আজ আমরা এক রুখাশুখা জংলা জায়গায় ‘ডেভিলস্ ব্যাকবোন’ (শয়তানের মেরুদণ্ড) খুঁজে বেড়াচ্ছি। আরে বাবা! পিরান্দাই বা হাড়জোড়া (সিসুস কোয়াড্রাঙ্গুলারিস) গাছকে তো লোকে এই নামেই চেনে। রথীর সঙ্গে এই যে চৌকোনা কাণ্ডযুক্ত ঔষধি লতাটি হন্যে হয়ে খুঁজছি, এটার গুণমানের তালিকা বেশ লম্বা। সাধারণত কচি দেখে কাণ্ড তুলে, ধুয়েমুছে আচার বানানো হয় লাল লংকা-গুঁড়ো, নুন ও তিলের তেল সহযোগে। ঠিকমতন বানালে এই আচারটা একবছর অবধি রয়ে যায়, পচে না। ভাত দিয়ে খেতে দুর্দান্ত লাগে!

জানুয়ারির এক উষ্ণ বিকেল, এক প্রাচীন শুকিয়ে যাওয়া ঝোরার পথ ধরে জঙ্গলে ঢুকেছিলাম। মৃত স্রোতস্বিনীর তামিল নামটা বড্ড মন-কেমন করা: এল্লাইয়াথাম্মন ওডাই, অর্থাৎ নিঃসীম দেবী। শুনলেই গায়ে কাঁটা দেয়। তবে কাঁকুরে, বালি ভরা, কোথাও চওড়া, কোথাও ভেজা এই গা-ছমছমে জঙ্গলাকীর্ণ শুঁড়িপথটাও অবশ্য কোনও অংশে কম নয়।

হাঁটতে হাঁটতে আমায় নানান গল্প শোনাচ্ছিলেন রথী। কয়েকটা কাল্পনিক, মজাদার — কমলালেবু ও প্রজাপতিদের নিয়ে। কয়েকটা হাড়হিম করা সত্যি ঘটনা — নব্বইয়ের দশকে ফেলে আসা খাদ্য-রাজনীতি ও জাতপাতগত হিংসার কথা — রথী তখন হাইস্কুলে পড়তেন। “আমার পরিবার জান বাঁচাতে থুথুকুড়িতে পালিয়ে আসে...”

দুই দশক পর, আজ এক পেশাদার কথক, গ্রন্থাগার উপদেষ্টা ও পুতুলনাচিয়ে রূপে ছোটোবেলার গাঁয়ে ফিরে এসেছেন রথী। কথাবার্তা ধীরে ধীরে কইলেও পড়ার সময় গোগ্রাসে গিলে ফেলেন। “কোভিড অতিমারির সময়, ৭ মাসে ছোটোবড়ো মিলিয়ে ২২,০০০টা শিশুসাহিত্যের বই পড়ে নিয়েছিলাম। শেষমেশ এমনও দিন এল যখন আমার সহকারী আমায় হাতেপায়ে ধরে থামতে বলতেন। নইলে তো একাই সংলাপের ঢঙে কথা বলতে লাগব,” বলেই খিলখিলিয়ে উঠলেন তিনি।

যে নদীর নামে তাঁর নাম, হাসিটাও তারই মতো উন্মুক্ত: ভাগিরথী। তবে পুরো নামটা আর ইস্তেমাল না করে শুধু ‘রথী’-টুকুই রেখেছেন। তাঁর নামধারী নদী যে পর্বতমালার পাদদেশে গঙ্গায় রূপান্তরিত হয়, সেই হিমালয়ের প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, থেঙ্কালম গ্রামে রথীর নিবাস। তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলি জেলার এই গ্রামটির চারধারে শুধু পাহাড় আর ঝোপঝাড়ে ভরা রুখাশুখা অরণ্য। এই টিলা, এই বনানীকে খুব কাছ থেকে চেনেন রথী, ঠিক যেমন গাঁয়ের সকলেই চেনে তাঁকে।

“জঙ্গলে যাচ্ছেন কেন শুনি?” মহিলা মজুরদের এ প্রশ্নে রথী জবাব দিলেন: “পিরান্দাইয়ের সন্ধানে।” এরপর প্রশ্ন করলেন জনৈক গোপালক, “পাশের ওই মহিলাটি কে? আপনার বন্ধু নাকি?” একগাল হেসে, “হ্যাঁ, হ্যাঁ,” বলে উঠলেন রথী, আমি হাত নাড়লাম, তারপর আবার হাঁটা লাগালাম।

Pirandai grows in the scrub forests of Tirunelveli, Tamil Nadu
PHOTO • Courtesy: Bhagirathy
The tender new stem is picked, cleaned and preserved with red chilli powder, salt and sesame oil and will remain unspoilt for a year
PHOTO • Courtesy: Bhagirathy

তামিলনাড়ুর তিরুনেলভির গুল্ম জঙ্গলে গজায় পিরান্দাই বা হাড়জোড়া লতা। খুঁজেপেতে একখান পিরান্দাই বা হারেঙ্গা (ডানদিকে) জোগাড় করেছেন রথী। কচি দেখে হাড়জোড়া লতার কাণ্ড ভেঙে, পরিষ্কার করে, লাল মরিচগুঁড়ো, লবন ও তিলের তেল সহযোগে জারানো হয়, যা একবছর অবধি নষ্ট হয় না

*****

গাছগাছড়া সংগ্রহ করার প্রথা প্রতিটি সভ্যতা ও মহাদেশে বিদ্যমান। ‘সাধারণ বনভূমি’ নামের যে ধারণাটি রয়েছে, তার সঙ্গে এটি ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত — অর্থাৎ যে কায়িক, প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদের উপর সমাজের সকল সদস্যের অধিকার রয়েছে এবং আঞ্চলিক যে যে ধরনের অরণ্যজাত সামগ্রী মরসুম অনুযায়ী টিকিয়ে রেখে রেখে স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়।

বেঙ্গালুরুর শহুরে খাদ্য-সংগ্রহ ঘিরে লেখা ‘ চেজিং সোপ্পু ’ বইয়ে লেখা আছে, “বুনো গাছগাছালির সংগ্রহ ও ব্যবহারে স্থানীয় নৃ-জৈবতন্ত্রগত ও নৃ-উদ্ভিদবিদ্যাগত জ্ঞান সংরক্ষিত হয়।” লেখকবৃন্দ বলছেন যে [আমাদের এই থেঙ্কালম গাঁয়ের মতোই] জংলি গাছগাছড়ার জোগাড়যন্তর সাধারণত মহিলারাই করে থাকেন। “তাঁরা অত্যবশ্যক জ্ঞানের ধারক, স্থানীয় বন্য উদ্ভিদের বিষয়ে তাঁদের পাণ্ডিত্য সুগভীর। গাছের কোন অংশটা খাওয়া যায়, কোনটা ওষুধে কাজে লাগে, কোনটার বা সাংস্কৃতিক মূল্য রয়েছে, সংগ্রহ করার সর্বোত্তম ঋতুই বা কোনটা — এসব তাঁদের নখদর্পণে।

প্রজন্মবাহিত সুস্বাদু রান্নার কৌশলও তাঁদের আয়ত্তে।”

মরসুমি ফসল সারাটাবছর ধরে খাওয়ার যতগুলো সোজা ও স্বাদু উপায় রয়েছে, তার মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় হল শুকনো করে জারানো (ড্রাই কিওরিং) ও আচার বানানো (ওয়েট পিকলিং)। বাদবাকি জায়গায় ভিনিগারের বহুল ব্যবহার থাকলেও দক্ষিণ ভারত, বিশেষত তামিলনাড়ুতে জিঞ্জেল্লি বা তিলের তেলই ইস্তেমাল করা হয়।

“তিলের তেলে সেসামিন ও সেসামল আছে। এই দুটি যৌগ প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খাদ্য সংরক্ষক (প্রিজার্ভেটিভ),” জানালেন মেরি সন্ধ্যা জে.। খাদ্য প্রযুক্তিবিদ্যায় এমটেক করা মেরি ‘আড়ি’ (মহাসাগর) নামের একটি মাছের আচার ব্রান্ডের মালিক। নিজের কোম্পানির মাছের আচারে তিনি তাপরহিত পেষাই পদ্ধতির জিঞ্জেল্লি ব্যবহার করে থাকেন, “মূলত শেল্ফ-লাইফ, পৌষ্টিক গুণাগুণ, স্বাদ ও রং উন্নত করতে।”

PHOTO • Aparna Karthikeyan

গাছগাছড়া সংগ্রহ করার প্রথা প্রতিটি সভ্যতা ও মহাদেশে বিদ্যমান। মরসুমি অরণ্যজাত উদ্ভিদ স্থানীয় ভাবে টিকিয়ে রেখে রেখে ব্যবহৃত হয়। গাছগাছালির খোঁজে প্রতিবার ঘণ্টা চারেক করে লাগে রথীর, ১০ কিলোমিটার অবধি হাঁটেন। ‘তবে ঘরে আনার পর,’ সহাস্যে জানালেন, ‘ওগুলোর যে কী হয়, তা বুঝিনে বাপু’

রান্নার হরেক পদে তিলের তেল ব্যবহার করে রথীর পরিবার — আচার, শাকসব্জি বা মাংসের ঝোলে। তবে তাঁর কাছে খাদ্যের ক্ষেত্রে শ্রেণিবিভাজন অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক: “গাঁয়ে কোনও পশু কাটা হলে সবচাইতে উমদা অংশগুলো উচ্চবর্ণের লোকেরা নিয়ে নেয়। আর নাড়িভুঁড়ি পাই আমরা। আমাদের কৌম ইতিহাসে মাংসের কোনও পদ নেই, কারণ ভালো ভালো টুকরোগুলো তো আমরা হাতে পাই-ই না। আমাদের ভাগে রক্ত ছাড়া কিসুই যে আর পড়ে থাকে না!”

ব্লাড ফ্রাই অ্যান্ড আদার দলিত রেসিপিজ ফ্রম মাই চাইল্ডহুড (শৈশবের রক্তভাজা ও অন্যান্য দলিত রন্ধনপ্রণালী) প্রবন্ধে বিনয় কুমার লিখছেন: “দলিত, বহুজন ও আদিবাসী জনসমাজের উপর নিপীড়ন, ভুগোল, স্থানীয় উদ্ভিদ ও পশুর প্রজাতি এবং জাতপাতের শ্রেণিবিন্যাস এমন গভীর ভাবে আঁচড় কেটেছে, যে সমাজবিজ্ঞানীরা আজও তা বিশ্লেষণ করে উঠতে পারছেন না।”

আম্মা ভাডিভাম্মল “রক্ত, নাড়িভুঁড়ি ও অন্যান্য অংশগুলো সাফ করার চমৎকার একখান কায়দা জানেন,” জানালেন রথী, “গত রবিবার আম্মা রক্ত রেঁধেছেলেন। শহরে এটা সুখাদ্য বলে ধরা হয়: ব্লাড সসেজ ও ব্লাড পুডিং। ভেজা ফ্রাই তো মহাখাদ্য (সুপার ফুড)। শহরে গিয়ে এত্ত নামডাক শুনে তাজ্জব বনে গেছলাম। গাঁয়ে যার দাম ২০ টাকা, শহরে সেটাই কাঁড়িকাঁড়ি খরচা করে কিনতে হচ্ছে।”

উদ্ভিদজগতে তাঁর আম্মার বুৎপত্তিটাও দেখার মতো। তাঁদের বৈঠকখানায় যেতেই রথী বললেন, “পিছু ঘুরে দেখুন, ওই বোতলগুলোয় ভেষজ জড়িবুটি আর তেল ভরা আছে। প্রত্যেকটার নাম আর কোনটা কোন কাজে ব্যবহার হয়, আম্মা সব জানেন। পিরান্দাই (হাড়জোড়া বা হাড়জোড়া লতা বা হারেঙ্গা) মারাত্মক হজমশক্তি বাড়ায়। কোন কোন গুল্ম বা গাছ লাগবে আম্মা সেটা বলেন, আর আমি বনেবাদাড়ে ঘুরে ঘুরে সেসব জোগাড় করে এনে সাফসুতরো করে দিই।

এসকল গাছগাছালি নেহাতই মরসুমি, বাজারহাটে মেলে না।” গাছগাছালির খোঁজে প্রতিবার ঘণ্টা চারেক করে লাগে রথীর, ১০ কিলোমিটার অবধি হাঁটেন। “তবে ঘরে আনার পর,” সহাস্যে জানালেন তিনি, “ওগুলোর যে কী হয়, তা বুঝিনে বাপু।”

*****

Rathy in the forest plucking tamarind.
PHOTO • Aparna Karthikeyan
tamarind pods used in foods across the country
PHOTO • Aparna Karthikeyan

অরণ্যমাঝে (বাঁদিকে) তেঁতুল পাড়ছেন রথী। সমগ্র দেশজুড়ে খাবারে স্বাদ এনে দেয় যে শুঁটি (ডানদিকে)

মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে অরণ্যপানে হেঁটে চলেছিলাম দু’জনে। কচিকাঁচাদের ওই পপ্-আপ্ বইগুলো হয় না? শুঁড়িপথের বাঁকে বাঁকে তেমনই চমক লুকিয়ে আছে: এখানে প্রজাপতি, সেখানে পাখি, ওখানে দৈত্যাকার বৃক্ষরাজির অপরূপ ছায়াকানন। কয়েকটা ডাঁসা ফলের দিকে ইঙ্গিত করে রথী বলে উঠলেন, “দিনকতক বাদেই ওগুলো পরম উপাদেয় হয়ে উঠবে।” হারেঙ্গা ও হাড়জোড়া লতার খোঁজের চিরুনি তল্লাশি চালিয়েও কোন লাভ হল না, সবই যে নিঃস্ব।

“আমাদের আগেই কেউ তুলে নিয়ে গেছে,” রথী বললেন, “কিন্তু ঘাবড়াবেন না, ফেরার পথে খানিক পেয়েই যাব।”

হাড়জোড়া না পাওয়ার দুঃখটা খানিক পুষিয়ে নিতেই যেন ইয়াব্বড় একখান তেঁতুলগাছের নিচে থমকে দাঁড়ালেন রথী, মোটা দেখে একটা ডাল ঝাঁকিয়ে টপাটপ খানকতক তেঁতুল পেড়ে নিলেন। বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর ফাঁকে ফটাস ফটাস করে খোসা ফাটিয়ে গলধঃকরণ করে ফেললাম টকমিষ্টি শাঁস। রথীর ছোটবেলায় পড়া বইয়ের স্মৃতিতেও উঁকি দেয় তেঁতুল। “সুড়ুৎ করে বই নিয়ে এককোণে সেঁধিয়ে যেতাম, সঙ্গে মহানন্দে চলত কাঁচা তেঁতুল চিবোনো।”

একটু বড়ো হওয়ার পর খিড়কি উঠোনে কদুক্কাপুলি মারমের (বিলিতি শিরিষ গাছ) ডালে বসে বসে বই পড়তেন। “১৪-১৫ বছর বয়সেই তরতরিয়ে চড়ে যেতাম, তাই আম্মা গাছটা কেটে দিলেন!” বলেই অট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন রথী।

ভরদুপুরবেলা, সুয্যিমামা মাথায় যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছেন। জানুয়ারি মাসে রোদের এমন ভয়ঙ্কর তেজ ভাবাই যায় না, দেহমন নিংড়ে নিচ্ছিল পুরো। “এই তো, পুলিয়ুথু পৌঁছেই গেছি প্রায়, গাঁয়ের পানির উৎস এটাই,” হাঁটতে হাঁটতে বলছিলেন রথী। শুষ্ক ঝোরাটার পাড় বরাবর ছোট্ট ছোট্ট খানা-ডোবা, ঘোলাটে পানির ’পরে প্রজাপতির সম্মোহনী নাচ। মখমলের ন্যায় ডানাজোড়া একবার করে খুলছে (ভিতরে উপলরঙা নীল), আবার বন্ধ হচ্ছে (বহিঃগাত্র সাদামাটা, বাদামি)। ঠিক যখনই মনে হতে লাগল, যে এর চাইতে মায়ময় বুঝি আর কিছু হয় না, অমনিই সেটা ছাপিয়ে গেল...

পুলিয়ুথু নামের পুকুরটির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে গ্রামদেবীর সুপ্রাচীন দেউল। তার ঠিক উল্টোদিকেই, রথী আঙুল তুলে দেখালেন, ভুঁইফোঁড়ের মতন একখান গণেশ মন্দির গজিয়ে উঠেছে। মহাদ্রুম বটের ছায়ে বসে বসে কমলালেবু খেতে লাগলাম। যেদিকে দুচোখ যায়, সবই কেমন যেন মোলায়েম, খোয়াবি — বনানীর অন্দরে নেমে আসা অপরাহ্নের নরম আলো, লেবুর সুবাস, কমলা ও কৃষ্ণরঙা মাছের ঝাঁক। ঠিক ততটাই মোলায়েম স্বরে গল্প জুড়লেন রথী: “এইটার শিরোনাম পিথ, পিপ্ অ্যান্ড পিল।” সম্মোহিত হয়ে শুনতে লাগলাম আমি...

Rathy tells me stories as we sit under a big banyan tree near the temple
PHOTO • Aparna Karthikeyan
Rathy tells me stories as we sit under a big banyan tree near the temple
PHOTO • Aparna Karthikeyan

দেবালয়ের (ডানদিকে) কাছে একটি গাছের ছায়ায় বসে গল্প শোনাচ্ছেন রথী

রথী বরাবরই গল্পের পোকা। সেই যে কোন ছোটোবেলায় তাঁর ব্যাংক ম্যানেজার বাবা একখান মিকি মাউসের কমিকস কিনে দিয়েছিলেন, রথীর মনের মণিকোঠায় সেটাই সর্বপ্রথম স্মৃতি। “খুব ভালো করে মনে আছে: ভাই গঙ্গাকে একটা ভিডিও গেম, বোন নর্মদাকে একটা খেলনা, আর আমায় বই কিনে দিয়েছিলেন!”

বইপড়ার অভ্যেসটা বাবার থেকেই পেয়েছেন রথী। উপরন্তু তাঁর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারটাও বিশাল ছিল। “ওরা কেউ বই-টই আগলে রাখত না, এমনকি দুষ্প্রাপ্য বইয়ের ভাগটাও আমার জন্য খুলে দিয়েছিল — ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, বিশ্বকোষ, মানে সাধারণত যেগুলো তালাবন্ধ থাকে আর কি। কারণ একটাই, বই ছাড়া আমি থাকতেই পারতাম না!”

এতটাই ভাল্লাগত যে শৈশবটা বই পড়েই কেটে গিয়েছে। “রুশ ভাষার একটা বই ছিল জানেন! আমরা ভেবেছিলাম ওটা বুঝি হারিয়েই গেছে। শিরোনামটা ইয়াদ নেই, কেবল গল্প আর ছবিগুলো মনে পড়ে। গতবছর ওটা অ্যামাজনে পেয়েছি। সী লায়ন [এক প্রজাতির সীলমাছ] আর সমুদ্রযাত্রার কাহিনি। শুনবেন?” বলেই গল্পটা বলতে লাগলেন রথী, ভাষ্যের দরিয়ার মতো তাঁর গলাতেও লেগেছিল ঢেউয়ের চড়াই-উৎরাই।

আর সেই সমুদ্দুরের মতো তাঁর বাল্যকালটাও ছিল ঝড়ঝাপটায় ভরা। উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ার সময় দশদিকে চলা হিংসার কথা মনে পড়ে রথীর। “ছুরি চালানো। দাউদাউ করে বাস পুড়ছে। সারাক্ষণই এসব কানে আসছে। গাঁয়ে কোনও অনুষ্ঠান বা পরব লাগলে পর্দা টাঙিয়ে ছবি দেখানোর চল ছিল আমাদের। আগে ওটাই ছিল হিংসার প্রধান উৎস। ছুরি-ছোরা চলেছিল একবার। ক্লাস এইটে যখন পড়ি, মারদাঙ্গা তুঙ্গে। কারনান সিনেমাটা দেখেছেন? আমাদের জিন্দেগিটা ঠিক ওরকমই ছিল তখন।” ১৯৯৫ সালে কোডিয়াঙ্কুলমে যে জাতিদাঙ্গা চলেছিল, সেটাই খানিক কাল্পনিক ছাঁদে দেখানো হয়েছে কারনান ছবিটিতে, প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ধনুষ। ‘গল্পের মধ্যমণি কারনান, প্রান্তবাসী দলিত গোষ্ঠীর এই নির্ভীক ও দরদি যুবা অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠলেন। ক্ষমতা ও বিশেষাধিকার সবই উচ্চবর্ণের গ্রামবাসীদের কুক্ষিগত, আর দলিতের ভাগে শুধুই বৈষম্য।’

নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে জাতিগত হিংসা তুঙ্গে ওঠে, তখন কর্মসূত্রে অন্য এক শহরে থাকতেন রথীর বাবা সমুদ্রম, আর মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে গাঁয়ে বসবাস করতেন রথী। অথচ ৯, ১০, ১১ ও ১২ শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবছরই আলাদা আলাদা স্কুলে দাখিল হতে হয় রথীকে।

জীবন ও অভিজ্ঞতা তার পেশার অভিমুখ বাতলেছে। “দেখুন, ৩০টা বছর আগে, তিরুনেলভেলি গাঁয়ে আমি বইপোকা ছিলাম। বই-টই বেছে দেবে, এমন কেউই ছিল না আমার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন শেক্সপিয়র হাতে তুলে নিই। জানেন, মিল অন দ্য ফ্লস [জর্জ এলিয়ট রচিত] আমার প্রিয় বইগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্ণ আর শ্রেণি-বৈষম্য নিয়ে লেখা। নায়িকা এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা। বইটা স্নাতকস্তরে পড়ানো হয় বটে, তবে কেউ একজন আমাদের স্কুলে দান করেছিল, তাই চতুর্থ শ্রেণিতেই ওটা পড়ে ফেলি, প্রধান চরিত্রের সঙ্গে নিজের মিলও খুঁজে পাই। মেয়েটির কাহিনি পড়ে বড্ড কষ্ট পেয়েছিলাম...”

Rathy shows one of her favourite books
PHOTO • Aparna Karthikeyan
Rathy shows her puppets
PHOTO • Varun Vasudevan

বাঁদিকে: রথী, হাতে তাঁর প্রিয়তম বইয়ের মধ্যে একটি। ডানদিকে: রথী ও রাশি রাশি কাঠপুতুল

বহু বছর পর, আবার করে শিশুসাহিত্যে আবিষ্কার করায় রথী তাঁর পেশাদার জীবনের পথ খুঁজে পান। “বাচ্চাদের জন্য যে বইপত্তর হয়, তা তো জানতামই না। হোয়ের দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমালস্ আর এবং ফার্ডিনান্ডের মতন কিতাবও যে আছে, সে বিষয়ে কোনও ধারণাই ছিল না। ৮০-৯০ বছর ধরে এসব বই আছে, শহরের বাচ্চাকাচ্চারা এসব পড়ে। এতে মাথায় একটা চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল — ছোট্টবেলায় আমিও যদি এসব কিতাব হাতে পেতাম? আমার জিন্দেগিটা আলাদা রকমের হতো। আরও ভালো হতো তা বলছি না, তবে অন্যরকম হত।”

অবশ্য গল্পের বই পড়াটা আজও প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যার উজানে মাপা হয়। রথী মাথা নেড়ে বলে উঠলেন: “এসব নেহাতই বিনোদনের নজরে দেখা হয়, দক্ষতার আঙ্গিকে নয়। মা-বাবারাও শুধু পড়াশোনা আর অ্যাক্টিভিটির কিতাব কেনে, ছোটরা যে মজা করে গল্পের বই পড়তে পড়তেও শিখতে পারে, সেটা তাঁরা দেখতেই পান না। তাছাড়া গ্রাম-শহরের ফারাকটা বড্ড বড়ো। আজও গ্রামীণ শিশুরা তাদের শহুরে দোসরদের থেকে ন্যূনতম দুই-তিনগুণ (পড়ার দক্ষতার নিরিখে) পিছিয়ে আছে।”

ঠিক এই কারণেই গ্রামীণ শিশুদের সঙ্গে কাজ করতে রথী এত ভালবাসেন। ছ’বছর ধরে সাহিত্য-উৎসব ও পুস্তক-উৎসবের আয়োজন করে আসছেন, এছাড়া গ্রামীণ গ্রন্থাগার তত্ত্বাবধান তো আছেই। তিনি বলেন, দারুণ ক্যাটালগ বানাতে সক্ষম এমন দক্ষ লাইব্রেরিয়ানের দেখা হামেশাই মেলে, তবে কিতাবের পাতায় পাতায় কী আছে সে বিষয়ে তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অজ্ঞ। “কী পড়া উচিত, সেটা যদি ওঁরা বাতলাতে না পারেন, তবে ওসব তো নিছকই অর্থহীন!”

এবার গোপনীয়তার ঢঙে গলাটা খানিক নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলেন, “একবার এক লাইব্রেরিয়ান আমা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ম্যাডাম, আপনি গ্রন্থাগারের ভিতর বাচ্চাদের ঢুকতে দিচ্ছেন কেন?’ আমার প্রতিক্রিয়াটা আপনার দেখা উচিত ছিল!” বিকেলের মোলায়েম আলোটা যেন আরও খোয়াবি হয়ে উঠল তাঁর অবিশ্বাস্য হাসিতে।

*****

বাড়ি ফেরার পথে পিরান্দাইয়ের দেখা মিলল। অন্যান্য গাছ ও গুল্মের গায়ে শক্ত করে পেঁচিয়ে আছে। আমায় দেখিয়ে দেখিয়ে কচি কচি সবুজ ডালগুলো সশব্দে ভেঙে নিলেন রথী। যত্ন করে একহাতে সাজিয়ে নিলেন হাড়জোড়ার বান্ডিল। ‘শয়তানের মেরুদণ্ড’ — নামটা শুনে আবারও হাসিতে ফেটে পড়লাম দু’জন।

Foraging and harvesting pirandai (Cissus quadrangularis), the creeper twisted over plants and shrubs
PHOTO • Aparna Karthikeyan
Foraging and harvesting pirandai (Cissus quadrangularis), the creeper twisted over plants and shrubs
PHOTO • Aparna Karthikeyan

খুঁজেপেতে হারেঙ্গা (সিসুস কোয়াড্রাঙ্গুলারিস) সংগ্রহ করছেন রথী, অন্যান্য গাছ ও গুল্মের গায়ে শক্ত করে পেঁচিয়ে আছে লতাটা

বৃষ্টি নামলেই আবার করে কচি কচি ডাল গজাবে, কথা দিলেন রথী। “গাঢ় সবুজ অংশগুলো কক্ষনো নিই না। সেটা তো ডিমভরা মাছ মারার মতো হবে, তাই না? অমনটা যদি করি, তাহলে চারাপোনা আসবে কোত্থেকে?”

হাঁটাপথে গাঁয়ে ফিরতে গিয়ে পায়ে ফোস্কা পড়ার জোগাড়। সূর্যের আগুনঢালা তেজ, শুকিয়ে বাদামি হয়ে এসেছে তালগাছ, রুক্ষ ঝোপঝাড়। তাপের চোটে কেঁপেকেঁপে উঠছে দিগন্ত। আমরা কাছে যেতেই ঝটপটিয়ে উড়ান দিল একঝাঁক পরিযায়ী কালোমাথা কাস্তেচরা (কালো দোচরা বা ব্ল্যাক আইবিস)। পা গুটিয়ে, সটান ডানা মেলে, ছবির মতো মগ্ন গগনে উড়ে গেল তারা। গাঁয়ের চকে পৌঁছলাম, দেখি সংবিধান হাতে সদর্পে দাঁড়িয়ে আছেন ডঃ আম্বেদকর। “মনে হয় ওই মারদাঙ্গার পরেই ওঁর মূর্তিটা লোহার জাল দিয়ে ঘেরা হয়েছিল।”

বাবাসাহেবের প্রস্তরমূর্তি থেকে কয়েক মিনিট দূরেই রথীর বাড়ি। বৈঠকখানায় ঢুকে আমায় জানালেন যে গল্প-কাহিনি তাঁর কাছে উপশম বয়ে আনা ঔষধির মতন। “কথকের ভূমিকায় মঞ্চে আমি অনেক অনেক অনুভূতি ফুটিয়ে তুলি, অন্যথা যা অব্যক্তই রয়ে যেত। হতাশা এবং ক্লান্তির মতন সহজ-সরল অনুভূতি, সাধারণত যেগুলো আপনি তড়িঘড়ি ধামাচাপা দিয়ে এগিয়ে যাবেন। কিন্তু মঞ্চমাঝে এই অনুভূতিগুলোই আমি বার করে আনি।”

দর্শকের চোখ কিন্তু রথীর উপর নয় বরং তিনি যে চরিত্রে মঞ্চে নেমেছেন, তার উপর থাকে। রঙ্গমঞ্চে বিষাদও মুক্ত হওয়ার পথ খুঁজে পায়। “আমার ঝুলিতে একখান অসাধারণ নকল কান্না আছে, শুনলেই কেউ একটা মড়াকান্না জুড়েছে ভেবে লোকে কামরার দিকে ছোটে।” তা আমার জন্য সেটা একবার করে দেখানো যাবে নাকি? জবাবে ফিক করে হেসে উঠলেন রথী: “উঁহু, এখানে নয়, এখানে তো মরে গেলেও নয়, হায় হায় কী হল কী হল করতে করতে খান তিনেক আত্মীয় দৌড়ে আসবে...”

বিদায় জানানোর সময় হয়েছে, একসঙ্গে অনেকখানি পিরান্দাইয়ের আচার বেঁধে দিলেন রথী। তেল চুপচুপে, রসুনের কোয়ায় ভরপুর। গন্ধটা ঠিক ফিরদৌসের মতন, নাকে এলেই মনে পড়ে সেই উষ্ণ বিকেলে কচি কচি লতা আর গল্পের সন্ধানে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাওয়ার কথা...

Cleaning and cutting up the shoots for making pirandai pickle
PHOTO • Bhagirathy
Cleaning and cutting up the shoots for making pirandai pickle
PHOTO • Bhagirathy

পিরান্দাইয়ের আচার বানানো হবে বলে ধুয়ে-টুয়ে হাড়জোড়ার ডাল কাটা হচ্ছে

Cooking with garlic
PHOTO • Bhagirathy
final dish: pirandai pickle
PHOTO • Bhagirathy

রসুন (বাঁদিকে) সহকারে রাঁধার শেষে তৈরি হয়েছে পিরান্দাইয়ের আচার (ডানদিকে); নিচে রন্ধনপ্রণালী লেখা আছে

রথীর আম্মা, ভাডিভাম্মলের পিরান্দাইয়ের আচার তৈরির কৌশল:

হারেঙ্গা লতা ভালো করে পরিষ্কার করে কুচিয়ে কাটুন। তারপর আবার ধুয়ে-টুয়ে ছাঁকনি দিয়ে ভালো করে ছেঁকে নিন। একফোঁটাও পানি থাকা চলবে না। যতটা হাড়ভাঙা কুচানো আছে, সেইমতো তিলের তেল চাপান একটা কড়াইয়ে। গরম হতেই সর্ষে ছড়িয়ে দিন, ইচ্ছে হলে মেথি আর রসুন-কোয়ায় দিতে পারেন। রংটা টকটকে তামাটে না হওয়া অবধি হালকা আঁচে নাড়তে থাকুন। এক ডেলা তেঁতুল আগে থেকেই জলে চুবিয়ে রাখবেন, সেটা চিপে-চিপে শাঁসটা আলাদা করে নিন — তেঁতুল না দিলে পিরান্দাইয়ে গলা কুটকুট করতে পারে। (একেক সময় তো হাড়জোড়া লতা ধোয়ার সময়তেই হাত চুলকোয়।)

একে একে তেঁতুল-গোলা পানি, লবণ, হলুদ গুঁড়ো, লাল লংকাগুঁড়ো ও হিং ঢালুন। হারেঙ্গা ভালো করে রান্না না হওয়া পর্যন্ত ঘনঘন নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না পুরোটা ভালো করে মিশে উপরে তেল ভেসে উঠছে। আচারটা ঠান্ডা করে শিশিতে পুরে রাখুন। এক বছর অবধি দিব্যি থাকবে।


২০২০ সালের রিসার্চ ফান্ডিং প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে গবেষণামূলক এই প্রতিবেদনটি রূপায়িত করতে আর্থিক অনুদান জুগিয়েছে বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজী বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Aparna Karthikeyan

ଅପର୍ଣ୍ଣା କାର୍ତ୍ତିକେୟନ ହେଉଛନ୍ତି ଜଣେ ସ୍ୱାଧୀନ ସାମ୍ବାଦିକା, ଲେଖିକା ଓ ପରୀର ବରିଷ୍ଠ ଫେଲୋ । ତାଙ୍କର ତଥ୍ୟ ଭିତ୍ତିକ ପୁସ୍ତକ ‘ନାଇନ୍‌ ରୁପିଜ୍‌ ଏ ଆୱାର୍‌’ରେ ସେ କ୍ରମଶଃ ଲୋପ ପାଇଯାଉଥିବା ଜୀବିକା ବିଷୟରେ ବର୍ଣ୍ଣନା କରିଛନ୍ତି । ସେ ପିଲାମାନଙ୍କ ପାଇଁ ପାଞ୍ଚଟି ପୁସ୍ତକ ରଚନା କରିଛନ୍ତି । ଅପର୍ଣ୍ଣା ତାଙ୍କର ପରିବାର ଓ କୁକୁରମାନଙ୍କ ସହିତ ଚେନ୍ନାଇରେ ବାସ କରନ୍ତି ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ ଅପର୍ଣ୍ଣା କାର୍ତ୍ତିକେୟନ୍
Editor : P. Sainath

ପି. ସାଇନାଥ, ପିପୁଲ୍ସ ଆର୍କାଇଭ୍ ଅଫ୍ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆର ପ୍ରତିଷ୍ଠାତା ସମ୍ପାଦକ । ସେ ବହୁ ଦଶନ୍ଧି ଧରି ଗ୍ରାମୀଣ ରିପୋର୍ଟର ଭାବେ କାର୍ଯ୍ୟ କରିଛନ୍ତି ଏବଂ ସେ ‘ଏଭ୍ରିବଡି ଲଭସ୍ ଏ ଗୁଡ୍ ଡ୍ରଟ୍’ ଏବଂ ‘ଦ ଲାଷ୍ଟ ହିରୋଜ୍: ଫୁଟ୍ ସୋଲଜର୍ସ ଅଫ୍ ଇଣ୍ଡିଆନ୍ ଫ୍ରିଡମ୍’ ପୁସ୍ତକର ଲେଖକ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ ପି.ସାଇନାଥ
Translator : Joshua Bodhinetra

ପିପୁଲ୍ସ ଆର୍କାଇଭ୍ ଅଫ୍ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆ (ପରୀ) ରେ ଭାରତୀୟ ଭାଷା କାର୍ଯ୍ୟକ୍ରମ, ପରୀଭାଷାର ବିଷୟବସ୍ତୁ ପରିଚାଳକ ଜୋଶୁଆ ବୋଧିନେତ୍ର। ସେ କୋଲକାତାର ଯାଦବପୁର ବିଶ୍ୱବିଦ୍ୟାଳୟରୁ ତୁଳନାତ୍ମକ ସାହିତ୍ୟରେ ଏମଫିଲ କରିଛନ୍ତି ଏବଂ ଜଣେ ବହୁଭାଷୀ କବି, ଅନୁବାଦକ, କଳା ସମାଲୋଚକ ଏବଂ ସାମାଜିକ କର୍ମୀ ଅଟନ୍ତି।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Joshua Bodhinetra