কমল শিন্দের দুই কামরার ঘরে ১৫০ কেজি চাল এবং ১০০ কেজি আটার বস্তা, ৩০ কেজি আলু আর ৫০ কেজি পেঁয়াজ মজুত করা হয়েছে। ৫৫ বছরের কমল জানালেন, “এই খাবার সবার জন্য। দিনের খাবারটা সবাই সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে, বাকি দিনগুলো আমরা পথেই [রাস্তার ধারে] রান্না করব।”

তাঁর গ্রামের প্রায় ৩০-৪০ জন কৃষক এই সর্বজনীন রসদ সংগ্রহে নিজের নিজের অবদান রেখেছেন. ২০শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে শুরু হওয়া এই মিছিল চলাকালীন তাঁদের খাবার প্রস্তুত করার জন্য এই রসদ ব্যবহার করা হবে বলে জানালেন কর্মসূচিটির সংগঠক অল ইন্ডিয়া কিষান সভার দিন্দোরি তালুকের ব্যবস্থাপক আপ্পা ভাতানে।

Women cleaning the utensil.
PHOTO • Sanket Jain
Women packing their food.
PHOTO • Sanket Jain

বাঁদিকে: মিছিলে সঙ্গে যাবে যে বাসনপত্র, সেসব ধুচ্ছেন কমল শিন্দে। ডানদিকে: চাষিরা আনাজ এবং আটা সংগ্রহ করছেন প্রতিবাদ সমাবেশের দিনগুলিতে রান্নার জন্য

রান্নার জন্য বড়ো বড়ো পাত্র, জল ধরে রাখার ড্রাম, জ্বালানি কাঠ, ত্রিপল এবং তোশক জোগাড় করেছেন সংগঠকেরা এবং মিছিলে যোগদানকারী কৃষকেরা। নাসিক জেলার দিন্দোরি তালুকের প্রায় ১৮,০০০ জনসংখ্যা বিশিষ্ট গ্রাম দিন্দোরির কৃষকরা বিগত এক মাস ধরে এই মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এঁদের মধ্যে আছেন বছর আটান্নর লীলাবাঈ ওয়াঘে। গতকাল সকাল প্রায় ১০টা নাগাদ তিনি খুরসানির চাটনি আর খান তিরিশেক চাপাটি পুঁটলিতে বেঁধে নিলেন। নাসিক থেকে মুম্বইয়ের পথে আগামী দুইদিন এই দিয়েই তিনি তাঁর দুপুর আর রাতের খাওয়া সেরে নেবেন।

Food being packed.
PHOTO • Sanket Jain
A lady packing her food.
PHOTO • Sanket Jain

মিছিলে সঙ্গে যাবে লীলাবাঈয়ের চাপাটি আর চাটনি

তাঁর এবং তাঁর গ্রামের অন্যান্য কৃষকদের দাবিদাওয়ার মধ্যে আছে - জমির অধিকার, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, জমিতে জলসেচের বন্দোবস্ত, কৃষকদের পেনশন প্রদান এবং ঋণ মকুব। একই দাবিতে গত বছর এই দুই শহরের মধ্যে যে লং মার্চ হয়েছিল লীলাবাঈ সেটিতেও যোগ দিয়েছিলেন – আশ্বাস দেওয়ার পরেও সরকার প্রতিশ্রুতিগুলিকে বাস্তবায়িত করেনি।

“আমরা ওখানে [মুম্বইয়ে] থামব। সরকার আমাদের দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত আমরা ওখান থেকে নড়ছি না। গতবছরও আমি যোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু সরকার আমাদের দাবি মোটেই পূরণ করেনি,” দিন্দোরির দুই কামরার কুঁড়েঘরে, মাটির উনোনের পাশে মেঝেতে বসে চাপাটির পুঁটুলি শক্ত করে বাঁধতে বাঁধতে লীলাবাঈ বলছিলেন।

Women boarding the truck, heading towards the march.
PHOTO • Sanket Jain
Women sitting in the truck.
PHOTO • Sanket Jain

নাসিকের পথে দিন্দোরি গ্রামের কৃষকরা

লীলাবাঈ তপশিলি জনজাতি, মহাদেব কোলি সম্প্রদায়ের মানুষ। ২০১৮ সালে তিনি বনবিভাগের এক একর জমিতে চিনাবাদাম চাষ করেছিলেন। তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় সেবার তাঁর সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

“আমি বহু বছর ধরে এই জমি চাষ করছি। আমাদের মতো ক্ষুদ্র চাষিদের জমির পূর্ণ অধিকার দিতে হবে। নইলে আমরা বাঁচবই বা কেমন করে? সরকারের উচিত আমাদের ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা,” তিনি বলছেন। দিন্দোরি গ্রামের বেশিরভাগ কৃষকই মহাদেব কোলি সম্প্রদায়ের, তাঁরা বনবিভাগের জমিতে গম, বাজরা, পেঁয়াজ, টমেটো ইত্যাদি চাষ করেন। দীর্ঘকাল যাবৎ তাঁরা ২০০৬ সালের অরণ্য অধিকার আইনের অধীনে জমির মালিকানা দাবি করে আসছেন।

Amount of food, utensils being taken needed during the march.
PHOTO • Sanket Jain

দিন্দোরির কৃষকরা মিছিলে যোগ দেওয়া গ্রামের মানুষদের জন্য এই রসদ সংগ্রহে নিজের নিজের অবদান রেখেছেন , প্রতিবাদ মিছিল চলাকালীন তাঁদের খাবার বাবদ এই রসদ ব্যবহার করা হবে

২০শে ফেব্রুয়ারির দুপুরের দিকে, দিন্দোরি গ্রামের কৃষকরা টেম্পোতে আনাজের বস্তা, বাসনপত্র ও নিজেদের লটবহর চাপিয়ে নিলেন। তারপর তাঁদের কেউ কেউ সেই টেম্পো করে, বাকিরা শেয়ারের ট্যাক্সি অথবা রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাসে চেপে ১৩ কিলোমিটার দূরে ধাকাম্বে টোল নাকায় [টোলগেট] পৌঁছলেন। দিন্দোরি তালুকের অন্যান্য গ্রাম থেকে আসা কৃষকরা সকলেই নাকায় একত্রিত হলেন, তারপর বেলা দুটো নাগাদ প্রথম পর্যায়ের পদযাত্রা শুরু করলেন – তাঁদের গন্তব্য প্রায় ১৫ মিটার দূরে নাসিক।

“সরকার আমাদের মিছিলের অনুমতি না দিলে আমরা ওখানেই [নাসিকে] বসে থাকব এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না সরকার আমাদের দাবি মেনে নিচ্ছে আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব,” ঘোষণা ২০১৮ সালের লং মার্চে অংশগ্রহনকারী প্রত্যয়ী কমলের। তাঁর পরিবার বনবিভাগের পাঁচ একর জমিতে চাষাবাদ করে, যার মধ্যে মাত্র এক একর জমি তাঁদের নাম হস্তান্তর হয়েছে।

এইবারে তাঁদের দেওয়া সরকারি আশ্বাস বাস্তবায়িত হবে এই আশা নিয়ে মহারাষ্ট্রের প্রায় ২০টি জেলার প্রায় ৫০,০০০ কৃষক মিছিল করে এই সপ্তাহে দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে উপস্থিত হবেন (যদিও মিছিলের অনুমতি ঘিরে অনিশ্চয়তা আছে), তাঁদের মধ্যে আছেন লীলাবাঈ এবং কমল।

Ready for the March :)
PHOTO • Sanket Jain

দিন্দোরির মহিলা কৃষকেরা বলছেন , ‘শৃঙ্খলাই আমাদের শক্তি, আমরা কখনও কারও অসুবিধে সৃষ্টি করি না’


বাংলা অনুবাদ : স্মিতা খাটোর

Jyoti Shinoli & Sanket Jain

ज्योती शिनोळी मुंबई स्थित पत्रकार आहे आणि पीपल्स अर्काईव्ह ऑफ रुरल इंडियाची मजकूर समन्वयक आहे. तिने याआधी ‘मी मराठी’ आणि ‘महाराष्ट्र १’ सारख्या वार्तावाहिन्यांसाठी काम केलं आहे. संकेत जैन कोल्हापूर स्थित ग्रामीण पत्रकार आणि ‘पारी’चा २०१९ चा फेलो आहे.

यांचे इतर लिखाण Jyoti Shinoli & Sanket Jain
Translator : Smita Khator

स्मिता खटोर कोलकात्यात असतात. त्या पारीच्या अनुवाद समन्वयक आणि बांग्ला अनुवादक आहेत.

यांचे इतर लिखाण स्मिता खटोर