সেই রাতে মীনা ঘুমোননি। তাঁর বাড়ির ভেতর বৃষ্টির জল ঢুকে পড়েছিল। পাতলা ত্রিপল জলের তোড় সামলাতে না পেরে ভেঙে পড়েছিল কয়েক মিনিটের মধ্যে। একটা বন্ধ দোকানের সামনে আশ্রয় নিতে ছুটেছিলেন মীনা এবং তাঁর পরিবার।

গোটা রাত [জুলাইয়ের গোড়ার দিকে] বৃষ্টি না থামা অবধি আমরা ওখানেই বসেছিলাম,” বড়ো রাস্তার ধারে একটা সাদা ছাপা কাগজের ওপর বিশ্রাম নিতে নিতে একদিন দুপুরবেলা বলেন মীনা, পাশে ঘুমিয়ে আছে দু’বছরের মেয়ে শামা।

সেই বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরে মীনা ফিরে এসে আবার তাঁদের বাসস্থান তৈরি করেছিলেন। ততক্ষণে তাঁদের অনেক জিনিস – বাসনপত্র, শস্য, স্কুলের বই – ভেসে গেছে।

“আমাদের মাস্কগুলোও ভেসে গেছিল,” বলল মীনা। লকডাউনের প্রথম দিকে স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া সবুজ কাপড়ের মাস্ক। “মাস্ক পরেই বা কী হবে?” তাঁর সংযোজন। “আমরা তো এমনিতেই মরা মানুষের মতো, করোনা আমাদের কী করে তাতে কারই বা মাথাব্যথা?”

মীনা (তিনি পদবি ব্যবহার করেন না) এবং তাঁর পরিবার – স্বামী এবং চার সন্তান – তাঁদের এই স্বল্প সম্পত্তিকে ভেসে যেতে দেখতে অভ্যস্ত। এইবছর বর্ষার গোড়া থেকে একাধিকবার হয়েছে এবং উত্তর মুম্বইয়ের পূর্ব কান্দিভালি শহরতলিতে তাঁদের ছোট্ট ঘরের ওপর প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হলে প্রতিবছরই এর পুনরাবৃত্তি ঘটে।

তবে গতবছর অবধি, প্রচন্ড বৃষ্টি পড়লে, এরা কাছে একটি নির্মাণ ক্ষেত্রতে ছুটে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারত। এখন তা বন্ধ। বছর তিরিশের মীনা বলছেন, “আমরা এই বৃষ্টিতে অভ্যস্ত, কিন্তু এইবার করোনা বিষয়টাকে আমাদের জন্য কঠিন করে দিয়েছে। আমরা ওই বাড়িগুলোর কাছে গিয়ে অপেক্ষা করতাম। দারোয়ান আমাদের চিনত। এমনকি দোকানদারেরাও দুপুরবেলা দোকানের ঠিক বাইরে আমাদের বসতে দিত। কিন্তু এখন আমাদের কাছাকাছি হাঁটতেও দেয় না।”

During the lockdown, Meena and her family – including her daughter Sangeeta and son Ashant – remained on the pavement, despite heavy rains
PHOTO • Aakanksha
During the lockdown, Meena and her family – including her daughter Sangeeta and son Ashant – remained on the pavement, despite heavy rains
PHOTO • Aakanksha

লকডাউনের মধ্যে মীনা আর তাঁর পরিবার – তাঁর মেয়ে সংগীতা এবং ছেলে আশান্ত-সহ – ভারী বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও ফুটপাথেই থেকে যান

বৃষ্টি পড়লে তাই তাঁরা সাধারণত ‘বাড়ি’তেই থাকেন – বাড়ি মানে দুটো গাছ আর একটা দেওয়ালের মাঝখানে টাঙানো একটা পাতলা, সাদা ত্রিপল, তার মাঝখানে দাঁড় করানো একটা মোটা বাঁশ ছাউনিটাকে ধরে রেখেছে। গাছগুলোতে ঝোলানো আছে কয়েকটা প্লাস্টিকের বস্তা, কাপড়ের পুঁটলি, আর একটা কালো ক্যানভাসের স্কুল ব্যাগ – ভেতরে রয়েছে জামাকাপড়, খেলনা, আর অন্য কিছু সামগ্রী। কাছেই একটা দড়িতে মেলা আছে ভেজা জামা আর মাটিতে পড়ে আছে এক্কেবারে ভিজে যাওয়া একটা রংচটা খয়েরি তোষক।

মীনার সঙ্গী সিদ্ধার্থ নারভাদের বাড়ি ছিল মহারাষ্ট্রের জালনা জেলার সারওয়াদি গ্রামে। “আমি যখন খুব ছোটো, তখন আমার বাবা তাঁর অল্প জমি বেচে দিয়ে কাজের জন্য মুম্বই চলে আসেন,” জানালেন ৪৮ বছর বয়সী সিদ্ধার্থ, “পরে আমি মীনার সঙ্গে থাকতে শুরু করি।”

একটা নির্মাণক্ষেত্রে সিমেন্ট প্লাস্টারের কাজ করে দিনে ২০০ টাকা রোজগার করতেন তিনি। “লকডাউন শুরু হল, ওটাও বন্ধ হয়ে গেল,” বলছেন সিদ্ধার্থ। সেই থেকে কন্ট্রাক্টর তাঁকে ফোনও করেনি, তিনি ফোন করলে তোলেওনি।

কাছেই একটা বিল্ডিং-এ গৃহকর্মীর কাজ করত মীনা। কিন্তু এই বছর জানুয়ারিতে সেই বাড়ির বাসিন্দারা বাড়ি বদলানোর পর থেকে তাঁর কাজ নেই। তখন থেকেই কাজ খুঁজছেন তিনি। “এখানকার মানুষ জানে আমি রাস্তায় থাকি। আমাকে কেউ এখন কাজ দেবে না কারণ আমাকে ঢুকতে দিতেই [করোনার কারণে] ওরা ভয় পাচ্ছে,” তিনি জানান।

মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে যখন লকডাউন শুরু হয়েছিল তখন আশেপাশের বাড়ির বাসিন্দারা নিয়মিত এই পরিবারটিকে খাবার দিতে আসতেন। সেটাই ছিল এই পরিবারের বেঁচে থাকার প্রধান রসদ। সরকারের থেকে কোনও রেশন বা সুরক্ষার জিনিস পাননি তাঁরা, মীরা জানালেন। মে মাসের শেষ এবং জুন মাসের শুরুতে এই খাবারের প্যাকেট আসা কমে যেতে শুরু করে, কিন্তু তাও মাঝেমধ্যে ভাত, আটা, তেল বা রান্না করা খাবার পায় এই পরিবারটি।

'I cannot store milk, onions potatoes… anything [at my house],' says Meena, because rats always get to the food
PHOTO • Aakanksha
'I cannot store milk, onions potatoes… anything [at my house],' says Meena, because rats always get to the food
PHOTO • Aakanksha

আমি দুধ, পেঁয়াজ, আলু... কিছুই [আমার বাড়িতে] রেখে দিতে পারি না কারণ ইঁদুর সবসময় সেগুলো খুঁজে নেয়

“ইঁদুররাও আমাদের সঙ্গে খায়,” বললেন মীনা। “সকালে আমরা দেখি, শস্যের দানা চারদিকে ছড়িয়ে আছে। যা পড়ে থাকে সব ছিঁড়ে দেয়। চিরকাল এই সমস্যাটা ছিল, যদি আমি কোনও বাক্সের তলায় বা কাপড়ে মুড়ে খাবার রাখি, তাহলেও... দুধ, পেঁয়াজ, আলু... কিছুই জমিয়ে রাখতে পারি না।”

অগস্ট মাস থেকে কান্দিভালির রাস্তায় পড়ে থাকা বিয়ার অথবা ওয়াইনের কাঁচের বোতল আর প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করছেন মীনা আর সিদ্ধার্থ। রাত্রিবেলা পালা করে এই কাজ করে ওরা, যাতে একজন বাচ্চাদের সঙ্গে থাকতে পারে। কাছেই একজন শিশি-বোতলওয়ালার কাছে ১২ টাকা কিলো দরে বোতল আর ৮ টাকা কিলো দরে কাগজ আর অন্য ফেলে দেওয়া জিনিস বিক্রি করে তারা। সপ্তাহে দুতিন বার ১৫০ টাকা মতো আয় হয়।

পানীয় জল তাঁরা সংগ্রহ করতেন গাছে জল দিতে আসা বিএমসির ট্যাঙ্কার থেকে। লকডাউনের কয়েক সপ্তাহ পরে সেটা আসাও বন্ধ হয়ে গেল আর বর্ষাকালে এটা আসেও না। কখনো কখনো কাছে একটা মন্দির থেকে জল নেন ওরা, কখনো আরেকটু দূরের একটা স্কুলের কল থেকে – ২০ লিটারের জার আর প্লাস্টিকের পাত্রে জল ভরে রাখেন।

মীনা আর সংগীতা স্নান করেন রাতে – ফুটপাথের দেওয়াল ছাড়িয়ে কয়েকটা ঝোপঝাড়ের অনিশ্চিত আড়ালে। কাছে একটা সাধারণ শৌচাগার ব্যবহার করেন দুজনে – প্রতিবার ৫ টাকা করে লাগে – দুজনের জন্য দিনে অন্তত ২০ টাকা। সিদ্ধার্থ এবং তাঁদের দুই ছেলে আশান্ত (বয়স ৫) এবং অক্ষয় (বয়স ৩.৫), খোলা জায়গাই ব্যবহার করেন।

কিন্তু মীনার অন্য চিন্তাও রয়েছে। “আমার দুর্বল লাগছিল আর ভালো করে হাঁটতেই পারছিলাম না। আমি ভাবলাম মরশুম বদলাচ্ছে বলে এরকম হচ্ছে, কিন্তু ডাক্তার [কান্দিভালিতে] বলল আমার বাচ্চা হবে।” আর সন্তান হোক তিনি চান না, বিশেষ করে এরকম একটা পরিস্থিতিতে, কিন্তু তাঁকে গর্ভপাত না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডাক্তারের ভিজিটে তাঁর লেগেছে ৫০০ টাকা, জানাচ্ছেন মীরা, যেটা তার পূর্বতন মালিকের পরিবারের থেকে তিনি নিয়েছেন।

Siddharth – here, with his son Akshay – used to work at construction sites. 'That stopped when the lockdown began', he says
PHOTO • Aakanksha
Siddharth – here, with his son Akshay – used to work at construction sites. 'That stopped when the lockdown began', he says
PHOTO • Aakanksha

সিদ্ধার্থ — এখানে তার ছেলে অক্ষয়ের সঙ্গে — নির্মাণক্ষেত্রে কাজ করতেন। ‘লকডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে’

মীনার ছেলে-মেয়েরা পূর্ব কান্দিভালির সমতা নগরে একটা মারাঠি মাধ্যম স্কুলে পড়ে। সংগীতা, সবথেকে বড়ো, পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে, আশান্ত দ্বিতীয় শ্রেণিতে, আর অক্ষয় ‘বালওয়াড়ি’-তে, আর শামা এখনো স্কুলে যেতে শুরু করেনি। অন্তত মিড-ডে মিলের কারণে ওরা যেত,” বলল মীরা।

মার্চের ২০ তারিখ স্কুলে ক্লাস নেওয়া বন্ধ হয়ে গেল। সেই থেকে বাচ্চারা খেলে বেড়াচ্ছে, সিদ্ধার্থের ফোনে যথেষ্ট টাকা আর চার্জ [কাছের একটা দোকান থেকে করানো] থাকলে কার্টুন দেখছে।

‘স্কুল’ শব্দটা শুনে আমরা যেখানে বসে কথা বলছি সেখানে চলে আসে আশান্ত। একটা উড়োজাহাজের দাবি জানায়। “আমি ওটা চড়ে স্কুলে যাব,” সে বলে। লকডাউনের মধ্যে পুরনো পড়া ঝালিয়ে নিচ্ছে সংগীতা – বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচানো বই থেকে। বাড়ির কাজ করেও সময় কাটে তার – বাসন ধোওয়া, ছোটো ভাই-বোনদের দেখাশোনা করা, জল আনা, তরকারি কাটা।

সে ডাক্তার হতে চায়। “আমাদের শরীর খারাপ হলে আমরা ডাক্তারের কাছে যেতে পারি না, কিন্তু আমি যখন ডাক্তার হব তখন আমাদের কোনও সমস্যা থাকবে না,” সে বলে। পশ্চিম কান্দিভালির মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে টাকা লাগে, টাকা লাগে ওষুধ কিনতেও, এবং সংগীতা নিজের চোখে চিকিৎসা পেতে দেরি হওয়ায় তার মাকে যমজ সন্তান হারাতে দেখেছে।

মীনা নিজে পূর্ব কান্দিভালির দামু নগরের যেখানে তিনি নিজের মা শান্তা বাঈয়ের সঙ্গে একটা বস্তিতে থাকতেন, সেখানে এক মিউনিসিপ্যাল স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি অবধি পড়েছেন। মীনার জন্মের পর তাঁর বাবা তাঁদের ছেড়ে চলে যান। কন্যা সন্তান চাননি তিনি, মীরা জানান। মীনার মা-বাবা এসেছিলেন কর্ণাটকের বিদর জেলা থেকে। বাবা কী করতেন মীনা জানে না, কিন্তু তাঁর মা ছিলেন দিনমজুর, মূলত স্থানীয় কন্ট্রাক্টরদের জন্য নর্দমা পরিষ্কার করার কাজ করতেন।

'At least the midday meal kept them going [before the lockdown],' Meena says about her kids. Now the rains have further deleted their resources (right)
PHOTO • Aakanksha
'At least the midday meal kept them going [before the lockdown],' Meena says about her kids. Now the rains have further deleted their resources (right)
PHOTO • Aakanksha

‘[লকডাউনের আগে] অন্তত মিড-ডে মিলের কারণে ওরা যেত,’ নিজের ছেলে-মেয়ে সম্পর্কে বলছেন মীনা। এখন বৃষ্টির ফলে তাঁদের রসদ আরও কমে গেছে [ডানদিকে]

“আমার মা অদ্ভুত ব্যবহার করত, কিন্তু আমার খেয়ালও রাখত। খুব চিন্তা করত, চলে যাওয়ার জন্য আমার বাবাকে খুব গালাগাল দিত। আমার যখন দশ বছর বয়স, তখন অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল,” স্মৃতিচারণ করেন মীনা। তাঁর মা নিজের মনে কথা বলতে আরম্ভ করলেন, চিৎকার করতেন, কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। “লোকে বলত, ‘পাগলিটাকে দেখ’, বলত পাগলা গারদে পাঠিয়ে দিতে।” মায়ের দেখভাল করার জন্য স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল মীনাকে।

এগারো বছর বয়সে চাকরি নিলেন – কান্দিভালির একটা পরিবারের সঙ্গে থাকা আর তাঁদের বাচ্চার দেখাশোনা করা – মাসে মাইনে ৬০০ টাকা। “মাকে ছেড়ে আসতে হল, নইলে দুজনে খেতাম কী করে? প্রত্যেক সপ্তাহে গিয়ে দেখা করে আসতাম।”

মীনার ১২ বছর হতে না হতে তাঁর মা কোথায় যেন চলে গেলেন। “খুব বৃষ্টি হচ্ছিল বলে আমি এক সপ্তাহ দেখা করতে যেতে পারিনি। যখন গেলাম, দেখলাম মা ওখানে নেই। আশেপাশের লোককে জিজ্ঞেস করলাম। কয়েকজন বলল, মাকে নিয়ে গেছে। কিন্তু কে যে নিয়ে গেছে সেটা কেউ বলতে পারল না।” ভয়ে পুলিশের কাছে যাননি মীনা। “যদি আমাকে অনাথাশ্রমে পাঠিয়ে দিত?”

“আশা করি মা বেঁচে আছে, শান্তিতে আছে...” যোগ করেন মীনা।

বাচ্চার দেখভালের কাজ প্রায় ৮–৯ বছর করেছিলেন মীনা, ওই পরিবারের সঙ্গে থেকেই। কিন্তু ছুটির সময় কখনো তাঁরা শহরের বাইরে গেলে কিছু দিন রাস্তায় কাটাতে হতো। আর কাজ ছেড়ে দেওয়ার পর রাস্তাই হয়ে ওঠে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা।

দামু নগরে, তিনি এবং তাঁর মা দুজনেকেই নিয়মিতভাবে হয়রানির সম্মুখীন হতেন। “পুরুষদের নোংরা চাহনিকে আমি ভয় পেতাম, ওরা আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করত, বিশেষ করে মাতালরা। ওরা বলত ওরা আমাদের সাহায্য করতে চায়, কিন্তু ওদের আসল মতলব আমি জানতাম।”

'I have never really slept [at night],' says Meena, who worries about her children's safety, especially her daughters Shama and Sangeeta (right)
PHOTO • Aakanksha

আমি আসলে কখনোই বিশেষ ঘুমোইনি [রাত্রিবেলা], জানাচ্ছেন মীনা, যিনি তাঁর সন্তানদের, বিশেষ করে তাঁর কন্যাসন্তান শামা ও সংগীতার [ডানদিকে] সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত

এখনও, জানাচ্ছেন মীনা, সারাক্ষণ সজাগ থাকেন। অনেক সময় সিদ্ধার্থর বন্ধুরা আসে আর পুরুষরা একসঙ্গে বসে তাঁদের ‘বাড়িতে’ মদ খায়। “আমি ওদের মদ খাওয়া থামাতে পারব না, কিন্তু আমাকে সবসময় সজাগ থাকতে হয়। আমি আসলে কখনোই [রাত্রে] বিশেষ ঘুমোইনি। শুধু আমার জন্য না, এটা আমার বাচ্চাদের জন্যেও, বিশেষ করে সংগীতা আর শামা...”

মুম্বইয়ের অসংখ্য গৃহহীনদের মধ্যে রয়েছেন মীনা এবং তাঁর পরিবার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মুম্বইয়ের গৃহহীনদের সংখ্যা অন্তত ৫৭,৪৮০। বহু দিন ধরেই তাঁদের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছে সরকার। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবাসন এবং নগর দারিদ্র বিমোচন মন্ত্রক শুরু করে ন্যাশনাল আরবান লাইভলিহুড মিশন বা জাতীয় নগর জীবিকা মিশন – এর মধ্যে ছিল শহরে আশ্রয়গৃহের পরিকল্পনা এবং তার সঙ্গে বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহ ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা।

২০১৬ সালে শীর্ষ আদালত এই পরিকল্পনাগুলি গৃহীত হওয়ার পরে গৃহহীনদের অবস্থা সংক্রান্ত দুটি পেটিশানের ভিত্তিতে একটি তিন-সদস্যের কমিটি গঠন করে যার নেতৃত্বে ছিলেন (অবসরপ্রাপ্ত) জাস্টিস কৈলাশ গম্ভীর। ২০১৭ সালের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে রাজ্যগুলি এন ইউ এল এম-এর টাকা ব্যবহার করছে না। মহারাষ্ট্র প্রায় ১০০ কোটি টাকা পেয়েছিল যা খরচই করা হয়নি।

ডঃ সংগীতা হাস্‌নালে, প্ল্যানিং এবং নগর দারিদ্র দূরীকরণ সেলের সহযোগী মিউনিসিপাল কমিশানারের সঙ্গে ২৮শে জুলাই যখন আমার ফোনে কথা হয়, তিনি আমাকে বলেন, “মুম্বইয়ে গৃহহীনদের জন্য প্রায় ২২টা শেল্টার হোম রয়েছে এবং আমরা আরও ৯টা শেল্টার হোমের পরিকল্পনা করছি। কয়েকটা তৈরি হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হল পরের বছরের মধ্যে ৪০–৪৫টি শেল্টার হোম। (ডঃ হাস্‌নালে ২০০৫ সালে শুরু হওয়া বস্তিবাসী এবং গৃহহীনদের জন্য মহাত্মা গান্ধী পথ ক্রান্তি যোজনার কথাও বললেন। তিনি বললেন যে সচরাচর এই স্কিমে পাওয়া ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়ে পরিবারগুলি আবার রাস্তাতেই বসবাস করতে ফিরে আসে)।

Meena and her family are used to seeing their sparse belongings float away every monsoon
PHOTO • Courtesy: Meena
Meena and her family are used to seeing their sparse belongings float away every monsoon
PHOTO • Aakanksha

তাঁদের স্বল্প সামগ্রী বর্ষাকালে ভেসে যেতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন মীনা এবং তাঁর পরিবার

কিন্তু হোমলেস কালেক্টিভের বৃজেশ আর্য জানাচ্ছেন, “বর্তমানে মুম্বইয়ে মাত্র ৯টি শেল্টার হোম আছে, যা গৃহহীনদের সংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত কম, এবং বহু বছর ধরে এই সংখ্যাটি একই রয়েছে।” আর্য  ‘পেহ্‌চান’ নামের গৃহহীনদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি অলাভজনক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাও।

এই ৯টি হোমের মধ্যে একটিও মীনার মতো পুরো পরিবারকে আশ্রয় দেবে না।

২০১৯ সালের গোড়ার দিকে এন ইউ এল এম -এর একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে মুম্বইয়ে গৃহহীনদের সংখ্যা কমে গিয়ে ১১,৯১৫তে ঠেকেছে। “শেল্টার হোমের সংখ্যা বাড়ল না, কিন্তু গৃহহীনদের সংখ্যা কমে গেল? কোথায় গেলেন এই মানুষেরা?” আর্য প্রশ্ন করেন।

২০০৪ সালের মার্চ মাসে শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে মহারাষ্ট্র সরকার একটি নির্দেশিকা জারি করে যেখানে বলা হয়েছে পরিচয়পত্র অথবা ঠিকানার প্রমাণ না থাকলেও গৃহহীন মানুষদের রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে হবে।

রাষ্ট্রের এই সুযোগ সুবিধে সম্পর্কে মীনা কিছুই জানেন না। তাঁর আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট – কিছুই নেই। “ওরা আমাদের থেকে পরিচয়পত্র আর ঠিকানার প্রমাণ চায়; একবার একটা লোক পরিচয়পত্র করিয়ে দেওয়ার জন্য আমার থেকে টাকা চেয়েছিল,” বলছেন মীনা। তাঁর স্বামীর একটি আধার কার্ড রয়েছে (গ্রামের ঠিকানার ভিত্তিতে) কিন্তু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই।

মীনার অনুরোধটি আরও সহজ: “পারলে আমাদের দুটো টাপ্‌রা [ত্রিপল] দাও যেটা দিয়ে বাড়িটাকে আরেকটু শক্তপোক্ত বানানো যায় যাতে বৃষ্টিতেও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।”

তার বদলে এই মাসে, মীনা জানায়, বি এম সি’র কর্মচারীরা এসে ফুটপাথ খালি করতে বলে গেছে। আগে যখন এমনটা হয়েছে, তখন তাঁরা বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে এক ফুটপাথ থেকে আরেক ফুটপাথে চলে গেছেন।

বাংলা অনুবাদ : সর্বজয়া ভট্টাচার্য

Aakanksha

Aakanksha is a reporter and photographer with the People’s Archive of Rural India. A Content Editor with the Education Team, she trains students in rural areas to document things around them.

यांचे इतर लिखाण Aakanksha
Editor : Sharmila Joshi

शर्मिला जोशी पारीच्या प्रमुख संपादक आहेत, लेखिका आहेत आणि त्या अधून मधून शिक्षिकेची भूमिकाही निभावतात.

यांचे इतर लिखाण शर्मिला जोशी
Translator : Sarbajaya Bhattacharya

Sarbajaya Bhattacharya is a Senior Assistant Editor at PARI. She is an experienced Bangla translator. Based in Kolkata, she is interested in the history of the city and travel literature.

यांचे इतर लिखाण Sarbajaya Bhattacharya