বাপু খন্দারে পশুদের অঙ্গসজ্জার উপকরণ তথা ঘন্টা বিক্রি করেন, পাশাপাশি পশুপালন ও চাষের কাজে ব্যবহৃত দড়ি এবং আংটাও বিক্রি করে থাকেন। এইসব সরঞ্জাম নিয়ে তিনি সাঙ্গলি জেলার আটপাড়ি এবং জাত আর সাতারা জেলার মাহস্ওয়াড় ও খটাভ তালুক তথা নিকটবর্তী অঞ্চলের সাপ্তাহিক হাটগুলিতে ভ্রমণ করেন। কিন্তু মহারাষ্ট্রের খরা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় পশুদের জন্য জল ও খাদ্য জোগানোই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। গবাদি পশু এবং ছাগলের ব্যাবসায় চরম মন্দা চলছে। এর ফলে খন্দারের বিক্রিও ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
বুধবারের মাহস্ওয়াড় হাটে আমাদের সঙ্গে খন্দারের দেখা হয়, তাঁর বয়স ৩০-এর কোঠায়। খন্দারে ঢোর নামের তফসিলি জাতিভুক্ত, পরম্পরাগতভাবেই ঢোর সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই জিনিসগুলি তৈরি করেন। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে আটপাড়ি গ্রাম থেকে তিনি মাহস্ওয়াড় এসেছেন। তখন বেলা সাড়ে দশটা, হাট বন্ধ হওয়ার মুখে। মানুষ শেয়ারের অটো বা জিপগুলিতে করে নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। মাংস ব্যবসায়ীরা তাঁদের ভ্যানগাড়িতে পাঁঠাগুলিকে তুলছেন এবং কতিপয় বিক্রেতা শেষ মুহূর্তের গ্রাহকের আশায় বসে আছেন।
যে টেম্পোতে করে খন্দরে নানান স্থানে ঘুরে ঘুরে নিজের পসরা বেচেন, সেই টেম্পোগাড়িই তাঁর দোকান, গাড়ির পেছনের পাল্লা খুলে পসরা নিয়ে বসে পড়েন তিনি। ভেতরের আংটায় ঝোলানো রকমারি সামগ্রী এবং পশুসজ্জার উপকরণ - দাভে (ছাউনির তলায় বা চারণভূমিতে পশুদের বাঁধার জন্য ব্যবহৃত দড়ি), কাসরা (গরু বলদকে গরুর গাড়ির সঙ্গে জোতার জন্য ব্যবহৃত আরেকরকম দড়ি), গোফান (পাথর ভরার খোপ সমেত একধরনের গুলতি যা ফসল খেতে বসা পাখিদের তাড়াতে ব্যবহার করা হয়), মুসকি (পশুর মুখ ঢেকে রাখার আচ্ছাদন যাতে সে ফসল না খেয়ে ফেলে), একটি ঘুঙুর-মাল (ছাগলের গলায় বাঁধার ঘন্টি-মালা), কন্ডা (পশমের বলে বাঁধা ছোটো ছোটো ঘন্টার মালা), এবং মোরখি (নাকে বাঁধার জন্য ব্যবহৃত একধরনের দড়ি)।
তিনি খরিদ্দারের অপেক্ষায় ছিলেন। “যাতায়াত বাবদ আমি ৪০০ টাকা খরচ করেছি, অথচ এতক্ষণে আমার মাত্র ৩৫০ টাকার বিক্রি হয়েছে, তাও আবার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। এখনও পর্যন্ত একজন খুচরো ক্রেতাও এসব কিনতে আসেনি,” প্রায় ফাঁকা কাঠের ক্যাশবাক্স দেখিয়ে খন্দারে জানালেন। “হাট এখন বন্ধ। হাটে বেচাকেনা বলতে একমাত্র [ছাগল] মাংস। দেখি আশপাশের অন্য সাপ্তাহিক হাটগুলিতে কিছু বেচতে পারি কিনা।”
কভারচিত্র: বিনাইফার ভারুচা
বাংলা অনুবাদ : স্মিতা খাটোর