ঝলমলে সবুজ ধানের খেতে দাঁড়িয়ে গানে গানে তাঁর হৃদয়খানি উজাড় করে দিলেন নরেন হাজারিকা, আর দিনকতক বাদেই সোনারং ধরবে শিষে শিষে। সপ্ততিপর নরেন জ্যাঠার সুরে তাল (করতাল) ধরেছেন রবিন হাজারিকা (৬০), ঢুলে সঙ্গত করছেন জিতেন হাজারিকা (৮২)। তিনজনেই তিতাবার মহকুমার বালিজন গাঁয়ের প্রান্তিক কৃষক। জোয়ান বয়সে এঁরা তিনজনেই ওস্তাদ বিহুবাস (বিহুশিল্পী) ছিলেন।
“চাইলে কথা বলতেই পারেন, তবে রঙ্গালি [বসন্তোৎসব] বিহুর গপ্প কিন্তু কোনদিনও ফুরোবে না!”
ফসল কাটার মরসুম যত এগিয়ে আসে, সোনালি ধানে ধানে ছেয়ে যায় খেত, স্থানীয় গোলাঘর উপচে পড়ে বোরা, জোহা আর ঐজুং (স্থানীয় প্রজাতির ধান)। নবান্ন ঘিরে চুটিয়া সমাজের পরিপূর্ণতার অনুভূতি ধরা পড়ে বিহু নামে [গীতিকা]। আসামের জোরহাট জেলায় এই গান প্রজন্মবাহিত। চুটিয়া জনগোষ্ঠী এখানকার ভূমিসন্তান, এঁদের সিংহভাগ কৃষিজীবী, মূলত আপার আসাম অঞ্চলে থাকেন।
প্রাচুর্য বোঝাতে অসমিয়া ভাষায় যে শব্দটা ব্যবহার হয়, তা হল থুক। এর অর্থ একগোছা সুপারি, নারকেল আর পান্থপাদক পাতা। নরেন জ্যাঠার গানে যে ‘মরমর থুক’-এর কথা শুনবেন, তাতে ‘মরম’ মানে প্রেম — পিরিতির ফসল। কৃষি সমাজে এই পিরিতির প্রাচুর্য অত্যন্ত মূল্যবান, তাই খেত-খামারের সীমানা ছাড়িয়ে পাক খেতে থাকে সংগীতশিল্পীদের সুর-তাল-কণ্ঠ।
“গাইতে গিয়ে হোঁচট খেলে, মাফ করে দিস আমারে”
তাঁরা মনেপ্রাণে চান, নতুন প্রজন্ম যেন এ সাংগীতিক পরম্পরার হাল ধরে, যাতে এ শিল্প মারা না যায়।
“ও হুনময়না,
সুয্যি তাহার পথচলাতে বাড়িয়ে আছে পা...”
অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র