১৪ই এপ্রিল ডঃ আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সারা মাস জুড়ে বাবাসাহেব ও বর্ণাবাদের সমস্যা ঘিরে একের পর এক দোহা প্রকাশ করে চলেছে পারির জাঁতাপেষাইয়ের গানের প্রকল্প। তারই অন্তিম কিস্তিতে ফুলে, বুদ্ধ, শিক্ষা, একতা, আত্মসম্মানবোধ ও ভীমরাওয়ের প্রেরিত বাণী ঘিরে ১০টি ওভি গাইছেন সাভারগাঁওয়ের রাধাবাই বোরহাডে

৫ই এপ্রিল ২০১৭ সালে পারিতে প্রথম প্রকাশিত হয় জাঁতাপেষাইয়ের গান, সেই পাঁচটি গানের প্রত্যেকটিই ছিল বীড জেলার সাভারগাঁও নিবাসী রাধাবাই বোরহাডের কণ্ঠে। ১৪ই এপ্রিল ডঃ আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সারা মাস ধরে তাঁকে ঘিরে রচিত দোহার শৃঙ্খলা প্রকাশ করেছিলাম আমরা।

ওই পাঁচটি গান গাঁথা ছিল বুদ্ধ, ভীমরাও, ধম্ম, সংঘ ও রমাবাই আম্বেদকরকে (বাবাসাহেবের প্রথম স্ত্রী) ঘিরে।

উক্ত শৃঙ্খলাটির সর্বশেষ কিস্তিতে রাধাবাইয়ের বজ্রসম কণ্ঠে রয়েছে ১০টি ওভি, তাঁর সঙ্গে একে একে সংগত করেছেন অনেকেই।

রাধাবাই তাঁর প্রথম দোহাটি উৎসর্গ করছেন সমাজ সংস্কারক, লেখক ও দার্শনিক জ্যোতিবার (ফুলে) প্রতি, বর্ণবাদ-বিরোধী লড়াই সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি রেখে গেছেন তাঁর কালজয়ী ছাপ।

দ্বিতীয় ওভিটি বৌদ্ধ ধম্মের পাঁচরঙা পতাকার (এটি বৌদ্ধ পন্থার বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতির একটি প্রতীক বিশেষ) প্রতি নিবেদিত। সাত কোটি মানুষের জীবনযুদ্ধের সাক্ষী এই নিশান (তখন ৭০ মিলিয়ন দলিতের বাস ছিল এ দেশে, জাতপাতের বিষে জর্জরিত এই মানুষগুলির হাতে যুদ্ধের ধ্বজা রূপে বৌদ্ধ ধর্ম তুলে দিয়েছিলেন বাবাসাহেব – এই দোহাটি সেই দিকেই ইঙ্গিত করে)।

রাধাবাই তাঁর তৃতীয় গানে মুক্তির পথে হাঁটতে আহ্বান জানাচ্ছেন সবাইকে, হাজার দারিদ্র্যের মুখোমুখি হলেও যেন কেউ শিক্ষার সান্নিধ্য ত্যাগ না করে। চতুর্থ ওভিতে উঠে আসছে অন্তর্কলহ ছেড়ে দলবদ্ধ হওয়ার মন্ত্রণা, ঐক্যবদ্ধ জোট যাতে ভেঙে না পড়ে, তারই সঙ্গে রয়েছে তথাগতের বাণী মনে রাখার উপদেশ। মানুষের জন্য আবার করে বৌদ্ধ ধম্ম ফিরিয়ে এনেছিলেন বাবাসাহেব, পঞ্চম দোহায় সেকথা মনে করাচ্ছেন রাধাবাই। আমরা যাতে সে পন্থার নীতিমালা হতে বিচ্যুত না হই, এটুকুই তাঁর আর্তি।

পাথর কুঁদে বানানো আগডুম বাগডুম দেবদেবী, মান্ধাতার আমলের আচার ও সমাজকে বিষিয়ে দেওয়া রীতি-রেওয়াজ – ষষ্ঠ ওভিতে এসব ত্যাগ করার কথা বলছেন রাধাবাই। সপ্তম গানে ফুটে উঠছে দাসপ্রথার শিকল ভেঙে আত্মসম্মানবোধ জিইয়ে রাখার বাণী, যাতে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হয়ে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা যায়।

অষ্টম ওভিতে রয়েছে প্রজ্ঞার পিলসুজ জ্বেলে পঞ্চশীল অনুসরণ করার আহ্বান। আমাদের জীবনতরীর হাল যে আমাদেরই হাতের মুঠোয়, গানে গানে একথা তুলে ধরছেন রাধাবাই। নবম দোহায় তিনি পিড়াপিড়ি করছেন আমরা যাতে ভীমরাওয়ের কথামতো সর্বদা গৌতম বুদ্ধের রাস্তায় হাঁটি।

দশম ওভিটিও ডঃ আম্বেদকরের প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে: “গাইব রে কত আর, গলাখানি ছারখার, গাইতে গাইতে সুর ভেঙেচুরে যায়...আমার ভীমের তরে, লক্ষ যে ফিকে পড়ে, গাই সে যতই তবু প্রেম না কুলায়।”

জ্যোতিবার পদতলে কুর্নিশ মোর, ষষ্ঠ এ গান দিয়া বাঁধিয়াছি ডোর,
লড়াই করেছে ফুলে একা আজীবন, থাকে যেন দুধে-ভাতে শত বহুজন।

পাঁচরঙা পতাকায় ধম্ম উড়ায়ে, সপ্তমে সরগমে রাখিনু জড়ায়ে,
সাত কোটি মানুষেরে শোনাব এ গান, বুদ্ধ আমার অছুতের ভগবান।

গুটিগুটি পায়, চল হেঁটে যাই, এ পথ মুক্তি জানে, এ পথ জীবন,
বইখাতা খড়ি, আঁকড়ে যে ধরি, থাক সে যতই সখী এঁটো অনটন।

জোট বাঁধো! জোট বাঁধো! দলাদলি ছেড়ে,
বৌদ্ধ ধম্ম গাঁথো মনের গোচরে।

বুদ্ধেরই ধম্মতে দিয়া হাতেখড়ি, বাবা আজি চলে গেছে ধরাতল ছাড়ি,
বলা আছে ধম্মতে যতেক নিদান, সত্যে জীবন বাঁধি, আয় রে পরাণ।

আগল পাগল দেবদেবী সব পাথর-গড়া দেহ,
মান্ধাতার ওই ভণ্ড সমাজ, মানিস না রে কেহ।

ছাড় দেখি তোর গোলামপনা, উঁচিয়ে রাখিস মুণ্ডুখানা,
একের পরেই এক মিলায়ে জোট বেঁধে চল বাঁচি।

পঞ্চশীলের পথে, জীবন-মরণ রথে, প্রজ্ঞা প্রদীপখানি রাখ্ রে জ্বেলেই,
ভাঙ রে আপন খাঁচা, নিজেদের মরা-বাঁচা, নিজের কপালখানি লেখ্ রে নিজেই।

শোন্ শোন্ পেতে কান, ভীমরায়া ভগবান, রাখ্ রে তাঁহার বাণী পাঁজরের কোণে,
ধন্য ধন্য জানি বুদ্ধ ধম্মখানি, দুনিয়া আজাদ হল তিনটি রতনে।

গাইব রে কত আর, গলাখানি ছারখার, গাইতে গাইতে সুর ভেঙেচুরে যায়,
আমার ভীমের তরে, লক্ষ যে ফিকে পড়ে, গাই সে যতই তবু প্রেম না কুলায়।


PHOTO • Samyukta Shastri

রাধা বোরহাডে

পরিবেশক/গায়ক : রাধা বোরহাডে

গ্রাম : মাজালগাঁও

জনপদ : ভীম নগর

তালুক : মাজালগাঁও

জেলা : বীড

জাতি : নববৌদ্ধ

তারিখ : আনুষঙ্গিক তথ্য সহ এই দোহাগুলি ১৯৯০ সালের ২রা এপ্রিল রেকর্ড করা হয়েছিল।

আলোকচিত্র: সময়ুক্তা শাস্ত্রী

পোস্টার: সিঞ্চিতা মাজি

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

नमिता वाईकर लेखक, अनुवादक आणि पारीच्या व्यवस्थापकीय संपादक आहेत. त्यांची ‘द लाँग मार्च’ ही कादंबरी २०१८ मध्ये प्रकाशित झाली आहे.

यांचे इतर लिखाण नमिता वाईकर
PARI GSP Team

पारी-जात्यावरच्या ओव्या गटः आशा ओगले (अनुवाद), बर्नार्ड बेल (डिजिटायझेशन, डेटाबेस डिझाइन, विकास, व्यवस्थापन), जितेंद्र मैड (अनुलेखन, अनुवाद सहाय्य), नमिता वाईकर (प्रकल्प प्रमुख, क्युरेशन), रजनी खळदकर (डेटा एन्ट्री)

यांचे इतर लिखाण PARI GSP Team
Photographs : Samyukta Shastri

संयुक्ता शास्त्री पारीची मजकूर समन्वयक आहे. तिने सिम्बायोसिस सेंटर फॉर मिडिया अँड कम्युनिकेशन, पुणे इथून मिडिया स्टडिज या विषयात पदवी घेतली आहे तसंच एसएनडीटी महिला विद्यापीठातून इंग्रजी साहित्य या विषयात एम ए केलं आहे.

यांचे इतर लिखाण संयुक्ता शास्त्री
Editor and Series Editor : Sharmila Joshi

शर्मिला जोशी पारीच्या प्रमुख संपादक आहेत, लेखिका आहेत आणि त्या अधून मधून शिक्षिकेची भूमिकाही निभावतात.

यांचे इतर लिखाण शर्मिला जोशी
Translator : Joshua Bodhinetra

जोशुआ बोधिनेत्र यांनी जादवपूर विद्यापीठातून तुलनात्मक साहित्य या विषयात एमफिल केले आहे. एक कवी, कलांविषयीचे लेखक व समीक्षक आणि सामाजिक कार्यकर्ते असणारे जोशुआ पारीसाठी अनुवादही करतात.

यांचे इतर लिखाण Joshua Bodhinetra