“ওই যে স্কুল,” মহারাষ্ট্রের গুন্ডেগাঁও গ্রামের শেষপ্রান্তে পোড়ো জমির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট দুই-কামরার কংক্রিটের বাড়িটার দিকে আগ্রহী আঙুল তুলে দেখান অতুল ভোসলে। গ্রামে যাওয়ার পথে চোখে পড়বেই বাড়িটা; কাদাভরা রাস্তা ধরে আরও কিলোমিটারখানেক উজিয়ে আসবে পারধি সম্প্রদায়ের ছোট বসতিখানা।

নীল জানলা আর হালকা হলুদ রঙের কংক্রিটের স্কুলবাড়ি, তার গায়ে আঁকা রংবেরঙের কার্টুন আর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবিগুলো দিয়ে সহজেই চোখ টেনে নেয়। চোখ টানার আরও একটা কারণ, এখানকার ২০ ঘর পারধির ত্রিপল ছাওয়া মাটির ঘরদোর আর অস্থায়ী ছাউনিগুলির মাঝে বড্ড বেমানান ঝকঝকে বাড়িখানা।

“আটা আমচিয়াকাদে ভিকাস ম্‌হাঞ্জে নি শলচ আহে। ভিকাসচি নিশানি [বিকাশ বলতে যা কিছু বোঝায় আমাদের এখানে তার একমাত্র নিদর্শন এটাই],” বলছেন ৪৬ বছরের অতুল ভোসলে। ‘এখান’ অর্থাৎ আহমেদনগর জেলার নগর তালুকভুক্ত এই বসতিটি, যা পৌটকাবস্তি নামে পরিচিত।

“দুসরা কায় নায়। ভস্তিত ইয়ায়লা রস্তা নায়, পানি নায়, লাইট নায় কে, পাক্কি ঘর নায়িত [আর কিচ্ছু নেই। রাস্তা নেই, জল নেই, আলো নেই, পাকা বাড়ি নেই]। স্কুলটা আছে কাছাকাছি, ছেলেমেয়েগুলো অন্তত লিখতে পড়তে শিখছে,” বলেন তিনি। ছোট্ট শিক্ষাকেন্দ্রটি অতুলের গর্বের স্থান। তাঁর দুই সন্তান সাহিল ও শবনম এখানেই পড়ে আরও ১৬ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে – সাতজন মেয়ে আর নয়জন ছেলে।

এই স্কুলটিকেই অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আর একটি স্কুলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। আর দারিদ্র্যসীমার বহু নিচে থাকা জনগোষ্ঠীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে সেই খবরে। যাযাবর, এককালে ‘অপরাধপ্রবণ জনজাতি’ নামে দাগিয়ে দেওয়ার পর স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ‘ডিনোটিফায়েড’ বা সেই তকমা থেকে মুক্ত হওয়া পারধি জনগোষ্ঠী বর্তমানে মহারাষ্ট্রে তফসিলি জনজাতি হিসেবে নথিভুক্ত

প্রায় দেড় শতক ধরে তীব্র বঞ্চনা এবং বৈষম্যের শিকার হয়েছে এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী। ১৮৭১ সালে ব্রিটিশ রাজ ‘অপরাধপ্রবণ জনজাতি আইন’ বলবৎ করে – উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ শাসন মানতে নারাজ প্রায় ২০০টি আদিবাসী গোষ্ঠী এবং অন্যান্য জাতিকে দমন করা। এই তালিকায় পারধিদের নাম ছিল। আইনের মূল কথা ছিল এই তালিকাভুক্ত কোনও জনজাতিতে জন্ম হলেই কোনও ব্যক্তি জন্মাবধি-অপরাধপ্রবণ বলে চিহ্নিত হবে। স্বাধীনতার পর ১৯৫২ সালে এই আইন বাতিল করা হয়, এবং তালিকাভুক্ত বঞ্চিত জনজাতিদের ‘ডিনোটিফায়েড’ বা বিমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই কলঙ্ক কোনওদিনও পুরোপুরি মোছেনি। স্থায়ী কোনও চাকরি জোটানো পারধিদের পক্ষে এখনও প্রায় অসম্ভব। তাঁদের সন্তানরা স্কুলে পড়তে গিয়ে উপহাসের পাত্র হয়, মারধরও খেতে হয়।

PHOTO • Jyoti Shinoli
PHOTO • Jyoti Shinoli

বাঁদিকে: দুই সন্তান সাহিল ও শবনমকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের বাড়ির সামনে অতুল ও রূপালি ভোসলে, আহমেদনগরের নগর তালুকভুক্ত পৌটকাবস্তি বসতিতে। ডানদিকে: এই প্রাথমিক জেলা পরিষদ স্কুলটিতেই পড়ে সাহিল ও শবনম। ‘আটা আমচিয়াকাদে ভিকাস ম্‌হাঞ্জে নি শলচ আহে। ভিকাসচি নিশানি [বিকাশ বলতে যা কিছু বোঝায় আমাদের এখানে তার একমাত্র নিদর্শন এটাই],’ বলছেন অতুল

প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর কাছে এই স্কুলের তাৎপর্য বসতির একমাত্র পাকা বাড়িটার চেয়ে অনেক বেশি। সরকারি উন্নয়ন নয়, স্রেফ মানজীবনের উন্নয়নের নিরিখেই তাঁদের কাছে বিকাশের সবেধন নীলমণি নিদর্শন এই স্কুলটি। একটা আশার প্রতীক, যে ছেলেমেয়েরা অন্তত বড়ো হয়ে ভালো চাকরি-বাকরি পাবে। ‘মূলধারা’র শিক্ষা থেকে এত দীর্ঘকাল ধরে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত এক জনজাতিই হয়তো একটা স্কুল উঠে যাওয়ার প্রকৃত সারমর্ম অনুধাবন করতে পারে।

“আমার ছেলেমেয়েরা ভালো মারাঠি বলে। পড়তে পারে। আমরা পারি না,” বলছেন অতুলের স্ত্রী, ৪১ বছরের রূপালি ভোসলে। “কিন্তু [শিক্ষকদের থেকে] শুনছি সরকার স্কুলটা এখান থেকে সরিয়ে দেবে,” যোগ করেন তিনি।

“সত্যিই করবে নাকি এটা?” অবিশ্বাস আর উৎকণ্ঠা দুইই ফুটে বেরোয় অতুলের প্রশ্ন থেকে।

হ্যাঁ, সত্যিই করবে। বস্তুত মহারাষ্ট্র সরকার যদি তাদের বর্তমান পরিকল্পনামাফিক এগোতে থাকে তবে পৌটকাবস্তির স্কুলটিই শুধু নয়, রাজ্যে ১৪ হাজারেরও বেশি স্কুল হয় বন্ধ হয়ে যাবে, সরে যাবে অন্যত্র, নয়তো মিশে যাবে অন্য কোনও স্কুলের সঙ্গে।

*****

স্কুলবাড়ির গায়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া লাল রঙে এখনও পড়া যায় মারাঠিতে লেখা নামটা – পৌটকাবস্তি গুন্ডেগাঁও প্রাথমিক জেলা পরিষদ স্কুল। এই ১৭ বছর পরেও। ২০০৭ সালে ভারত সরকারের বহুচর্চিত প্রকল্প ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’-এর অধীনে তৈরি হয়েছিল স্কুলটি, এবং সেই থেকে এই বস্তির শিশুদের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাদান করে চলেছে। সে সময়ের স্লোগান আজও লেখা আছে স্কুলবাড়ির গায়ে: প্রত্যেক মূল শালেৎ যাইল, এখি মূল ঘরি না রাহিল (প্রত্যেক শিশু পাঠশালায় যাবে, একটি শিশুও ঘরে না রবে)।

সে সময়ে সবার খুব মনে ধরেছিল স্লোগানটা।

কিন্তু ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত সরকারি সার্কুলার বলছে, শিক্ষাদানের মান বজায় রাখা, তথা ‘শিশুদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ, এবং তাদের শিক্ষাদানের পরিকাঠামো আরও সুষম’ করার স্বার্থে নির্দিষ্ট কিছু এলাকার ২০ জনের কম পড়ুয়ার স্কুলগুলিকে বড়ো ‘পাঠশালা দল’ বা সমূহশালার ভিতর ঢুকিয়ে নেওয়া হবে। ছোটো ছোটো পাঠশালাগুলিকে একটি সামূহিক পাঠশালার ভিতরে আনার এই কর্মকাণ্ড চলছে ২০২০ জাতীয় শিক্ষানীতির ৭ নং ধারার অধীনে।

PHOTO • Jyoti Shinoli
PHOTO • Jyoti Shinoli

শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালে সার দিয়ে আঁকা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখ (বাঁদিকে)। ২০০৭ সালে সর্বশিক্ষা অভিযানের অধীনে তৈরি স্কুলবাড়িটির গায়ে লেখা স্লোগান (ডানদিকে), প্রত্যেক মূল শালেৎ যাইল, এখি মূল ঘরি না রাহিল (প্রত্যেক শিশু পাঠশালায় যাবে, একটি শিশুও ঘরে না রবে)

পৌটকাবস্তি জেলা পরিষদ স্কুলের প্রধান শিক্ষক কুশলকর গঙ্গারামের কাছে নির্দেশ এসেছে, স্কুলে কতজন পড়ুয়া আছে তার হিসেব পাঠাতে, যাতে রাজ্য সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে এই স্কুলটিকে বড়ো স্কুল দলে মিশিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা। উৎকণ্ঠায় আছেন তিনিও। “ছেলেমেয়েরা ভালো পড়াশোনা করছে। সংখ্যা, ইংরেজি-মারাঠি বর্ণমালা, ছড়া-কবিতা, সব পড়তে পারে।“

“আমাদের স্কুলে শৌচাগার নেই, পানীয় জলের কল নেই,” প্রায় কুণ্ঠিত শোনায় তাঁর গলা। “নতুন করে একটা বড়ো স্কুলবাড়ি তৈরি করতে যে টাকা লাগবে তার চেয়ে অনেক কম খরচ হবে এইগুলো ঠিক করে নিতে। এখানে মানেমালা বস্তি স্কুল এবং আরও কয়েকটা স্কুল আছে যাদের পড়ুয়ার সংখ্যা কুড়ির কম। এই সবকটাকে একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। স্কুলটা এখানেই থাকা দরকার, শিশুদের আওতার মধ্যে,” চিন্তাগুলো পরিষ্কার করে বলতে বলতে গলাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর।

“আমরা শিক্ষকরা অনেক কষ্ট করে এই বাচ্চাদের মধ্যে শেখার অভ্যাসটা তৈরি করেছি,” বলছেন গঙ্গারাম। “জেলা পরিষদ স্কুল যদি হাঁটা দূরত্বের বাইরে চলে যায়, এই বাচ্চাগুলির আর প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়া হবে না,” বলেন তিনি।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, এই নতুন ক্লাস্টার স্কুল “বাসে ৪০ মিনিটের কম দূরত্বে” থাকতে হবে, এবং সরকার এবং কর্পোরেট সামাজিক কর্তব্য তহবিল বা সিএসআর তহবিল থেকে নিখরচায় বাস দেওয়া হবে। “দূরত্ব নিয়ে স্পষ্ট কোনও কথা নেই। ৪০ মিনিট মানে কী, ঠিক কতটা দূর?” এক কিলোমিটারের বেশি তো নিশ্চয়ই,” বলছেন কুশলকর। নিখরচায় বাস পরিষেবার প্রতিশ্রুতিটা তাঁর বিশ্বাস হয়েছে বলে মনে হল না।

“হাইস্কুল এই বস্তি থেকে চার কিলোমিটার দূর। শুনশান রাস্তা দিয়ে অতটা পথ যেতে হয় বাচ্চাদের। নিরাপত্তার অভাব থেকে বহু পড়ুয়া স্কুল ছেড়ে দেয়, বিশেষ করে মেয়েরা। নিখরচার বাস পরিষেবা কোথায় দেওয়া হচ্ছে?” প্রশ্ন তোলেন গঙ্গারাম। গত বছর চতুর্থ শ্রেণির পর আর পড়তে আসেনি সাত-আটজন পড়ুয়া, জানাচ্ছেন তিনি। বাবা-মায়ের সঙ্গে এখন কাজে যায় তারা।

বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব আর গণপরিবহণের অভাবই সমস্যা নয় শুধু। এই পড়ুয়াদের বাবা-মায়েদের যে কাজে বেরোতে হয় – এবং প্রায়শই দেশান্তর যেতে হয় কাজের খোঁজে – সেটাও প্রভাব ফেলে। বর্ষাকালে অধিকাংশই কাছের এবং দূরের নানা খামার-জমিতে খেতমজুরির কাজ করেন। বাকি বছরটা ৩৪ কিলোমিটার দূরের আহমেদনগর গঞ্জে চলে যান কাজের খোঁজে।

“সরকারি বাস বা শেয়ারের জিপ নেই এই রাস্তায়। ৮-৯ কিলোমিটার হেঁটে বড়ো রাস্তায় পৌঁছে তারপর কাজে যাওয়ার জন্য গাড়ির খোঁজ করি আমরা,” জানালেন অতুল। “ভোর ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে মজদুর নাকায় পৌঁছে যেতে হয়।, বাচ্চাদের যদি দূরের স্কুলে পাঠাতে হয় তবে আমাদের সামনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত অপেক্ষা করছে,” বলছেন রূপালি। সারা বছর প্রতিদিন, আমাদের কাজের খোঁজ করে যেতে হয়।” রূপালি বা অতুল কেউই দিনে ৪০০-৪৫০ টাকার বেশি মজুরি পান না, তাও আবার বছরে মাত্র ১৫০ দিনের জন্য। তাই বাকি বছরটা সংসার টানতে হলে তাঁদের প্রতিদিন কোনও না কোনওভাবে কাজ জুটিয়েই যেতে হবে।

PHOTO • Jyoti Shinoli
PHOTO • Jyoti Shinoli

পৌটকাবস্তির ২০টি পারধি পরিবারের আস্তানা হল অস্থায়ী ছাউনি আর ত্রিপল ছাওয়া মাটির ঘর। এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে জেলা পরিষদ স্কুলটি শুধুমাত্র বস্তির একমাত্র পাকা বাড়ির চেয়ে অনেক বেশি। সরকারি উন্নয়ন নয়, স্রেফ মানজীবনের উন্নয়নের নিরিখেই তাঁদের কাছে বিকাশের সবেধন নীলমণি নিদর্শন এই স্কুলটি

২০২০ শিক্ষানীতিতে দাবি করা হয়েছে যে সরকারের পক্ষে ছোটো স্কুলগুলির তত্ত্বাবধান করা অসুবিধাজনক। আকারে ছোটো হওয়ার কারণে এগুলি “অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক এবং পরিকাঠামোগতভাবে জটিল… শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষাসামগ্রী জোগানের নিরিখে।” এই স্কুলগুলি পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে কাঠামোগতভাবে অসুবিধাজনক, যেহেতু “ভৌগোলিক দূরত্ব, দুর্গম পথঘাট এবং সংখ্যায় অতিরিক্ত বেশি হওয়ার কারণে সব স্কুলে সমানভাবে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।”

ছোটো স্কুলের সমস্যা অনেক হতে পারে, কিন্তু অন্য স্কুলের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে তার কোনও উপযুক্ত সমাধান আসবে বলে মনে হয় না। অন্তত পুণের পানশেত গ্রামে মহারাষ্ট্র সরকারের প্রথম পরীক্ষামূলক উদ্যোগটি তাই বলছে। ভেলহে তালুকে প্রথম যে স্কুলটিকে সামূহিক ক্লাস্টার স্কুল হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল সেখানে কর্মী ঘাটতি এবং মৌলিক পরিকাঠামোর অভাব-সহ বহু সমস্যার খবর উঠে আসছে , অথচ সরকার এই প্রকল্প সারা রাজ্যে চালু করতে বদ্ধপরিকর।

“পাহাড়ি নির্জন এলাকার ছোটো ছোটো স্কুলগুলি নিয়ে সত্যিই গুরুতর সমস্যা আছে। কিন্তু এই স্কুলগুলিতে যথাযথ শিক্ষাপ্রদানের আর কোনও উপায়ও তো দেখা যাচ্ছে না, সে পড়ুয়ার সংখ্যা যতই কম হোক,” জানাচ্ছেন শিক্ষাক্ষেত্রের অর্থনীতিতে বিশারদ প্রখ্যাত বিদ্বজন জন্ধ্যলা বি জি তিলক। পারি-র তরফে ইমেইল-এ পাঠানো একটি প্রশ্নমালার উত্তরে লিখেছেন তিনি।

“স্কুল জুড়ে দেওয়া শিক্ষার অধিকার আইনের নিয়মের পরিপন্থী,” যোগ করছেন তিনি। এই আইন বলছে, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য স্কুল থাকা উচিত তাদের বসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে। স্কুলে ৬-১১ বছর বয়সি ন্যূনতম ২০ জন পড়ুয়া থাকতে পারে।

“তাছাড়া মাত্র ৫-১০ জন পড়ুয়ার জন্য ২-৩ জন শিক্ষক আর শিক্ষার অধিকার আইনে প্রতিশ্রুত সবরকম পরিকাঠামো নিয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ’ একটা স্কুল তৈরি করা অযৌক্তিক দেখায়। প্রশাসকরা প্রায়ই এই সমস্যাটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আমাদের নতুনভাবে ভাবতে হবে। স্কুল জুড়ে দেওয়া লোভনীয় হলেও ভালো সমাধান নয়,” ব্যাখ্যা করছেন তিলক।

*****

কিন্তু মহারাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তর তো শুধু পৌটকাবস্তির স্কুলটির দিকে দেখছে না। ২০২৩ সালের সার্কুলারটিতে বলা হয়েছে, রাজ্য জুড়ে ‘১ থেকে ২০ জন’ পড়ুয়া-সম্বলিত ‘১৪,৭৮৩টি স্কুল’ আছে, যেখানে মোট ১,৮৫,৪৬৭ পড়ুয়া শিক্ষাগ্রহণ করে। এই সবক’টিকেই স্কুল-জোড়া প্রকল্পে আনা দরকার। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় এই স্কুলগুলির ভবিষ্যৎ।

PHOTO • Jyoti Shinoli

নগর তালুকের ওয়ালুঞ্জ গ্রামের কাছে একটি পারধি বসতির ছেলেমেয়েরা স্কুলশিক্ষকের জন্য অপেক্ষা করছে। ‘১০টায় স্কুল শুরু হয়। আমরা তার আগেই চলে আসি,’ জানালো সাত বছরের আয়েষা

“এই স্কুলগুলো ছোটো হওয়ার অনেক কারণ আছে,” এই ছোটো ছোটো পাঠশালাগুলির ইতিহাস নিয়ে বলতে গিয়ে জানালেন গীতা মহাশব্দে। অলাভজনক সংগঠন নবনির্মিতি লার্নিং ফাউন্ডেশন-এর অধিকর্তা তিনি।

২০০০ সালে মহারাষ্ট্র সরকার বস্তি শালা যোজনা নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল সর্বশিক্ষা অভিযানের অধীনে, পৌটকাবস্তির মতো ছোটো ছোটো বস্তিতে স্কুল গড়ে তোলার প্রকল্প। “সরকারের পরিকল্পনা ছিল যে শিশুরা শিক্ষা থেকে দূরে আছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য তাদের নিজেদের বস্তিতে, অথবা দুর্গম পার্বত্য এলাকাগুলিতে তাদের বাড়ির কাছে নতুন স্কুল গড়ে তোলা। যোজনাটি মহাত্মা ফুলে শিক্ষণ হামি কেন্দ্র যোজনা নামেও পরিচিত ছিল,” জানাচ্ছেন গীতা।

এই প্রকল্পে একটি বস্তি শালায় ১-৪ শ্রেণির মোটমাট ১৫ জন পড়ুয়া থাকতে পারে। জেলা পরিষদ বা পৌর কার্যনির্বাহী সমিতির অনুমোদন মিললে এই সংখ্যার হেরফেরও করা যেতে পারে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে মাত্র ১০ জন পড়ুয়ার জন্যও স্কুল খোলা হতে পারে।

এই যোজনার অধীনে সরকার ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় আট হাজারটি বস্তি শালা খোলে।

কিন্তু ২০০৮ সালে যোজনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার, বলা হয় এটা একটা ‘অস্থায়ী ব্যবস্থা।’

“মহারাষ্ট্র সরকার একটি কমিটি নিয়োগ করে এই স্কুলগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনমতো সুপারিশ করার জন্য,” বলছেন গীতা। তিনি নিজে এই কমিটির সদস্য ছিলেন। কমিটি সুপারিশ করে কিছু বস্তি পাঠশালাকে সাধারণ প্রাথমিক স্কুলে রূপান্তরিত করার। ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে রাজ্য সরকার ৬,৮৫২টি বস্তি শালাকে সাধারণ স্কুলে রূপান্তরিত করার এবং ৬৮৬টিকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

PHOTO • Jyoti Shinoli

পারধি বস্তিগুলিতে বাবা-মায়েদের প্রায়শই বাড়ির বাইরে থাকতে হয়, আর ঘরদোর দেখাশোনা, রান্নাবান্না আর ছোটো ভাইবোনেদের খেয়াল রাখার দায়িত্ব এসে পড়ে ছোটো মেয়েদের ঘাড়ে

বস্তি শালা যোজনার অধীনে সরকার ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় আট হাজারটি বস্তি শালা খোলে। কিন্তু ২০০৮ সালে যোজনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার, বলা হয় এটা একটা ‘অস্থায়ী ব্যবস্থা’

এক দশক পেরিয়ে এসে এই সবকিছুই আবার উলটে যেতে বসেছে। ২০২০ শিক্ষানীতির জেরে সেই রূপান্তরিত স্কুলগুলিকেও বন্ধ করে দেওয়ার আলোচনা চলছে। “সাধারণীকৃত স্কুলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ার কোনও কারণ নেই,” বলছেন গীতা। “পড়ুয়ার সংখ্যা যদি না কমেও গিয়ে থাকে, বস্তি তো ওখানেই আছে, আর শিশুদের আর কোনওভাবে শিক্ষা পাওয়ার কোনও উপায় নেই।”

“পড়ঘম ওয়ার্তি টিপরি পড়লি, টাডাম টাট্টাড টাডাম…[ঢাকের বোল বলছে টাডাম টাট্টাড টাডাম]।” সে কী কী শিখেছে তা দেখাতে ভারি উৎসাহী অতুলের আট বছরের কন্যা শবনম। “আমার ছড়া পড়তে ভালো লাগে,” জানালো সে, আর তারপর তার তৃতীয় শ্রেণির মারাঠি পাঠ্যবইটি থেকে একখানি পড়েও শোনালো।

“আমি যোগ, বিয়োগ করতে পারি। পাঁচ পর্যন্ত নামতা জানি। পাঁচ ইকে পাঁচ, পাঁচ দুনে দাহা [পাঁচ এক্কে পাঁচ, পাঁচ দুগুণে দশ],” দিদিকে পাল্লা দিতে মাঝপথে বলে ওঠে সাহিল।

ভাইবোনে স্কুলে যেতে খুব ভালোবাসে, তবে শুধু ছড়া আর অঙ্কের জন্য নয়। “ভালো লাগে কারণ আমাদের বস্তির সব ছেলেমেয়েরা আসে, আর আমরা টিফিনের সময়ে লাংড়ি (কিৎ কিৎ) আর খো-খো খেলি,” বলছে সাহিল। পৌটকাবস্তি জেলা পরিষদ স্কুলের সব পড়ুয়াই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী।

“স্কুল আর পড়াশোনায় ওদের এত আগ্রহ দেখে আমাদের খুব আনন্দ হয়,” মাটির বাড়িখানার বাইরে বসে বললেন মা রূপালি। কিন্তু স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুর্ভাবনা সেই আনন্দে ছায়া ফেলেছে। পারধি জনগোষ্ঠীর কাছে শিক্ষার সুযোগ বরাবরই একটা সমস্যা হয়ে থেকেছে। ২০১১ আদমসুমারি অনুসারে মহারাষ্ট্রে ২২৩,৫২৭ জন পারধি আছেন। এতগুলি দশকের এত এত নীতি-যোজনা পেরিয়েও আজ বহু পারধি শিশুর কাছে অধরা প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও।

PHOTO • Jyoti Shinoli

‘আমার ছড়া পড়তে ভালো লাগে,’ বলছে আট বছরের শবনম (মাঝে লাল স্কার্ট পরনে)। পৌটকাবস্তি জেলা পরিষদ স্কুলের সব পড়ুয়াই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী

*****

“এখানে কেউ স্কুলে যায় না,” নির্বিকার মুখে বলে ১০ বছরের আকাশ বারদে। পৌটকাবস্তি থেকে ৭৬ কিলোমিটার দূরে শিরুর তালুকের অন্য একটি পারধি বসতির বাসিন্দা সে। কুকাড়ি নদীর পাশে এই শিন্দোদি পল্লীটি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে প্রাথমিক আর মাধ্যমিক স্কুল। হেঁটে যাওয়ার পক্ষে অনেকটাই রাস্তা। “আমি মাছ ধরি মাঝে মাঝে। মাছ ধরতে ভালো লাগে,” বলছে সে। “বাবা-মা ইটভাটা আর ইমারতির কাজ করে। ৩-৪ মাস মজদুরি করতে বাইরে থাকে। আমায় কোনওদিনও স্কুলে যেতে বলেছে বলে মনে পড়ে না, আমি নিজেও ভাবিনি।”

এই বস্তির ৫-১৪ বয়ঃসীমার একটি শিশুও স্কুলে যায় না।

মহারাষ্ট্রের বিমুক্ত এবং যাযাবর আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে শিক্ষার পরিস্থিতি নিয়ে ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, ২০০৬-০৭ থেকে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মধ্যে এই গোষ্ঠীগুলির ২২ লক্ষেরও বেশি শিশু স্কুলের বাইরে ছিল।

PHOTO • Jyoti Shinoli
PHOTO • Jyoti Shinoli

পৌটকাবস্তি থেকে ৭৬ কিলোমিটার দূরে শিরুর তালুকের আর এক পারধি বস্তি শিন্দোদি জনপদে ‘কেউ স্কুলে যায় না,’ জানাচ্ছে ১০ বছরের আকাশ বারদে (লাল শার্ট)। শিন্দোদির শিশুরা সাধারণত দিন কাটায় নদী আর নৌকোয় খেলাধুলো করে। ৫-১৪ বয়ঃসীমার মধ্যে থাকা বস্তির ২১টি শিশুর কেউ স্কুলে যায় না

PHOTO • Jyoti Shinoli

‘স্কুলের ব্যাপারে জানি না। ভাবিনি কখনও। মেয়েদের দেখেছি ইউনিফর্ম পরতে। ভালো দেখায়,’ বলছে অশ্বিনী (মাঝখানে), সাহিল আর টুইঙ্কলের সঙ্গে খেলার ফাঁকে

“এই শিশুদের অনেকেরই বাবা-মা বাইরে কাজ করেন, মুম্বই বা পুণেতে। ছেলেমেয়েরা হয় একা একা বাড়িতে থেকে যায়, নয়তো বাবা-মার সঙ্গে চলে যায়,” জানাচ্ছেন ৫৮ বছরের কান্তাবাই বারদে। ছেলে-বৌমাকে নিয়ে সাংলির আখের খেতে কাজ করতে যাওয়ার সময় কান্তাবাই নিজেও তাঁর দুই নাতনি নয় বছরের অশ্বিনী আর ছয় বছরের টুইঙ্কলকে বাড়িতে রেখে যান। মেয়েদুটির কেউই স্কুলে যায় না।

টুইঙ্কলের জন্মই হয়েছিল আখের খেতে, জানালেন তিনি। পরিবার যখন তাকে স্কুলে দিতে গেল, সেখান থেকে দাখলা (জন্মপঞ্জি) চাওয়া হয়। “এখানে কোনও আশা কর্মী আসে না। আমাদের ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনি সবার বাড়িতে জন্ম হয়। কোনও দাখলা নেই,” বলছেন কান্তাবাই।

“আমি একাই থাকি বেশিরভাগ, বোনের সঙ্গে,” জানাচ্ছে ছোট্ট অশ্বিনী। “মোঠি আয়ি কয়েক সপ্তাহের জন্য ফেরত আসে আমাদের দেখাশোনা করতে। আমি পুরো রান্না করতে পারি, এমনকি ভাকরিও বানাতে পারি। স্কুলের ব্যাপারে জানি না। ভাবিনি কখনও। মেয়েদের দেখেছি ইউনিফর্ম পরতে। ভালো দেখায়,” খিলখিল করে হেসে ওঠে সে।

শিন্দোদির আকাশ, অশ্বিনী আর টুইঙ্কলের মতো গ্রামীণ ভারতে ৩-৩৫ বয়ঃসীমার মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ পুরুষ এবং ১৯ শতাংশ মহিলা কোনওদিনও কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নাম লেখাননি, বলছে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা (এনএসএস), ২০১৭-১৮

“লোকে আমাদের চোর বলে। বলে আমরা নোংরা, গ্রামে ঢুকতে দেয় না। আমরা কেমন করে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাব?” তাঁর জনজাতির বাচ্চাদের জন্য স্কুল আদৌ নিরাপদ জায়গা বলে মনে করেন না কান্তাবাই।

অপরাধপ্রবণ জনজাতি আইন বাতিল হয়ে যাওয়ার বহু দশক পরেও পারধিদের কপাল থেকে সেই তকমা ঘোচেনি। (পড়ুন: অপরাধ নেই, রয়েছে অন্তহীন শাস্তি ) জন্মপঞ্জি, আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো জরুরি নথিপত্র না থাকার দরুণ তাঁদের পক্ষে নানা সরকারি যোজনার সুবিধা গ্রহণ করাও কঠিন। (পড়ুন: আমার নাতিনাতনি নিজের জোরেই দালান তুলবে এবং পারধি স্কুলটিকে গুঁড়িয়ে দিল সমৃদ্ধি মহামার্গ ) আর এই তকমার কারণে স্কুলে ঢুকেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় সম্প্রদায়ের বহু শিশু।

PHOTO • Jyoti Shinoli
PHOTO • Jyoti Shinoli

বাঁদিকে: তাঁর জনজাতির বাচ্চাদের জন্য স্কুল আদৌ নিরাপদ জায়গা বলে মনে করেন না কান্তাবাই (বেগুনি শাড়ি): ‘লোকে আমাদের চোর বলে। বলে আমরা নোংরা, গ্রামে ঢুকতে দেয় না। আমরা কেমন করে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাব?’ ডানদিকে: দিব্যা মালি, মীনা পওয়ার আর মনিকা ধুকে (বাঁদিকে থেকে ডানদিকে) কোনওদিনও স্কুলে যায়নি। ‘মীনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এই বছর হয়ে যাবে। আমাদের বাবা-মাও পাত্র খুঁজছে। আমাদের এটাই ভাগ্য, স্কুল নয় সম্ভবত,’ বলছে মনিকা

মহারাষ্ট্রের ২৫টি জেলার বিমুক্ত, যাযাবর এবং আধা-যাযাবর আদিবাসী গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে হায়দরাবাদের কাউন্সিল ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট পরিচালিত ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, তাদের সমীক্ষা করা ১৯৯টি পারধি পরিবারের মধ্যে ৩৮ শতাংশের ক্ষেত্রে বাচ্চারা স্কুল ছেড়ে দিয়েছে বৈষম্য, ভাষা সমস্যা, বিয়ে এবং শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতার অভাবের কারণে।

“লেখাপড়া আমাদের বাচ্চাদের জন্য নয়। সমাজ আমাদের এখনও ঘেন্না করে। এর কোনও বদল আসবে বলে মনে হয় না,” কান্তাবাইয়ের গলা হতাশ শোনায়।

ভয়াবহ লাগলেও তাঁর কথাগুলি সত্যের বড্ড বেশিই কাছাকাছি। ১৯১৯ সালে মহারাষ্ট্রের মহামান্য সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ কর্মবীর ভাউরাও পাটিল প্রতিজ্ঞা করেছিলেন রাইয়তের (জনগণ) কাছে শিক্ষাকে সহজলভ্য করে তুলবেন, দাবি তুলেছিলেন, ভস্তি তিথে শালা [প্রতি বস্তিতে স্কুল]। ১০৫ বছর পর শিন্দোদিতে এখনও স্কুল এসে পৌঁছয়নি। পৌটকাবস্তিতে স্কুল পৌঁছতে ৯০ বছর লেগেছে – আর সেটাও এখন নীতিবদলের ঝড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বসেছে বস্তির শিশুদের ভাসিয়ে দিয়ে।

পৌটকাবস্তি জেলা পরিষদ স্কুলের গায়ে লেখা আছে:

শিক্ষণ হক্কাচি কিম্যা ন্যারি
শিক্ষণ গঙ্গা আতা ঘরোঘরি।

(শিক্ষার অধিকারের জাদুমন্তরে
শিক্ষার গঙ্গা বইবে ঘরে ঘরে।)

দেওয়াল লিখন সত্যি হতে আর কতদিন?

অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী

Jyoti Shinoli

ଜ୍ୟୋତି ଶିନୋଲି ପିପୁଲ୍‌ସ ଆର୍କାଇଭ ଅଫ୍‌ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆର ଜଣେ ବରିଷ୍ଠ ସାମ୍ବାଦିକ ଏବଂ ପୂର୍ବରୁ ସେ ‘ମି ମରାଠୀ’ ଏବଂ ‘ମହାରାଷ୍ଟ୍ର1’ ଭଳି ନ୍ୟୁଜ୍‌ ଚ୍ୟାନେଲରେ କାମ କରିଛନ୍ତି ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ ଜ୍ୟୋତି ଶିନୋଲି
Editor : P. Sainath

ପି. ସାଇନାଥ, ପିପୁଲ୍ସ ଆର୍କାଇଭ୍ ଅଫ୍ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆର ପ୍ରତିଷ୍ଠାତା ସମ୍ପାଦକ । ସେ ବହୁ ଦଶନ୍ଧି ଧରି ଗ୍ରାମୀଣ ରିପୋର୍ଟର ଭାବେ କାର୍ଯ୍ୟ କରିଛନ୍ତି ଏବଂ ସେ ‘ଏଭ୍ରିବଡି ଲଭସ୍ ଏ ଗୁଡ୍ ଡ୍ରଟ୍’ ଏବଂ ‘ଦ ଲାଷ୍ଟ ହିରୋଜ୍: ଫୁଟ୍ ସୋଲଜର୍ସ ଅଫ୍ ଇଣ୍ଡିଆନ୍ ଫ୍ରିଡମ୍’ ପୁସ୍ତକର ଲେଖକ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ ପି.ସାଇନାଥ
Translator : Dyuti Mukherjee

Dyuti Mukherjee is a translator and publishing industry professional based in Kolkata, West Bengal.

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Dyuti Mukherjee