৮২ বছর বয়সী আরিফা জীবন কম দেখেননি। আধার কার্ড অনুসারে তাঁর জন্ম তারিখ ১লা জানুয়ারি ১৯৩৮। আরিফা জানেন না এই তথ্য সঠিক কিনা। তিনি কেবল জানেন যে নিজের ১৬ বছর বয়সে, ২০ কোঠায় বয়স রিজওয়ানের দ্বিতীয় স্ত্রী হয়ে তিনি হরিয়ানার নুহ্‌ জেলার বিওয়ান গ্রামে এসেছিলেন। আরিফা (নাম পরিবর্তিত) মনে করে বললেন, “আমার দিদি (রিজওয়ানের প্রথম স্ত্রী) ও তার ছয় সন্তান, দেশভাগের সময়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার মা রিজওয়ানের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন।”

তাঁর আবছা মনে পড়ে, একবার গান্ধীজী তাঁদের গ্রামে এসেছিলেন আবেদন করতে যাতে মেও মুসলমানরা পাকিস্তানে চলে না যান। গান্ধীজীর আগমনের স্মরণে প্রতিবছর ১৯শে ডিসেম্বর নুহ্‌ জেলার ঘাসেরা গ্রামে মেওয়াত দিবস পালিত হয় (২০০৬ অবধি নুহ্‌ পরিচিত ছিল মেওয়াত নামে)।

পাশে বসিয়ে যে তাঁর মা তাঁকে বুঝিয়ে বলেছিলেন কেন আরিফার রিজওয়ানকে বিয়ে করা উচিত সেকথাই বরং তাঁর বেশ স্পষ্ট মনে পড়ে। “ওর তো আর কিচ্ছু রইল না - এই কথা বলে মা আমাকে ওর হাতে তুলে দিল,” বললেন আরিফা — তাঁর মনে পড়ে কীভাবে নিজের গ্রাম রেঠোরা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের বিওয়ান হয়ে গেল তাঁর আপন জায়গা। মানব উন্নয়ন সূচকে একেবারে নীচের দিকে দেশের এমন এক জেলাতেই দুটি গ্রাম - রেঠোরা ও বিওয়ান - অবস্থিত।

হরিয়ানা রাজস্থান সীমান্তে, আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশে, দেশের রাজধানী থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে ফিরোজপুর ঝিরকা ব্লকের এক গ্রাম বিওয়ান। পাথাপিছু আয়ে দেশে তৃতীয় স্থানাধিকারী, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও শিল্পের কেন্দ্রস্থল, দক্ষিণ হরিয়ানার গুরুগ্রামের ভিতর দিয়ে দিল্লি থেকে সড়ক পথ এসে পৌঁছেছে দেশের মধ্যে সর্বাধিক অনগ্রসর জেলার সূচকে ৪৪তম স্থানাধিকারী নুহ্‌-তে। এখানে, সবুজ প্রান্তর, শুষ্ক পার্বত্য অঞ্চল, নিম্নমানের পরিকাঠামো ও জলাভাব আরিফাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী।

হরিয়ানার এই অঞ্চলের একটা বড়ো অংশ জুড়ে তথা পার্শ্ববর্তী রাজস্থানের কিছু এলাকায় মেও মুসলমানদের বাস। নুহ্‌ জেলার জনসংখ্যার ৭৯.২ শতাংশই মুসলমান (জনগণনা ২০১১)

১৯৭০ থেকে, আরিফার স্বামী রিজওয়ান, বিওয়ান থেকে হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত বালি, পাথর এবং সিলিকা খাদানে কাজ করতে শুরু করার পর আরিফার জীবনকে বেষ্টন করে রেখেছিল কেবলই পাহাড় আর তাঁর প্রধান কাজ হয়েছিল জল নিয়ে আসা। ২২ বছর আগে রিজওয়ানের মৃত্যুর পরে, আট সন্তানসহ নিজের পেট চালাতে দিনে মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকার বিনিময়ে, আরিফাকে জমিতে কাজ নিতে হয়েছিল। আরিফা আরও বললেন “আমাদের সমাজে বলে যত খুশি বাচ্চা হোক আল্লা ঠিক ব্যবস্থা করবেন।”

Aarifa: 'Using a contraceptive is considered a crime'; she had sprained her hand when we met. Right: The one-room house where she lives alone in Biwan
PHOTO • Sanskriti Talwar
Aarifa: 'Using a contraceptive is considered a crime'; she had sprained her hand when we met. Right: The one-room house where she lives alone in Biwan
PHOTO • Sanskriti Talwar

আরিফা: ‘জন্মনিয়ন্ত্রক ব্যবহার করাকে অপরাধ মনে করা হয়’; আমাদের যখন দেখা হয় ওঁর তখন হাত মচকে গিয়েছিল। ডানদিকে: এই এক কামরার ঘরে তিনি একা থাকেন

তাঁর চার বিবাহিতা কন্যা থাকেন বিভিন্ন গ্রামে। নিজের নিজের পরিবার নিয়ে চার পুত্র কাছেই থাকেন; এঁদের মধ্যে তিনজন কৃষক আর একজন বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। আরিফা তাঁর এক কামরার বাড়িতে একা থাকতেই পছন্দ করেন। তাঁর বড়ো ছেলের ১২টি সন্তান। তিনি দাবি করলেন যে তাঁরই মতো, তাঁর পুত্রবধুরাও কেউ জন্মনিরোধক ব্যবহার করেন না। “খান বারো সন্তান হওয়ার পর ও নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়,” সেইসঙ্গে তিনি বললেন, “জন্মনিরোধক ব্যবহার করাকে আমাদের ধর্মে পাপ বলে মনে করা হয়।”

রিজওয়ানের মৃত্যু বার্ধক্যজনিত কারণে হলেও এখানে অনেকের স্বামীই মারা গেছেন যক্ষ্মা রোগে। বিওয়ানে ৯৫৭ জনের মৃত্যু যক্ষ্মা রোগে হয়েছে, এমন হিসাব আছে। এঁদের মধ্যে আছেন, বাহারের স্বামী দানিশ (সব নাম পরিবর্তিত)। বিওয়ানের যে বাড়িতে তিনি ৪০ বছর ধরে বাস করেছেন, সেখানেই ২০১৪ সালে দেখেছেন যক্ষ্মার কারণে স্বামীর স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি হচ্ছিল। “ওর বুকে ব্যথা হত আর কাশিতে রক্ত উঠত,” তিনি মনে করে বললেন। বাহারের বয়স এখন প্রায় ৬০ — তাঁর এবং পাশাপাশি বাড়িতে বসবাসকারী তাঁর দুই বোনের স্বামীরাও একই বছর মারা গেছেন যক্ষ্মা রোগে। “লোকে বলে, আমাদের ভাগ্যে ছিল তাই এমন হয়েছে। কিন্তু আমরা দায়ী করি এই পাহাড়কে। এই পাহাড়ই আমাদের সর্বনাশ করেছে।”

(ফরিদাবাদ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতির পর, ২০০২ সালে, উচ্চতম ন্যায়ালয়, হরিয়ানায় খননকার্য বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা কেবল পরিবেশের ক্ষতিই রোধ করার জন্য। এতে যক্ষ্মার কোনও উল্লেখই নেই। লোকের মুখে শোনা কথা ও অল্প কয়েকটি রিপোর্ট এই দুটির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনে সহায়তা করে।)

বিওয়ানের নিকটতম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সাত কিলোমিটার দূরে জেলা সদর নুহ্‌তে অবস্থিত — সেখানকার এক কর্মী, পবন কুমার, ২০১৯ সালে যক্ষ্মাজনিত কারণে মৃতের তালিকায় ৪৫ বছর বয়সী জনৈক ওয়াইজ-এর নাম দেখালেন। রেকর্ড বলছে, বিওয়ানে আরও সাত জন যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি আছেন। “এরচেয়ে বেশিও থাকতে পারে, সবাই তো আর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসে না,” বললেন পবন কুমার।

ওয়াইজের স্ত্রী ৪০ বছর বয়সী ফাইজা (সব নামই পরিবর্তিত)। নিজের গ্রাম, রাজস্থানের, ভরতপুর জেলার নৌগাঁওয়ার কথা বলতে গিয়ে ফাইজা বললেন, “নৌগাঁওয়ায় কোনও কাজ ছিল না। বিওয়ানে খনির কাজের কথা জানতে পেরে আমার স্বামী এখানে চলে আসে। এক বছর পর আমিও এখানে এসে ঘর বাঁধি ওর সঙ্গে।” ফাইজার ১২টি সন্তান হয়। সময়ের আগেই জন্মানোর কারণে তার মধ্যে চারজন মারা যায়। “একজন ভালো করে বসতে শিখল কি না, তার আগেই আমার আরেকটি বাচ্চা এসে হাজির হতো” তিনি বললেন।

তিনি ও আরিফা এখন মাসিক ১,৮০০ টাকা বিধবা ভাতার উপর নির্ভর করে জীবন কাটান। কদাচিৎ কাজ জোটে তাঁদের। “কাজ চাইলে বলে আমরা নাকি কাজ করার পক্ষে দুর্বল। বলে, এই ৪০ কিলো তুলবে কী করে?” নিত্য শোনা বিদ্রুপ নকল করে বললেন ৬৬ বছর বয়সী হাদিয়া (নাম পরিবর্তিত)। ফলে, ভাতার প্রতিটি টাকা বাঁচিয়ে রাখতে হয়। সামান্যতম চিকিৎসার জন্যেও যেতে হয় নুহ্‌য়ের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অটোরিক্সা করে সেখানে যেতে ভাড়া লাগে ১০ টাকা — পুরো পথ হেঁটে যাওয়া আসা করে ভাড়ার টাকাটা বাঁচান তাঁরা। “ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন এমন সব বয়স্ক মহিলারা একসঙ্গে হয়ে আমরা হাঁটা শুরু করি। পথে কয়েকবার বসে বিশ্রাম নিয়ে তবে আমরা যাই। গোটা দিনটা এতেই কেটে যায়,” বললেন হাদিয়া।

Bahar (left): 'People say it happened because it was our destiny. But we blame the hills'. Faaiza (right) 'One [child] barely learnt to sit, and I had another'
PHOTO • Sanskriti Talwar
Bahar (left): 'People say it happened because it was our destiny. But we blame the hills'. Faaiza (right) 'One [child] barely learnt to sit, and I had another'
PHOTO • Sanskriti Talwar

বাহার (বাঁদিকে): লোকে বলে আমাদের ভাগ্যে ছিল। কিন্তু আমরা দায়ী করি এই পাহাড়কে’। ফাইজা (ডানদিকে) - ‘একটা (বাচ্চা) ভালো করে বসতে শিখল কি না, তার আগেই আমার আরেকটা হাজির’

ছোটোবেলায় হাদিয়া কখনও স্কুলে যাননি। তিনি বলেন, হরিয়ানায় সোনিপতের খেত, যেখানে তাঁর মা কাজ করতেন, সেটাই তাঁকে সব শিখিয়েছে। ১৫ বছর বয়সে ফাহিদের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তারপর ফাহিদ যখন আরাবল্লির খাদানে কাজ করতে শুরু করেন হাদিয়ার শাশুড়ি জমিতে নিড়ানি দেওয়ার কাজ করতে একটি খুরপি দেন।

২০০৫ সালে ফাহিদ যক্ষ্মায় মারা যাওয়ার পর থেকে হাদিয়ার জীবন জুড়ে আছে কেবল খেতের কাজ, টাকা ধার করা আর তা শোধ করা। “আমি সারাদিন খেতে কাজ করতাম আর রাতের বেলায় বাচ্চাদের দেখাশুনা করতাম। একেবারে ফকিরের মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছিল আমার,” তিনি বললেন।

“বিয়ের একবছরের মধ্যেই আমার মেয়ে হয়। তারপর সব এক-দুবছর অন্তর জন্মাতে থাকে। আগেকার দিনে সব কিছু বিশুদ্ধ ছিল,” তাঁদের সময়ে প্রজনন সংক্রান্ত বিষয়ে নীরবতা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগ্রহণ বিষয়ে সচেতনতার অভাব প্রসঙ্গে একথা বলেন চার কন্যা ও চার পুত্রের মা, হাদিয়া।

নুহ্‌য়ের সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের, বরিষ্ঠ স্বাস্থ্য আধিকারিক, গোবিন্দ শরণেরও মনে পড়ে সেসব দিনের কথা। ত্রিশ বছর আগে তিনি যখন সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করতে শুরু করেছিলেন তখন মানুষ পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করত। এখন আর ঠিক তেমন পরিস্থিতি নেই। “আগে আমরা পরিবার পরিকল্পনার কথা তুললেই মানুষ রেগে উঠত। এখন মেও সম্প্রদায়ের মধ্যে কপার-টি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত স্বামী-স্ত্রী মিলেই গ্রহণ করলেও বাড়ির বড়োদের কাছে এ কথা গোপন রাখেন। মহিলারা, বহুসময়েই আমাদের তাঁদের শাশুড়িদের কাছ থেকে এই কথা লুকিয়ে রাখতে অনুরোধ করেন,” বললেন শরণ।

জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৪ (২০১৫-১৬) অনুসারে নুহ্‌য়ের গ্রামীণ পরিসরে ১৫-৪৯ বছর বয়সী বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে মাত্র ১৩.৫ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনার কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করেন। নুহ্‌ জেলার মোট প্রজনন ক্ষমতার হার ৪.৯ (জনগণনা ২০১১) সামগ্রিকভাবে হরিয়ানা রাজ্যের হার ২.১ -এর তুলনায়। নুহ্‌ জেলার গ্রামীণ পরিসরে ১৫-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ৩৩.৬ শতাংশ সাক্ষর, ২০-২৪ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশের বিবাহ হয় ১৮ বছর বয়সের আগে এবং মাত্র ৩৬.৭ শতাংশ মহিলার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয়।

নুহ্‌ জেলার গ্রামাঞ্চলে, কপার-টির মতো ইন্ট্রাইউটেরিন জন্মনিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন মাত্র ১.২ শতাংশ মহিলা। এর আংশিক কারণ এই যে কপার-টিকে শরীরের মধ্যে লাগিয়ে দেওয়ার অর্থ একটি বাইরের জিনিসের শরীরে প্রবেশ। “এবং এঁরা প্রায়ই বলেন যে, শরীরে এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটানো তাঁদের ধর্মের বিরোধী কাজ,” বললেন, নুহ্‌য়ের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহায়ক ধাত্রী-নার্স সুনীতা দেবী।

Hadiyah (left) at her one-room house: 'We gather all the old women who wish to see a doctor. Then we walk along'. The PHC at Nuh (right), seven kilometres from Biwan
PHOTO • Sanskriti Talwar
Hadiyah (left) at her one-room house: 'We gather all the old women who wish to see a doctor. Then we walk along'. The PHC at Nuh (right), seven kilometres from Biwan
PHOTO • Sanskriti Talwar

হাদিয়া (বাঁদিকে) তাঁর এক কামরার বাড়িতে: ‘ডাক্তার দেখাতে চায় এমন সব বৃদ্ধারা একজোট হয়ে হাঁটা শুরু করি’। বিওয়ান থেকে সাত কিলোমিটার দূরে নুহ্‌তে অবস্থিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (ডানদিকে)

এতকিছুর পরেও কিন্তু, পারিবারিক সাস্থ্য সমীক্ষা-৪ দেখায় যে, পরিবার পরিকল্পনার অপূর্ণ চাহিদা অর্থাৎ জন্মনিরোধক ব্যবহার করছেন না অথচ পরবর্তী সন্তান আনতে বিলম্বে (দুই সন্তানের জন্মের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে) আগ্রহী বা আর জন্ম দিতে (সন্তানের সংখ্যা সীমিত রাখতে আগ্রহী) আগ্রহী নন তেমন মহিলাদের হারও যথেষ্ট — গ্রামীণ পরিসরে এই হার ২৯.৪।

“নুহ্‌ মুসলমান প্রধান অঞ্চল হওয়ায়, বিবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের প্রবণতা এখানে চিরদিনই কম। সেইকারণেই এই অঞ্চলে অপূর্ণ চাহিদার হার এতো বেশি। সাংস্কৃতিক উপাদানের একটি বড়ো ভূমিকা আছে এখানে। এঁরা বলেন, সন্তান তো আল্লার দান,” বললেন হরিয়ানার পরিবার কল্যাণ বিভাগের স্বাস্থ্য আধিকারিক, ডঃ রুচি (ইনি কেবল নিজের নামটিই ব্যবহার করেন)। “স্বামী যদি সহযোগিতা করেন, নিয়মিত জন্মনিরোধক বড়ি এনে দেন তবেই তাঁর স্ত্রী নিয়মিত বড়ি খাবেন। কপার-টি থেকে একটা সুতো ঝোলে (ফলে গোপনীয়তা বজায় রাখা যায় না)। অবশ্য অন্তরা নামক জন্মনিরোধক ইনজেকশন বেরোনোর পর থেকে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এতে কোনওভাবে পুরুষের সহযোগিতার দরকার পড়ে না। একজন মহিলা নিজেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে ইনজেকশন নিয়ে যেতে পারেন।”

অন্তরা নামের জন্মনিরোধক ইনজেকশনের একটা ডোজ কাজ করে তিন মাস অবধি — হরিয়ানাই প্রথম রাজ্য যেখানে ২০১৭ সালে এই পদ্ধতি চালু হয়েছে এবং হওয়ার পর থেকেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। একটি সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুসারে, তখন থেকে ১৬,০০০ মহিলা এই পদ্ধতি গহণ করায় পরিবার কল্যাণ বিভাগের ২০১৮-১৯ সালের লক্ষ্যমাত্রা, ১৮,০০০-এর ৯২.২ শতাংশ পূর্ণ হয়ে গেছে।

একদিকে যেমন জন্মনিরোধক ইনজেকশন ধর্মীয় বিধিনিষেধ অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে, তেমনই অপরদিকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের অন্য বেশ কিছু বাধা বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে থেকেই গেছে। সমীক্ষাগুলিতে প্রমাণিত যে পরিষেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের ঔদাসীন্য ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘ প্রতীক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত পরামর্শ গ্রহণে মহিলাদের বাধা দেয়।

২০১৩ সালে মুম্বইয়ে অবস্থিত সিইএইচএটি (সেন্টার ফর এনকোয়েরি ইনটু হেলথ অ্যান্ড আলায়েড থিমস - স্বাস্থ্য ও  সেই সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধান কেন্দ্র) ধর্মের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিভেদমূলক আচরণ সম্বন্ধে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মহিলাদের ধারণা বিষয়ে একটি সমীক্ষা করে; তাতে দেখা যায় যে যদিও শ্রেণিভিত্তিক বৈষম্যমূলক আচরণ সব মহিলার সঙ্গেই করা হয়, মুসলমান মহিলারা এর সম্মুখীন হন সবচেয়ে বেশি — পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি নির্বাচন, নিজেদের সম্প্রদায় সম্বন্ধে বিরূপ মন্তব্য সহ্য করা, প্রজনন কক্ষে তাঁদের সঠিক যত্ন না নেওয়া এইসব ক্ষেত্রে তাঁরা বৈষম্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হন তাঁরা।

Biwan village (left) in Nuh district: The total fertility rate (TFR) in Nuh is a high 4.9. Most of the men in the village worked in the mines in the nearby Aravalli ranges (right)
PHOTO • Sanskriti Talwar
Biwan village (left) in Nuh district: The total fertility rate (TFR) in Nuh is a high 4.9. Most of the men in the village worked in the mines in the nearby Aravalli ranges (right)
PHOTO • Sanskriti Talwar

নুহ্‌ জেলার বিওয়ান গ্রাম (বাঁদিকে): এখানে মোট প্রজনন ক্ষমতার হার ৪.৯। বিওয়ানের বেশিরভাগ পুরুষ কাজ করেন, আরাবল্লি পর্বতমালার খাদানগুলিতে (ডানদিকে)

সিইএইচএটির সঞ্চালক সঙ্গীতা রেগে জানালেন, “যদিও সরকার প্রকল্পগুলি জন্মনিরোধক ব্যবস্থা বেছে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে বলে গর্ব করে, বাস্তবে স্বাস্থ্যকর্মীরাই সাধারণত মহিলাদের হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেন; মুসলমান মহিলাদের যেসব বাধার সম্মুখীন হতে হয় সেগুলি বুঝে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত জন্মনিরোধক বেছে নিতে সাহায্য করা দরকার।”

পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৪ (২০১৫-১৬) দেখায় যে নুহ্‌ জেলায় জন্মনিরোধকের অপূর্ণ চাহিদা বিশাল থাকা সত্ত্বেও, কোনওদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি এমন মহিলাদের মধ্যে মাত্র ৭.৩ শতাংশের সঙ্গেই কোনও স্বাস্থ্যকর্মী পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বিগত ১০ বছর ধরে বিওয়ানে কর্মরত ২৮ বছর বয়সী আশা-কর্মী সুমন বলছেন যে তিনি পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সাধারণত মহিলাদের উপরেই ছেড়ে দিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত সুমনকে জানিয়ে দিতে বলেন। সুমনের মতে দুর্বল পরিকাঠামোর কারণে স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে সব মহিলাদেরই ক্ষতি হয় কিন্তু বিশেষ অসুবিধা হয় বয়স্ক মহিলাদের।

“নুহ্‌য়ের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্য কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করে তবে একটা তিন চাকার গাড়ি পাওয়া যায়,” বললেন সুমন। “পরিবার পরিকল্পনার জন্য তো দূরের কথা অসুখবিসুখের কারণেও কাউকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে বলা কঠিন হয়ে যায়। হাঁটতে তাঁরা ক্লান্ত বোধ করেন। আমারও কিছু করার থাকে না।”

কয়েক দশক ধরে একই অবস্থা চলছে — বাহার জানালেন যে ৪০ বছরের বেশি তিনি এই গ্রামে আছেন; এই সময়ে গ্রামে প্রায় কিছুই বদলায়নি। তাঁর সাতটি সন্তান নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করায় মারা যায়। পরে যে ছয় জন জন্মেছে তারা সবাই বেঁচে গেছে। তাঁর কথায়, “সে সময়েও এখানে কোনও হাসপাতাল ছিল না, এখনও এই গ্রামে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই।”

প্রচ্ছদ চিত্র: নিউ - মিডিয়া শিল্পী প্রিয়াঙ্কা বোরার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে ভাব এবং অভিব্যক্তিকে নতুন রূপে আবিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত আছেন তিনি শেখা তথা খেলার জন্য নতুন নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করছেন ; ইন্টারেক্টিভ মিডিয়ায় তাঁর সমান বিচরণ এবং সেই সঙ্গে কলম আর কাগজের চিরাচরিত মাধ্যমেও তিনি একই রকম দক্ষ

পারি এবং কাউন্টার মিডিয়া ট্রাস্টের গ্রামীণ ভারতের কিশোরী এবং তরুণীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দেশব্যাপী রিপোর্টিং প্রকল্পটি পপুলেশন ফাউন্ডেশন সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য প্রান্তবাসী এই মেয়েদের এবং সাধারণ মানুষের স্বর এবং যাপিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই অত্যন্ত জরুরি বিষয়টিকে ঘিরে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।

নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected] এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] এই আইডিতে।

অনুবাদ : চিলকা

Anubha Bhonsle

मुक्‍त पत्रकार असणार्‍या अनुभा भोसले या २०१५ च्‍या ‘पारी फेलो’ आणि ‘आयसीएफजे नाइट फेलो’ आहेत. अस्‍वस्‍थ करणारा मणिपूरचा इतिहास आणि ‘सशस्‍त्र दल विशेष अधिकार कायद्या(अफ्‍स्‍पा)’चा तिथे झालेला परिणाम या विषयावर त्‍यांनी ‘मदर, व्‍हेअर इज माय कंट्री?’ हे पुस्‍तक लिहिलं आहे.

यांचे इतर लिखाण Anubha Bhonsle
Sanskriti Talwar

संस्कृती तलवार नवी दिल्ली स्थित मुक्त पत्रकार आहे. ती लिंगभावाच्या मुद्द्यांवर वार्तांकन करते.

यांचे इतर लिखाण Sanskriti Talwar
Illustration : Priyanka Borar

Priyanka Borar is a new media artist experimenting with technology to discover new forms of meaning and expression. She likes to design experiences for learning and play. As much as she enjoys juggling with interactive media she feels at home with the traditional pen and paper.

यांचे इतर लिखाण Priyanka Borar
Series Editor : Sharmila Joshi

शर्मिला जोशी पारीच्या प्रमुख संपादक आहेत, लेखिका आहेत आणि त्या अधून मधून शिक्षिकेची भूमिकाही निभावतात.

यांचे इतर लिखाण शर्मिला जोशी
Translator : Chilka

Chilka is an associate professor in History at Basanti Devi College, Kolkata, West Bengal; her area of focus is visual mass media and gender.

यांचे इतर लिखाण Chilka