“আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে ওকে টাকা দিয়েছিল যুতসই বউ খুঁজে আনার জন্য। এখানে এটা চলতি ব্যাপার।” নিজের কাহিনি আমার সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন বছর কুড়ির রুমা খীচড়। “দূর থেকে এসে এখানে [রাজস্থান] মানিয়ে নেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। আমার জেঠানি [বড়ো ভাজ/ভাসুরের স্ত্রী]…”

“পচাস হাজার লগাকে উসকো লায়ে থে! ফির ভি সাত সাল কি বাচ্চি ছোড় কে ভাগ গয়ি উও [পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে ওকে এনেছিলাম! তা সত্ত্বেও সাত বছরের মেয়েকে ছেড়ে পালিয়ে গেল]।” বৌমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে গল্পে ঢুকে পড়েন ৬৭ বছরের শাশুড়ি যশোদা খীচড় (নাম পরিবর্তিত)।

“ধন্যি মেয়ে! তিন বছর থেকেছিল এখানে।” পঞ্জাব থেকে আগত এবং পরে ঘরপালানো বড়ো পুত্রবধূর উপর থেকে এখনও রাগ যায়নি যশোদার। “ওর ভাষা নিয়ে বরাবরই সমস্যা হত। আমাদের ভাষা কোনওদিন শেখেনি। এক রক্ষা বন্ধনের দিন বলল দাদার বাড়ি যেতে চায়, বিয়ের পর প্রথম বার। আমরা যেতে দিলাম। আর ফিরল না। ছয় বছর হয়ে গেল,” যোগ করেন তিনি।

যশোদার মেজো বৌমা রুম ঝুনঝুনুঁতে এসেছিলেন অন্য এক দালালের মাধ্যমে।

কত বয়সে বিয়ে হয়েছে তিনি জানেন না। “স্কুলে যাইনি কখনও, তাই কোন সালে জন্ম হয়েছিল ঠিক বলতে পারব না,” ছাই রঙের আলমারি হাতড়ে নিজের আধার কার্ড খুঁজতে খুঁজতে বললেন তিনি।

ঘরের ভিতরে খাটিয়ার উপর খেলায় মগ্ন তাঁর পাঁচ বছরের শিশুকন্যাটিকে দেখি আমি।

“আধারটা বোধহয় আমার স্বামীর মানিব্যাগে আছে। আমার বয়স ওই মোটামুটি ২২ হবে,” বললেন রুমা।

Left: Yashoda says that Ruma learnt to speak in Rajasthani within six months of her marriage, unlike her elder daughter-in-law.
PHOTO • Jigyasa Mishra
Right: Ruma is looking for her Aadhaar card copy to confirm her age
PHOTO • Jigyasa Mishra

বাঁদিকে: যশোদা জানাচ্ছেন, বিয়ের ছয় মাসের মধ্যেই রুমা রাজস্থানি বলতে শিখে গেছিলেন, যা তাঁর বড়ো বৌমা পারেননি। ডানদিকে: নিজের বয়স প্রমাণ করার জন্য আধার কার্ড খুঁজছেন রুমা

“আমি জন্মেছি, মানুষ হয়েছি গোলাঘাটে [অসম], আমার বাবা-মা দুর্ঘটনায় মারা যান,” জীবনের কথা শুরু করেন তিনি। “তখন আমার বয়স মাত্র পাঁচ, তখন থেকে ভাইয়া [দাদা], ভাবি [বউদি], নানা [দাদু] আর নানিই [দিদিমা] আমার পরিবার,” জানালেন তিনি।

সালটা ২০১৬। এক রবিবার বিকেলে রুমা দেখেন দাদা দুই জন অদ্ভূত পোশাক পরা রাজস্থানি লোককে নিয়ে এল অসমের গোলাঘাট জেলায় তাঁর দাদু-দিদিমার বাড়িতে। তাদের মধ্যে একজন ছিল দালাল, কমবয়সি মেয়েদের কনে হিসেবে নিয়ে যাওয়া তার কাজ।

“আমার শহরে বাইরের রাজ্য থেকে এমন লোকজন আসাটা মোটেই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না,” বলছেন রুমা। তাঁর পরিবারকে ওরা প্রতিশ্রুতি দেয় যে পাত্র ভালো, কোনও পণ লাগবে না। উলটে ওরাই তাঁদের টাকা দিতে চায়। এও বলে যে বিয়ের কোনও খরচ লাগবে না।

‘যোগ্য পাত্রী’ রুমাকে দেখতে আসা একজন লোকের সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হল। এক সপ্তাহের মধ্যে অসমে নিজের বাড়ি থেকে ২,৫০০ কিলোমিটার দূরে ঝুনঝুনুঁ জেলার কিসানপুরা গ্রামে চলে এলেন তিনি।

অত দূরে বিয়েতে সম্মতি দেওয়ার জন্য তাঁর পরিবারকে যে টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল, তা আর তাঁদের হাতে এসে পৌঁছয়নি। তাঁর শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ খীচড়দের দাবি হল দালালকে যে টাকা তাঁরা দিয়েছিলেন তার মধ্যে মেয়ের বাড়িতে প্রদেয় টাকাও ধরা ছিল।

“এখানে বেশিরভাগ ঘরেই আপনি অন্য অন্য রাজ্য থেকে আসা পুত্রবধূ পাবেন,” বলছেন রুমা। স্থানীয় মানুষজন এবং এই এলাকার সমাজকর্মীরা বলছেন অল্পবয়সি এই মেয়েদের সাধারণত নিয়ে আসা হয় মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে।

Left: Ruma right outside her in-law's house.
PHOTO • Jigyasa Mishra
Right: Ruma with her husband Anil and her daughter
PHOTO • Jigyasa Mishra

বাঁদিকে: শ্বশুরবাড়ির সামনে রুমা। ডানদিকে: স্বামী অনিল ও মেয়ের সঙ্গে রুমা

রাজস্থানে কনে খুঁজে পাওয়া রীতিমতো কষ্টকর – সি এস আর বা শিশু লিঙ্গ অনুপাতের (০ থেকে ৬ বয়ঃসীমা) নিরিখে দেশের অন্যতম দুর্দশাগ্রস্ত রাজ্য এটা। রাজ্যের ৩৩টি জেলার মধ্যে ঝুনঝুনুঁ আর সিকরের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ২০১১ জনগণনা অনুসারে গ্রামীণ ঝুনঝুনুঁতে এই অনুপাত ছিল প্রতি ১০০০ ছেলে-পিছু ৮৩২ মেয়ে, যা তৎকালীন জাতীয় গড় ১০০০ ছেলে-পিছু ৯২৩ মেয়ের অনেকটাই নিচে।

মানবাধিকার কর্মী বিকাশ কুমার রাহর বলছেন, মেয়েদের সংখ্যা এত কম হওয়ার পিছনে দায়ী এই জেলায় পুত্রসন্তানের প্রতি পক্ষপাত। “ছেলেদের বিয়ে দেওয়ার মতো মেয়েই নেই, তাই পরিবারগুলো এইসব সহজলভ্য দালালদের ধরে। দালালরা তারপর অন্য রাজ্য থেকে দেখে দেখে হতদরিদ্র বাড়ির মেয়ে খুঁজে আনে এদের জন্য,” জানালেন তিনি।

জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় ( এনএফএইচএস-৫ ) নথিভুক্ত তুলনায় সাম্প্রতিক ২০১৯-২০ সালের তথ্য বলছে গত পাঁচ বছরে রাজস্থানের শহুরে এলাকায় জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে এই হার ১০০০ ছেলে প্রতি ৯৪০ মেয়ে। গ্রামীণ এলাকায় কিন্তু সেই অনুপাত কমে দাঁড়াচ্ছে ১০০০ ছেলে প্রতি ৮৭৯ মেয়েতে। উল্লেখ্য, ঝুনঝুনুঁ জেলার ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয় এনজিও শিক্ষিত রোজগার কেন্দ্র প্রবন্ধক সমিতিতে (SRKPS) কো-অর্ডিনেটরের কাজ করেন রাহর। তাঁর কথায়, “লোকে [কনে আনার জন্য] ২০ হাজার থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করে এখানে, যার ভিতরে দালালের কমিশনও থাকে।”

কিন্তু কেন?

এটা না করলে কাউকে [কনে] পাব কেমন করে?” পালটা প্রশ্ন করেন যশোদা। “ছেলের সরকারি চাকরি না থাকলে তো কেউ মেয়েই দিতে চায় না।”

From left: Ruma’s father-in-law, Ruma near the wall, and her mother-in-law Yashoda with her grand-daughter on her lap. The family has adopted a dog who follows Yashoda's c ommands
PHOTO • Jigyasa Mishra

বাঁদিকে থেকে: রুমার শ্বশুর, পাঁচিলের কাছে রুমা, এবং নাতনিকে কোলে নিয়ে তাঁর শাশুড়ি যশোদা। তাঁরা কুকুর পুষেছেন একটি, সে শুধু যশোদার কথা শোনে

যশোদার দুই ছেলে বাবাকে খেতির কাজে সাহায্য করেন এবং পরিবারের ছয়টি গবাদি পশুর দেখাশোনা করেন। তাঁদের ১৮ বিঘা জমি আছে (রাজস্থানের এই অঞ্চলে এক বিঘা মানে ০.৬২৫ একর) যাতে তাঁরা মিলেট, গম, তুলো এবং সরষে ফলান।

“আমার ছেলেরা এখানে মেয়ে পেল না, তাই বাইরে থেকে [পাচার করে] নিয়ে আসা ছাড়া আর উপায় ছিল না। কতদিন আর ছেলেদের বিয়ে না দিয়ে বসিয়ে রাখব?” বলেন যশোদা।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মাদক ও অপরাধ-বিষয়ক দপ্তর (UNODC) তাদের মনুষ্য পাচার প্রতিরোধ, প্রতিহত করা এবং শাস্তিদান সংক্রান্ত নিয়মাবলিতে পাচারকে সংজ্ঞায়িত করছে এভাবে: “মুনাফার জন্য ব্যবহার করার উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে জোর করে, মিথ্যা বলে বা প্রতারণার মাধ্যমে নিয়োগ, পরিবহণ, হস্তান্তর করা, লুকিয়ে রাখা বা গ্রহণ করা।” ভারতে এটি ফৌজদারি অপরাধ, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭০ ধারার অধীনে সাত থেকে দশ বছর কারাদণ্ডযোগ্য।

“রাজস্থানের প্রতিটি জেলায় মনুষ্যপাচার-বিরোধী ইউনিট আছে,” পারি-র সঙ্গে এই প্রথা রুখতে কর্মরত তাঁদের প্রচেষ্টা বিষয়ে জানালেন ঝুনঝুনুঁর পুলিশ সুপার মৃদুল কচ্ছাওয়া। “এই তো মাসকয়েক আগেই অসম পুলিশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল একটি মেয়ের পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ঘিরে। আমরা তদন্ত করি, মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠাই। কিন্তু কোনও কোনও জায়গায় আবার পাচার হওয়া মেয়েরা ফিরে যেতে চায় না। তারা বলে এখানে তারা স্বেচ্ছায় এসেছে। তখন ব্যাপারটা জটিল হয়ে যায়।”

আরও ঘন ঘন বাড়ি যেতে পারলে রুমার ভালোই লাগবে, কিন্তু শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে যেতে তিনি চান না। “আমি এখানে খুশি আছি, সাধারণ মেয়ের মতো আছি,” বলছেন তিনি। “কোনও সমস্যা নেই আমার। অবশ্যই, ঘন ঘন বাড়ি যেতে পারি না এতটা দূরত্বের কারণে, তবে দাদার বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে পারলে ভালোই লাগবে।” আজ পর্যন্ত শ্বশুরবাড়িতে কোনও মৌখিক বা শারীরিক অত্যাচারের সম্মুখীন হননি রুমা।

Ruma visited her family in Assam twice since her marriage about seven years ago. She speaks to them occassionally over the phone
PHOTO • Jigyasa Mishra

সাত বছর আগে বিয়ের পর থেকে অসমে নিজের বাড়িতে বার দুই গেছেন রুমা। তবে ফোনে মাঝেমধ্যে কথা হয়

রুমা হয়তো ‘সাধারণ মেয়ে’র মতোই আছেন, কিন্তু ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাচার হয়ে আসা আরও একজন বছর কুড়ির মেয়ে সীতার (নাম পরিবর্তিত) গল্পটা অন্যরকম; এতটাই যে তা বলতেও ত্রাসে কাঁপছেন তিনি: “আমার জেলা বা আমার পরিবারের অন্য কারও নাম ব্যবহার করবেন না।”

“২০১৯ সালে এক রাজস্থানি দালাল ঝুনঝুনুঁ থেকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। ও বলেছিল এদের নাকি অনেক পয়সা, হবু স্বামীর কাজ নিয়েও মিথ্যে বলেছিল। তারপর বাবাকে দেড় লক্ষ টাকার লোভ দেখিয়ে বলল আমায় তক্ষুনি নিয়ে চলে যাবে।” সে বলেছিল বিয়ে রাজস্থানে হবে আর সে বাড়িতে ছবি পাঠিয়ে দেবে।

ধারদেনা আর চার ছোটো ছেলেমেয়ের ভরণপোষণের দায়ে জর্জরিত বাবাকে সাহায্য করতে পারবেন ভেবে সেই দিনই বাড়ি ছেড়েছিলেন সীতা।

“দুই দিন পর আমায় একটা ঘরে বন্ধ করে রাখা হল। কিছুক্ষণ পর একটা লোক ঢুকল। ভেবেছিলাম ওই বোধহয় আমার স্বামী,” বলে চলেন তিনি। “আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে নিতে লাগল। আমি বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করায় আমায় থাপ্পড় লাগাল। আমায় ধর্ষণ করল। তারপরের দুই দিন বোধহয় ওই ঘরেই রাখা হয়েছিল আমায়, বিশেষ খাবার-টাবারও দেয়নি। তারপর আমায় আমার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারলাম আমার স্বামী অন্য একটা লোক, যে আবার আমার থেকে আট বছরের বড়ো।”

“এইসব দালালের কাছে সব বয়স আর সব আর্থিক অবস্থার উপযুক্ত কনের খবর থাকে,” জানাচ্ছেন ঝুনঝুনুঁর SRKPS-এর প্রতিষ্ঠাতা রাজন চৌধুরী। “আমি একবার একটা দালালকে বলেছিলাম, আমার জন্য কোনও মেয়ে জুটবে কিনা। মনে রাখবেন, আমার কিন্তু ষাটের উপরে বয়স। আমায় অবাক করে দিয়ে সে বলল, টাকা বেশি লাগবে, কিন্তু হয়ে যাবে। ওর পরিকল্পনা ছিল, জোয়ান বয়সের একটা ছেলেকে হবু বর সাজিয়ে নিয়ে যাবে।” তারপর মেয়ের বাড়ি যখন মেয়ে হস্তান্তর করে দেবে, ওই দালাল তাকে রাজস্থানে নিয়ে এসে ঠিক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেবে।

Varsha Dangi was trafficked from her village in Sagar district of Madhya Pradesh and brought to Jhunjhunun
PHOTO • Jigyasa Mishra

মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলা থেকে রাজস্থানের ঝুনঝুনুঁতে পাচার হয়েছিলেন বর্ষা ডাঙ্গি

রাজনের মতে, ঝুনঝুনুঁতে কনে পাচারের এই রমরমার আসল কারণ হল জেলার লিঙ্গ অনুপাত। “এই জেলা এবং তার আশপাশে কন্যাভ্রূণ হত্যার জন্য বেআইনি লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষা প্রায় সব জায়গায় খুব সহজে করানো যায়,” বলছেন তিনি।

রুমার বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ঝুনঝুনুঁর আলসিসার গ্রামে থাকেন বর্ষা ডাঙ্গি। ২০১৬ সালে তাঁর থেকে ১৫ বছরের বড়ো এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলা থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল ঝুনঝুনঁতে তাঁর স্বামীর গ্রামে।

“বয়সে বড়ো ছিলেন, তবে ভালোবাসতেন,” বলছেন বর্ষা। “আমার শ্বাশুড়িই যত সমস্যার কারণ, সেই যবে থেকে এসেছি। এখন স্বামী মারা গেছেন, পরিস্থিতিও খারাপ তাই,” বলছেন ৩২ বছর বয়সি বর্ষা।

“ইয়াহাঁ কা এক বিচৌলিয়া থা যো এমপি মে আতা থা। মেরে ঘরওয়ালো কে পাস প্যায়সে নেহি থে দহেজ দেনে কে লিয়ে, তো উনহোনে মুঝে ভেজ দিয়া ইয়াহাঁ পর বিচৌলিয়া কে সাথ [রাজস্থানের এক আড়কাঠি মাঝে মাঝে মধ্যপ্রদেশ আসত। আমার পরিবারের কাছে বিয়ের পণ দেওয়ার টাকা ছিল না, তাই ওরা আমায় ওর সঙ্গে এখানে পাঠিয়ে দেয়],” জানাচ্ছেন তিনি।

প্রতিবেশীর বাড়িতে লুকিয়ে বসে আমার সঙ্গে কথা বলছেন তিনি: “দেখবেন আমার সাস (শাশুড়ি) বা দেওরানি (দেওরের স্ত্রী বা জা) এলে পর যেন আর আমার সঙ্গে কথা বলবেন না। ওরা কেউ যদি আমাদের কথা শুনে ফেলে আমার জীবন নরক হয়ে যাবে।”

'রাজস্থানের এক আড়কাঠি মাঝে মাঝে মধ্যপ্রদেশ আসত। আমার পরিবারের কাছে বিয়ের পণ দেওয়ার টাকা ছিল না, তাই ওরা আমায় ওর সঙ্গে এখানে পাঠিয়ে দেয়'

ভিডিও দেখুন: ঝুনঝুনুঁর জন্য ‘সুযোগ্য পাত্রী’ কেনা

কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে একটা বিস্কুটের জন্য বায়না করে চলেছে তাঁর চার বছরের শিশুপুত্র। প্রতিবেশী কয়েকটা বিস্কুট দেন তাকে। তাঁকে দেখিয়ে বর্ষা বলেন, “এই মানুষগুলো না থাকলে আমার বাচ্চা আর আমি না খেতে পেয়ে মরে যেতাম। জা আর আমার হাঁড়ি আলাদা। স্বামী যবে থেকে চলে গেছেন প্রতি বেলার খাবার জোগাড় করা যেন লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে।” ২০২২ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে নামমাত্র বরাদ্দে কীভাবে দিন গুজরান করতে হচ্ছে তার বর্ণনা করতে গিয়ে চোখে জল আসে বর্ষার।

“রোজ রোজ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। শাশুড়ি বলে দিয়েছে, যদি বেঁচে থাকতে চাও তবে কারও চুড়া (এয়ো স্ত্রীর চিহ্ন) হাতে পরতে হবে,” বর্ষার ইঙ্গিত রাজস্থানে বিধবাদের জোর করে বয়স নির্বিচারে স্বামীর পরিবারের অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার যে প্রথা আছে তার দিকে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বর্ষা জানালেন, “ওঁর ভয় হল আমি যদি স্বামীর সম্পত্তিতে ভাগ চেয়ে বসি।”

জেলার অধিকাংশই গ্রাম এলাকা, জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ চাষবাসে যুক্ত আছেন। তাঁর স্বামীও চাষি ছিলেন, আর তাঁর মৃত্যুর পর থেকে তাঁর অংশে এখনও কেউ চাষ শুরু করেনি। পরিবারের মোট ২০ বিঘা জমি আছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে বিভক্ত।

বর্ষা জানালেন শাশুড়ি প্রায়শই তাঁকে খোঁচা দিয়ে বলেন, “হম তুমকো খরিদ কে লায়ে হ্যায়, ঢাই লাখ মে, যো কাম বোলা যায়ে উও তো করনা হি পড়েগা [আমরা আড়াই লাখ টাকা খরচ করে তোমায় এনেছি, যা বলব তা করতেই হবে]।”

“খরিদি হুয়ি [খরিদ করা] তকমা নিয়ে বেঁচে আছি, তাই নিয়েই মরে যাব।”

Varsha says that after her husband's death her in-laws pressurise her to either live with her younger brother-in-law or leave
PHOTO • Jigyasa Mishra

বর্ষা জানাচ্ছেন স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে, হয় ছোটো দেওরের সঙ্গে থাকো, নয়তো বেরিয়ে যাও

*****

সেটা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর। ছয় মাস পর ফোনে পারি-র সঙ্গে কথা বলার সময় অন্যরকম ঠেকে তাঁর কণ্ঠস্বর। “আজ সুবাহ্‌ হম অপনে ঘর আ গয়ে হ্যায় [আজ সকালে আমি নিজের বাড়িতে চলে এসেছি],” জানালেন তিনি। শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছিল হয় ছোটো দেওরের সঙ্গে থাকো নয়তো বেরিয়ে যাও। “মারধর পর্যন্ত করছিল। তাই চলে আসতে বাধ্য হলাম,” জানালেন তিনি।

স্থির করেছিলেন, এভাবে আর সহ্য করবেন না তিনি। দেওর বিবাহিত, স্ত্রীয়ের সঙ্গে থাকে। “আমাদের গ্রামে বিধবাদের সঙ্গে পরিবারের অন্য কোনও পুরুষের বিয়ে দিয়ে দেওয়াটা খুব স্বাভাবিক। তাদের বয়স, বিবাহিত কিনা এসবে কিচ্ছু যায় আসে না,” জানালেন বর্ষা।

টিকাকরণের অজুহাত দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন বর্ষা। বেরিয়ে পড়ার পর সোজা মধ্যপ্রদেশের ট্রেনে চেপে বসেন। “পাড়ার কয়েকজন মেয়ে মিলে আমার টিকিটের জন্য টাকা জোগাড় করে দিয়েছিল। কিন্তু আসার সময়ে রাস্তায় হাতে একটা পয়সাও ছিল না,” বললেন তিনি।

“১০০ ডায়াল [পুলিশ] করেছিলাম, কিন্তু পুলিশ বলল ওসব পঞ্চায়েত দেখবে। পঞ্চায়েতে যখন মামলা গেল ওরা আমায় কোনও সাহায্যই করল না।”

“সারা পৃথিবীকে জানাতে চাই, আমাদের মতো মেয়েদের সঙ্গে কী কী হয়,” নতুন আশা, নতুন আত্মপ্রত্যয় নিয়ে বলে উঠলেন বর্ষা।

অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী

Jigyasa Mishra

ଜିଜ୍ଞାସା ମିଶ୍ର, ଉତ୍ତର ପ୍ରଦେଶ ଚିତ୍ରକୂଟର ଜଣେ ସ୍ଵାଧୀନ ସାମ୍ବାଦିକ । ସେ ମୁଖ୍ୟତଃ ଗ୍ରାମାଞ୍ଚଳ ପ୍ରସଙ୍ଗରେ, ଭାରତର ବିଭିନ୍ନ ଭାଗରେ ପ୍ରଚଳିତ କଳା ଓ ସଂସ୍କୃତି ଉପରେ ରିପୋର୍ଟ ଦିଅନ୍ତି ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Jigyasa Mishra
Editor : Pratishtha Pandya

ପ୍ରତିଷ୍ଠା ପାଣ୍ଡ୍ୟା ପରୀରେ କାର୍ଯ୍ୟରତ ଜଣେ ବରିଷ୍ଠ ସମ୍ପାଦିକା ଯେଉଁଠି ସେ ପରୀର ସୃଜନଶୀଳ ଲେଖା ବିଭାଗର ନେତୃତ୍ୱ ନେଇଥାନ୍ତି। ସେ ମଧ୍ୟ ପରୀ ଭାଷା ଦଳର ଜଣେ ସଦସ୍ୟ ଏବଂ ଗୁଜରାଟୀ ଭାଷାରେ କାହାଣୀ ଅନୁବାଦ କରିଥାନ୍ତି ଓ ଲେଖିଥାନ୍ତି। ସେ ଜଣେ କବି ଏବଂ ଗୁଜରାଟୀ ଓ ଇଂରାଜୀ ଭାଷାରେ ତାଙ୍କର କବିତା ପ୍ରକାଶ ପାଇଛି।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Pratishtha Pandya
Translator : Dyuti Mukherjee

Dyuti Mukherjee is a translator and publishing industry professional based in Kolkata, West Bengal.

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Dyuti Mukherjee