১৪ই এপ্রিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবং পারির জাঁতা পেষাইয়ের গীতি-সংকলনের অংশ হিসেবে এই মাস জুড়ে আমরা ডঃ আম্বেদকর এবং বর্ণাশ্রমের সমস্যাকে ঘিরে রচিত ওভি বা দোহা প্রকাশ করব। এই ক্রমের প্রথম নিবেদনে সাভারগাঁওয়ের রাধাবাই বোরহাডে বুদ্ধ, ভীমরাও, ধম্ম, সংঘ ও রমাবাইকে ঘিরে গেয়েছেন পাঁচটি ওভি

এখানে প্রকাশিত অডিও ও ভিডিও ক্লিপ দুটির মধ্যে সময়ের ফারাক ঠিক ২১ বছর। রাধাবাইয়ের বোরহাডের গাওয়া যে ওভিগুলি এখানে আছে সেগুলি রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২রা এপ্রিল। কাকতালীয়ভাবে এবছর ওই একই তারিখে, অর্থাৎ ২রা এপ্রিলেই আমরা আবার রাধাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম তাঁর গান পরিবেশনের ভিডিও তুলতে।

রাধাবাইয়ের বয়স এখন ৭০ বছর। দুই দশক আগে গাওয়া গানগুলি উনি প্রথমে মনে করতে পারছিলেন না। তবে আমরা তাঁরই রচিত কয়েকটি দোহা আবৃত্তি করতেই সমস্ত পুরনো সুর তাঁর স্মৃতিতে ফিরে আসে। উনি জোর গলায় বলেন যে সেই ১৯৯৬ সালে বানানো তাঁর গানের প্রতিলিপিগুলি একবারটি পড়লেই সবকিছু মনে পড়ে যাবে, আর তখন তিনি আবার সব ওভিগুলিই গাইবেন। (তাঁদের গ্রামে প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষার যে সাক্ষরতা ক্লাস হত, সেখানেই লিখতে ও পড়তে শিখেছেন রাধাবাই)।

ভিডিওটি দেখুন: স্মৃতি রোমন্থন করে অতীত থেকে ফিরে পাওয়া জাঁতা পেষাইয়ের একটি গান গাইছেন রাধাবাই

১৯৯৭ সালে রাধাবাই থাকতেন মাজলগাঁও গ্রামের ভীম নগর বস্তিতে। এখন বসবাস করেন এবং একটি ছোট্ট মুদিখানা চালান বীড জেলার ওই একই তালুকের সাভারগাঁও গ্রামে। তাঁর চার কন্যার প্রত্যেকেই বিবাহিত।

মাজলগাঁওয়ে উনি থাকতেন তাঁর স্বামী খান্ডু বোরহাডের সঙ্গে। দুজনেই পেশায় মূলত কৃষিশ্রমিক ছিলেন; ওখানে রাধাবাইয়ের কাজ ছিল খেতের আগাছা উপড়ানো। মাঝে মধ্যে উনি মোন্ধা বাজারে শস্য ঝাড়াই ও পরিষ্কার করতেন। কখনও কখনও গ্রামের বড়ো বাড়িগুলিতে ঝাঁট দেওয়া, সাফ-সাফাই করার কাজও করতেন।

কিন্তু রাধাবাই আর তাঁর স্বামীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কাজ পাওয়ার বরাতও কমতে থাকে। তাই ১২ বছর আগে দুজনে সাভারগাঁওয়ে চলে আসেন খান্ডুর ভাই ও তাঁর পরিবারের কাছে। ওখানে তাঁরা একটি ছোট্ট মুদিখানার দোকান দেন। আজ বেশ অনেকদিনই হল খান্ডু ও তাঁর ভাই, দুজনেই গত হয়েছেন, তাই রাধাবাই এখন জা রাজুবাই এবং তাঁর ছেলে মধুকরের সঙ্গেই থাকেন।

মাজলগাঁও তালুকের একই নামের গ্রামটির অন্তর্গত ভীম নগর জনপদে মূলত দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন বসবাস করেন। জাঁতা পেষাইয়ের গানের প্রকল্পের নিরিখে এই জনপদটি একটি স্বর্ণখনির চেয়ে কম কিছু নয়, বাবাসাহেব আম্বেদকরকে ঘিরে বাঁধা অজস্র ওভি এখান থেকে পাওয়া গেছে। সর্বজনবন্দিত রাষ্ট্রনায়ক বাবাসাহেব ছিলেন দলিত, মথিত ও লাঞ্ছিত জনসমাজের একনিষ্ঠ কন্ঠস্বর এবং স্বাধীন ভারতের সংবিধানের রূপকার। ১৪ই এপ্রিল তাঁর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পারি এই গোটা মাস জুড়ে ডঃ আম্বেদকর এবং বর্ণাশ্রমের সমস্যাকে ঘিরে রচিত জাঁতা পেষাইয়ের দোহাগুলি প্রকাশ করতে থাকবে।

সাভারগাঁও গ্রামে নিজেদের বাড়ির সামনে বসে আছেন রাধাবাই এবং তাঁর জা রাজুবাই (বাঁদিক থেকে প্রথমজন), রাজুবাইয়ের কন্যা ললিতাবাই খাল্গে এবং পুত্র মধুকর

এই ক্রমের প্রথম নিবেদনে রাধাবাই বোরহাডে পাঁচটি দোহা গেয়েছেন, প্রত্যেকটির বিষয় আলাদা। প্রথম ওভিটি তথাগত বুদ্ধকে নিয়ে। তিনি দলিত অবর্ণ অচ্ছুৎ মানুষের মুক্তি ও সার্বিক উন্নতির জন্য বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তন করেন, এই গানের মাধ্যমে আমরা এমনটাই জানতে পারি।

দ্বিতীয় ওভিটি ভীমরাও আম্বেদকরের জন্য যিনি দলিত সমাজকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যাতে দলিতেরা জাতপাত ও বর্ণপ্রথার অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন।

তৃতীয় দোহাটি বৌদ্ধধর্ম ও জীবনশৈলীর প্রতি নিবেদিত। গায়িকা তাঁর গানের মাধ্যমে আমাদের জানাচ্ছেন যে এই ধম্ম (ধর্ম ও পন্থা) সমগ্র জগৎকে রক্ষা করবে।

সংঘ হল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের যৌথ মণ্ডলী। চতুর্থ ওভিটি এই সংঘের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করছে। রাধাবাই প্রতিজ্ঞা করছেন পঞ্চশীল নীতি পালন করবেন, যে নীতিটি  জীবনশৈলীর পাঁচটি মৌলিক নিদান যার দ্বারা অন্যের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকা যায়।

রাধা বোরহাডে তাঁর পঞ্চম ওভিটি ভীমরাও আম্বেদকরের স্ত্রী রমাবাই আম্বেদকরকে নিবেদন করছেন। রমাবাই তাঁর আরাধ্যা। তিনি বলেন যে রমাবাই ছিলেন সর্বজনবন্দিত জননী যিনি দলিত সমাজের মাঝেই জীবন অতিবাহিত করেন।

ইচ্ছে জাঁতায় ধম্ম সাজাই, রইল প্রথম গান।
তথাগত মোর নীলচে কাজর, অছুৎয়ের ভগবান।।

আরেকটি গান, রত্ন সমান ভীমরাজা তার সনে।
মাহাড় কুলের নীল শিমুলের বুদ্ধপাগল বনে।।

তিন ধাপে তাই ধম্ম জড়াই গৌতমী অভিজয়।
জাতকের বাণী মগ্ন ছোঁয়ানি জগতের আশ্রয়।।

পথিকের তরে পথের শিহরে পঞ্চশীলের তালে।
চারকোনা মোর গানের বাসর সংঘ প্রদীপ জ্বালে।।

পঞ্চমা সুর বৃষ্টি বিদূর জননী হে রমাবাই।
আরতি, আঁধার, নিয়ো গো আমার, রেখো তব সিঁথিকায়।।

PHOTO • Samyukta Shastri

পরিবেশিকা/গায়িকা: রাধা বোরহাডে

গ্রাম: মাজলগাঁও

পল্লী: ভীম নগর

তালুক: মাজলগাঁও

জেলা: বীড

লিঙ্গ: স্ত্রী

ছেলেমেয়ে: ৪ কন্যা

জাতি: নব বৌদ্ধ

তারিখ: এই সব তথ্য রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২ই এপ্রিল।


পোস্টার: আদিত্য দীপঙ্কর, শ্রেয়া কাত্যায়নী এবং সিঞ্চিতা মাজি

বাংলা অনুবাদ - জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Namita Waikar

ନମିତା ୱାଇକର ହେଉଛନ୍ତି ଜଣେ ଲେଖିକା, ଅନୁବାଦିକା ଏବଂ ପିପୁଲ୍ସ ଆର୍କାଇଭ ଅଫ୍‌ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆର ପରିଚାଳନା ନିର୍ଦ୍ଦେଶକ। ତାଙ୍କ ରଚିତ ଉପନ୍ୟାସ ‘ଦ ଲଙ୍ଗ ମାର୍ଚ୍ଚ’ ୨୦୧୮ରେ ପ୍ରକାଶ ପାଇଥିଲା।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ ନମିତା ୱାକର
PARI GSP Team

PARIର ‘ଗ୍ରାଇଣ୍ଡମିଲ ସଙ୍ଗସ’ ପ୍ରକଳ୍ପ ଟିମ୍‌: ଆଶା ଓଗାଲେ (ଅନୁବାଦ); ବର୍ଣ୍ଣାଡ ବେଲ (ଡିଜିଟାଇଜେସନ୍‌, ଡାଟାବେସ୍‌ ଡିଜାଇନ୍‌, ପ୍ରସ୍ତୁତି ଏବଂ ରକ୍ଷଣାବେକ୍ଷଣ); ଜିତେନ୍ଦ୍ର ମୈଡ଼ (ଅନୁଲେଖନ, ଅନୁବାଦନରେ ସହାୟତା); ନମିତା ୱାଇକର (ପ୍ରକଳ୍ପ ମୁଖ୍ୟ ଏବଂ କ୍ୟୁରେସନ); ରଜନୀ ଖାଲାଡ଼କର (ଡାଟା ଏଣ୍ଟ୍ରି) ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ PARI GSP Team
Photos and Video : Samyukta Shastri

ଲେଖକ ପରିଚୟ: ସମ୍ୟୁକ୍ତା ଶାସ୍ତ୍ରୀ ହେଉଛନ୍ତି ପିପୁଲସ୍ ଆର୍କାଇଭ ଅଫ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆର ବିଷୟ ସଂଯୋଜକ। ପୁନେର ସିମ୍ବିଓସିସ୍ ସେଣ୍ଟର ଫର ମିଡିଆ ଆଣ୍ଡ ମ୍ୟାନେଜମେଣ୍ଟ ଷ୍ଟଡିଜରୁ ସେ ସ୍ନାତକ ଡିଗ୍ରୀ ଏବଂ ଇଂରାଜୀ ସାହିଦ୍ୟରେ ଏସ୍ଏନ୍ଡିଟି ମହିଳା ବିଶ୍ୱବିଦ୍ୟାଳୟ, ମୁମ୍ବାଇରୁ ସ୍ନାତକୋତ୍ତର ଡିଗ୍ରୀ ହାସଲ କରିଛନ୍ତି।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ ସଂଯୁକ୍ତା ଶାସ୍ତ୍ରୀ
Editor and Series Editor : Sharmila Joshi

ଶର୍ମିଳା ଯୋଶୀ ପିପୁଲ୍ସ ଆର୍କାଇଭ୍‌ ଅଫ୍‌ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆର ପୂର୍ବତନ କାର୍ଯ୍ୟନିର୍ବାହୀ ସମ୍ପାଦିକା ଏବଂ ଜଣେ ଲେଖିକା ଓ ସାମୟିକ ଶିକ୍ଷୟିତ୍ରୀ

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ ଶର୍ମିଲା ଯୋଶୀ
Translator : Joshua Bodhinetra

ପିପୁଲ୍ସ ଆର୍କାଇଭ୍ ଅଫ୍ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆ (ପରୀ) ରେ ଭାରତୀୟ ଭାଷା କାର୍ଯ୍ୟକ୍ରମ, ପରୀଭାଷାର ବିଷୟବସ୍ତୁ ପରିଚାଳକ ଜୋଶୁଆ ବୋଧିନେତ୍ର। ସେ କୋଲକାତାର ଯାଦବପୁର ବିଶ୍ୱବିଦ୍ୟାଳୟରୁ ତୁଳନାତ୍ମକ ସାହିତ୍ୟରେ ଏମଫିଲ କରିଛନ୍ତି ଏବଂ ଜଣେ ବହୁଭାଷୀ କବି, ଅନୁବାଦକ, କଳା ସମାଲୋଚକ ଏବଂ ସାମାଜିକ କର୍ମୀ ଅଟନ୍ତି।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Joshua Bodhinetra