পাঁচ কিলো ওজন কমে গেল যখন, তখনই বজরং গাইকোয়াড় টের পেয়েছিলেন যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, "আগে আমি ছয় লিটার মোষের দুধ, পঞ্চাশটা আমন্ড বাদাম এবং দুটো ডিম খেতাম রোজ। মাংস খেতাম একদিন অন্তর।" এখন তিনি এইসব খান সাতদিন ধরে। কোনও কোনও সময়ে তো আরও বেশিদিন এই দিয়ে চালাতে হয়। তাঁর ওজন কমে এখন ৬১ কিলোয় দাঁড়িয়েছে।
"একজন কুস্তিগিরের ওজন কমা একেবারেই উচিত নয়," জানালেন কোলহাপুর জেলার পারগাঁও গ্রামের ২৫ বছর বয়সী পালোয়ান বজরং। "আপনি দুর্বল হয়ে পড়বেন এবং লড়াইয়ের সময়ে ঠিক ঠিক চাল দিতে পারবেন না। আমাদের এই খেলায় প্রশিক্ষণ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই আমাদের খোরাক (খাদ্যাভ্যাস)।" গ্রামীণ পশ্চিম মহারাষ্ট্রের অধিকাংশ কুস্তিগিরের মতো বজরংও বহুদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে লাল মাটির (ক্লে) এ্যরেনায় অনুষ্ঠিত কুস্তি প্রতিযোগিতায় পাওয়া পুরষ্কার মূল্যের উপর নির্ভর করেই নিজের ভারী খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখেন।
কোলহাপুরের দোনোলি গ্রামে বজরংয়ের শেষবারের মতো ময়দানে (প্রতিযোগিতা) নামার পর ৫০০ দিনেরও বেশি কেটে গিয়েছে। "বড়ো রকমের চোট লাগলেও আমি কখনও এতদিনের ছুটি নিতাম না লড়াই থেকে," বলছিলেন বজরং।
মার্চ ২০২০ ইস্তক আর কোনও প্রতিযোগিতাই হয়নি। যে গ্রামীণ যাত্রাগুলিতে (মেলাতে) এই কুস্তির প্রতিযোগিতা হত, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে সেগুলি মহারাষ্ট্র সরকার পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এখনও অবধি একই বিধিনিষেধ বলবৎ আছে।
কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত বজরং মোট ১,৫০,০০০ টাকা রোজগার করেছিলেন কুস্তির মরসুমে পশ্চিম মহারাষ্ট্র ও উত্তর কর্ণাটকের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। সেই বছরে তাঁর মোট আয় হয়েছিল ওই ১,৫০,০০০ টাকা। "একজন দক্ষ কুস্তিগির অন্তত ১৫০টা লড়াইয়ে নামতে পারেন এক মরশুমে," তিনি জানালেন। অক্টোবরের শেষের দিকে এই মরশুম শুরু হয়। চলে এপ্রিল-মে অবধি (বর্ষা নামার আগে পর্যন্ত)। "নতুন কুস্তিগিররা যাঁরা সবে লড়তে শুরু করেছেন তাঁরা ৫০,০০০ টাকা মতো আয় করতে পারেন প্রত্যেক মরশুমে। অভিজ্ঞ কুস্তিগির হলে আয় গিয়ে দাঁড়াতে পারে ২০ লাখ টাকা অবধি," বলছিলেন বজরংয়ের ৫১ বছর বয়সী প্রশিক্ষক মারুতি মানে।
লকডাউনের আগেও বজরং ও হাটখাঙ্গালে তালুকের জুনে পারগাঁও গ্রামের অন্যান্য পালোয়ানদের যথেষ্ট অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছিল পশ্চিম মহারাষ্ট্র ও কোঙ্কণ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায়। ওয়ারানা নদীর তীরে অবস্থিত জুনে (পুরনো) পারগাঁও ও পার্শ্ববর্তী পারগাঁও অঞ্চল তিনদিনের বৃষ্টিতে ভরাডুবি হয়েছিল। এই দুই গ্রামের মোট জনসংখ্যা ১৩,১৩০ (২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী)।
জুনে পারগাঁওয়ের জয় হনুমান তালিম, যা কিনা মারুতি মানের দাবি অনুযায়ী একশো বছর পেরিয়েছে, জলের তলায় ডুবে গিয়েছিল। ২৩x২০ ফুট তালিম ঘরের পাঁচ ফুট গভীর কুস্তির জায়গা পুনর্নির্মাণ করতে এই গ্রাম এবং আশপাশের গ্রামের প্রায় পঞ্চাশজন কুস্তিগির (প্রত্যেকেই পুরুষ) ২৭,০০০ কিলো তাম্বদি মাটি (লাল মাটি) ট্রাকে করে নিয়ে আসেন সাঙ্গলী জেলা থেকে।
কিন্তু লকডাউনের বিধিনিষেধ অনুসারে মহারাষ্ট্র জুড়ে সমস্ত তালিম বা আখড়া বন্ধ হয়ে যায়। বজরং ও অন্যান্য পালোয়ানদের উপর এর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে। তালিম ও প্রতিযোগিতার মধ্যে সময়ের ব্যবধান যেমন যেমন বাড়ছিল, কুস্তিগিররা বিকল্প কাজের সন্ধান করতে বাধ্য হচ্ছিলেন।
২০২১ সালের জুন মাসে বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে একটি গাড়ির যন্ত্রাংশের কারখানায় মজুরের কাজে যোগ দেন বজরং। "আমি মাসে ১০,০০০ টাকা পাই, কিন্তু আমার খোরাক জোগাতেই ৭,০০০ বেরিয়ে যায়," বলেন তিনি। তাঁর প্রশিক্ষক মারুতি মানের কথা অনুসারে উচ্চমানের কুস্তিগিরদের প্রতিদিন শুধু খোরাকের পিছনেই ১,০০০ টাকা খসে যায়। এই চাহিদার সঙ্গে তাল রাখতে না পারায় ২০২০ সালের অগস্ট থেকে বজরং তাঁর খোরাকের পরিমাণ কম করতে থাকেন, ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ওজন কমতে থাকে।
'কোনও কুস্তিগিরই অন্তত আগামী দুইমাস প্রশিক্ষণ নিতে পারবে না,' জানালেন প্রশিক্ষক মানে। 'প্রথমে এক মাস ধরে পুরো মাটিটাকে শুকোতে হবে'
বজরংয়ের বাবা পেশায় ছিলেন কৃষিশ্রমিক। ২০১৩ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর বজরং নানান পেশায় যুক্ত থেকেছেন। স্বল্প সময়ের জন্য স্থানীয় একটি দুধ সমবায়ে তিনি প্যাকেজিংয়ের কাজ করতেন দৈনিক ১৫০ টাকা ও অবাধ পরিমাণ দুধের বিনিময়ে।
আখড়ায় তাঁর হাতেখড়ি ১২ বছর বয়সে - একটি স্থানীয় প্রতিযোগিতায়। বজরংয়ের মা পুষ্পার বয়স এখন ৫০। আখাড়ায় বজরংয়ের যোগ দেওয়ার সময় থেকেই পাশে থেকেছেন তিনি। "আমি খেতমজুরি করে ওকে কুস্তিগির বানিয়েছি [ছয় ঘণ্টার কাজের বিনিময়ে রোজগার ছিল ১০০ টাকা]। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হয়েছে। খেতে-খামারে কোনও কাজ নেই এই অবিরাম বন্যার কারণে," জানালেন পুষ্পা।
বজরং এখন শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। তাতে প্রয়োজন হাড়ভাঙা পরিশ্রম। তার উপর দৈনন্দিন যেটুকু শরীরচর্চা করা আবশ্যিক, তার জন্যেও যথেষ্ট সময় থাকে না আর। "এক এক দিন আমার তালিমে যেতেও ইচ্ছা করে না," বলছিলেন তিনি। (যদিও মার্চ ২০২০ ইস্তক তালিমগুলি বন্ধ রয়েছে, তবুও কুস্তিগিরদের কেউ কেউ ভিতরে প্রশিক্ষণ নেন।)
এক বছরের উপর প্রায় সম্পূর্ণভাবে অব্যবহৃত পরে থাকার পর ২০২১ সালের মে মাসে কুস্তিগিররা আবার আখড়া মেরামতির কাজ শুরু করেন। ৫২০ লিটার মোষের দুধ, ৩০০ কিলো হলুদ গুঁড়ো, ১৫ কিলো কর্পূর গুঁড়ো, প্রায় ২,৫০০ লেবুর রস, ১৫০ কিলো নুন, ১৮০ লিটার রান্নার তেল, আর ৫০ লিটার নিম-জল দেওয়া হয় লাল মাটিতে। বিশ্বাস করা হয়, এই প্রক্রিয়ার দ্বারা মাটি প্রস্তুত করা হলে কুস্তিগিররা সংক্রমণ, কাটা-ছেঁড়া, এমনকি বড়োসড়ো চোটের থেকেও সুরক্ষিত থাকবেন। ১,০০,০০০ টাকার এই খরচ আবারও সেই কুস্তিগিররা নিজেরাই ও স্থানীয় গুটিকয়েক সমর্থক সম্মিলিতভাবে তোলেন।
দুই মাস যেতে না যেতেই ২৩শে জুলাই আবার তাঁদের গ্রামটি বৃষ্টি ও বন্যার জলে ভেসে যায়। "২০১৯ সালে তালিমের ভিতর অন্তত ১০ ফুট জল উঠেছিল। ২০২১ সালের বন্যায় তা ১৪ ফুট ছাড়িয়ে যায়। আমাদের পক্ষে (আবারও) টাকার বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয়। তাই আমি পঞ্চায়েতে অনুরোধ জানাই। কিন্তু কেউ পাশে দাঁড়ায়নি।"
"কোনও কুস্তিগিরই অন্তত আগামী দুইমাস প্রশিক্ষণ নিতে পারবে না," জানালেন প্রশিক্ষক মানে। "প্রথমে এক মাস ধরে পুরো মাটিটাকে শুকোতে হবে। তারপর ওদের নতুন করে মাটি কিনতে হবে।"
যে সময়টা নষ্ট হল সেটার ফল ভোগ করতে হবে। "একদিন প্রশিক্ষণ নিতে না পারা মানে আটদিন পিছিয়ে যাওয়া," জানালেন কেসরি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা ২৯ বছরের শচীন পাতিল। মহারাষ্ট্র রাজ্য কুস্তি পরিষদের অধীনে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে প্রতি বছর রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হরিয়ানায় সাতটি প্রতিযোগিতা জেতেন শচীন। "ওটা খুব ভালো মরশুম ছিল। আমার ২৫,০০০ টাকা আয় হয়েছিল," জানালেন শচীন।
বিগত চার বছর ধরে শচীন খেতমজুরের কাজ করছেন। মাঝেমধ্যে তাঁকে জমিতে রাসায়নিক কীটনাশক ছড়ানোর কাজ করতে হয়। আয় মাসিক ৬,০০০ টাকা। স্বল্প সময়ের জন্যে তিনি ওয়ারানা চিনি সমবায়ের কাছ থেকে খানিক সাহায্য পেয়েছিলেন - মাসিক হাজার টাকা জলপানি, প্রতিদিন ১ লিটার দুধ ও থাকার জায়গা। (মাঝে মাঝে তরুণ প্রতিভাবান কুস্তিগিররা এমন সাহায্য পেয়ে থাকেন রাজ্যের চিনি ও দুধের সমবায়গুলির থেকে, বজরং যেমনটা পেয়েছিলেন ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালে।)
২০২০ সালের মার্চের আগে অবধি শচীন ভোর সাড়ে চারটে থেকে সকাল নটা এবং আবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে প্রতিদিন প্রশিক্ষণ নিতেন। "কিন্তু লকডাউন চলাকালীন তাঁরা প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি, আর স্বাভাবিকভাবেই তার ফল দেখা যাচ্ছে," বলছিলেন প্রশিক্ষক মানে। তাঁর মতে অন্তত মাস চারেকের হাড়ভাঙা প্রশিক্ষণ লাগবে কুস্তিগিরদের প্রতিযোগিতার জন্য আবার পুরোপুরি প্রস্তুত হতে। শচীন একথা ভেবে শঙ্কায় ভুগছেন যে, কুস্তিকে দেওয়ার মতো তাঁর জীবনের উৎকৃষ্টতম বছরগুলো হেলায় নষ্ট হয়েছে দুটো বন্যা ও কোভিডের ধাক্কায়।
"২৫ থেকে ৩০ কুস্তির জন্য আদর্শ বয়স। তারপর কুস্তি চালিয়ে যাওয়ার সহজ ব্যাপার নয়," বুঝিয়ে বললেন মানে। তিনি নিজে কুস্তি করেছেন প্রায় দুই দশকের উপর। গত কুড়ি বছর ধরে তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিরাপত্তা-কর্মী হিসাবে কাজ করছেন। আরও বললেন, "একজন গ্রামীণ কুস্তিগিরের জীবনে সংগ্রাম ও দুঃখই শেষ কথা। এমনকি সবচেয়ে ভালো কুস্তিগিরের কেউ কেউ মজুর হিসাবেও কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।"
একদা অন্যতম জনপ্রিয় খেলা কুস্তির তাই আজ একাধিক প্রতিকূলতায় জরাজীর্ণ করুণ অবস্থা। মহারাষ্ট্রে খোলা আকাশের নিচে কুস্তি লড়া জনপ্রিয়তা লাভ করে শাসক ও সমাজসংস্কারক শাহু মহারাজের হাত ধরে (১৮৯০-এর শেষ থেকে)। আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান, তুরস্ক, এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশের কুস্তিগিরদের বিশেষ চাহিদা ছিল গ্রামগুলিতে। (দ্রষ্টব্য – কুস্তি: বিবিধ ধর্ম আর সম্প্রদায়ের মিলনক্ষেত্র )
"এক দশক আগেও অন্তত ১০০ জন কুস্তিগির ছিল জুনে পারগাঁওয়ে। এখন সংখ্যাটা কমে হয়েছে ৫৫। প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা নেই আর মানুষের হাতে,” বলছিলেন মারুতি। ধাঙ্গর সম্প্রদায়ের এই মানুষটি মানে পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের কুস্তিগির। বিনা পারিশ্রমিকে তিনি ঘুনাকি, কিনি, নীলেওয়াড়ি, পারগাঁও ও জুনে পারগাঁওয়ের ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেন।
কুস্তি প্রতিযোগিতায় জেতা নিজের ট্রফিগুলো তালিমের একটি উঁচু তাকে সাজিয়ে রাখা আছে। বন্যার জলের নাগাল থেকে অনেকটাই উঁচুতে সেগুলি। বানের কথা উঠতে তিনি বললেন, "একুশে জুলাই (২০২১) আমরা রাত দুটোর সময় বাড়ি ছেড়ে কাছেই একটা খেতে গিয়ে আশ্রয় নিই। জল দ্রুত বাড়তে থাকে এবং একদিনের মধ্যে পুরো গ্রাম ডুবে যায়।" মানে পরিবারের সদস্যরা নিরাপদভাবে নিজেদের ছয়টি ছাগল এবং একটি মোষ সরিয়ে আনতে পারলেও তাদের পঁচিশটি মুরগি মারা যায়। ২৮শে জুলাই বন্যার জল নামতে শুরু করলে কুড়িজন কুস্তিগিরকে সঙ্গে নিয়ে মারুতি প্রথমে তালিমের অবস্থা দেখতে যান যান এবং গিয়ে দেখেন সবকিছু পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
তাঁর চিন্তা হয় একথা ভেবে যে পরবর্তী প্রজন্মের কুস্তিগিরদের উপর এর কী প্রভাব পড়বে। সাঙ্গলী জেলার স্নাতক স্তরের ছাত্র বছর কুড়ির ময়ূর বাগাদি বিগত দুই বছরে (২০১৮-১৯) খান দশেক প্রতিযোগিতা জিতেছিলেন। "আরও কিছু শেখার আর দূর দূরান্তে গিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার আগেই লকডাউন শুরু হয়ে গেল। লকডাউন আমার সবকিছু কেড়ে নিল," বললেন তিনি। লকডাউনের শুরু থেকেই তিনি নিজের পরিবারকে খেতের কাজে ও তাঁদের দুটি মোষের দুধ দোয়ানোর কাজে সাহায্য করছেন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর লড়া শেষ কুস্তি প্রতিযোগিতা তিনি ২,০০০ টাকা জেতেন। "প্রথম স্থানাধিকারী ৮০% টাকা পায়। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী পায় ২০ শতাংশ।" বোঝালেন শচীন পাতিল। এভাবেই প্রত্যেক প্রতিযোগিতা থেকে কিছু না কিছু আয় হয়।
সাম্প্রতিক বন্যার আগে পর্যন্ত ময়ূর এবং অন্য আরও তিনজন কুস্তিগির নীলেওয়াড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে জুনে পারগাঁওয়ে যেতেন প্রায়শই। "আমাদের গ্রামে কোনও তালিম নেই", জানান তিনি।
ময়ূর জানালেন, গতমাসের বন্যার সময়ে "টানা একদিন আমরা তিন ফুট জলের নিচে ছিলাম। ওই অবস্থা থেকে উদ্ধার হওয়ার পরও আমার গায়ে জ্বর ছিল। পারগাঁওয়ের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে এক সপ্তাহের জন্য আশ্রয় নেয় বাগাদি পরিবার। তাঁর কথায়, "পুরো বাড়িটাই ডুবে গিয়েছিল। এমনকি যে ১০ গুণ্ঠা (০.২৫ একর) চাষের জমি আছে আমাদের, তাও ডুবে গিয়েছিল।" তাঁর পরিবার কুড়ি টন আখ বেচে ৬০,০০০ টাকা উপার্জনের অপেক্ষায় ছিল। বাড়িতে মজুদ রাখা ৭০ কিলো ভুট্টা, গম এবং চালও নষ্ট হয়। "সব শেষ হয়ে গেল," আক্ষেপ ময়ূরের।
ময়ূরের বাবা-মা দুজনেই চাষি তথা খেতমজুর। বন্যার পর ময়ূর মা-বাবাকে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করতে সাহায্য করেন। তিনি জানালেন, "পচা গন্ধটা কোনোভাবেই যাচ্ছে না, আর আমাদের এর মধ্যেই ঘুম, খাওয়া সব চালিয়ে যেতে হচ্ছে।"
বজরং বলছিলেন, "এই ফি বছরের বন্যা ক্রমশ আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১৯ সালের বন্যা অনেক বেশি ভয়াবহ ছিল। আর ২০১৯ সালে আমরা একটা টাকাও ক্ষতিপূরণ পাইনি। এই বছর (২০২১) ২০১৯-এর চাইতেও খারাপ অবস্থা হয়েছিল। সরকার আইপিএলের (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) জন্য এতকিছু করতে পারে, এমনকি অন্য দেশেও প্রতিযোগিতা সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে, আর কুস্তির বেলায় তাদের এত অনীহা কেন?"
"পরিস্থিতি যাই হোক না কেন যে কোনও কুস্তিগিরের সঙ্গে আমি লড়াই করতে পারি। কিন্তু কোভিড ও দু’দুটো বন্যার সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা আমার নেই!” শচীনের সংযোজন।
অনুবাদ : বর্ষণা