লুকর কথা নুহুনিবা
বাতত নাঙ্গল নাচাছিবা।

[লোকের কথা শুনো না
পথে লাঙল চেঁছো না।]

অসমিয়া ভাষায় উপরোক্ত প্রবাদটি ব্যবহার হয়ে থাকে নিজের কাজে মন দেওয়ার রূপক হিসেবে।

কৃষি সরঞ্জামের কারিগর ছুতোর হানিফ আলি বলছেন, প্রবাদটা তাঁর এবং তাঁর কারিগরির জন্যও প্রযোজ্য। মধ্য অসমের দারাং জেলার দুই তৃতীয়াংশ জমি কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, আর তাই বহু বিচিত্র ধরনের সূক্ষ্ম কাজের কৃষি সরঞ্জাম বানাতে সিদ্ধহস্ত এই ওস্তাদ কারিগর।

“সব ধরনের কৃষি সরঞ্জাম বানাই, যেমন নাঙ্গল [লাঙল], চঙ্গ [বাঁশের মই], জুয়াল [জোয়াল], হাত নাইংলে [হাত-কুরুনি], ঢেঁকি, ইটামগুর [মুগুর], হাড়পাট [বাঁশের আগায় লাগানো অর্ধচন্দ্রাকৃতি কাঠের সরঞ্জাম যা দিয়ে শুকানো ধান জড়ো করা হয়], আরও কত কী,” এক এক করে নামগুলো বলে যান তিনি।

কাঁঠাল গাছের কাঠ ব্যবহার করতে পছন্দ করেন – স্থানীয় বাংলা ভাষায় বলে কাঠল, আর অসমিয়া ভাষায় বলে কঠাল। সাধারণত দরজা, জানলা, খাট ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। হানিফ জানালেন, যত কাঠ কেনেন সবটাই ব্যবহার করে নিতে হয়, নইলে পড়তায় পোষায় না। কাজেই এক-একটা গুঁড়ি থেকে যতগুলো পারা যায় সরঞ্জাম বানিয়ে নেন তিনি।

সরঞ্জাম হিসেবে লাঙল যথেষ্ট সূক্ষ্ম। “কাঠে দাগ দিতে এক ইঞ্চি এদিক-ওদিক হওয়া চলবে না, গোটা লাঙলই নষ্ট তাহলে,” বলে যোগ করেন, একটা লাঙল নষ্ট মানে ২৫০-৩০০ টাকার ক্ষতি।

PHOTO • Mahibul Hoque
PHOTO • Mahibul Hoque

বাঁদিকে: হাতে তুলে নিজের বানানো একটা জোয়াল দেখাচ্ছেন লাঙল নির্মাতা হানিফ আলি। লাঙলে জোতা ষাঁড়-বলদ যাতে চষার সময় সমান সমান দূরত্ব বজায় রাখে তাই তাদের ঘাড়ের উপর জোয়াল চাপিয়ে দেওয়া হয়। ডানদিকে: লাঙলের নানা অংশের বর্ণনা দিয়ে একটি ছবি

মূলত ঘরে হাল-বলদ আছে এমন প্রান্তিক চাষিরা তাঁর খদ্দের। এঁরা সাধারণত নিজেদের জমিতে একাধিক ফসল চাষ করেন। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, ওল কপি, কড়াইশুঁটি, লঙ্কা, লাউ, কুমড়ো, গাজর, উচ্ছে, টমেটো আর শশার পাশাপাশি ধান আর সরষে চাষও হয়।

“যারই লাঙল দরকার হয় সেই আমার কাছে আসে,” বলছেন ষাটোর্ধ্ব এই ওস্তাদ ছুতোর। “১০-১৫ বছর আগে এই এলাকায় মাত্র দুটো ট্র্যাক্টর ছিল, লোকে জমি চষার জন্য লাঙলের উপরেই নির্ভর করত,” আমাদের জানালেন তিনি।

হাতেগোনা কয়েকজন যাঁরা এখনও মাঝেসাঝে কাঠের লাঙল ব্যবহার করে থাকেন, ষাটোর্ধ্ব কৃষক মুকদ্দস আলি তাঁদেরই একজন। “এখনও দরকার পড়লে হানিফের কাছে যাই আমার লাঙলটা মেরামত করাতে। শুধু ওই ঠিকঠাক মেরামতি করতে পারে। ওর বাবার মতোই ভালো ফিনিশের লাঙল বানায়,” বলছেন তিনি।

কিন্তু নতুন করে আর লাঙল কিনবেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন আলি সাহেব। “বলদের দাম বেড়ে গেছে, আর চাষের মজুর সহজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া লাঙল চষতে ট্র্যাক্টরের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে,” লোকে কেন আজকাল কাজ কমাতে ট্র্যাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদি যন্ত্রের দিকে ঝুঁকছে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বললেন তিনি।

PHOTO • Mahibul Hoque
PHOTO • Mahibul Hoque

বাঁদিকে: বাঁশের কুঁড়েঘরের সামনে বসে হানিফ আলি, পাশে রাখা লাঙলের নানা অংশ এবং একখণ্ড কাঠ যা দিয়ে একটা হাত-কুরুনি তৈরি হবে। ডানদিকে: হানিফ আলির হাতে কুঠি বা লাঙলের খুঁটি অংশটি। লাঙল সহজে ধরা যায় এমন আকৃতির না হলে তাতে এই কুঠি জুড়তে হয়

*****

হানিফ দ্বিতীয় প্রজন্মের কারিগর; ছোটো বয়সেই কাজ শিখেছেন। “স্কুলে গেছিলাম দিন কয়েকের জন্য। পড়াশোনা নিয়ে মা-বাবা কারও উৎসাহ ছিল না, আর আমারও যেতে ইচ্ছে করেনি,” জানালেন তিনি।

তাঁর বাবা হোলু শেখ নামজাদা, দক্ষ কারিগর ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই বাবার শাগরেদি শুরু করেন তিনি। “বাবায়ে সারা বসতির জন্যে নাঙ্গল বানাইত। নাঙ্গল বানাবার বা ঠিক করবার জন্যে আঙ্গর বাড়িত আইত সব খেতিওক [আমার বাবা গোটা গ্রামের সবার জন্য লাঙল বানাতো। সবাই আমাদের বাড়িতে আসত লাঙল বানাতে বা মেরামতি করাতে]।”

শাগরেদি শুরু করেন যখন, লাঙলে দাগ মারার কাজটা বাবা করে দিতেন – লাঙল ঠিকঠাক যাতে কাজ করে তা নিশ্চিত করতে গেলে একদম নিখুঁতভাবে দাগ মারতে হয়। “ঠিক কোথায় গর্ত করব সেটা একদম নিশ্চিত করে জানতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে খুঁটি আর মুড়িকাঠের [লাঙলের ফলা] জোড়টা যাতে একদম ঠিক ঠিক কোণে বসে,” হাতে কাজ করে চলা কাঠের খণ্ডটায় হাত বুলিয়ে বলেন হানিফ।

বুঝিয়ে বললেন, লাঙল যদি বেশি কোণাটে হয়ে যায় সেটা কেউ কিনবে না, কারণে তাহলে শাড়ে-তে [লাঙলের ফলার ধার] মাটি ঢুকে যাবে আর কাজের গতি ধীর হয়ে যাবে।

পুরো এক বছর লেগে গেছিল তাঁর বাবাকে এটা বলার আত্মবিশ্বাস জোটাতে যে, “আমি জানি কোথায় দাগ দিতে হবে। আর চিন্তা করতে হবে না তোমাকে।”

PHOTO • Mahibul Hoque
PHOTO • Mahibul Hoque

বাঁদিকে: কাঁঠাল কাঠ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন বর্ষীয়ান কারিগর; এই কাঠ দিয়ে খাট, দরজা, জানলা ইত্যাদিও তৈরি হয়। হানিফ জানালেন, যত কাঠ কেনেন সবটাই ব্যবহার করে নিতে হয়, নইলে পড়তায় পোষায় না। কাজেই এক-একটা গুঁড়ি থেকে যতগুলো পারা যায় সরঞ্জাম বানিয়ে নেন তিনি। ডানদিকে: ঠিক কোন জায়গাটায় কাটাইয়ের দাগ বসবে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন

বাবার সঙ্গে কাজে বেরোনো শুরু সেই সময় থেকে। বাবা তখন ‘হোলু মিস্ত্রি’ নামে খ্যাত ছিলেন। বাবা দোকানে বসতেন আর তার পাশাপাশি হুইটর হিসেবেও কাজ করতেন – হুইটর অর্থে যে ছুতোর বিশেষ করে লাঙল তৈরিতে হাত পাকিয়েছেন। হানিফ স্মৃতিচারণ করেন, কীভাবে ঘাড়ের বাঁক থেকে বানানো লাঙল ঝুলিয়ে বাড়ি-বাড়ি ঘুরতেন তাঁরা।

বাবার বয়স হয়ে যাচ্ছিল, তাই তাঁর সঙ্গে কিছু বছর টানা কাজ করার পর ছয়জনের পরিবারের একমাত্র পুত্রসন্তান হানিফের ঘাড়েই এসে পড়ে বোনেদের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব। “লোকে আমাদের বাড়ি চিনে গেছিল। বাবা একা হাতে সব অর্ডার পূরণ করতে পারছিলেন না আর, তাই আমিও লাঙল বানাতে শুরু করলাম।”

তারপর চার দশক কেটে গেছে। এখন হানিফ একাই থাকেন ৩ নং বড়ুয়াঝাড় গ্রামে এক-কামরার ঘরে, তাঁর কর্মস্থলও সেটিই। তাঁর মতো বহু বাঙালি মুসলিমের ঠিকানা এই গ্রাম। বাঁশে ছাওয়া ঘরে আসবাব নামেমাত্র – একটা ছোটো খাট, ক’টা রান্নার বাসন – ভাতের হাঁড়ি, একটা কড়াই, খানকতক স্টিলের থালা আর একটা গেলাস।

“বাবার আর আমার যে কাজ সেটার এখানকার মানুষের কাছে একটা গুরুত্ব আছে,” তাঁর প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেই চাষি। যে উঠোনে বসে আছেন সেটা ঘিরে পাঁচ ঘর লোকের বাস, সবাই তাঁর মতো এক-কামরার ঘরে থাকেন। অন্য ঘরগুলিতে থাকেন তাঁর বোন, তাঁর ছোটো ছেলে এবং তাঁর বোনপোরা। লোকের জমিতে ও বাড়িতে ঠিকা মজুরির কাজ করেন তাঁর বোন; বোনপোরা প্রায়শই দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে কাজ করতে যান।

হানিফের নয় সন্তান, কিন্তু চাহিদা পড়ে যাওয়া তাঁর কাজের লাইনে কেউই আগ্রহী নয়। “তরুণ প্রজন্ম লাঙল দেখে চিনতেই পারবে না,” বলছেন মুকদ্দস আলির ভাইপো আফাজুদ্দিন। ৪৮ বছরের কৃষক আফাজুদ্দিন ছয় বিঘা সেচবিহীন জমির মালিক। ১৫ বছর আগে লাঙল ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।

PHOTO • Mahibul Hoque
PHOTO • Mahibul Hoque

দারাং জেলার ডালগাঁও বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনস্থ ৩ নং বড়ুয়াঝাড় গ্রামে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে একলা থাকেন হানিফ। তাঁর মতো বহু বাঙালি মুসলিমের বাসস্থান এই অঞ্চল

*****

“সাইকেল চালিয়ে কোনও বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে যদি দেখি বাড়ির গাছে বেশ ভালো কোণাটে ডালপালা আছে, আমি বাড়ির মালিককে বলে রাখি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিলে আমায় জানায় যেন। কোণাটে আর পুরু ডাল থেকে ভালো লাঙল হয়,” স্থানীয় মানুষের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতার গল্প করেন হানিফ।

ভালো বাঁকা কাঠ হাতে এলে তাঁকে জানান স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরাও। লাঙল তৈরিতে লাগে একটা সাত ফুট লম্বা খুঁটি আর একটা ৩ X ২ ইঞ্চি চওড়া কাঠের পাটা। কাঠ হবে শাল, শিশু, স্বর্ণচাঁপা, শিরিষ কিংবা স্থানীয় ভালো কোনও গাছের।

“গাছ অন্তত ২৫-৩০ বছরের পুরোনো হতে হবে, তবেই লাঙল, জোয়াল, কুরুনি এগুলো টেকসই হবে। পাটাতনগুলো সাধারণত নেওয়া হয় গাছের মূল কাণ্ড কিংবা শক্তপোক্ত ডাল থেকে,” দুই ফাল করা একটা মোটা ডাল দেখালেন তিনি।

অগস্টের মাঝামাঝি যখন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই, একটা কাঠের পাটা থেকে লাঙলের জন্য কাঠ বার করছিলেন তিনি। “লাঙলের ফলা ছাড়াও এটা থেকে যদি খান দুই হাতনাইংলে [কাঠের কুরুনি] বার করতে পারি, তবে এই গুঁড়িটা থেকে বাড়তি ৪০০-৫০০ টাকা লাভ হয়ে যায়,” ২০০ টাকায় কেনা কোণাটে গুঁড়িটা দেখিয়ে বলেন তিনি।

“প্রতিটা গুঁড়ি থেকে যতটা পারা যায় কাজে লাগিয়ে নিতে হবে। শুধু তাই নয়, আকারটাও এমন হওয়া চাই যা চাষিদের একদম ঠিক ঠিক কাজে লাগে,” যোগ করলেন তিনি। চার দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতায় তিনি জানেন লাঙলের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাপ হল ১৮ ইঞ্চি ফাল (যাতে লাঙল স্থিতিশীল থাকে) আর ৩৩ ইঞ্চি খুঁটি।

PHOTO • Mahibul Hoque
PHOTO • Mahibul Hoque

বাঁদিকে: বাঁকা ডালের খোঁজে আশপাশের গ্রামে ঘুরে বেড়ান হানিফ। বাঁকানো ডাল আছে এমন গাছ কাটা হলে মাঝে মাঝে গ্রামবাসী এবং কাঠ ব্যবসায়ীরা তাঁকে খবর দেন। লাঙল তৈরির জন্য ব্যবহার করবেন এমন একটা গুঁড়ি দেখালেন তিনি। ডানদিকে: বাড়ির ভিতরে একটা কাঠের তাকে কাজের সরঞ্জাম রাখেন তিনি

PHOTO • Mahibul Hoque
PHOTO • Mahibul Hoque

বাঁদিকে: লাঙল এবং অন্যান্য কৃষি সরঞ্জাম সবই যথেষ্ট সূক্ষ্ম কাজের হয়। লাঙলের ফলার সঙ্গে খুঁটির জোড় হবে যেখানে ঠিক সেই কোণের জায়গাটা দেখাচ্ছেন হানিফ; এখানে একটা গর্ত করতে হবে। গর্তটা একদম ঠিক জায়গায় না পড়লে লাঙল বেশি কোণাটে হয়ে যাবে। ডানদিকে: ২০ বছরের পুরোনো বাটালি আর ৩০ বছরের পুরোনো কুড়াল দিয়ে গুঁড়ির মাথা আর গা চাঁচছেন তিনি

সঠিক কাঠের খণ্ডটা হাতে এলে পর সূর্য ওঠার আগেই কাজে লেগে পড়েন তিনি। হাতের কাছে রাখেন ফালা করা, কাটা, ঘষা আর খোদাই করার সব সরঞ্জাম। এছাড়াও বাড়িতে একটা কাঠের তাকে রাখা আছে খানকতক ছেনি, একটা বাটালি, গোটা দুই করাত, একটা কুড়াল, একটা হাত-র‍্যাঁদা, আর কয়েকটা মরচে পড়া শিক।

করাতের ভোঁতা দিকটা দিয়ে কাঠের উপর দাগ কাটেন তিনি, যাতে ঠিক জায়গায় কাটা পড়ে। দৈর্ঘ্য মাপেন নিজের হাত দিয়ে। দাগানো হয়ে গেলে তাঁর ৩০ বছরের পুরোনো কুড়ালখানি দিয়ে কাঠের ধারগুলো কেটে নেন। “তারপর তেস্‌সা [কুড়ালের মতো দেখতে বাটালি] দিয়ে এবড়োখেবড়ো জায়গাটা মসৃণ করে নিই,” বলছেন ওস্তাদ কারিগর। লাঙলের ফাল বা নাঙ্গল অংশটা খুব যত্ন নিয়ে এমনভাবে কাটতে হয় যাতে চষার সময় সহজে মাটি দু’ধারে সরিয়ে দিতে পারে।

“ফাল যেখান থেকে শুরু হয় সেখানে চওড়া থাকে ছয় ইঞ্চি মতো, তারপর ক্রমশ কমতে কমতে শেষের দিকে ১.৫ কি ২ ইঞ্চি হয়ে যায়,” জানালেন তিনি। ফাল মাঝখানে চওড়া হবে ৮ বা ৯ ইঞ্চি, তারপর দুইধারে কমতে কমতে যেখানে খুঁটির সঙ্গে জোড় হয় সেখানে এসে দুই ইঞ্চি মতো দাঁড়ায়।

ফাল বা পাল তৈরি হয় ৯-১২ ইঞ্চি লম্বা আর ১.৫ থেকে ২ ইঞ্চি চওড়া একটা লোহার পাত দিয়ে, যার দুই দিকই ধারালো। “দুটো দিকই ধারালো রাখা হয়, যাতে একটা দিক ক্ষয়ে গেলে চাষি উলটো দিকটা দিয়ে কাজ চালাতে পারেন।” বাড়ি থেকে কিলোমিটার তিনেক দূরে বেচিমারি বাজারের স্থানীয় কামারদের থেকে লোহার অংশগুলো নেন তিনি।

কুড়াল আর বাটালি দিয়ে অন্তত পাঁচ ঘণ্টার টানা পরিশ্রমে একটা গুঁড়ি কেটে চেঁছে সঠিক আকারে আনা যায়। তারপর র‍্যাঁদা দিয়ে ঘসে ঘসে সেটাকে মসৃণ করার পালা।

লাঙলের মূল অংশটা তৈরি হয়ে গেলে ওস্তাদ হুইটর তারপর ঠিক যে জায়গায় লাঙলের খুঁটি বসবে সেইখানে মাপমতো একটা গর্ত করে নেন। হানিফের কথায়, ঈশ [কাঠের খুঁটি] যত চওড়া, গর্তটা যথাসম্ভব তার কাছাকাছি মাপের হতে হবে, লাঙল চষার সময় যাতে আলগা না হয়ে যায়। সাধারণত ১.৫ থেকে ২ ইঞ্চি চওড়া হয়।”

PHOTO • Mahibul Hoque
PHOTO • Mahibul Hoque

বাঁদিকে: ছয় মাসের পুরোনো একটা গুঁড়ির খসখসে গা থেকে কাঠ কাটছেন হানিফ। কেটে ছেঁটে, এবড়ো-খেবড়ো ধারগুলোকে মসৃণ করে একটা গুঁড়ি থেকে লাঙলের শরীরটা বার করতে গোটা দিন লেগে যায়। ডানদিকে: বাড়ির সামনে হানিফ, কাজ থেকে বিরতি নিয়েছেন একটু

PHOTO • Mahibul Hoque
PHOTO • Mahibul Hoque

বাঁদিকে: হানিফের বাইসাইকেলে একখানা লাঙল আর তার হাতল বাঁধা। মাঝে মাঝে এর উপরে যুক্ত হয় জোয়াল আর হাত-নিড়ানিও। এই সব নিয়ে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার হেঁটে হাটে যান তিনি। ডানদিকে: সাপ্তাহিক সোমবারের হাট

লাঙলের উচ্চতা কমানো-বাড়ানোর জন্য খুঁটির আগায় পাঁচ-ছটা খোপ করে দেন হানিফ। চাষি যতটা গভীরে মাটি খুঁড়তে চান সেই অনুযায়ী লাঙলের উচ্চতা ঠিক করে কমিয়ে-বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

করাত মেশিনে কাঠ কাটানোয় খরচাও বেশি খাটনিও বেশি, বলছেন হানিফ। “একটা গুঁড়ি কিনতে ২০০ টাকা, আর কাটিং-এর লোককে দিতে হয় ১৫০ টাকা।” একটা লাঙল বানাতে দিন দুয়েক লেগে যায়, আর খুব বেশি হলে এক-একটা ১২০০ টাকা মতো দাম পাওয়া যায়।

সরাসরি হানিফের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন অনেকে, তবে এছাড়াও দারাং-এর দুইটি সাপ্তাহিক হাটে বিক্রিবাটা করেন হানিফ – লালপুল বাজার আর বেচিমারি বাজার। “লাঙল আর তার সাজসরঞ্জাম মিলিয়ে একজন চাষিকে প্রায় ৩৫০০ থেকে ৩৭০০ টাকা খরচ করতে হয়,” চড়া দামের কারণে তাঁর খরিদ্দারিতে ভাটা পড়েছে, আর মাঝেসাঝে দুয়েক জন চাষি আর লাঙল ভাড়া দিয়ে রোজগারপ্রত্যাশীরা ছাড়া আর কেউ কেনেন না বিশেষ, বলছিলেন হানিফ। “মাটি চষার পুরোনো তরিকা বদলে গেছে, এখন ট্র্যাক্টরে কাজ হয়।”

হানিফ অবশ্য থামছেন না। পরের দিন সকালেই সাইকেলে একটা লাঙলের ফাল আর খুঁটি (স্থানীয় ভাষায় কুথি) চাপিয়ে প্রস্তুত তিনি। “ট্র্যাক্টর কাজ করে যাওয়ার পর মাটি নষ্ট হয়ে যায়… মানুষ ঠিকই লাঙল কারিগরের কাছে ফিরবে,” যোগ করেন তিনি।

মৃণালিনী মুখার্জী ফাউন্ডেশন (এমএমএফ) প্রদত্ত একটি বৃত্তির সহায়তায় রচিত এই প্রতিবেদন।

অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী

Mahibul Hoque

ମାହିବୁଲ ହକ୍‌ ଆସାମରେ ରହୁଥିବା ଜଣେ ମଲ୍ଟିମିଡିଆ ସାମ୍ବାଦିକ ଏବଂ ଗବେଷକ। ସେ ୨୦୨୩ର ପରୀ-ଏମଏମଏଫ ଫେଲୋ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Mahibul Hoque
Editor : Priti David

ପ୍ରୀତି ଡେଭିଡ୍‌ ପରୀର କାର୍ଯ୍ୟନିର୍ବାହୀ ସମ୍ପାଦିକା। ସେ ଜଣେ ସାମ୍ବାଦିକା ଓ ଶିକ୍ଷୟିତ୍ରୀ, ସେ ପରୀର ଶିକ୍ଷା ବିଭାଗର ମୁଖ୍ୟ ଅଛନ୍ତି ଏବଂ ଗ୍ରାମୀଣ ପ୍ରସଙ୍ଗଗୁଡ଼ିକୁ ପାଠ୍ୟକ୍ରମ ଓ ଶ୍ରେଣୀଗୃହକୁ ଆଣିବା ଲାଗି ସ୍କୁଲ ଓ କଲେଜ ସହିତ କାର୍ଯ୍ୟ କରିଥାନ୍ତି ତଥା ଆମ ସମୟର ପ୍ରସଙ୍ଗଗୁଡ଼ିକର ଦସ୍ତାବିଜ ପ୍ରସ୍ତୁତ କରିବା ଲାଗି ଯୁବପିଢ଼ିଙ୍କ ସହ ମିଶି କାମ କରୁଛନ୍ତି।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Priti David
Translator : Dyuti Mukherjee

Dyuti Mukherjee is a translator and publishing industry professional based in Kolkata, West Bengal.

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Dyuti Mukherjee