টানা একবছর কোভিড-১৯ অতিমারির বিরুদ্ধে জোর লড়াই চালিয়ে, শেষে তারই পাল্লায় পড়ে গেলেন শাহবাই ঘরাত। বীড জেলার সুলতানপুর গ্রামের আশাকর্মী হিসাবে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত মানুষ খুঁজে বেড়িয়েছেন। অবশেষে তাঁর সেই ভয়ই সত্যি হল যখন মে মাসের শেষে পরীক্ষা করে দেখা গেল যে তিনি নিজেই কোভিড পজিটিভ হয়ে গেছেন।
অতিমারির সময়ে নিজের কাজের ঝুঁকির কথা ৩৮ বছর বয়সী শাহবাই আলবাত জানতেন, কিন্তু এর এহেন প্রভাব হবে সেকথা তিনি আগে থেকে বুঝতে পারেননি। তিনি রোগগ্রস্ত হওয়ার পরই তাঁর ৬৫-বছর বয়সী মা-ও সংক্রমিত হলেন সেই রোগে। তারপরই রোগে ধরল তাঁর চার ভাইপোকে। রোগের কারণে গোটা পরিবারটি চরম যন্ত্রণার মধ্যে পড়ল।
কয়েক সপ্তাহ লাগল আমার ভালো হতে। আমার ভাইপোরাও ভালো হয়ে গেল, কিন্তু আমার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হল,” তিনি বললেন, সঙ্গে তিনি একথাও জানালেন যে তাঁর মাকে টানা এক সপ্তাহ অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। “আমার মায়ের চিকিৎসা করাতে আমার ২.৫ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। নিজের ২.৫ একর চাষের জমি আর কিছু গয়না বিক্রি করে এই খরচা তুলতে হয়েছিল।”
আশাকর্মী হিসাবে তাঁর কাজ কোনও দিনই সহজ ছিল না, কিন্তু অতিমারি তাঁর অবস্থাটা আরও কঠিন করে তুলেছে। তাঁর কথায়, “আমি হুমকি আর গালাগালের মুখে পড়েছি। প্রথমদিকে মানুষ নিজেরদের রোগের উপসর্গগুলো লুকাতো। গ্রামে কাজ করতে গিয়ে আমি ঢের অসুবিধায় পড়েছি।”
মহারাষ্ট্রে ৭০,০০০-এর বেশি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আশাকর্মী আছেন। ২০২০ সালের মার্চ মাসে ভাইরাস সংক্রমণের সময় থেকেই কোভিড-১৯ অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরাই ছিলেন প্রথমসারির সুরক্ষা কর্মী। বাড়ি বাড়ি যাওয়া ছাড়াও মানুষের মনে টিকা সংক্রান্ত আতঙ্ক সামাল দিতেও তাঁদেরই এগিয়ে আসতে হয়েছে।
স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে পরিগণিত হলেও আশাকর্মীরা প্রকৃতপক্ষে সামাজিক স্বাস্থ্যকর্মী যাঁরা সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে সরকারি স্বাস্থ্যপ্রকল্পগুলির রূপায়ণে সহায়তা করেন। তাঁদের প্রধান প্রধান কাজগুলির মধ্যে পড়ে সন্তানসম্ভবাদের সহায়তা করা, হাসপাতালে সন্তান প্রসব করার পক্ষে জনমত তৈরি করা, শিশুদের টিকাকরণ সুনিশ্চিত করা, পরিবার পরিকল্পনায় উৎসাহ দেওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য রাখা।
এতকিছু করতে হয় সাকুল্যে ৩,৩০০ টাকা মাসিক ভাতার বিনিময়ে — এছাড়া রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে উৎসাহভাতা বা ইন্সেন্টিভ বাবদ মাসে শাহবাইয়ের আয় ৩০০-৩৫০ টাকা। কাজের দীর্ঘ সময় ও কঠিন পরিশ্রম সত্ত্বেও আশাকর্মীরা অতিমারির সময়ে খুব কমই সহায়তা পেয়েছেন। “সঙ্কটে সাহায্য তো দূরের কথা আমরা সময় মতো মাইনে (ভাতা) পর্যন্ত পাই না। আমরা শেষ টাকা পেয়েছি সেই এপ্রিল মাসে,” বললেন শাহবাই।
একটি মাস্ক দিয়েই তাঁদের সুরক্ষা প্রদান করার দায় সারা হয়েছে। শাহবাই জানালেন যে মার্চ ২০২০ থেকে তিনি মাত্র ২২টি একবার ব্যবহারযোগ্য আর পাঁচটি এন৯৫ মাস্ক পেয়েছেন। “আপনার কি মনে হয় যে কাজ আমরা করি আর তারজন্য যে ঝুঁকি আমরা নিয়ে থাকি তার বিনিময়ে আমরা যা পাই তা যথেষ্ট?”
এই প্রশ্ন প্রায় সব আশাকর্মীর।
শোভা গানাগে আজ বহু মাস ধরে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে বাড়ির গোসলখানার বদলে স্নান করেছেন নিজেদের শৌচালয়ে। “আমার মেয়ের বয়স আট। কত মাস হয়ে গেছে, মেয়েটা কাঁদলে আমি ওকে জড়িয়ে আদর করতে পারিনি। ও আমার কাছে ঘুমোতে চাইত, কিন্তু আমি বারণ করতাম,” বললেন, বীড জেলায় সুলতানপুর গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরে চৌশালা গ্রামের আশাকর্মী ৩৩ বছর বয়সী শোভা।
মহারাষ্ট্রের, আশাকর্মী ইউনিয়ন জুনের মাঝামাঝি অনির্দিষ্ট কালের জন্য যে ধর্মঘটের ডাক দেয় তা চলেছিল টানা এক সপ্তাহ। এই ধর্মঘটে সাড়া দিয়ে সরকার তাঁদের ভাতার পরিমাণ ১,৫০০ টাকা বাড়িয়ে দিতে রাজি হয় — মূল ভাতায় ১,০০০ টাকা বৃদ্ধি আর ৫০০ টাকা কোভিডকালীন ভাতা
তাঁদের আত্মত্যাগের কথা কেউই মনে রাখেনি বলে মনে করেন শোভা। “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের প্রশংসা করেন বটে, কিন্তু আমাদের পাশে দাঁড়ান না।” খবরে প্রকাশ, জুলাই মাসের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে আশাকর্মীদের ‘মহান যোদ্ধা’ বলে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে যদি আবার কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে, তাহলে তাঁরাই তার প্রতিরোধে বড়ো ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু শুকনো কথার চেয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা করেন শোভা। “ওঁর কথা দিয়ে তো আর আমাদের সংসার চলবে না!”
কারণ ভিন্ন হলেও শাহবাই আর শোভা উভয়েই আর্থিক নিশ্চয়তার জন্যেই এই কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
মারাঠা সম্প্রদায়ভুক্ত শাহবাই নিজের মায়ের সঙ্গে তাঁর দুই ভাইয়ের সংসারে থাকেন। তাঁর কথায়, “১৩ বছর আগে আমি বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসি ডিভোর্স নিয়ে। গ্রামের দিকে বিবাহবিচ্ছিন্না হলে মানুষ তাঁকে সহজে মেনে নেয় না। লোকে নানা কথা বলে আর তাই আমার সর্বদাই মনে হয় যে আমি বুঝি আমার পরিবারকে বিপাকেই ফেলেছি।” কাজেই আত্মসম্মান রক্ষার্থে শাহবাই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতে চেয়েছেন।
পরিবারে তাঁর মাধ্যমে কোভিড সংক্রমণ ঘটার জন্য এখন তিনি অপরাধবোধে ভুগছেন। “আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না,” বললেন শাহবাই। “আমি ওদের এই ক্ষতির বিহিত করতে চাই, কিন্তু কেমন করেই বা তা করব ভেবে পাই না। আমি চাই না ওরা আমাকে দোষী করুক।” এসব ছাড়াও তাঁর কাজের জন্য তাঁকে নানা কথা শুনতে হয়, বিশেষ করে পুরুষদের কাছে। “আমি কারও সঙ্গে কথা বললেই ওরা অনেক কিছু ভেবে বসে,” বললেন শাহবাই। “কিন্তু মানুষের সঙ্গে কথা বলাই তো আমার কাজ। আমি কী-ই বা করব?”
পুরুষদের কাছ থেকে উড়ে আসা জঘন্য সব মন্তব্যে তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না বলে জানালেন শোভা। “ওদের কি করে জব্দ করতে হয় আমার জানা আছে।” তাঁর সমস্যা ভিন্ন। শোভার আয়ের উপরেই তাঁর সংসার মোটের উপর নির্ভরশীল। “আমাদের নিজেদের চাষের জমি নেই,” জানালেন দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত শোভা। "কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ করে আমার স্বামী দিনে ৩০০ টাকা আয় করেন। সপ্তাহে ৩-৪ দিন তিনি কাজ পেতেন। কোভিডের পর থেকে কাজও প্রায় অমিল।”
কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার এক মাস পর শোভার পরিবার পচন ধরা খাদ্যশস্য বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। “ওগুলি ইস্কুলের বাচ্চাদের মিড-ডে মিলের জন্য রাখা ছিল, কিন্তু ইস্কুল বন্ধ থাকায় সেগুলি ব্যবহারের সময়সীমা পেরিয়ে যায়,” বুঝিয়ে বললেন শোভা। খাদ্য শস্যগুলি ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দরিদ্র মানুষদের মধ্যে সেগুলি বিলি করে দেন। “ওগুলোই রান্না করি নিজেদের জন্য, আমার মেয়েও তা-ই খেয়েছিল।”
‘অ্যাক্রেডিটেড সোশাল হেলথ অ্যাক্টিভিস্ট’ পদধারী কর্মীদের সংক্ষেপে আশা বলা হয়, নানান ভাষায় আশা শব্দটি ‘ভরসা’ অর্থ বহন করে, কিন্তু শাহবাই ও শোভা দুজনেই জানেন যে আশাকর্মী হিসাবে তাঁদের অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনের আদৌ কোনও আশা-ভরসা নেই।
ভদ্রস্থ বেতন ও স্থায়ী কর্মীর স্বীকৃতি – এই দুটিই আশাকর্মীদের বহুদিনের দাবি। জুনের মাঝামাঝি মহারাষ্ট্রের আশা কর্মী ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকে, চলেছিল টানা একসপ্তাহ। এতে সাড়া দিয়ে সরকার আশা কর্মীদের সাম্মানিক ১লা জুলাই থেকে ১,৫০০ টাকা করে বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় — এর মধ্যে ১,০০০ টাকা তাঁদের মূল ভাতায় বৃদ্ধি হবে আর ৫০০ টাকা কোভিডকালীন ভাতা বাবদ দেওয়া হবে। মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, রাজেশ তোপে এ কথাও ঘোষণা করেন যে প্রত্যেক আশাকর্মীকে একটি করে স্মার্টফোন দেওয়া হবে যাতে তাঁরা সব রিপোর্ট সহজেই অনলাইনে দাখিল করতে পারেন।
সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান ট্রেডইউনিয়নের (সিআইটিইউ) রাজ্য সম্পাদক শুভা শমিম জানালেন যে প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়িত হতে বাকি আছে। “আশাকর্মীরা ঠিক কবে থেকে ঘোষিত সুবিধাগুলি পাবেন সে সম্বন্ধে পরিষ্কার করে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না,” তিনি বললেন। মে মাস থেকে রাজ্যের আশাকর্মীরা তাঁদের সাম্মানিক পাচ্ছেন না এবং কোভিডকালীন ভাতা বলে যা ঘোষণা করা হয়েছিল তা এখনও এসে পৌঁছায়নি।
রাজ্যের আশাকর্মীরা যখন ধর্মঘট করেছিলেন, তখন তাঁদের সঙ্গে বীডে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন ২৫০ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মী — দাবি ছিল নিজেদের চাকরিকে একটি নিয়মের আওতায় এনে বেতন বৃদ্ধি।
সরকারি হাসপাতালে অতিমারির সময়ে বাড়তি রোগীর ভার সামলাতে , প্রধানত নার্স ও ওয়ার্ড সহায়ক হিসাবে এই অস্থায়ী কর্মীরা চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত হয়েছিলেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে বা রোগীর সংখ্যা কমতে থাকলেই তাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। “কাজ ফুরোলে ফেলে দেওয়ার নীতির চেয়ে এ আলাদা কিছু না,” বললেন ২৯ বছর বয়সী প্রশান্ত সদারে। বীড থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ওয়াডওয়ানি তালুকে কোভিড চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে তিনি ওয়ার্ড সহায়ক হিসাবে কাজ করতেন। “আমাকে মে মাসে নিয়োগ করা হয় আর তার দুই মাস পরেই বলা হয় ছেড়ে দিতে।”
প্রশান্তর কৃষিশ্রমিক মা-বাবা কোনোরকমে জীবিকা অর্জন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। দৈনিক ৪০০ টাকার এই কাজটা পেয়ে প্রশান্ত নিজের মা-বাবাকে একটু আরামে রাখবেন বলে মনে করেছিলেন। “হাসপাতাল যখন রোগীতে উপচে পড়ছে, সে সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এরা যা বলেছে আমি তাই করেছি,” তিনি বললেন। কোভিড ওয়ার্ড পরিষ্কার করা থেকে রোগীকে খাইয়ে দেওয়া অবধি আমি সব করেছি। আমরা যে মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে গেছি তার কি হবে? কে ভাববে সে কথা?” এখন তিনি একটি বিদ্যালয়ে আংশিক সময়ের শিক্ষক হিসাবে কাজ করে মাসিক ৫,০০০ টাকা আয় করেন।
বিজ্ঞাপন দেখে ওয়াডওয়ানির ওই একই হাসপাতালে আবেদন করেছিলেন লহু খারগে। এই পদে বিবেচিত হওয়ার জন্য আবেদনকারীদের দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়া আবশ্যিক ছিল। স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কের হয়ে স্বল্প আমানত জমা করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করার পিগমি এজেন্টের কাজ ছেড়ে এই কাজে যোগ দেন লহু। “তিনমাস পর আমাদের চুক্তি শেষ হলে একদিন বাদ দিয়ে আবার নতুন করে চুক্তি করা হয়,” এই কাজে এখনও কর্মরত, খারগে জানালেন। আমাদের শ্রম আইন অনুসারে, কেউ যদি লাগাতার একবছর কোনও কাজে নিযুক্ত থাকেন তাঁকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। সেই কারণেই বারবার এই চুক্তিগুলি তিনমাস পর পর একদিন করে বাদ দিয়ে নতুন করে করা হয়।”
চাকরিতে নিয়োগের এই অমানবিক নীতির দিকে ইঙ্গিত করে চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানিয়ে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা বীডে বিক্ষোভ জানান। তাঁরা আশা করেছিলেন, উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার, মন্ত্রী ধনঞ্জয় মুন্ডে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন এই বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে — মন্ত্রীরা এইসময় কোভিড-১৯ অতিমারির জেরে নেমে আসা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতে ওই জেলাতেই উপস্থিত ছিলেন।
“কিন্তু তাঁরা আমাদের সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করেন,” ওই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী, ২৯ বছর বয়সী, অঙ্কিতা পাতিল জানালেন। “আমরা তাঁদের কাছে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলাম। নিজেদের দাবিগুলি লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম, সেটি আমাদের কলেক্টরেরর অফিসে জমা দিতে বলা হল, অথচ একজন কর্মচারী আমাদের হাত থেকে কাগজটি ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।” মন্ত্রীদের একজন তাঁকে চলে যেতে বলেন, আর বাকি মন্ত্রীরা, অঙ্কিতার কথায়, “আমাদের দিকে তাকিয়েও দেখেননি।”
এই ঔদ্ধত্বপূর্ণ ব্যবহারে রুষ্ট হয়ে বিক্ষোভকারীদের একাংশ মন্ত্রীদের গাড়ি আটকাতে যান। পুলিশ তখন লাঠি চালিয়ে তাঁদের সরিয়ে দেবার চেষ্টা করে। “স্বাস্থ্যকর্মীদের কি এই ব্যবহার প্রাপ্য”? প্রশ্ন অঙ্কিতার। “আমরা মাসের পর মাস, একদিনও ছুটি না নিয়ে, নিজেদের ও নিজেদের পরিবারের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, কোভিড আক্রান্তদের সেবা করেছি আর আমাদের সঙ্গে কথা বলার মতো পাঁচটা মিনিট সময় এঁদের নেই? আমরা খানিকটা সম্মান অবশ্যই দাবি করতে পারি।”
ওয়াডওয়ানির একটি কোভিড কেন্দ্রে নার্সের কাজ করে অঙ্কিতা মাস গেলে পান ২০,০০০ টাকা। “এখন অবধি আমার চাকরিটা আছে কিন্তু কালকেই তা চলে যেতে পারে,” তিনি বললেন। “এমনিতেই আমাদের মানসিক চাপ আর ক্লান্তির শেষ নেই। বুঝতেই পারছেন আমাদের কাজের স্থায়িত্ব প্রয়োজন। কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কার জোর কমে যাওয়া মাত্র আমাদের বন্ধুদের চাকরি যেতে দেখেছি আমরা। এতে আমাদের উপরেও বাজে রকম চাপ পড়েছে।”
ভাবলে অবাক লাগে যে, একমাত্র কোভিডের তৃতীয় ধাক্কা এলে তবেই কেবল চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে কাজ ফিরে পাওয়া সম্ভব, অথচ কেউ তো আর এমনটা চাইতে পারে না।
প্রতিবেদ ক এই নিবন্ধটি পুলিৎজার সেন্টারের স্বতন্ত্র সাংবাদিকতা অনুদানের সহায়তায় রচিত একটি সিরিজের অংশ হিসেবে লিখেছেন।
অনুবাদ: চিলকা