পারি লাইব্রেরি -র কাছে ২০২৪ একটি নতুন মাইলফলক – পারি-র ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি তথ্য এবং নথিপত্র আমরা নিজেদের সংগ্রহে এনেছি এ’বছর। এর মধ্যে আছে নানা আইন ও বিধি, বইপত্র, নিয়ম-নির্দেশিকা, প্রবন্ধ, সংকলন, শব্দকোষ, সরকারি রিপোর্ট, পুস্তিকা, সমীক্ষা এবং প্রচুর প্রচুর নিবন্ধ।
এই বছরে রেকর্ড ভেঙেছে আরও নানান রকম, যার সবকটিই সুখপ্রদ নয় – ২০২৩ সালের রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসে উষ্ণতম বছর বলে ঘোষিত হয়েছে ২০২৪। দ্রুত বদলাতে থাকা জলবায়ু প্রভাব ফেলেছে পরিযায়ী প্রাণীদের জীবনধারায়, প্রতি পাঁচ প্রজাতিতে একটি এখন বিলুপ্তির পথে। আর বিপদের আওতায় ভারতের আসমুদ্র-হিমাচল জুড়ে থাকা জলাভূমি – দেশের সমস্ত ঝিল, খালবিল, সরোবর, তালাও, তাল, স্পাং, কোলা আর চেরুভু।
গরম আর দূষণের আন্তসম্পর্ক নিয়ে বহু তথ্যই সামনে এসেছে, এশিয়ায় বিশেষ করে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ধূলিকণার প্রকোপে বায়দূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভারতে তার ঘনত্ব ছিল কিউবিক মিটার প্রতি ৫৪.৪ মাইক্রোগ্রাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-নির্ধারিত ঊর্ধ্বসীমার চেয়ে যা ১১ গুণ বেশি। নয়াদিল্লিতে এই কিউবিক মিটার প্রতি ঘনত্ব ১০২.১ মাইক্রোগ্রাম, অর্থাৎ অবস্থা আরও খারাপ। রাজধানীর দূষণ অনুপ্রেরণা হয়েছে রাইড-শেয়ারিং পরিষেবার এক ঠিকা কর্মীকে নিয়ে একটি কমিক স্ট্রিপের।
পরপর দুই বছর তাপমানের রেকর্ড ভাঙার অর্থ হল প্যারিস চুক্তি ভঙ্গের দিকে আরও দুই ধাপ এগিয়ে যাওয়া। তবে তাপমান শুধু প্রকৃতিতেই বাড়েনি। দেশের ১৮তম লোকসভা গঠনের জন্য সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে চড়চড়িয়ে বেড়েছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পারদও।
২০১৮ সালে ভারত সরকারের অর্থমন্ত্রক যে ইলেক্টোরাল বন্ড চালু করেছিল, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে তা অসাংবিধানিক বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর এক মাস পরে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ান এবং নির্বাচন কমিশন এই বন্ডগুলির খরিদ্দারি এবং নগদ মূল্যায়ন-সম্পর্কিত তথ্য গণপরিসরে প্রকাশ করে।
ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে অনুদান দেওয়া সংস্থাগুলির শীর্ষ তিনে আছে ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস (পিআর অ্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড), মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং কুইক সাপ্লাই চেইন প্রাইভেট লিমিটেড। প্রাপকের তালিকায় শীর্ষে আছে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি (৬,০৬০ কোটি টাকা), তারপরেই সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস (১,৬০৯ কোটি টাকা) এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস (১,৪২২ কোটি টাকা)।
১৯২২ এবং ২০২২ সালের মধ্যে ভারতে সম্পদ বন্টনের একটি তুলনামূলক আলোচনা দেখাচ্ছে, ১৯২২ সালে দেশের ধনীতম ১ শতাংশ জনসংখ্যার হাতে মোট জাতীয় আয়ের যতটা পরিমাণ ছিল, ২০২২ সালে সেই পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ২০২২ সালে জাতীয় আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ দেশের সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
এর বিপ্রতীপে ২০২২-২৩ গৃহভিত্তিক পণ্য-উপভোগ ব্যয় সমীক্ষা আমাদের দেখাচ্ছে, গ্রামীণ ভারতের গড়পড়তা মানুষ গোটা মাসে মাত্র ৩,৭৭৩ টাকা পণ্য ও পরিষেবা খাতে ব্যয় করেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে শ্রমিক তথা কর্মীসমাজের গড় বাস্তব আয় কিছুমাত্র বৃদ্ধি পায়নি ।
২০২৪ সালে “ভারতকে ডিজিটাল ক্ষমতায়িত সমাজ এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি” হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে গৃহীত ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগ ১০ বছরে পা দিল। সেই ২০২৪ সালেই আবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নিরিখে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ভারত – এই নিয়ে ষষ্ঠ বছর।
ভারতে লিঙ্গবৈষম্য এবং লিঙ্গভিত্তিক অন্যায়ের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র আশার আলো দেখাতে পারেনি এই বছর – বিশ্ব লিঙ্গবিভেদ রিপোর্ট -এ ভারতের স্থান ১২৯ নম্বরে, যা গত বছরের থেকে দুই স্থান নিচে নেমেছে। শিক্ষা এবং রাজনীতির অঙ্গনে ভারতীয় নারীর অবস্থার ক্রম-অবনতিকেই ইঙ্গিত করে এই রিপোর্ট। এসডিজি জেন্ডার ইনডেক্স তালিকাতেও খারাপ ফল আমাদের – লিঙ্গসাম্যের নিরিখে ১৩৯টি দেশের মধ্যে ৯১ নম্বরে আছি আমরা।
লিঙ্গচেতনার কথা উঠল যখন, একথাও মনে রাখা দরকার দেশের অন্তত ১৩৫ জন বর্তমানে আসীন বিধায়কের বিরুদ্ধে নারীবিরোধী হিংসার মামলা চলছে – অপরাধের তালিকায় আছে শ্লীলতাহানি, বিয়ের জন্য অপহরণ, ধর্ষণ, বারংবার ধর্ষণ, গৃহহিংসা, যৌনকর্মের জন্য নাবালিকা ক্রয় এবং লিঙ্গভিত্তিক অবমাননা।
দেশের আইনকানুন ভালোভাবে জেনে রাখাটা নাগরিকের অবশ্যকর্তব্য। জনগণের পক্ষে যাতে সেটা সহজতর হয় সেকথা মাথায় রেখে জাস্টিস আড্ডা এ’বছর প্রকাশ করেছে ল অ্যান্ড এভরিডে লাইফ নামে দৈনন্দিন জীবনে আইনকানুনের নানা দিক নিয়ে এক পূর্ণাঙ্গ বিবরণী।
এছাড়াও পারি-র সংগ্রহে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য , ভাষা , লিঙ্গচেতনা , সাহিত্য এবং আরও হরেক বিষয়ের নানান নথি – সঙ্গে সারসংক্ষেপ এবং হাইলাইট। নির্দিষ্ট বিষয় ধরে ধরে পারি-তে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন একত্র করে যে লাইব্রেরি বুলেটিনগুলি প্রকাশ করি আমরা, এ’বছর সেই সংগ্রহও কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরের বছরে আমাদের লক্ষ্য, জনগণের এই লাইব্রেরির জানাশোনার পরিসরকে আরও অনেকটা ছড়িয়ে দেওয়া। সঙ্গে থাকুন!
পারি লাইব্রেরিতে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে চাইলে লিখুন এই ঠিকানায় : [email protected]
আমাদের কাজ যদি ভালো লাগে এবং পারি-র জন্য কাজ করতে যদি আগ্রহী থাকেন, তবে আমাদের লিখুন [email protected] ঠিকানায়। ফ্রিল্যান্স এবং স্বাধীন সাংবাদিক, প্রতিবেদক, চিত্রগ্রাহক, চিত্রনির্মাতা, অনুবাদক, সম্পাদক, অঙ্কনশিল্পী এবং গবেষকদের জন্য আমাদের অবারিত দ্বার।
প্রচ্ছদ নির্মাণ: স্বদেশা শর্মা
অনুবাদ: দ্যুতি মুখার্জী