“তাপে আমার পিঠ পুড়ে গেছে,” গাজুভাস গ্রামের ঠিক বাইরে অল্প কিছু খেজুর গাছের আবছায়ায় বসে বললেন বজরঙ্গ গোস্বামী। “ফসলের পরিমাণ কমেছে আর তাপ বেড়েছে”, কেটে রাখা বাজরার স্তূপের দিকে তাকিয়ে তিনি বলে চলেন । তিনি এবং তাঁর স্ত্রী রাজ কৌর মিলে চুরু জেলার তারানগরে যে ২২ বিঘা জমি ভাগে চাষ করেন সেখানে একটা উট দাঁড়িয়ে শুকনো ঘাস চিবোচ্ছে।

“মাথার উপর সূর্যের তাপ আর পায়ের নিচে তপ্ত বালি,” বললেন দক্ষিণ তারানগরের সুজানগড় তেহসিলের গীতা দেবী নায়ক। ভূমিহীন বিধবা গীতা দেবী, ভগবানী দেবী চৌধুরির খেতে কাজ করেন। গুদাওয়ারি গ্রামে দুজনে সবে বিকেল ৫টা নাগাদ কাজ শেষ করলেন। “কি গরমটাই না পড়ে আজকাল,” বললেন ভগবানী দেবী।

উত্তর রাজস্থানের চুরু জেলায় মে জুন মাসে বালিমাটির জমি যৎপরনাস্তি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আর হাওয়া বয়ে আসে যেন চুল্লি থেকে। গ্রীষ্মের তাপ এবং কেমন তা বেড়ে উঠছে, সে নিয়ে কথাবার্তা প্রায়ই ওঠে। ওই মাসগুলিতে তাপমাত্রা সহজেই ৪০ ডিগ্রির ঊর্ধ্বসীমা স্পর্শ করে। এই গতমাসে অর্থাৎ মে ২০২০তে তাপমাত্রা উঠেছিল ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং ২৬ মে তারিখের সংবাদপত্রের খবর অনুসারে তা ছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ।

ফলে, গতবছর যখন তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অর্থাৎ জলের স্ফুটনাঙ্কের আধা পথ ছাড়ালো তখনও মানুষ তেমন গুরুত্ব দিলেন না। “৩০ বছর আগেও আমার মনে আছে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল,” গাজুভাস গ্রামে নিজের বিশাল বাড়িতে একটি খাটে আধ-শোয়া হয়ে জমির মালিক ও অবসর প্রাপ্ত বিদ্যালয় শিক্ষক, ৭৪ বছর বয়সী হরদয়ালজি সিং বললেন।

ছয়মাস পরেই, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে চুরুর তাপমাত্রা নেমে গেছিলো শূন্য ডিগ্রিতে। ফেব্রুয়ারি ২০২০-তে, ভারতের সমতলভূমির মধ্যে নিম্নতম তাপমাত্রা, ৪.১ ডিগ্রি, চুরুতেই লক্ষ্য করে আবহাওয়া দপ্তর।

Geeta Devi and Bhagwani Devi of of Sujangarh tehsil, Churu: ' Garmi hee garmi pade aaj kal' ('It’s heat and more heat nowadays')
PHOTO • Sharmila Joshi

সুজানগড় তেহসিলের চুরুর বাসিন্দা গীতা দেবী ও ভগবানী দেবী: ‘আজকাল কি গরমটাই না পড়ে’

মাইনাস ১ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস — তাপমাত্রার এই তারতম্যের মধ্যে মানুষ অতিরিক্ত গরমের কথাই বেশি আলোচনা করে থাকেন। ২০১৯ সালের নাটকীয় রকমের বেশি ৫০ ডিগ্রির উপরে পৌঁছানো তাপমাত্রা অথবা গতমাসের ৫০ ডিগ্রির কথা নয়, আলোচনার কেন্দ্রে থাকে মূলত প্রলম্বিত গ্রীষ্মের যা অপর সব ঋতুকে গিলে নিচ্ছে সেই বিষয়টিই।

আগে এই জ্বালা ধরানো গরম থাকতো দুই-একদিন,” বললেন শিকর জেলার নিকটে অবস্থিত এস কে সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, চুরুর বাসিন্দা অধ্যাপক এইচ আর ইসরান, যাঁকে অনেকেই গুরু বলে মানেন। “এখন এই গরম চলে বহুদিন ধরে। পুরো গ্রীষ্মকালটাই দীর্ঘ হয়ে গেছে।”

জুন ২০১৯-এর স্মৃতি রোমন্থন করে অমৃতা চৌধুরি বললেন, “দুপুরে আমরা রাস্তায় হাঁটতে পারতাম না , চপ্পল রাস্তার পিচে আটকে যেতো।” দিশা শেখাওয়াতি নামের বাঁধনির পোশাক প্রস্তুতকারক একটি সংস্থার পরিচালক অমৃতা, আর পাঁচজনের মতোই তিনিও আসলে চিন্তিত দীর্ঘায়িত গ্রীষ্মকাল নিয়ে। তাঁর কথায়, “এই উষ্ণ অঞ্চলেও যেমন তাপমাত্রা বাড়ছে তেমনই গ্রীষ্ম শুরুও হচ্ছে তাড়াতাড়ি।”

“গ্রীষ্মকালের সময়সীমা এখন দেড় মাস বেড়ে গেছে,” গুদাওয়ারি গ্রামের ভগবানী দেবী আন্দাজ করে বললেন। গ্রীষ্মকাল বাড়তে বাড়তে শীতকালের মধ্যে কেমন ঢুকে পড়ছে আর এরই মাঝে বর্ষাকালকে করে দিচ্ছে সঙ্কুচিত, কীভাবে বছরের বারোমাসের তারতম্য একেবারে গুলিয়ে গেছে - ভগবানীর মতো সেই আলোচনা করেন চুরু জেলার বিভিন্ন গ্রামের অনেকেই।

এই যে আবহাওয়ার ক্রমপরিবর্তন, এর মধ্যে ৫১ ডিগ্রি তাপমাত্রা সম্বলিত একটি সপ্তাহ বা ৫০ ডিগ্রি ব্যাপী কয়েক দিন তাঁদের চিন্তায় ফেলেনি।

*****

২০১৯ সালের ১লা জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চুরুতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৬৯ মিমি। এই বৃষ্টিপাত ছিল বর্ষার ওই মাসগুলি গড় বৃষ্টিপাত ৩১৪ মিলিমিটারের তুলনায় সামান্য বেশি। দেশের ১০.৪ শতাংশ ভূখণ্ড জুড়ে থাকা, ভারতের বৃহত্তম ও শুষ্কতম রাজ্য রাজস্থান, ঊষর থেকে আধা-ঊষর এক অঞ্চল, যেখানে সরকারি হিসাব মতো বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৭৪ মিমি।

In the fields that Bajrang Goswami and his wife Raj Kaur cultivate as sharecroppers outside Gajuvas village in Taranagar tehsil
PHOTO • Sharmila Joshi
In the fields that Bajrang Goswami and his wife Raj Kaur cultivate as sharecroppers outside Gajuvas village in Taranagar tehsil
PHOTO • Sharmila Joshi
In the fields that Bajrang Goswami and his wife Raj Kaur cultivate as sharecroppers outside Gajuvas village in Taranagar tehsil
PHOTO • Sharmila Joshi

তারানগর তেহসিলের গজুভাস গ্রামের বাইরে বজরঙ্গ গোস্বামী ও তাঁর স্ত্রী রাজ কৌর এই জমিটি ভাগে চাষ করেন

রাজস্থানের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশের পেশা আজও চাষ ও পশুপালন। চুরু জেলার ২৫ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৭২ শতাংশ গ্রামে বাস করেন — সেখানে চাষ মূলত বর্ষা নির্ভর।

“সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এই বর্ষা-নির্ভরতা কমাতে চেষ্টা করেছেন। “১৯৯০ থেকে এখানে ৫০০—৬০০ ফুট গভীর বোরওয়েল খোঁড়ার প্রচেষ্টা সফল হয়নি ভূগর্ভস্থ জলের নোনাভাবের কারণে,” বললেন অধ্যাপক ইসরান। “জেলার ছয়টি তেহসিলের ৮৯৯টি গ্রামের কিছু কৃষক বোরওয়েলের জল ব্যবহার করে চিনাবাদাম ইত্যাদি দ্বিতীয় ফসল হিসাবে ঘরে তুলতে পেরেছিলেন। “কিন্তু তারপরই জমি অতিরিক্ত শুখা হয়ে পড়ে আর কয়েকটি গ্রাম বাদে বাকি সব জায়গায় বোরওয়েলগুলি বন্ধ হয়ে যায়।”

রাজস্থানের মোট কর্ষিত জমির ৩৮ শতাংশ (বা ৬২,৯৪,০০০ হেক্টর) সেচসিঞ্চিত বলে জানাচ্ছে রাজস্থান স্টেট অ্যাকশন প্লান ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ( Rajasthan State Action Plan for Climate Change আরএসএপিসিসি , ২০১০)। চুরুতে মাত্র ৪ শতাংশ জমি সেচসিঞ্চিত। নির্মীয়মাণ চৌধুরি কুম্ভারম লিফট খাল থেকে কিছু গ্রাম জল পেলেও চুরুর কৃষিকাজ ও তার চারটি মূল খরিফ ফসল — বাজরা, মুগ, মোঠ ডাল, গবারশুঁটি — আজও বর্ষানির্ভর।

কিন্তু এই ২০ বছরে বর্ষার ধাঁচ বদলে গেছে। চুরুর মানুষ মূলত দুটি পরিবর্তনের কথা বলেন — বর্ষার সময় সরে গেছে আর বৃষ্টিপাত সামঞ্জস্যহীন গেছে — কোথাও বৃষ্টির প্রাবল্য, কোথাও আবার চরম ঘাটতি।

বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষকদের মনে আছে সুদূর অতীতের ভারি বর্ষণের কথা। “আষাঢ় মাসে [জুন-জুলাই] আমরা বিদ্যুতের ঝলকানি দেখে বুঝতাম বর্ষা আসছে আর অমনি নিজেদের [ঘরে ফেরার আগে] খেতের মধ্যেই রুটি বানাতে লেগে পড়তাম,” বললেন জাট সম্প্রদায়ের ৫৯ বছর বয়সী কৃষক গোবর্ধন সহারন, যাঁর যৌথ পরিবার গাজুভাস গ্রামে, ১৮০ বিঘা (প্রায় ১২০ একর) জমির মালিক। চুরুর কৃষকদের মধ্যে অধিকাংশই ‘অন্যান্য অনগ্রসর জাতিভুক্ত চৌধুরি অথবা জাট। “এখন বিদ্যুৎ চমকায় বটে, কিন্তু ওই অবধিই — বৃষ্টি আর পড়ে না,” বললেন সহারন।

Bajrang Goswami and Raj Kaur (left) say their 'back has burnt with the heat', while older farmers like Govardhan Saharan (right) speak of the first rains of a different past
PHOTO • Sharmila Joshi
Bajrang Goswami and Raj Kaur (left) say their 'back has burnt with the heat', while older farmers like Govardhan Saharan (right) speak of the first rains of a different past
PHOTO • Sharmila Joshi

বজরঙ্গ গোস্বামী ও রাজ কৌর জানালেন তাঁদের ‘পিঠ গরমে পুড়ে গেছে’ (বাঁদিকে) কোনও এক সুদূর অতীতের প্রথম ধারাবর্ষণের গল্প শোনালেন গোবর্ধন সহারনের মতো বয়স্ক কৃষকরা

“আমি যখন ইসকুলে পড়তাম, উত্তর আকাশে মেঘ ঘনিয়ে এলেই বুঝতাম বৃষ্টি আসছে আর আধা ঘন্টার মধ্যে এসেও যেত বৃষ্টি,” শিকর জেলার নিকটবর্তী সাদিনসারের ৮০ বছর বয়সী নারায়ণ প্রসাদ বললেন। “এখন মেঘ করলেও তা উড়ে যায়,” নিজের খেতের মধ্যে একটা খাটিয়ায় বসে তিনি কথা বলছিলেন। প্রসাদ, নিজের ১৩ বিঘা (প্রায় ৮ একর) জমিতে কংক্রিটের এক বিশাল চৌবাচ্চা বানিয়েছেন, বর্ষার জল জমানোর জন্য। (নভেম্বর ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আমার সঙ্গে যখন তাঁর দেখা হয় তখন সেটি শুকনো ছিল)।

এখন, জুনের শেষে, যখন বাজরা বোনা হয়, তখন বৃষ্টি না হয়ে বর্ষা আসে তার এক সপ্তাহ পর আর থেমেও যায় অনেক সময়ে অগাস্টের শেষ নাগাদ, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের মাসখানেক আগেই, জানালেন এখানকার কৃষকরা।

এর ফলে ফসল বোনা বা তোলার সব পরিকল্পনাই ওলটপালট হয়ে যায়। “আমার দাদামশায়ের সময়ে ওঁরা হাওয়ার গতি, নক্ষত্র, পাখির ডাক সম্বন্ধে সব জানতেন আর তার উপর নির্ভর করেই চাষাবাদের সময় ঠিক করতেন,” বললেন অমৃতা চৌধুরি।

“এখন এই পুরো ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে,” সহজ ভাষায় জানালেন লেখক-কৃষক দুলারাম সহারন। সহারনের যৌথ পরিবার, তারানগর ব্লকের ভারঙ গ্রামে ২০০ বিঘা জমি চাষ করে।

বিলম্বিত বর্ষা আর সময়ের আগেই চলে যাওয়া ছাড়াও বার্ষিক গড় এক থাকা সত্বেও বৃষ্টিপাতের ঘনত্ব কমে গেছে। “ধরমপাল সহারন যিনি গাজুভাস গ্রামে ১২ বিঘা জমি চাষ করেন, জানালেন, “এখন বৃষ্টির জোর কমে গেছে।” অমৃতার কথায়, “বর্ষা আসে যায়, কোনও ঠিকঠিকানা নেই তার। তার উপর বৃষ্টি সমানভাবে পড়েও না। এমন কি খেতের একদিক বৃষ্টি পেল আর অন্য দিক পেল না — এমনটাও হয়।”

Left: Dharampal Saharan of Gajuvas village says, 'I am not sowing chana because there is no rain after September'. Right: Farmers in Sadinsar village speak of the changing weather – Raghubir Bagadiya (also a retired army captain), Narain Prasad (former high school lecturer) and Shishupal Narsara (retired school principal)
PHOTO • Sharmila Joshi
Left: Dharampal Saharan of Gajuvas village says, 'I am not sowing chana because there is no rain after September'. Right: Farmers in Sadinsar village speak of the changing weather – Raghubir Bagadiya (also a retired army captain), Narain Prasad (former high school lecturer) and Shishupal Narsara (retired school principal)
PHOTO • Sharmila Joshi

বাঁদিকে: গাজুভাস গ্রামের ধরমপাল সহারন বললেন, ‘আমি চানা বুনবো না কারণ সেপ্টেম্বরের পর আর বৃষ্টি হয় না। ডানদিকে: সাদিনসার গ্রামের কৃষকরা আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করলেন — রঘুবীর বগাড়িয়া (তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনও বটে), নারায়ণ প্রসাদ (প্রাক্তন উচ্চবিদ্যালয় শিক্ষক) এবং শিশুপাল নরসরা (বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক)

১৯৫১ থেকে ২০০৭ অবধি চূড়ান্ত বৃষ্টিপাতের হিসাবও আছে আরএসএপিসিসির কাছে। কিন্তু সার্বিক অবস্থা লক্ষ্য করে তাঁরা জানাচ্ছেন যে রাজ্যে মোটের উপর বৃষ্টিপাত কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এবং “জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাষ্পীভবন বাড়বে।”

দীর্ঘকাল ধরেই চুরু জেলার কৃষকেরা, অক্টোবর মাসের ও পরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির বর্ষা পরবর্তী ঝিরঝিরে বৃষ্টির উপর নির্ভর করতেন চিনাবাদাম ও বার্লির মতো রবিশস্য চাষের জন্য। এই ঝিরঝিরে বৃষ্টি যা “ইয়োরোপ আমেরিকার মধ্যবর্তী মহাসাগর থেকে, পাকিস্তান পার করে যে চক্রবাত বর্ষার সঙ্গে আসতো তা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে,” বললেন হরদয়ালজি।

এই বর্ষা থেকে জল পেত ফলন্ত চানাগাছগুলি — তারানগরকে ‘দেশের চানার বাটি’ বলা হত — এখানকার কৃষকদের কাছে এ ছিল এক গর্বের বিষয় জানালেন দুলারাম। “ফসল এতো ভালো হত যে আমরা উঠানে তা স্তূপ করে রেখে দিতাম।” সেই বাটি আজ প্রায় খালি হয়ে গেছে। “২০০৭ সালের পর থেকে আমি আর চানা বুনছিই না কারণ সেপ্টেম্বরের পর থেকে আর বৃষ্টি হয় না,” বললেন ধরমপাল।

নভেম্বর মাস নাগাদ তাপমাত্রা নামতে শুরু করলে চুরুর চানা ভালোমতো অঙ্কুরিত হয়ে উঠত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে, এখানে এমনকি শীতকালও বদলে গেছে।

*****

আরএসএপিসিসির তথ্য অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের পর সবচেয়ে অধিক সংখ্যক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে রাজস্থানের উপর দিয়ে — ১৯০১ থেকে ১৯৯৯ — এই এক শতাব্দীর মধ্যে ১৯৫টি (১৯৯৯ সালের পর এই বিষয়ে আর কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই)। এঁদের মতে রাজস্থানের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যেমন বেড়েছে তেমনই বেড়েছে তার সর্বনিম্ন তাপাঙ্ক — যেমন ভারতের সমভূমি অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপাঙ্ক ২০২০ সালে ছিল চুরুতেই, ৪.১ ডিগ্রি।

অথচ চুরুর বহু মানুষ মনে করেন যে শীত আর আগের মতো পড়ে না। “আমার ছোটোবেলায় (প্রায় বছর পঞ্চাশ আগে) নভেম্বরের মধ্যে আমরা লেপ গায় দেওয়া শুরু করতাম — আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে ভোর ৪টে নাগাদ খেতে আসতাম তখন”, বললেন, গাজুভাা গ্রামের গোবর্ধন সহারন। খেতের বাজরা কাটা হয়ে গেছে, সেখানেই খেজুর গাছের ছায়ায় বসে তিনি বললেন, “আমি এখন শুধু একটা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে আছি — এই নভেম্বর মাসেও এতো গরম।”

Prof. Isran (left) of Churu town says: 'The entire summer has expanded'. Amrita Choudhary (right) of the Disha Shekhawati organisation in Sujangarh says, 'Even in this hot region, the heat is increasing'
PHOTO • Sharmila Joshi
Prof. Isran (left) of Churu town says: 'The entire summer has expanded'. Amrita Choudhary (right) of the Disha Shekhawati organisation in Sujangarh says, 'Even in this hot region, the heat is increasing'
PHOTO • Sharmila Joshi

চুরু শহরের অধ্যাপক ইসরান (বাঁদিকে) বললেন, ‘গোটা গ্রীষ্মকালটাই বেড়ে গেছে’। সুজানগড়ের দিশা শেখাওয়াতি সংগঠনের অমৃতা চৌধুরি (ডানদিকে) জানালেন, ‘এতো গরমের দেশেও গরম বাড়ছে’

“আগে আমার সংগঠন মার্চ মাসে যখন আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠান করত তখনও আমাদের গায়ে গরমজামা থাকত,” বললেন অমৃতা চৌধুরি। “এখন ওই সময়ে পাখা দরকার হয়। তা-ও বছর বছর এর ধরন বদলায়।”

সুজানগড় শহরের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সুশীলা পুরোহিত, ৩—৫ বছর বয়সী শিশুদের একটি ছোটো দলকে দেখিয়ে বললেন, “ওদের শীতের পোশাক পরানো হয়েছিল। কিন্তু এই নভেম্বর মাসেও গরম যায়নি। ওদের যে কী পোশাক পরে আসতে বলবো তাই বুঝি না।”

৮৩ বছর বয়সী প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক মাধব শর্মা অল্পকথায় গুছিয়ে বললেন, “কম্বল কোটের দিন (নভেম্বরে) গত হয়েছে!”

“আগে আমার সংগঠন মার্চ মাসে যখন আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠান করত তখনও আমাদের গায়ে গরমজামা থাকত,” বললেন অমৃতা চৌধুরি। “এখন ওই সময়ে পাখা দরকার হয়। তা-ও বছর বছর এর ধরন বদলায়।”

সুজানগড় শহরের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সুশীলা পুরোহিত, ৩—৫ বছর বয়সী শিশুদের একটি ছোটো দলকে দেখিয়ে বললেন, “ওদের শীতের পোশাক পরানো হয়েছিল। কিন্তু এই নভেম্বর মাসেও গরম যায়নি। ওদের যে কী পোশাক পরে আসতে বলবো তাই বুঝি না।”

৮৩ বছর বয়সী প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক মাধব শর্মা অল্পকথায় গুছিয়ে বললেন, “কম্বল কোটের দিন (নভেম্বরে) গত হয়েছে!”

*****

প্রলম্বিত গ্রীষ্মকাল কোট কম্বলের দিনকে গিলে খেয়েছে। “আগে বসন্তকাল সহ চারটি ঋতু স্পষ্ট বুঝতে পারতাম,” বললেন মাধবজি। “এখন কেবল একটি ঋতুই আছে — আট মাসব্যাপী গ্রীষ্মকাল। এই পরিবর্তন অনেকদিন ধরে হয়েছে।”

“আগে মার্চ মাসেও ঠাণ্ডা থাকতো,” বললেন তারানগরের কৃষক সংগঠন-কর্মী, নির্মল প্রজাপতি। “এখন অনেক সময়ে ফেব্রুয়ারির শেষদিকেই গরম পড়তে শুরু করে আর অগস্টের বদলে তা চলে অক্টোবর বা তারও পর অবধি।”

প্রজাপতি জানালেন যে এই বাড়তি গরমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চুরু অঞ্চলে কৃষিকাজের সময়ে বদলে দিতে হয়েছে — কৃষক এবং কৃষিশ্রমিকরা এখন ভোরের দিকে বা বিকেলের শুরুতে, যখন তুলনায় একটু ঠাণ্ডা থাকে, তখন কাজ করেন।

তাছাড়া এই প্রলম্বিত তাপ লাগাতার চলে। অনেকের মনে আছে এখানে প্রতিসপ্তাহে শোঁ শোঁ করে আঁধি বা বালির ঝড় বয়ে যেতো আর সর্বত্র রেখে যেতো বালির প্রলেপ। রেলপথ বালিতে ঢেকে যেতো, গোটা বালির স্তুপ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে যেত, খেতে কৃষকরা ঘুমিয়ে থাকলে তাঁরাও বালির প্রলেপে ঢাকা পড়তেন। “পশ্চিমা বায়ু আঁধি নিয়ে আসতো,” জানালেন, বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরদয়ালজি। এমন কি আমাদের চাদরও বালিতে ভরে যেতো। এখন আর আঁধি দেখাই যায় না এ অঞ্চলে।”

Left: The Chakravat drizzles have mostly disappeared, says Hardayalji Singh, retired teacher and landowner. Centre: Sushila Purohit, anganwadi worker in Sujangarh, says 'It is still hot in November. Right: Nirmal Prajapati, farm activist in Taranagar, says work hours have altered to adapt to the magnifying summer
PHOTO • Sharmila Joshi
Left: The Chakravat drizzles have mostly disappeared, says Hardayalji Singh, retired teacher and landowner. Centre: Sushila Purohit, anganwadi worker in Sujangarh, says 'It is still hot in November. Right: Nirmal Prajapati, farm activist in Taranagar, says work hours have altered to adapt to the magnifying summer
PHOTO • Sharmila Joshi
Left: The Chakravat drizzles have mostly disappeared, says Hardayalji Singh, retired teacher and landowner. Centre: Sushila Purohit, anganwadi worker in Sujangarh, says 'It is still hot in November. Right: Nirmal Prajapati, farm activist in Taranagar, says work hours have altered to adapt to the magnifying summer
PHOTO • Sharmila Joshi

বাঁদিকে: চক্রবাতের সঙ্গে আসা ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর হয়ই না, বললেন অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যালয় শিক্ষক ও জমির মালিক হরদয়ালজি সিং। মাঝখানে: অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সুশীলা পুরোহিত বললেন, ‘এই নভেম্বর মাসেও গরম চলছে’। ডানদিকে: তারানগরের কৃষক সংগঠনের কর্মী নির্মল প্রজাপতি জানালেন যে বাড়তি গরমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কাজের সময়ে বদল ফেলতে হয়েছে

মে জুন মাসে প্রবল গ্রীষ্মের সময়ে কয়েক ঘণ্টা জুড়ে শুষ্ক, গরম জোরালো হাওয়া—লু, এসে মাঝে মাঝে বালির ঝড়ের ছেদ ঘটাতো। বছর ৩০ আগে আঁধি আর লু নিয়মিত বইত চুরুতে — তখন এই দুটি মিলে তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করতো বলে জানালেন নির্মল “এবং আঁধি যে মিহি ধুলো জমিতে এনে ফেলত তা মাটির উর্বরতা বাড়াত।” এখন গরম চলতেই থাকে, থার্মোমিটারের পারা ৪০ ডিগ্রিতেই দাঁড়িয়ে থাকে। “আমার মনে আছে, প্রায় ৫—৭ বছর পর ২০১৯ সালে একটা আঁধি হয়েছিল,” তিনি বললেন মনে করে।

আটকে পড়া এই তাপ গায়ে ফোসকা ধরানো গরমকালকে প্রসারিত করে। “রাজস্থানে আমরা অতিগ্রীষ্মের সঙ্গে অভ্যস্ত,” বললেন তারানগরের কৃষক সংগঠনের কর্মী ও হরদয়ালজির পুত্র, উমরাও সিং। “কিন্তু এই প্রথম কৃষকরা এখানে গরমকে ভয় পেতে শুরু করেছে।”

*****

জুন ২০১৯-এই রাজস্থান প্রথম ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখলো এমন নয়। জয়পুরের আবহাওয়া দপ্তরের রেকর্ড দেখাচ্ছে, ১৯৯৩ সালের জুন মাসে চুরুর গ্রীষ্মের পারা চড়েছিল ৪৯.৮ ডিগ্রিতে। ১৯৯৫ সালের মে মাসে বারমের এই তাপমাত্রাকে ০.১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। এরও আগে, গঙ্গানগর দেখেছে ৫০ ডিগ্রি, জুন ১৯৩৪ সালে আর মে ১৯৫৬ সালে আলোয়ার পৌঁছেছিল ৫০.৬ ডিগ্রিতে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আই এলো ও), ২০১৯ সালের রিপোর্ট জানাচ্ছে যে যদিও সংবাদে ২০১৯ সালে চুরুকে পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান বলে দেখানো হয়েছে, আরব রাষ্ট্রগুলিসহ পৃথিবীর অন্যত্রও তামমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্পর্শ করেছে। ওয়ার্কিং অন আ ওয়ার্মর প্ল্যানেট নামের একটি রিপোর্ট বলছে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন ধারার উপর নির্ভর করে ভারতবর্ষের তাপমাত্রা, ২০২৫ থেকে ২০৮৫ সালের মধ্যে ১.১ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি বাড়তে পারে।

আবহাওয়ার আন্তর্সরকার প্যানেল ও অন্যান্য সূত্র জানাচ্ছে পশ্চিম রাজস্থানের সমগ্র মরু অঞ্চলে (১৯.৬১ মিলিয়ন হেক্টর) তপ্ততর দিন আর উষ্ণতর রাত দেখা দেবে আর বৃষ্টিপাত কমবে ২১ শতাব্দীর শেষদিক থেকে।

চুরু শহরে ডঃ সুনীল জাণ্ডু বললেন, “৪৮-ডিগ্রি সেলসিয়াসের পর তাপমাত্রার প্রতি ডিগ্রির বাড়বৃদ্ধিই মানুষের গায়ে লাগে। মানুষের শরীরে, ৪৮ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রার প্রভাব সাংঘাতিক — ক্লান্তি, শরীরে জলাভাব আর (দীর্ঘ সময় জুড়ে শারীরিক শুষ্কতার কারণে) কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভবনা ছাড়াও সর্দিগরমি, বমিবমি লাগা, মাথা ঘোরা দেখা দিতে পারে। ডঃ জাণ্ডু, যিনি জেলার প্রজনন ও শিশুস্বাস্থ্য আধিকারিক, জানালেন যে ২০১৯ সালের মে-জুন মাসে অবশ্য এইসব লক্ষণের বৃদ্ধি তাঁর নজরে আসেনি। তাপপ্রবাহের কারণে মৃত্যুর কোনও খবরও চুরু থেকে পাওয়া যায়নি বলেই তিনি জানালেন।

আইএলওর রিপোর্টটিও অতিগরমের বিপদ সম্বন্ধে সচেতন করেছে -“আবহাওয়ার পরিবর্তনহেতু বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার বৃদ্ধি... তাপঘটিত অসুস্থতা বাড়াবে...শরীরের সহ্যক্ষমতার অতিরিক্ত তাপের শারীরিক প্রভাব...অতিরিক্ত গরমে সর্দিগরমি হতে পারে, এমনকি তাতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।”

Writer-farmer Dularam saharan (left) of Bharang village at the house of well-known veteran columnist Madhavji Sharma, in Churu town: 'Kambal and coat ka jamaana chala gaya'
PHOTO • Sharmila Joshi

চুরু শহরের বিখ্যাত বরিষ্ঠ সাংবাদিক মাধবজি শর্মার বাড়িতে ভরঙ গ্রামের কৃষক-লেখক দুলারাম সহারন (বাঁদিকে) ‘কম্বল আর কোটের দিন গত হয়েছে’

ওই রিপোর্ট অনুসারে কালক্রমে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির উপর এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে আর যে সব দেশে দারিদ্র, কর্মপরিসরে অসংগঠিত ক্ষেত্র, খোরাকির জন্য চাষ বিদ্যমান সেই সব দেশই তাপবৃদ্ধির কারণে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কিন্তু সব ক্ষতি অত তাড়াতাড়ি, খুব সহজে ধরা পড়ে না বা হাসপাতালে দৌড়াবার মতো পরিস্থিতিও দ্রুত তৈরি হয় না।

অন্যান্য কারণের সঙ্গে এই তাপবৃদ্ধিজনিত চাপ “কৃষিশ্রমিকদের গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করে” বলে আইএলওর রিপোর্ট জানাচ্ছে... (এবং) ২০০৫—১৫ সালের মধ্যে অতিরিক্ত তাপবৃদ্ধির কারণে যত মানুষ পরিযায়ী হয়েছেন তা বিগত দশ বছরে হয়নি। এর মানে এমন হতেই পারে যে পরিযানের সময়ে অধিক সংখ্যক পরিবার এখন জলবায়ুর পরিবর্তনকে কারণ হিসাবে বিবেচনা করছে (নজরটান যোগ করা হয়েছে)।”

অংশত অনিশ্চিত বর্ষার কারণে চুরুতেও ফসলের ঘাটতি দীর্ঘ পরিযানের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দুলারাম সহারন বললেন, “আগে, আমাদের জমি থেকে ১০০ মণ (প্রায় ৩,৭৫০ কিলো) বাজরা পাওয়া যেতো। এখন খুব বেশি হলে ২০-৩০ মণ পাওয়া যায়। আমাদের গ্রাম ভরঙে এখনও ৫০ শতাংশ মানুষ চাষাবাদ করছে, বাকিরা চাষের কাজ ছেড়ে চলে গেছে।”

গাজুভাস গ্রামের ধরমপাল সহারনও জানালেন যে তাঁর ফসলের উৎপাদনও কমে গেছে।  সেই কারণে তিনি এখন জয়পুর বা গুজরাটের অন্য শহরে অটো চালাতে চলে যান বছরে ৩-৪ মাসের জন্য।

অধ্যাপক ইসরানও জানালেন যে ফসলের ঘাটতি পুরণ করতে এখন অনেকেই উপসাগরীয় দেশসমূহে অথবা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র বা পঞ্জাবের কারখানায় কাজ করতে চলে যান। (সরকারি নীতির কারণে গবাদি পশুর ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাওয়াও অবশ্য এর অন্যতম কারণ, তবে সে আবার অন্য এক কাহিনি।)

আইএলও রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীতে, “৮০ মিলিয়ন পূর্ণ সময়ের কাজের ফলাফলের সমান উৎপাদন ঘাটতি হতে পারে” তাপবৃদ্ধির কারণে। বিশ্বের তাপমত্রা যদি, যেমনটা এখন মনে করা হচ্ছে তেমন, অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর শেষে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বাড়ে, তাহলেই এমন হতে পারে।

*****

কেন বদলে যাচ্ছে চুরুর জলবায়ু?

অধ্যাপক ইসরান এবং মাধব শর্মা উভয়ের মতেই এর কারণ দুষণ। দুষণের কারণেই তাপ আটকে পড়ে এবং আবহাওয়ার ধাঁচ বদলে যায়। “তাপ বাড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হওয়ার কারণে। বন-জঙ্গল কমে গেছে আর যানবাহন বেড়ে গেছে,” বললেন তারানগর তেহসিলের ভালেরি গ্রামের কৃষক ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, রামস্বরূপ সহারন।

'After around 48 degrees Celsius,” says Dr. Sunil Jandu (left) in Churu town, even to people used to very high heat, 'every rise by a degree matters a lot'. Ramswaroop Saharan of Bhaleri village attributes the growing heat to global warming
PHOTO • Sharmila Joshi
'After around 48 degrees Celsius,” says Dr. Sunil Jandu (left) in Churu town, even to people used to very high heat, 'every rise by a degree matters a lot'. Ramswaroop Saharan of Bhaleri village attributes the growing heat to global warming
PHOTO • Sharmila Joshi

চুরু শহরে, ডঃ সুনীল জাণ্ডু (বাঁদিকে) বললেন, ‘৪৮ ডিগ্রির পর থেকে প্রতি ডিগ্রির বৃদ্ধি অতি গরমে অভ্যস্ত মানুষেরও গায়ে লাগে’। ভালেরি গ্রামের রামস্বরূপ সহারনের মতে তাপ বৃদ্ধির কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন

“শিল্প বাড়ছে, বাড়ছে শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহার আর গাড়িঘোড়া,” বললেন জয়পুর নিবাসী এক বরিষ্ঠ সাংবাদিক, নারায়ণ বারেথ। “পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নে এই সবেরই প্রভাব পড়ছে।”

‘থর মরুভূমির দ্বারদেশ’ - কোথাও কোথাও এইভাবে চুরুর উল্লেখ পাওয়া যায় — চুরু বিশ্বের আবহাওয়া পরিবর্তন-শৃঙ্খলের একটি টুকরো মাত্র। ১৯৭০ সালের পর থেকে বিশ্ব জুড়ে যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন চলছে সে সম্বন্ধে আলোচনা করেছে আবহাওয়ার পরিবর্তন বিষয়ক রাজস্থান স্টেট অ্যাকশন প্ল্যান। রাজস্থানের বাইরে সারা দেশব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন-জনিত যে পরিবর্তন ঘটছে এটি তার দিকে নজর দিয়েছে। পরিবর্তনের অনেকগুলিই শক্তি-ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ডের প্রসার, জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহারে বৃদ্ধি, কৃষিক্ষেত্রে বিবিধ নিঃসরণ, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নের প্রক্রিয়া, ‘জমির ব্যবহার, জমির ব্যবহারে পরিবর্তন ও বনপালন’ ইত্যাদি কারণে সংঘটিত হয়েছে। জলবায়ু বিবর্তনের জটিল নাগপাশে এসবই সতত পরিবর্তনশীল কিছু যোগসূত্র।

চুরু গ্রামে মানুষ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ সম্বন্ধে কথা না বললেও তার ফলাফল ভোগ করছেন। “অতীতে পাখা বা কুলার ছাড়াও আমরা গরম সামলে নিতে পারতাম। কিন্তু এখন এগুলি ছাড়া টেকা যায় না,” বললেন হরদয়ালজি।

অমৃতা আরও বললেন, “গরিব মানুষ এগুলি কিনতে পারেন না, ফলে অতিরিক্ত গরমে তাঁদের মধ্যে (অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে) দেখা দেয় উদরাময় ও বমি। আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া মানেই তো আবার খরচ।”

দিনের শেষে বাড়ি ফেরার জন্য সুজানগড়ের বাস ধরার আগে ভগবানী দেবী বললেন, “গরমে কাজ করা কঠিন। আমাদের বমি বমি লাগে, মাথা ঘোরে। এমন হলে আমরা কোনও গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম করি, লেবু-জল খাই আর তারপর আবার কাজে লেগে পড়ি।”

আন্তরিক সহায়তা ও পথনির্দেশের জন্য জয়পুরের নারায়ণ বারেথ, তারানগরের নির্মল প্রজাপতি এবং উমরাও সিং, সুজানগড়ের অমৃতা চৌধুরি এবং চুরু শহরে দলীপ সরাওয়াগকে সহৃদয় ধন্যবাদ।

পারি-র জলবায়ু বিবর্তনের উপর দেশব্যাপী রিপোর্টিং সংক্রান্ত প্রকল্পটি ইউএনডিপি সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য জলবায়ুর বিবর্তনের প্রকৃত চিত্রটি দেশের সাধারণ মানুষের স্বর এবং অভিজ্ঞতায় বিবৃত করা।

নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected] – এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] – এই আইডিতে।

বাংলা অনুবাদ: চিলকা

Reporter : Sharmila Joshi

शर्मिला जोशी पारीच्या प्रमुख संपादक आहेत, लेखिका आहेत आणि त्या अधून मधून शिक्षिकेची भूमिकाही निभावतात.

यांचे इतर लिखाण शर्मिला जोशी
Editor : P. Sainath

पी. साईनाथ पीपल्स अर्काईव्ह ऑफ रुरल इंडिया - पारीचे संस्थापक संपादक आहेत. गेली अनेक दशकं त्यांनी ग्रामीण वार्ताहर म्हणून काम केलं आहे. 'एव्हरीबडी लव्ज अ गुड ड्राउट' (दुष्काळ आवडे सर्वांना) आणि 'द लास्ट हीरोजः फूट सोल्जर्स ऑफ इंडियन फ्रीडम' (अखेरचे शिलेदार: भारतीय स्वातंत्र्यलढ्याचं पायदळ) ही दोन लोकप्रिय पुस्तकं त्यांनी लिहिली आहेत.

यांचे इतर लिखाण साइनाथ पी.
Series Editors : P. Sainath

पी. साईनाथ पीपल्स अर्काईव्ह ऑफ रुरल इंडिया - पारीचे संस्थापक संपादक आहेत. गेली अनेक दशकं त्यांनी ग्रामीण वार्ताहर म्हणून काम केलं आहे. 'एव्हरीबडी लव्ज अ गुड ड्राउट' (दुष्काळ आवडे सर्वांना) आणि 'द लास्ट हीरोजः फूट सोल्जर्स ऑफ इंडियन फ्रीडम' (अखेरचे शिलेदार: भारतीय स्वातंत्र्यलढ्याचं पायदळ) ही दोन लोकप्रिय पुस्तकं त्यांनी लिहिली आहेत.

यांचे इतर लिखाण साइनाथ पी.
Series Editors : Sharmila Joshi

शर्मिला जोशी पारीच्या प्रमुख संपादक आहेत, लेखिका आहेत आणि त्या अधून मधून शिक्षिकेची भूमिकाही निभावतात.

यांचे इतर लिखाण शर्मिला जोशी
Translator : Chilka

Chilka is an associate professor in History at Basanti Devi College, Kolkata, West Bengal; her area of focus is visual mass media and gender.

यांचे इतर लिखाण Chilka