কয়েক লক্ষ মানুষের জল ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের নানাভাবে স্বাস্থ্যহানিকর অবস্থায় ফেলে নাকাল করা, পুলিশ ও মিলিটারি দিয়ে তাঁদের ছোটো ছোটো ব্যারিকেডের মধ্যে করে আটক করে দেওয়া যেখানে অতিমারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনও উপায়ই থাকছে না, বা সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতিবাদী কৃষকদের দেখা করার রাস্তায় যৎসম্ভব প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা - যাঁদের মধ্যে বিগত দুই মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ২০০ জন, এবং মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারা গেছেন স্রেফ দীর্ঘ সময় ঠাণ্ডায় থেকে হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে – হলফ করে বলা যায়, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে মানুষকে এইভাবে শাস্তি দেওয়ার ঘটনাকে বর্বর ও মানবাধিকার বিরোধী বলেই গণ্য করা হবে।

কিন্তু আমরা, আমাদের সরকার ও আমাদের সমাজের মাথারা অন্যান্য জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বড্ডো ব্যস্ত। তাঁদের যাবতীয় চিন্তা রিহানা ও গ্রেটা থার্নবার্গের মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের ষড়যন্ত্র কেমন করে ফাঁস করা যায়, সে নিয়ে!

গল্প হলে অবশ্য এটি নিদারুণ মজার কাহিনি-ই হত। কিন্তু বাস্তব বলে একে কেবল নিদারুণ-ই বলা সাজে।

নিকৃষ্টতম ব্যাপার নিঃসন্দেহে, তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এমনকি যারা ‘মিনিমাল গবর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গর্ভনেন্স’ অর্থাৎ ‘তিল-সম সরকার, তাল-সম শাসন’ স্লোগানটিতে বিশ্বাস করেছিলেন, তাঁরাও নিশ্চয়ই এতদিনে ব্যাপারটা ধরে ফেলেছেন। প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সরকারের পেশি শক্তি প্রদর্শন এবং নগ্ন রক্তাক্ত শাসন। এমনিতে যারপরনাই ওয়াকিবহল, সদা-মুখর কণ্ঠগুলি থেকে এই অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও শুনতে না পাওয়াটা চিন্তার ব্যাপার। তাঁরা যতই সরকার-দরদি হন না কেন, আশা করাই যায় যে গণতন্ত্রের এই নগ্ন পরিহাস তাঁরাও সহ্য করতে পারবেন না।

প্রতিবাদী কৃষকদের সমস্যার সমাধানের রাস্তায় আসল বাধা যে কি, তা কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীসভার প্রত্যেক সদস্যের কাছেই জলের মতো পরিষ্কার।

PHOTO • Q. Naqvi
PHOTO • Labani Jangi

তাঁরা জানেন যে নতুন তিন আইন নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনাই হয়নি, যদিও এই আইন প্রথম যখন অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স হিসাবে আনা হয়, তখন থেকেই কৃষকেরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার মরিয়া চেষ্টা করে গেছেন।

কৃষিক্ষেত্র বিষয়ক পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার ভারতীয় সংবিধান রাজ্যগুলির এক্তিয়ারে রেখেছে। তথাপি এই তিন আইন নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনরকমের আলোচনায় যায়নি কেন্দ্র। এমনকি ভারতীয় পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে, বিরোধী দলগুলির সঙ্গেও কোনওরকম আলোচনা করেনি তারা।

বিজেপি নেতারা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যরা খুব ভালো করেই জানেন যে, কোনও ধরনের আলাপ-পরামর্শ হয়নি এই তিন আইন নিয়ে, তাঁদের সঙ্গেই কোনও পরামর্শ করেনি কেউ! যেমন অন্য কোনও জরুরি বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয় না, ফলে যথারীতি এটা নিয়েও হয়নি। তাঁদের কাজ শুধুমাত্র নেতার আদেশ মান্য করে চলা – তা সে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ আটকানোর মতো অসম্ভব কাজ হলেও তাঁরা করবেন।

আপাতত এই পারিষদদের পরাজিত করে উত্তরপ্রদেশে পৌঁছে গেছে প্রতিবাদের ঢেউ। উত্তরপ্রদেশের কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়তকে নাস্তানাবুদ করার যে প্রচেষ্টা সরকার করেছে, তা উল্টে টিকায়তকেই দিয়েছে পরিচিতি ও সম্মান। এখন তাঁকে সবাই এক ডাকে চেনে, মান্য করে। ২৫শে জানুয়ারি মহারাষ্ট্রেও কৃষকদের বিশাল প্রতিবাদ সভা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ হয় রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং অন্যান্য জায়গায় – কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু শহরে ট্রাক্টর সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এদিকে হরিয়ানা সরকার রাজ্যে কাজ চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে, এমনকি সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত জন সমাবেশে হাজির হয়ে উঠতে পারছেন না!

পঞ্জাবের প্রায় প্রত্যেক পরিবার প্রতিবাদী কৃষকদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করে। অনেকে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার তাগিদে ছটফট করছেন। বহু মানুষ ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছেন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য পঞ্জাবের পৌর নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে প্রার্থী পাওয়া মুশকিল হয়ে উঠেছিল। দলের সঙ্গে অনেক দিন ধরে যুক্ত বলে পঞ্জাবের যে সব মানুষেরা এখনও দল ছেড়ে যাননি, তাঁরাও নিজেদের পার্টির প্রতীক ব্যবহার করতে সংকোচ বোধ করেন। এখনকার গোটা তরুণ প্রজন্মই এই পার্টি থেকে দূরে সরে গিয়েছে। নতুন প্রজন্মের এই বিচ্ছিন্নতা বিজেপি পার্টির ভবিষ্যতের জন্যে খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়।

PHOTO • Shraddha Agarwal ,  Sanket Jain ,  Almaas Masood

তবে কিনা এই যে এত বিচিত্র প্রেক্ষিত তথা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি থেকে আসা মানুষ যে এইভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এই সরকারের বিরুদ্ধে, তার কৃতিত্ব এই সরকারকে দিতেই হবে! এমনকি আবহমানকালের বিরোধী প্রতিপক্ষগুলোকেও মিলিয়ে দিয়েছে এই সরকার – আড়তিয়া বা আড়তদার (মধ্যস্বত্বভোগী কমিশন এজেন্ট) যোগ দিয়েছেন কৃষকদের সঙ্গে এই প্রতিবাদে। এছাড়া ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন শিখ, হিন্দু, মুসলমান, জাট ও অ-জাট সম্প্রদায়ের মানুষ। এমনকি এক যৌথ মঞ্চে এই প্রতিবাদ খাপ পঞ্চায়েত ও খান মার্কেটের মানুষদেরও মিলিয়ে দিতে পেরেছে!

অথচ বিগত দুইমাস ধরে কতিপয় কণ্ঠ থেকে আওয়াজ উঠেছিল যে এই প্রতিবাদ নাকি শুধু পঞ্জাব ও হরিয়ানার ব্যাপার। অন্যদের এতে নাকি কিছু যায় আসে না। অবশেষে বৃথা চেষ্টা বুঝতে পেরে সেই প্রয়াসে ক্ষান্ত দিয়েছে তারা।

আজব কথা! শেষবার সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করে দেওয়া কমিটির কথা মতো তো জেনেছিলাম পঞ্জাব ও হরিয়ানা দুটোই ভারতের অংশ! ওই দুই রাজ্যে কিছু হলে আমাদেরও তাতে কিছু এসে যায় বইকি!

সেই সোচ্চার কণ্ঠগুলি আমাদের এটাও বলেছিল, এবং এখনও কিছুটা চাপা গলায় ফিসফিসিয়ে চলেছে যে, এই প্রতিবাদ শুধুই পয়সাওলা কৃষকদের ব্যাপার, সাধারণ চাষাদের এতে কিছুই করার নেই।

দুর্দান্ত! পঞ্জাবের গড়পড়তা কৃষিনির্ভর পরিবারের মাসিক আয়, গত ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে, অর্থাৎ জাতীয় নমুনা সমীক্ষা (NSS) অনুযায়ী, ১৮,০৫৯ টাকা। একেকটি কৃষিনির্ভর পরিবারে গড়ে ৫.২৪ মানুষ। অর্থাৎ পরিবারের মাথা পিছু আয় মাসে ৩,৪৫০ টাকা। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, এই মাথাপিছু আয় কিন্তু সংগঠিত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের নিম্নতম স্তরের কর্মচারির উপার্জনের থেকেও কম।

আরিব্বাস! কত্ত পয়সাওয়ালা! এই বাকি আসাল কথাটি তারা আর আমাদের বলেনি। হরিয়ানায় অনুরূপ পরিসংখ্যান হল এইরকম: কৃষিনির্ভর পরিবারে গড়ে ৫.৯ মানুষ, পরিবারের মাসিক আয় ১৪,৪৩৪ টাকা, অর্থাৎ পরিবারে মাথা পিছু আয় মাসে ২,৪৫০ টাকা। এই কথা অবশ্যই ঠিক যে এই যৎসামান্য আয় নিয়েও এই কৃষকেরা ভারতের অন্য রাজ্যের কৃষকদের থেকে এগিয়ে। যেমন ধরুন, গুজরাতের কৃষিনির্ভর পরিবারের মাসিক আয় গড়ে ৭,৯২৬  টাকা। প্রত্যেক পরিবারে গড়ে ৫.২ মানুষ নিয়ে গুজরাতের কৃষকদের মাথাপিছু আয় মোটে ১,৫২৪ টাকা।

PHOTO • Kanika Gupta ,  Shraddha Agarwal ,  Anustup Roy

সারা ভারতের কৃষিনির্ভর পরিবারগুলির মাসিক গড় উপার্জন মোটামুটি ৬,৪২৬ টাকা, (অর্থাৎ মাথাপিছু ১৩০০ টাকা)। আর হ্যাঁ একথা জেনে নেওয়া যাক যে এই রোজগার শুধুই কৃষি থেকে আসে না। খামারের গরুছাগল, মুরগি ইত্যাদি পশুসম্পদ থেকে আসা রোজগার বা ছোটখাটো কৃষির বাইরে কোনও কাজের রোজগার, এইসবই এই মোট আয়ের অন্তর্গত।

৭০তম ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে, অর্থাৎ জাতীয় নমুনা সমীক্ষার (২০১৩) হিসাব অনুযায়ী এই হল আমাদের কৃষি ও কৃষকদের অবস্থা। কিন্তু আমরা যেন ভুলে না যাই, যে এই সরকার ২০২২ এর মধ্যে কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তার আর ১২ মাস বাকি আছে মোটে। এতো কঠিন কাজ। আর তার মধ্যে কিনা রিহানা ও গ্রেটা থার্নবার্গের মতো উপদ্রব এসে হাজির হয়েছে!

তবে হ্যাঁ। এই সব পয়সাওয়ালা কৃষকরা, যারা এখন দিল্লির সীমান্তে ধাতব ট্রলিগুলিতে ২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাতের পর রাত কাটাচ্ছেন, যাঁরা খোলা রাস্তায় ৫-৬ ডিগ্রি হিমের মধ্যে স্নান করছেন, তাঁরা কিন্তু ভারতবর্ষের বড়োলোকদের উপর আমার শ্রদ্ধা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি যেমনটা ভাবতাম তাঁরা ঠিক তেমনটা নন। অনেক বেশি কষ্টসহিষ্ণু।

ইতিমধ্যে, আমাদের সুপ্রিম কোর্ট যে কমিটি গঠন করেছে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলার জন্যে সেটি আদৌ সুসংহতভাবে কথাবার্তা চালাতে পারবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। কমিটির একজন সদস্য তো প্রথম মিটিংয়ের আগেই ইস্তফা দিয়ে বসেছেন। আর যে কাজের জন্যে এই কমিটি গঠন করা হল - অর্থাৎ প্রতিবাদী কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা, সেই কাজ এখন অবধি শুরুই হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে গঠিত এই কমিটিকে যে দুই মাসের আদেশপত্র দেওয়া হয়েছিল, তা শেষ হবে ১২ মার্চ। (অর্থাৎ কৃষিকাজে ফসলের পরাগসঞ্চার করার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে পতঙ্গদের ব্যবহার করা হয়, সেই পতঙ্গদের জীবনচক্র সম-মেয়াদ)। এই দুইমাসের শেষে এই কমিটির কাছে মানুষের নামের এক দীর্ঘ তালিকা তৈরি হবে সেইসব মানুষ যাঁদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেননি, দীর্ঘতর তালিকা হবে সেইসব মানুষদের যাঁরা এই কমিটির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। আর হয়তো একটি ছোট্টো তালিকা হবে তাঁদের নামের যাঁদের সঙ্গে কমিটির কথা বলা আদৌ উচিত হয়নি।

প্রতিবাদী কৃষকদের যত বেশি ভয় দেখানো ও হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁদের বদনাম করার হাজার চেষ্টা সরকারের তাঁবেদার মিডিয়ায় বহুল প্রচার পেয়েছে, কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ঠিক উল্টো – মানুষের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন প্রতিবাদী কৃষকেরা। ভয়ের ব্যাপার এটাই যে মানুষের পরিষ্কার, সুব্যক্ত রায়ও কিন্তু এই সরকারকে আরও স্বৈরাচারী, আরও পাশবিক হওয়ার পথ থেকে নিরস্ত করতে পারছে না।

PHOTO • Satyraj Singh
PHOTO • Anustup Roy

কর্পোরেট মিডিয়ার অনেকেই জানেন, এবং বিজেপির অভ্যন্তরের মানুষেরা তো আরও ভালো করেই জানেন, যে এই অচলাবস্থা সমাধানের পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত অহংবোধ। কোনও সুচিন্তিত নীতি বা কর্মপন্থা নয়। কোনও বিত্তশালী শিল্পপতিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও নয় (যদিও কোনও না কোনও দিন সেই প্রতিশ্রুতি হয়তো বাস্তবায়িত হবে)। এমনকি দেশের আইনের প্রতি বিশ্বস্ততা নয় (যদিও সরকার নিজেই স্বীকার করেছে যে এই আইনের একাধিক সংশোধন সম্ভব)। বাধা শুধুমাত্র এই ভাবনা, যে মহামতি রাজা কদাপি কোনও ত্রুটি করতে পারেন না। এবং ভুল যে করেছি এই কথা মেনে নেওয়া, বা কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা, এসব তো অকল্পনীয় ব্যাপার। যদি দেশের প্রতিটি কৃষকও বিপদে পড়ে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তা সত্ত্বেও নেতা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটা মেনে নেওয়া যাবে না। সবার উপরে তাঁর অহংবোধ অটুট রাখতে হবে। নামী দামী দৈনিকের কোনও সম্পাদকীয় এই সোজা কথাটা ফিসফিসিয়েও বলে উঠতে পারছে না, যদিও তারা দিব্যি জানে যে এটাই সত্য।

এই তালগোল পাকানো পরিস্থিতির ঠিক কতখানি জুড়ে আছে এই অহংকার? ইন্টারনেটে ট্যুইটের মাধ্যমে এক রিদম অ্যান্ড ব্লুজ সংগীত শিল্পীর দেওয়া একটি ছোট্টো উত্তরের কথাই ভাবুন না একবার। কৃষকদের প্রতিবাদ সম্পর্কে তিনি লিখেছিলেন, “আমরা কেন এটা নিয়ে কথা বলছি না?” সেই ট্যুইট ঘিরে বিতর্ক অবশেষে যখন এসে ঠেকল ‘আহা, ট্যুইটারে রিহানার থেকে দ্যাখো আমাদের মোদীর ‘ফলোয়ার' কত বেশি’-তে, তখন বোঝা গেল আমরা কোন তলানিতে এসে ঠেকেছি! এই তলানির আন্দাজ আগেই পাওয়া গেছিল তখনই যখন কিনা আমাদের বিদেশমন্ত্রক রিহানার ট্যুইটের প্রতিবাদে দেশপ্রেমে গদগদ খ্যাতনামাদের সাইবার মাধ্যমে প্রতি-বিপ্লব গড়ে তোলার বিশাল এক কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত করেছিল! (ধ্বংসের এই উপত্যকায়, আসন্ন বিষাদের পরোয়া না করে তখন হোমরাচোমরারা ট্যুইট বাণ নিক্ষেপ করে বিনা-যুদ্ধে-নাহি-দিব-সূচ্যগ্র-মেদিনী নামক এক আন্তর্জালিক পালার অভিনয়ে ব্যস্ত ছিলেন!)

খেয়াল রাখতে হবে, যে ট্যুইটটি এই বৃহৎ যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার উৎস, তা কিন্তু নিছক একটি প্রশ্ন করেছিল, কোনও পক্ষ সমর্থন করেনি। অন্যদিকে কিন্তু আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং সংযোগ সচিব - দুইজনেই সর্বসমক্ষে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এই কৃষি আইনের। যদিও সেই প্রশংসার সঙ্গে তাঁরা জুড়ে দিয়েছেন নানান নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরামর্শ ও সতর্কীকরণ বার্তা। ওই কিছুটা সিগারেট ফেরিত্তয়ালাদের প্যাকেটের উপরে লেখা আন্তরিক বিধিবদ্ধ হুঁশিয়ারি বার্তার মতন ব্যাপার আর কি!

না হে ! ওই রিদম অ্যান্ড ব্লুজ সংগীত শিল্পী এবং ওই ১৮-বছর বয়সী পরিবেশকর্মীই সবচেয়ে মারাত্মক আমাদের দেশের জন্যে। এই জুটিকে অনমনীয় হাতে ও আপোষহীন ভাবে নিরস্ত না করলে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়তে পারে আমাদের দেশ! জনগণ এই কথা জেনে আশ্বস্ত বোধ করতে পারেন যে দিল্লি পুলিশকে এই কাজে লাগানো হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সমাধান করতে গিয়ে যদি তাঁরা পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে মহাশূন্যেও সেই ষড়যন্ত্রের হদিস খুঁজে পান, তাহলে আমি অন্তত তাঁদের নিয়ে হাসাহাসি করব না। আমি ওই চলতি কথাটাতে বিশ্বাসী: “ভিনগ্রহে যদি কোনও প্রাণী থেকেই থাকে, আমাদের পৃথিবী নিয়ে যে তাঁরা মাথা ঘামায়নি, এইটাই তাদের বুদ্ধিমত্তার মস্ত প্রমাণ!”

এই লেখাটি প্রথমে দ্য ওয়্যার-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

কভার ছবি: লাবনী জঙ্গী, পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার এক মফস্বল শহরের মানুষ, বর্তমানে কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে বাঙালি শ্রমিকদের পরিযান বিষয়ে গবেষণা করছেন। স্ব-শিক্ষিত চিত্রশিল্পী লাবনী ভালোবাসেন বেড়াতে।

অনুবাদ : শিপ্রা মুখার্জী

P. Sainath

ପି. ସାଇନାଥ, ପିପୁଲ୍ସ ଆର୍କାଇଭ୍ ଅଫ୍ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆର ପ୍ରତିଷ୍ଠାତା ସମ୍ପାଦକ । ସେ ବହୁ ଦଶନ୍ଧି ଧରି ଗ୍ରାମୀଣ ରିପୋର୍ଟର ଭାବେ କାର୍ଯ୍ୟ କରିଛନ୍ତି ଏବଂ ସେ ‘ଏଭ୍ରିବଡି ଲଭସ୍ ଏ ଗୁଡ୍ ଡ୍ରଟ୍’ ଏବଂ ‘ଦ ଲାଷ୍ଟ ହିରୋଜ୍: ଫୁଟ୍ ସୋଲଜର୍ସ ଅଫ୍ ଇଣ୍ଡିଆନ୍ ଫ୍ରିଡମ୍’ ପୁସ୍ତକର ଲେଖକ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ ପି.ସାଇନାଥ
Translator : Sipra Mukherjee