১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বিকেল ৩টে বাজতেই রংচঙে বর্ণাঢ্য পোশাকে মধ্যদিনের রোদ্দুর মেখে সবর থেকে মাইসুরু টাউন হলের উদ্দেশে পথে নামলেন প্রায় ৪০০ জন — উপলক্ষ্য এই শহরের দ্বিতীয় প্রাইড মার্চ বা গৌরবযাত্রা।

এই শহরেই বেড়ে ওঠা শাইকজারা বললেন, “এখানে [প্রাইড মার্চে] আসতে পেরে আমি গর্বিত। মাইসুরু সত্যিই বদলে গেছে। গত ৫-৬ বছর ধরে ক্রস-ড্রেসিং (অপর লিঙ্গের বেশভূষা পরা) করছি, আগে তো লোকে কথায় কথায় কাঠগোড়ায় তুলত এসব বলে যে ‘কোন দুঃখে ছেলেটা অমন মেয়েদের জামাকাপড় পরেছে রে?’ কিন্তু আজ মানুষ অনেকটাই উদার হতে শিখেছে। আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত।” ২৪ বছরের শাইকজারা বেঙ্গালুরুর একটি কল-সেন্টারে কর্মরত। তাঁর মতো অনেকেই কর্ণাটকের অন্যান্য প্রান্ত তথা গোয়া ও তামিলনাড়ু থেকে সমর্থন জানাতে এসেছেন।

এ গর্বযাত্রার মধ্যমণি ছিল দেবী ইয়েল্লাম্মার (অপর নাম রেণুকা) একটি সোনালি মূর্তি। প্রায় দশ কিলো ওজনের মূর্তিটি মাথায় চাপিয়ে হাঁটছিলেন অংশগ্রহণকারীরা, তাঁদের গোল করে ঘিরে গানবাজনায় মেতে উঠেছেন ড্রামবাদক ও নৃত্যশিল্পীরা।

PHOTO • Sweta Daga
PHOTO • Sweta Daga

বাঁদিকে: সাকিনা (বাঁদিকে) ও কুণালের (ডানদিকে) সঙ্গে প্রাইড উদযাপনে মেতেছেন শাইকজারা (মাঝখানে)। ‘এখানে [প্রাইড মার্চে] আসতে পেরে আমি গর্বিত। মাইসুরু সত্যিই বদলে গেছে,’ জানালেন শাইকজারা। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এর গৌরবযাত্রায় অংশ নিতে এসেছেন গরগ-নিবাসী ছাত্র থিপ্পেশ আর.

PHOTO • Sweta Daga

মাথায় করে দেবী ইয়েল্লাম্মার একটি দশ কিলো ওজনের সোনালি মূর্তি বয়ে নিয়ে চলেছেন প্রাইড যাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা

রূপান্তরকামী গোষ্ঠীর সঙ্গে কর্মরত নাম্মা প্রাইড ও সেভেন রেইনবোজ নামক দুটি সংস্থার সহযোগিতায় আয়োজিত হয়েছিল এই প্রাইড মার্চটি। “এবছর আমাদের দ্বিতীয় পদযাত্রা ছিল, একদিনেই পুলিশের থেকে ইজাজত পেয়ে গেছি, গতবছর অনুমতি পেতে পেতে দু’সপ্তাহ ঘুরে গিয়েছিল,” প্রণতি আম্মা জানালেন, ক্যুইয়ার সমাজের সবাই তাঁকে এই নামেই ডাকে। সেভেন রেইনবোজের প্রতিষ্ঠাতা প্রণতি আম্মা ৩৭ বছর ধরে লিঙ্গ ও যৌনতা ঘিরে কাজ করে চলেছেন সারা ভারত জুড়ে।

“পুলিশের সঙ্গে আরও ভালোভাবে আদানপ্রদান করতে শিখছি আমরা। মাইসুরুতে আজও এমন বহু লোক আছে আমরা যাদের চক্ষুশূল, আমরা গায়েব হয়ে গেলে ওরা খুশি হয়, তবে আমরা এটা [প্রাইড] বছর বছর আরও বড়ো আর বৈচিত্র্যময় করে তুলতে চাই,” তিনি বললেন।

এক কিলোমিটার লম্বা মিছিলটি শহরের ব্যস্ততম বাজারের একটির মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়েছিল। গাড়িঘোড়া সরানোয় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল স্থানীয় পুলিশ, যাতে উদযাপন বাধাপ্রাপ্ত না হয়। “এই সম্প্রদায়কে আমরা সম্মান করি। ওঁদের সঙ্গে রাস্তায় হাঁটি যাতে কোনও ঝুটঝামেলা না হয়। আমরা এঁদের [রূপান্তরকামী] পাশে আছি,” সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর বিজয়েন্দ্র সিং বললেন।

“ভারতে রূপান্তরকামী মহিলাদের অবস্থানটা খুবই জটিল একটা পরিসরে রয়েছে। জাদু ক্ষমতার মতো অতিকথার জন্য ওঁদের খানিকটা সাংস্কৃতিক সুরক্ষা দেওয়া হয় বটে, তবে হেনস্থা ও বৈষম্যের শিকারও হন তাঁরা,” পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী তথা ক্যুইয়ার পুরুষ পরিচয়ধারী দীপক ধনঞ্জয় জানাচ্ছেন, “স্থানীয় [ক্যুইয়ার] সমাজ মানুষকে শিক্ষিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সামাজিক মানসিকতা রাতারাতি ভাঙা না-মুমকিন, তবে এই জাতীয় গৌরবযাত্রা যখন দেখি নির্ঝঞ্ঝাটে নির্বিবাদে এগিয়ে চলেছে, বিশেষ করে ছোটো ছোটো শহরে, তখন সত্যিই মনে আশা জাগে।”

এই প্রাইড মার্চের শরিক প্রিয়াংক আশা শুকানন্দ, (৩১) বলছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বৈষম্য আর হিংসার শিকার হয়েছিলাম, তখন মনস্থির করি যে আমার অধিকার কায়েম ও সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমি লড়ে যাব। যতকটা প্রাইড যাত্রায় পথে নেমেছি, তা আমি ও আমার মতো যাঁরা অনুরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করছেন তাঁদের কথা মনে করিয়েছে, তাই ওঁদের জন্যই মিছিলে হাঁটি।” বেঙ্গালুরু-নিবাসী প্রিয়াংক একজন বিশেষ শিক্ষাকর্মী (স্পেশ্যাল এডুকেটর) ও রন্ধনশিল্পী। তিনি আরও জানালেন, “মাইসুরুর এলজিবিটি সমাজ আদতে যে কতখানি শক্তিশালী সেটা স্বচক্ষে দেখলাম, এটা খুব ভরসার কথা।”

PHOTO • Sweta Daga

রূপান্তরকামীদের নিশান উড়িয়ে নন্দিনী জানালেন, ‘বেঙ্গালুরু থেকে এসেছি, কারণ আমার মনে হয় যেখানে যখন যাওয়া সম্ভব, তক্ষুনি সেখানে যাওয়া উচিত। সঙ্গে বেশ মজাও হয়’

PHOTO • Sweta Daga

গাড়িঘোড়া সরানোয় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল স্থানীয় পুলিশ, যাতে উদযাপন বাধাপ্রাপ্ত না হয়। ‘এই সম্প্রদায়কে আমরা সম্মান করি। ওঁদের সঙ্গে রাস্তায় হাঁটি যাতে কোনও ঝুটঝামেলা না হয়। আমরা এঁদের [রূপান্তরকামী] পাশে আছি,’ সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর বিজয়েন্দ্র সিং বললেন

PHOTO • Sweta Daga

নাম্মা প্রাইড ও সেভেন রেইনবোজের দ্বারা আয়োজিত এই মিছিলের দরজা সব্বার জন্য খোলা ছিল — এলজিবিটিকিউআইই+ মানুষজন ও তাঁদের মিত্র উভয়ই

PHOTO • Sweta Daga

মাইসুরুর অটোচালক আজার (বাঁদিকে) ও ক্যুইয়ার পুরুষ পরিচয়ধারী তথা পেশাদাল মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী দীপক ধনঞ্জয়। আজারের কথায়: ‘এরকম জিনিস আমি কোনদিনও দেখিনি এর আগে’

PHOTO • Sweta Daga

বাঁদিক থেকে: প্রিয়াংক, দীপক, জামীল, আদিল পাশা ও আক্রম জান। জামীল, আদিল পাশা ও আক্রম স্থানীয় ব্যবসায়ী, এ মহল্লায় তিনজনেরই কাপড়ের দোকান রয়েছে। ‘সত্যি বলতে কি আমরা এঁদের [রূপান্তরকামী মানুষজন] বুঝি না, তবে ঘেন্নাও করি না। ওঁদেরও তো হক থাকা উচিত’

PHOTO • Sweta Daga

উদযাপনের মধ্যমণি ছিল দেবী ইয়েল্লাম্মার (রেণুকা নামেও পরিচিত) এই মূর্তিটি

PHOTO • Sweta Daga

রংচঙে বর্ণাঢ্য পোশাক চড়িয়ে সবর থেকে মাইসুরু টাউন হলে হেঁটে গেলেন মিছিলে অংশগ্রহণকারী মানুষজন

PHOTO • Sweta Daga

যাত্রায় নৃত্যরত বেঙ্গালুরুর মনোজ পূজারী

PHOTO • Sweta Daga

এক কিলোমিটার লম্বা পদযাত্রাটি শহরের ব্যস্ততম বাজারের একটির মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়েছিল

PHOTO • Sweta Daga

প্রাইড যাত্রার শরিকেরা

PHOTO • Sweta Daga

টাউন হলের দিকে হেঁটে চলেছে ক্যুইয়ার মানুষের ভিড়

PHOTO • Sweta Daga

নিজের পোশাক নিজেই সেলাই করে বানিয়েছেন বেগম সোনি। ডানা দুটো ক্যুইয়ার আত্মপরিচিতির স্বাধীনতার প্রতীক, বললেন তিনি

PHOTO • Sweta Daga

গৌরবধ্বজা

PHOTO • Sweta Daga

ভিড়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হেঁটে চলেছে একদল ড্রামবাদক। ‘আমার বেরাদরিতে এমন অনেক আক্কা (বোন) রয়েছেন যাঁরা রূপান্তরকামী, যেমন আমার নিজের বোন। আমরা এঁদের পাশে আছি, কারণ এঁরাও আমাদের সমাজের অংশ,’ নন্দীশ আর. জানাচ্ছেন

PHOTO • Sweta Daga

মাইসুরু টাউন হলে গিয়ে সমাপ্ত হল প্রাইড মার্চ

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Sweta Daga

Sweta Daga is a Bengaluru-based writer and photographer, and a 2015 PARI fellow. She works across multimedia platforms and writes on climate change, gender and social inequality.

यांचे इतर लिखाण श्वेता डागा
Editor : Siddhita Sonavane

Siddhita Sonavane is Content Editor at the People's Archive of Rural India. She completed her master's degree from SNDT Women's University, Mumbai, in 2022 and is a visiting faculty at their Department of English.

यांचे इतर लिखाण Siddhita Sonavane
Translator : Joshua Bodhinetra

जोशुआ बोधिनेत्र यांनी जादवपूर विद्यापीठातून तुलनात्मक साहित्य या विषयात एमफिल केले आहे. एक कवी, कलांविषयीचे लेखक व समीक्षक आणि सामाजिक कार्यकर्ते असणारे जोशुआ पारीसाठी अनुवादही करतात.

यांचे इतर लिखाण Joshua Bodhinetra