“ইস্কুলে যা-ই শিখি না কেন, তার সঙ্গে বাড়ির বাস্তবের দূর-দূরান্তেও কোনও সম্পর্ক নেই।”

ইস্কুল পড়ুয়া প্রিয়া (১৬) পার্বত্য রাজ্য উত্তরাখণ্ডের রাজপুত জাতির মানুষ। মাসিকের সময় দুর্লঙ্ঘ্য গণ্ডির ভিতর থাকতে হয় তাকে, নিয়মের এমনই কড়াকড়ি যে একচুলও এদিক-ওদিক হওয়ার জো নেই। প্রিয়ার কথায়, “মনে হয় যেন দুটো আলাদা দুনিয়ায় বাস করছি। বাড়িতে একঘরে হয়ে থাকি, হাজারো বাধা, হাজারো বিধান, অথচ স্কুলে গিয়ে শিখছি যে নারী ও পুরুষের মধ্যে নাকি কোনও পার্থক্যই নেই।”

গ্রামের বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূর নানকমাট্টা শহরে তার ইস্কুলটি। ১১দশ শ্রেণির এই শিক্ষার্থী রোজ সাইকেল চালিয়ে ইস্কুলে যাতায়াত করে। পড়াশোনায় বেশ ভালো, শুরুতে এই বিষয়ে নিজেই নিজেকে ওয়াকিবহাল করার চেষ্টা করেছিল। “বইপত্তর পড়ে ভেবেছিলাম এটা করব সেটা করব, পৃথিবীটা পাল্টে দেব। কিন্তু এসকল নিয়মকানুন যে কতটা অর্থহীন, সেটুকুও বুঝিয়ে উঠতে পারলাম না আমার বাড়ির লোকজনকে। দিনরাত্তির ওদের সঙ্গেই এক ছাদের তলায় রয়েছি, কিন্তু এই বাধা-নিষেধ যে আদতে ফাঁপা, সেটা আর ওদের মগজে ঢোকাতে পারলাম না,” বলল প্রিয়া।

বাধ্য হয়ে মা-বাবার সেকেলে চিন্তায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে বটে, তবে এই জাতীয় নিয়ম-নিষেধের প্রতি শুরুতেই যে গা-ঘিনঘিনে ভাবটা জন্মেছিল, তা আজ অবধি কাটেনি এই কিশোরীর।

পরিবারের সঙ্গে তরাই (নিচু ভূমি) অঞ্চলে থাকে প্রিয়া, কৃষিজাত উৎপাদনে এই রাজ্যে এক নম্বরে (জনগণনা ২০১১) রয়েছে এই এলাকাটি। সারা বছরে মোট তিনবার ফসল হয় — খরিফ, রবি ও জাইদ। চাষবাসের পাশাপাশি এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা পশুপালন করেন — গরু ও মোষের সংখ্যাই বেশি।

Paddy fields on the way to Nagala. Agriculture is the main occupation here in this terai (lowland) region in Udham Singh Nagar district
PHOTO • Kriti Atwal

ধানখেত, নাগালা যাওয়ার পথে। উধম সিং নগর জেলার তরাই (নিচু ভূমি) অঞ্চলে প্রধানত কৃষিকাজের ভরসাতেই বেঁচে আছে মানুষ

কাছেই আরেকটি রাজপুত ঘরে গিয়ে বিধার থেকে জানলাম, মাসিকের সময় কেমন বন্দিদশা চলে তার। “আগামী ছয়দিন নিজের কামরাতেই আটকে থাকব। ঘোরাফেরা বারণ [মা ও ঠাকুমার আদেশে]। যা-কিছু দরকার, মা নিয়ে আসে।”

নানকমাট্টার সন্নিকটে নাগালা গ্রাম। বিধার কামরার ভিতর দুটি খাট, একটি ড্রেসিং টেবিল ও একখানা আলমারি রয়েছে। অন্যান্য দিনের মতো নিজের (কাঠের) খাটে ঘুমোতে পারে না ১৫ বছরের কিশোরীটি, বরং মুখ বুজে পিঠ ছিঁড়ে যাওয়া ব্যথা সয়ে বাধ্য হয় চাদর-ঢাকা পলকা খাটিয়ায় শুতে, যাতে “পরিবারের কারও অস্বস্তি না হয়।”

এ হেন কারাবাস চলাকালীন বিধা ইস্কুলে যেতে পারে বটে, তবে ফিরেই সটান কামরায় চলে যেতে হয়। মায়ের মোবাইল আর খানকতক বই নিয়েই সময় কাটায় ১১দশ শ্রেণির এই হতভাগ্য পড়ুয়াটি।

কোনও মেয়ে বা মহিলা ঘরের লোকের থেকে আলাদা হয়ে বসতে শুরু করলে বা নিজের জিনিসপত্র একপাশে সরিয়ে রাখলেই সবাই বুঝে যায় যে তার মাসিকের সময় এসেছে। কার মাসিক চলছে, কার চলছে না, এটা বাড়ির বা বাইরের সব্বাই জেনে যায় — এই ব্যাপারটা সহ্য করতে পারে না বিধা। তার বক্তব্য, “সব্বাই জানতে পারে, দিব্যি আলোচনাও শুরু করে দেয়। গবাদি পশুর গায়ে বা ফলন্ত গাছে হাত দেওয়া বারণ তার [ঋতুমতীর], রান্নাবান্না বা খাবার বাড়াও চলে না, মায় সিতারগঞ্জ ব্লকে তার গাঁয়ের মন্দিরের প্রসাদটুকুও ছুঁতে মানা।”

উধম সিং নগরের জন-পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে মহিলাদের কীভাবে ‘অপবিত্র’ ও ‘অশুচি’ বলে দেখা হয়, বিশেষ করে লিঙ্গের অনুপাত যেখানে প্রতি ১০০০টি পুরুষ-পিছু মোটে ৯২০ জন নারী। এ রাজ্যের গড় পরিসংখ্যানের (৯৬৩) নিরিখে এটি সত্যিই বেশ দুশ্চিন্তাজনক। এছাড়া স্বাক্ষরতার হারেও পিছিয়ে আছেন মহিলারা — পুরুষের ক্ষেত্রে ৮২ শতাংশ ও নারীর ক্ষেত্রে কেবল ৬৫ শতাংশ (জনগণনা ২০১১)।

Most households in the region own cattle - cows and buffaloes. Cow urine (gau mutra) is used in several rituals around the home
PHOTO • Kriti Atwal

এখানকার অধিকাংশ ঘরেই পশুপালন করা হয় — মূলত গরু ও মোষ। গেরস্থালির হাজারটা কাজে ব্যবহৃত হয় গোমুত্র

উধম সিং নগরের জন-পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে মহিলাদের কীভাবে ‘অপবিত্র’ ও ‘অশুচি’ বলে দেখা হয়, বিশেষ করে লিঙ্গের অনুপাত যেখানে প্রতি ১০০০টি পুরুষ-পিছু মোটে ৯২০ জন নারী — অর্থাৎ এ রাজ্যের গড় পরিসংখ্যানের (৯৬৩) চেয়েও কম

মাসিক ঋতুস্রাবের সময়ে খাওয়াদাওয়ার জন্য একটা করে থালা, ইস্পাতের গামলা ও চামচ রাখা আছে বিধার খাটিয়ার নিচে, এগুলো ছাড়া অন্য কিছু ইস্তেমাল করার অনুমতি নেই তার। চতুর্থ দিনে কাকভোরে উঠে এগুলি ধুয়েমেজে রোদে শুকোতে দেয় সে। “তারপর আমার মা এসে গোমুত্রের ছিটে দিয়ে আবার করে সব ধুয়ে-টুয়ে রান্নাঘরে রাখে। পরের দুটো দিন অন্য থালাবাসন দেওয়া হয় আমায়,” নিয়মের এক আজব বর্ণনা পেলাম কিশোরীটির থেকে।

“ওই দিনগুলোর জন্য মা আমায় যা পরতে দেয়” সেসব বাদে অন্য কিছু জামাকাপড় গায়ে ঠেকানো বা ঘরের বাইরে ঘোরাঘুরি করার কোনও অধিকার থাকে না বিধার। উক্ত দুই প্রস্থ কাপড় কেচে বাড়ির পিছনের দিকে শুকোতে দেওয়া হয়, অন্য পোশাকের সঙ্গে ছোঁয়াছুঁয়ি হয়ে গেলেই সর্বনাশ!

বিধার বাবা সেনাবাহিনিতে কর্মরত, ১৩ সদস্যের পুরো সংসারটা একাহাতে সামলান বিধার মা। এতগুলো লোকের মাঝে মেয়েকে একঘরে করে রাখাটা যেমন মুশকিল, ঠিক তেমনই অস্বস্তিকর বিধার দুই ছোটো ভাইকে পুরোটা বোঝানো। “বাড়ির লোকজন মিলে আমার দুই ভাইকে বুঝিয়েছে যে এটা একধরনের অসুখ, যে কারণে মেয়েদের আলাদা ভাবে থাকতে হয়। কেউ যদি ভুলক্রমেও আমায় ছুঁয়ে দেয়, সেও ‘অশুচি’ হয়ে যাবে, তখন গোমুত্রের ছিটে না দেওয়া অবধি সে আর ‘পবিত্র’ হতে পারবে না।” এই ছ’টা দিন বিধার সংস্পর্শে সে যে জিনিসই আসুক না কেন, তড়িঘড়ি ছড়ানো হয় গোমুত্র। আসলে বাড়িতে চার-চারটে গরু আছে তো, তাই দরকার পড়লেই হাতের কাছে মুত্র মেলে সর্বদা।

নিয়মের বজ্র আঁটুনি একটুখানি শিথিল হয়েছে বটে এ সমাজে, তবে সে নেহাতই নামমাত্র। তাই ২০২২ সালে বিধাকে আলাদা একটা খাটে শুতে হয় বটে, কিন্তু এই একই গ্রামের বছর সত্তরের বীণা জানালেন কেমনভাবে মাসিকের সময় তাঁকে গোয়ালঘরে আটকে রাখা হত। “বসতে-টসতে হলে মাটির উপর পাইন গাছের পাতা বিছিয়ে রাখতাম,” মনে করে বললেন প্রবীণা।

আরেক প্রবীণার স্মৃতিচারণে উঠে এল, “আমায় ফীকি [চিনি-ছাড়া] চায়ের সঙ্গে শুকনো খটখটে রুটি খেতে হত। কিংবা গরুমোষকে যেসব খাওয়াই, সেরকম মোটা দানার শস্য পিষে রুটি বানিয়ে দিত। কখনও তো ভুলেই যেত আমার কথা, তখন পেটে কিল মেরে পড়ে থাকতাম।”

The local pond (left) in Nagala is about 500 meters away from Vidha's home
PHOTO • Kriti Atwal
Used menstrual pads  are thrown here (right)  along with other garbage
PHOTO • Kriti Atwal

নাগালার স্থানীয় পুকুরটির (বাঁদিকে) থেকে বিধার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫০০ মিটার। অন্যান্য আবর্জনার সঙ্গে ইস্তেমাল করা স্যানিটারি প্যাডও (ডানদিকে) ফেলা হয় এখানে

অধিকাংশ মহিলা তথা পুরুষের ধারণা, যেহেতু এসকল নিয়মকানুন ধর্মীয় গ্রন্থে লেখা আছে, তাই আঙুল তোলার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। জনাকয় মহিলা বললেন বটে যে এসবের জন্য বড্ড লজ্জা লাগে, তবে নিজেদের একঘরে না করলে পাছে ঠাকুর-দেবতারা রুষ্ট হন, তাই বিনা বাক্যব্যয়ে বন্দিদশা মেনে নেন তাঁরা।

এই গ্রামেই থাকেন বিনয়। জোয়ান এই ছেলেটি কালেভদ্রে এমন কোনও মহিলার সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছেন যাঁর মাসিক চলছে। ‘মাম্মি অছুৎ হো গয়ি হ্যায়’ [মা তো এখন অস্পৃশ্য হয়ে গেছে] শুনেই শুনেই বড়ো হয়েছেন তিনি।

স্ত্রীর সঙ্গে নানকমাট্টা শহরে একটি কামরা ভাড়া করে থাকেন ২৯ বছর বয়সী বিনয়, দেশের বাড়ি উত্তরাখণ্ডের চম্পাওয়াত জেলায়। আজ বছর দশেক আগে একটি বেসরকারি ইস্কুলে শিক্ষকতার কাজ পেয়ে এখানে এসে বাসা বেঁধেছেন। তাঁর কথায়, “প্রক্রিয়াটি যে আদতে প্রাকৃতিক, একথা ঘুণাক্ষরেও কেউ জানায় না আমাদের। ছোটো থেকেই যদি এসব বাধা-নিষেধ বন্ধ করে দিই, তাহলে হাজার মাসিক হলেও কোনও মেয়ে বা মহিলাকে আর নিচু চোখে দেখবে না ছেলেরা।”

স্যানিটারি প্যাড কেনা বা ব্যবহারের পর সেগুলি ফেলা — দুটোই বেশ ঝকমারির। সবেধন নীলমণি একটি দোকান আছে বটে গাঁয়ে, কিন্তু তারা আদৌ এ বস্তু মজুত করেছে কিনা তা বলা মুশকিল। উপরন্তু ছবির মতো জোয়ান মেয়েরা প্যাড কিনতে গেলে দোকানদার নাকি বাঁকা চোখে তাকায়। বাড়ি ফিরেও শান্তি নেই, ইতিউতি চাইতে থাকা দৃষ্টির আড়াল করে রাখতে হবে। শেষে ইস্তেমাল করার পর ৫০০ মিটার দূরে একটি খালের ধারে যাও, চট করে দেখে নাও কেউ নজর দিচ্ছে কিনা, তারপর ঝটিতি ছুঁড়ে ফেলো জলের মধ্যে।

প্রসবকালেও পিছু ছাড়ে না বন্দিদশা

সদ্য সদ্য জন্ম দিয়েছেন যাঁরা, ‘অপবিত্রতার’ কলঙ্ক পিছু ছাড়ে না তাঁদেরও। লতার সন্তানেরা আজ প্রত্যেকেই কিশোর-বয়সে পা দিয়েছে, তবে প্রসবের কথা আজও ভোলেননি তিনি, “৪-৬ দিন [ঋতুমতী মেয়ে ও মহিলাদের জন্য] তো কোন ছার, টানা ১১ দিন বাড়ির আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করে রাখা হয় নতুন মায়েদের। একেক সময় তো ১৫ দিন অবধি গড়িয়ে যায়, বাচ্চাটার নামকরণের পার্বণ না চোকা পর্যন্ত বন্দি থাকি আমরা।” ১৫ বছরের একটি মেয়ে ও ১২ বছরের একটি ছেলে আছে লতার। নতুন মায়েরা যে খাটে শোয়, গোবরের দাগ কেটে সেটা নাকি বাড়ির অন্যদের থেকে আলাদা করা হয়, জানালেন তিনি।

Utensils (left) and the washing area (centre) that are kept separate for menstruating females in Lata's home. Gau mutra in a bowl (right) used to to 'purify'
PHOTO • Kriti Atwal
Utensils (left) and the washing area (centre) that are kept separate for menstruating females in Lata's home. Gau mutra in a bowl (right) used to to 'purify'
PHOTO • Kriti Atwal
Utensils (left) and the washing area (centre) that are kept separate for menstruating females in Lata's home. Gau mutra in a bowl (right) used to to 'purify'
PHOTO • Kriti Atwal

মাসিক চলাকালীন বাকিদের থেকে আলাদা বাসন (বাঁদিকে) ও বাসন মাজার জায়গা (মাঝখানে) ব্যবহার করতে বাধ্য হন লতার বাড়ির মহিলারা। বাটিভরা গোমুত্র, এর ছিটে না দিলে নাকি ‘পবিত্র’ হওয়া যায় না

খাতিমা ব্লকের ঝঙ্কট গ্রামে থাকতেন তখন, স্বামীর একান্নবর্তী পরিবারের সঙ্গে, ফলত এই জাতীয় জঘন্য নিয়ম মাথা পেতে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। তারপর স্বামীর সঙ্গে আলাদা করে সংসার পাতার সময় দিনকতক বন্ধ ছিল এসব কাণ্ডকারখানা। রাজনীতিতে স্নাতকোত্তর লতার কথায়, “বছর কয়েক হতে চলল, আবার করে এসব প্রথায় বিশ্বাস জন্মেছে আমাদের। মাসিক চলাকালীন কোনও মেয়ে যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে লোকে বলে যে দেবদেবীরা নাকি খুশি নয়। যাবতীয় বিপদ-আপদ সব নাকি এসকল বিধিনিষেধ না মানার জন্যই হচ্ছে।” নিজে যে আবার করে এ প্রথার ফাঁদে পা দিয়েছেন, এ সমস্ত বুলি দিয়ে বোধহয় সেটাই ঢাকার চেষ্টা করছিলেন।

কোনও বাড়িতে নতুন বাচ্চা জন্মালে তাদের হাত থেকে এক গেলাস জল অবধি কেউ খেতে চায় না এই গ্রামে। গোটা পরিবারটিকেই ‘অপবিত্র’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়, যদিও তার সঙ্গে বাচ্চাটির লিঙ্গের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রসূতি বা নবজাতক — এদের একজনকেও ছুঁয়ে ফেললে গোমুত্রের ছিটে দরকার, নয়ত শুচিতা রক্ষা পাবে না। সাধারণত ১১তম দিনে, নামকরণের পার্বণের ঠিক আগে মা ও সন্তান দুজনকেই স্নান করিয়ে গোমুত্রে দিয়ে ধোওয়ানো হয়।

১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয় লতার বৌদি সবিতার (৩১), তিনিও রেহাই পাননি উপরোক্ত আচারগুলির থেকে। তাঁর মনে আছে, বিয়ের প্রথম বছরে খেতে বসলে শাড়ি ছাড়া আর কিছু পরা চলত না — আসমান ভেঙে পড়লেও অন্তর্বাস পরা বারণ। “প্রথম বাচ্চাটা হওয়ার পর থেকে এসব বন্ধ করে দিয়েছি,” এমনটা বললেন ঠিকই, তবে কদিন বাদেই যে ঋতুস্রাব শুরু হলে মেঝেতে শোওয়া আরম্ভ করেছেন, স্বীকার করলেন সেটাও।

এমনতর প্রথা যে বাড়িতে চলে, সে পরিবারের ছেলেরা আদ্যোপান্ত বিভ্রান্তি নিয়ে বড়ো হয়। বারকিডান্ডির নিখিল দশম শ্রেণির পড়ুয়া। গতবছর ঋতুচক্রের ব্যাপারে পড়াশোনা করেছে সে, পুরোটা বোঝেনি, তবে, “এটুকু বুঝেছি যে মহিলাদের একঘরে করে রাখাটা অযৌক্তিক।” কিন্তু বাড়িতে এসব নিয়ে মুখ খুললেই বড়োদের বকুনি খেতে হবে, এটাও জানাল সে।

The Parvin river (left) flows through the village of Jhankat and the area around (right) is littered with pads and other garbage
PHOTO • Kriti Atwal
The Parvin river (left) flows through the village of Jhankat and the area around (right) is littered with pads and other garbage
PHOTO • Kriti Atwal

ঝঙ্কট গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা পারভিন নদীর (বাঁদিকে) দুই পাড়ে (ডানদিকে) ছড়ানো রয়েছে ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড ও বিবিধ জঞ্জাল

এই একই ভয়ের কথা বলছিল দিব্যাংশ (১২)। সুনখারি গ্রামের এই স্কুলপড়ুয়া ছেলেটি দেখেছে, ফি মাসে টানা পাঁচদিন তার মা কেমন দূরে দূরে তফাত হয়ে বসে। আজ পর্যন্ত কোনও কারণ খুঁজে পায়নি সে, “ব্যাপারটা এতটাই গা-সওয়া হয়ে গেছে যে মনে হয় এটা নিশ্চয় সমস্ত মহিলা ও মেয়েদের সঙ্গেই হয়ে থাকে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, এটা একদম ঠিক নয়। বড়ো হলে আমিও কি এসব আচার-বিচার মানতে শুরু করব? নাকি রুখে দাঁড়াব?”

অথচ এক্কেবারে উল্টো সুর শোনা গে'ল ওই একই গ্রামের নরেন্দর নামের এক প্রবীণ ব্যক্তির মুখে: “উত্তরাঞ্চল [উত্তরাখণ্ডের পুরানো নাম] হল দেবতাদের বাসস্থান। তাই আচার-বিচারের গুরুত্ব এখানে বিশাল।”

তাঁর থেকে জানতে পারলাম যে এককালে নাকি ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগেই, মোটে ৯-১০ বছর বয়সেই বিয়েথা হয়ে যেত মেয়েদের। “একবার যদি মাসিক আরম্ভ হয়, তাহলে কন্যাদান করবটা কী করে শুনি?” অর্থাৎ বরের পায়ে ‘উপঢৌকন’ স্বরূপ মেয়েদের ‘দান’ করা হয় — বিবাহ সংক্রান্ত এমনই এক আচারের কথা বলতে চাইছেন নরেন্দর। “যেদিন থেকে সরকার বিয়ের বয়স পাল্টে ২১ করে দিয়েছে, সেদিন থেকে আমরা আর সরকার বাহাদুরের আইনকানুন মানি না।”

মূল প্রতিবেদনটি হিন্দিতে লেখা। পরিচয় গোপন রাখতে নামগুলি বদলে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রবন্ধটি লেখায় সাহায্য করেছেন রোহন চোপড়া, পারি এডুকেশন টিমের তরফ থেকে তাঁর প্রতি ধন্যবাদ।

পারি এবং কাউন্টার মিডিয়া ট্রাস্টের গ্রামীণ ভারতের কিশোরী এবং তরুণীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দেশব্যাপী রিপোর্টিং প্রকল্পটি পপুলেশন ফাউন্ডেশন সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য প্রান্তবাসী এই মেয়েদের এবং সাধারণ মানুষের স্বর এবং যাপিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই অত্যন্ত জরুরি বিষয়টিকে ঘিরে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।

নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected]– এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] – এই আইডিতে।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Kriti Atwal

କ୍ରିତି ଅଟୱାଲ୍‌ ହେଉଛନ୍ତି ଉତ୍ତରାଖଣ୍ଡର ଉଧମ ସିଂହ ନଗର ଜିଲ୍ଲାର ନାନକମତ୍ତା ପବ୍ଲିକ୍‌ ସ୍କୁଲ୍‌ର ୧୨ଶ ଶ୍ରେଣୀର ଜଣେ ଛାତ୍ରୀ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Kriti Atwal
Illustration : Anupama Daga

ଅନୁପମା ଡାଗା ନିକଟରେ ଲଳିତ କଳାରେ ସ୍ନାତକ ଉତ୍ତୀର୍ଣ୍ଣ ହୋଇଛନ୍ତି ଏବଂ ତାଙ୍କର ଚିତ୍ରଣ ଓ ମୋସନ ଡିଜାଇନ୍ ପ୍ରତି ଆଗ୍ରହ ରହିଛି । ସେ ଲେଖା ଓ ଛବି ମାଧ୍ୟମରେ କାହାଣୀ କହିବାର ନୂଆ ପଦ୍ଧତି ଅନ୍ୱେଷଣ କରିବାକୁ ଭଲ ପାଆନ୍ତି।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Anupama Daga
Editor : PARI Education Team

ଆମେ ଗ୍ରାମୀଣ ଭାରତ ଏବଂ ବଞ୍ଚିତ ଲୋକମାନଙ୍କ କାହାଣୀକୁ ମୁଖ୍ୟସ୍ରୋତର ଶିକ୍ଷା ପାଠ୍ୟକ୍ରମ ମଧ୍ୟକୁ ଆଣିଥାଉ। ନିଜ ଆଖପାଖର ପ୍ରସଙ୍ଗ ଗୁଡ଼ିକ ଉପରେ ରିପୋର୍ଟ ପ୍ରସ୍ତୁତ କରିବା ଏବଂ ଲେଖିବାକୁ ଚାହୁଁଥିବା ଯୁବପିଢ଼ିଙ୍କ ସହିତ ମଧ୍ୟ ଆମେ କାର୍ଯ୍ୟ କରିଥାଉ, ସେମାନଙ୍କୁ ସାମ୍ବାଦିକତା ଶୈଳୀରେ ଲେଖିବା ପାଇଁ ମାର୍ଗଦର୍ଶନ କରୁ ଓ ତାଲିମ ଦେଇଥାଉ। ଛୋଟ ଛୋଟ ପାଠ୍ୟକ୍ରମ, ଅଧିବେଶନ ଏବଂ କର୍ମଶାଳା ମାଧ୍ୟମରେ ଆମେ ଏହା କରିଥାଉ। ଏଥିସହିତ ସାଧାରଣ ଲୋକଙ୍କ ଦୈନନ୍ଦିନ ଜୀବନକୁ ଭଲ ଭାବେ ବୁଝିବା ଲାଗି ଛାତ୍ରଛାତ୍ରୀଙ୍କୁ ସକ୍ଷମ କରିବା ନିମନ୍ତେ ଆମେ ପାଠ୍ୟଖସଡ଼ା ଡିଜାଇନ୍ କରିଥାଉ।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ PARI Education Team
Translator : Joshua Bodhinetra

ପିପୁଲ୍ସ ଆର୍କାଇଭ୍ ଅଫ୍ ରୁରାଲ ଇଣ୍ଡିଆ (ପରୀ) ରେ ଭାରତୀୟ ଭାଷା କାର୍ଯ୍ୟକ୍ରମ, ପରୀଭାଷାର ବିଷୟବସ୍ତୁ ପରିଚାଳକ ଜୋଶୁଆ ବୋଧିନେତ୍ର। ସେ କୋଲକାତାର ଯାଦବପୁର ବିଶ୍ୱବିଦ୍ୟାଳୟରୁ ତୁଳନାତ୍ମକ ସାହିତ୍ୟରେ ଏମଫିଲ କରିଛନ୍ତି ଏବଂ ଜଣେ ବହୁଭାଷୀ କବି, ଅନୁବାଦକ, କଳା ସମାଲୋଚକ ଏବଂ ସାମାଜିକ କର୍ମୀ ଅଟନ୍ତି।

ଏହାଙ୍କ ଲିଖିତ ଅନ୍ୟ ବିଷୟଗୁଡିକ Joshua Bodhinetra