। (এই ছোট্ট ক্লিপটি দেখতে পারেন)

বাঁসওয়ারার অস্থায়ী ‘চেয়ারউওম্যান’ প্রতিবেদনটি নিয়ে আমাদের পোস্টটিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাবাশি জানিয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। নীলাঞ্জনা নন্দীর লেখা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে রাজস্থানে নারীদের জন্য প্রচলিত একটি প্রথার কথা, যাতে পুরুষ বা বাড়ির বড়োদের সামনে মেয়েদের চেয়ার বা উঁচু কোনও স্থানে বসা মানা। ইনস্টাগ্রামে এই রিলটি দেখা হয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ বার, এবং তার তলায় পড়েছে হাজার হাজার মন্তব্য – মেয়েরা জানিয়েছেন তাঁদের নিজেদের একইরকম অভিজ্ঞতার কথা, কেউ কেউ স্বীকার করেছেন এই ছোটো ছোটো বিষয়গুলো তাঁদের চোখ এড়িয়ে গেছে, আবার কেউ লিখেছেন এমন প্রথার অস্তিত্ব আছে তাঁরা ভাবতেই পারেন না। “এইসব জিনিস খেয়াল করার জন্য মরমি একটা চোখ লাগে” – পাঠক মলিকা কুমারের এই মন্তব্যটি সম্ভবত আমাদের এই দৈনন্দিন সাধারণ অভিজ্ঞতার কাহিনি তুলে ধরার যে সাংবাদিকতার ধরন, তার সবচেয়ে বড়ো স্বীকৃতি।

এই ধরনের স্বীকৃতি সত্যিই আমাদের অনেকটা এগিয়ে দেয়, আর আমাদের পাঠকরা এই স্বীকৃতি আমাদের দেখান নানান উপায়ে: তাঁরা আমাদের জানান এইসব প্রতিবেদনগুলি থেকে তাঁরা কতকিছু শিখেছেন, আবার কেউ কেউ পারি’র পাশে দাঁড়ান আর্থিক অনুদান নিয়ে, যাতে আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতার কাজটা চালিয়ে যেতে পারি।

মাদুরাইয়ের বহুবর্ণ, সদাব্যস্ত জুঁইফুলের বাজার নিয়ে অপর্ণা কার্তিকেয়নের একটি ভিডিওতে সারা পৃথিবী থেকে দর্শকরা আমাদের জানিয়েছেন, কতশত স্মৃতি তাজা করে দিয়েছে এই ভিডিওটি। “কী সুন্দর লেখা। পুরো দৃশ্যটা মল্লির [জুঁইফুল] মিষ্টি গন্ধ মেখে যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠল,” মন্তব্য করেছেন নম্রতা কিলপাডি। মানুষকে এভাবে প্রতিবেদনের স্থান-কালে পৌঁছে দিতে পারার আনন্দটাই আলাদা। এই সবকিছু সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রতিবেদনের বিষয় যাঁরা, তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁরা আমাদের কাছে মেলে ধরেছেন বলেই।

ইনস্টাগ্রামে এখনও পর্যন্ত আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিওটি হল পুণের বর্জ্য-সংগ্রহকারী সুমন মোরেকে নিয়ে একটি ৩০ সেকেন্ডের ক্লিপ, যেখানে তিনি মুখের কথা ব্যবহার করে আঘাত করার ক্ষমতা নিয়ে বলছেন। তিনি প্রশ্ন তুলছেন, তাঁর মতো মহিলাদের “কচরেওয়ালি” বলে কেন ডাকা হবে, যেখানে জঞ্জাল জড়ো করছে অন্য লোকে, আর তাঁরা শুধু সেটা সাফ করছেন? ১২ লক্ষ ভিউ পড়া এই ভিডিওটির নিচে মন্তব্যে মানুষ তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন এই সামাজিক অবহেলা আর ভ্রান্ত ধারণার ভিত নড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এক পাঠক তো লিখেছেন, “আমি স্বীকার করছি, আমিও ওই শব্দটা [কচরেওয়ালি] ব্যবহার করেছি। আর কোনওদিন করব না।” সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা গেলে যে তা সত্যি সত্যি সমাজে বদল আনার ক্ষমতা রাখে, এই মন্তব্যটা তার প্রমাণ।

পারি’র শিক্ষাক্ষেত্র প্রকল্প, যেখানে আমরা স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষে এই প্রতিবেদনগুলি আলোচনার মাধ্যমে পড়ুয়াদের মধ্যে গ্রামীণ ভারতকে দেখার দৃষ্টিকোণ তৈরি করার প্রয়াস করি – তার সম্পর্কে টুইটার ব্যবহারকারী বিষ্ণুসেইজওয়াট (@Vishnusayswhat) লিখেছেন: “যখন আপনি বুঝতে পারেন একটা মানুষের কাছে আর একটা মানুষের চেয়ে কম কেন আছে, আর সেই কারণটার সঙ্গে তিনি কতটা পরিশ্রম করেন তার প্রায় কোনওই সম্পর্ক নেই, ঠিক তখনই ভারতবর্ষকে আপনি একটু হলেও চিনতে শুরু করবেন।”

আর এই বার্তা ছড়িয়ে গেছে বহু দূরে, বহু স্তরে – বলিউড আইকন জিনাত আমন তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে পারি’র কাজ তুলে ধরে লিখেছেন, “মূলধারার কাহিনিশিল্প থেকে সৎ গ্রামীণ কাহিনি বলার ধারা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি, এটাও বুঝতে পারছি সেলেব্রিটিদের একেবারে তুচ্ছ ধরনের খবরও কতটা বেশি গুরুত্ব পায় আজকের সাংবাদিকতায়।” তবে সত্যি বলতে, সঠিক পথে চালিত হলে সেলেব্রিটি বা বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তাঁর এই পোস্টের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের ফলোয়ারের সংখ্যা কয়েক হাজার বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ’বছরের আরও একটা আনন্দজনক মুহূর্ত হল যখন হলিউডের অভিনেতা ও বিনোদন ব্যক্তিত্ব জন সেনা টুইটারে আমাদের ফলো করতে শুরু করেন!

তবে এই সবধরনের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে আমাদের সবচেয়ে ভালো লাগে যখন সামাজিক মাধ্যমের দর্শক/পাঠকরা আমাদের প্রতিবেদনের মানুষগুলির পাশে এসে দাঁড়ান। সবসময়েই যেভাবে মানুষ সাহায্যের হাত বাড়াতে তৈরি থাকেন তাতে আমরা অভিভূত। বয়স্ক কৃষক দম্পতি সুব্বাইয়া ও দেবাম্মা কীভাবে চিকিৎসার খরচ সামলাতে নাজেহাল হচ্ছেন তার বর্ণনা দেওয়া এই প্রতিবেদনটি র প্রতিক্রিয়ায় অসংখ্য পাঠক আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন; তাঁদের চিকিৎসার বিল এবং মেয়ের বিয়ের খরচের একটা বড়ো অংশ সেখান থেকে উঠে এসেছিল। পারিবারিক অসঙ্গতি এবং রাজ্যের সহায়তার অভাবের কারণে ধ্বংস হতে বসেছিল উদীয়মান দৌড়বাজ কিশোরী বর্ষা কদমের সমস্ত সম্ভাবনা। পাঠকদের তরফে এসেছে আর্থিক অনুদান, দৌড়ের জুতো কিনে দেওয়া, তথা প্রশিক্ষণের প্রস্তাবও।

আন্তর্জালের জগৎটা ঠিক কতটা নিষ্ঠুর আর হৃদয়হীন হতে পারে তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আমাদের পাঠকরা প্রতিনিয়ত আমাদের মনে করিয়ে দিতে থাকেন যে পৃথিবীতে সহমর্মিতা আর সদিচ্ছার ভাগও কিছু কম নয়।

সামাজিক মাধ্যমে আমাদের ফলো না করে থাকলে এই হ্যান্ডেলগুলিতে করতে পারেন। আমাদের হিন্দি, তামিল, এবং উর্দু হ্যান্ডেলও আছে।
ইন্সটাগ্রাম
ট্যুইটার
ফেসবুক
লিঙ্কডইন

পারি’র সোশ্যাল মিডিয়া টিমে স্বেচ্ছাশ্রম প্রদানে উৎসাহী থাকলে এখানে লিখুন: [email protected]

আমাদের কর্মকাণ্ডে আপনি আগ্রহী হলে ও পারিতে কোনওভাবে যোগ দিতে চাইলে সত্বর যোগাযোগ করুন এই ইমেল আইডিতে: [email protected] আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সকল ফ্রিল্যান্স ও স্বতন্ত্র লেখক, সাংবাদিক, আলোকচিত্রী, চিত্রনির্মাতা, অনুবাদক, সম্পাদক, চিত্রশিল্পী ও গবেষকদের স্বাগত জানাচ্ছি।

পারি একটি অলাভজনক সংস্থা। আমাদের এই বহুভাষিক জার্নাল ও মহাফেজখানার প্রতি ভালোবেসে যাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাঁদের অনুদানের উপর আমরা নির্ভরশীল। পারিকে সাহায্য করতে চাইলে দয়া করে এই অনুদানের লিং কে ক্লিক করুন।

অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী

Translator : Dyuti Mukherjee

Dyuti Mukherjee is a translator and publishing industry professional based in Kolkata, West Bengal.

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Dyuti Mukherjee