“ইস্কুলে আরেকটু বেশি করে খাবার দিলে বড্ড ভালো হত।”

সাত বছরের বাসবরাজু তেলেঙ্গানার সেরিলিঙ্গমপল্লির মণ্ডল পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া। এ দেশের ১১.২ লাখ ইস্কুলের মতো রাঙ্গা রেড্ডি জেলার এই ইস্কুলটিতেও রান্না করা টাটকা খাবার দেওয়া হয় দুপুরবেলায়। বাসবরাজুর সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে দশ বছরের অম্বিকা, ইস্কুলে যাওয়ার আগে খাবার বলতে এক গেলাস গাঞ্জি (ভাতের মাড়) ছাড়া কিছুই জোটে না আর। তার মতো অনেকেই দিনের প্রথম ভরপেট খাবার বলতে মিড-ডে মিলের কথাই বোঝে।

ভারতের মিড-ডে মিল প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি কর্মদিনে সরকারি তথা সরকারি সহায়তা পোষিত ইস্কুল তথা সর্ব শিক্ষা অভিযানের অন্তর্গত রাজ্য-দ্বারা পরিচালিত ইস্কুলগুলিতে ১ম থেকে ৮ম শ্রেণির ১১.৪ কোটি পড়ুয়া বিনেপয়সায় আহার পায়। হ্যাঁ, আপনি বলতেই পারেন যে পেট ভরা থাকলে সে অঙ্কের প্যাঁচই হোক বা বানানের সঙ্গে কুস্তি, সবকিছুই বেশ আসান হয়ে যায়, তবে প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বাচ্চাদের ইস্কুলমুখী করা। (কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কথায়: ন্যূনতম ১৫ কোটি বাচ্চা ও কিশোর-কিশোরী আজও ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আওতার বাইরেই রয়ে গেছে।)

রাজকীয় প্রাথমিল বিদ্যালয়টি রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলার যোধগড় গ্রামে অবস্থিত। সেখানে গিয়ে দেখি যে দশ বছরের দক্ষ ভট্ট্ কেবল খানকতক বিস্কুট খেয়েই ক্লাসে এসেছে। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে আসামের নলবাড়ি জেলাতেও একই দৃশ্য। নং ৮৫৮ নিজ খগতা ইস্কুলে আসার আগে লিকার চা সহযোগে কেবল একটি রুটি খেয়েছিল আলিশা বেগম। ওর আব্বু একজন ফেরিওয়ালা, মা গৃহিণী।

Basavaraju
PHOTO • Amrutha Kosuru
Ambica
PHOTO • Amrutha Kosuru
Daksh Bhatt

আয়েশ করে ইস্কুলে মধ্যাহ্নভোজন সারছে বাসবরাজু (বাঁদিকে) ও অম্বিকা (মাঝখানে), বিশেষ করে যেদিনগুলোয় ডিম দেওয়া হয়, সেদিন খুব মজা। দিনে প্রথমবার ভরপেট খাবার খাচ্ছে দক্ষ ভট্ট (ডানদিকে); প্রাতঃরাশে খানকতক বিস্কুট ছাড়া আর কিছুই জোটেনি তার

প্রাথমিক ইস্কুলে (১ম-৫ম শ্রেণি) যে খাবার দেওয়া হয়, তাতে ৪৮০ ক্যালোরি সহ ১২ গ্রাম প্রোটিন থাকে। উচ্চ প্রাথমিক স্তরে যেটা বেড়ে হয় ৭২০ ক্যালোরি ও ২০ গ্রাম প্রোটিন। হতদরিদ্র তথা প্রান্তবাসী জাতি ও জনজাতির বাচ্চাকাচ্চাদের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ পুষ্টিকর খাবারদাবার তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বেঙ্গালুরু নগরের পাট্টানাগেরে মহল্লার নাম্মুরা সরকারি নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল এন. সুগুনা খেয়াল করে দেখেছেন: “একটা-দুটো বাচ্চা ছাড়া, ইস্কুলে এসে প্রত্যেকেই বিনামূল্যে খাবার খায়।” এই শিশুগুলির মা-বাবা উত্তর কর্ণাটকের ইয়াদগির (অনেকে ইয়াগিরিও লেখেন) থেকে আগত পরিযায়ী শ্রমিক, তাঁরা বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন নির্মাণক্ষেত্রে কাজ করেন।

২০২১ সালে যে প্রকল্পটির নাম পাল্টে ‘প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ’ বা ‘পিএম পোষণ’ করে দেওয়া হয়, সেই মিড-ডে মেল যোজনার প্রধান লক্ষ্য: “বাচ্চাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের মাত্রা বাড়াবার পাশাপাশি ইস্কুলে দাখিল হওয়ার সংখ্যা তথা হাজিরার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তথা ইস্কুলছুটের সংখ্যা হ্রাস হয়।” ১৯৯৫ সাল থেকে এই প্রকল্পটিতে অর্থ জোগান দিয়ে এসেছে কেন্দ্র, এবং ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্য তথা কেন্দ্রশাষিত অঞ্চলেই যোজনাটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ছত্তিশগড়ের রাইপুর জেলার মাটিয়া গ্রামের সরকারি ইস্কুল, একমুখ ভোজনরত জনা ৮০ পড়ুয়ারদের উপর নজর রেখেছেন প্রধান শিক্ষক পুনম যাদব। “বাচ্চারা যে খাবারটা খাচ্ছে, অধিকাংশ মা-বাবার পক্ষেই সেটা বন্দোবস্ত করা অসম্ভব,” জানালেন তিনি, “আরেকটা কারণে মিড-ডে মিলের নাম শুনলেই বাচ্চারা নেচে ওঠে, একে অপরের পাশে বসে খেতে পারাটা তাদের কাছে বিশাল আনন্দের ব্যাপার।”

ব্যাঞ্জনে নুন, মশলা ও তেল কিংবা চর্বি দিয়ে রাঁধা শস্যদানা, ডাল ও সবজি রয়েছে ঠিকই, তবে বেশ কয়েকটি রাজ্য নিজ নিজ স্বাদগন্ধ জুড়ে দিয়েছে খাদ্যতালিকায় — একথা বলা রয়েছে ২০১৫ সালে প্রকাশিত শিক্ষা মন্ত্রকের একটি রিপোর্টে । ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু ও কেরালার খাদ্যতালিকায় যোগ হয়েছে ডিম ও কলা, ওদিকে এক গেলাস করে দুধ (এবছর থেকে ডিমও দেওয়া হচ্ছে) দেওয়া হয় কর্ণাটকের পড়ুয়াদের। ইস্কুলে ইস্কুলে সবজি বাগান বানানোর উৎসাহ দেওয়া হয় ছত্তিশগড়, আসাম ও অরুণাচল প্রদেশে — যাতে মিড-ডে মিলের পাতে দেওয়ার জন্য খুব সহজেই শাকসবজি চাষ করা যায়। গোয়ায় গেলে দেখবেন মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি বহাল রয়েছে খাবার সরবরাহের কাজে, ওদিকে মণিপুর ও উত্তরাখণ্ডে তার বদলে প্রণোদিত করা হয় বাবা-মায়েদের। গুজরাত ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে দেখবেন, মধ্যাহ্নভোজের থালায় পুষ্টিকর খাদ্যবস্তু পৌঁছে দেওয়ার দ্বায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে স্থানীয় সমাজ।

Children from Kamar community at the Government Primary School in Footahamuda village, Chhattisgarh.
PHOTO • Purusottam Thakur
Their mid-day meal of rice, dal and vegetable
PHOTO • Purusottam Thakur

বাঁদিকে: ছত্তিশগড়, ফুটাহামুডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কামার সম্প্রদায়ের বাচ্চাকাচ্চারা। ডানদিকে: ভাত, ডাল ও সবজি সহযোগে তাদের মধ্যাহ্নভোজন

Kirti (in the foreground) is a student of Class 3 at the government school in Footahamuda.
PHOTO • Purusottam Thakur
The school's kitchen garden is a source of vegetables
PHOTO • Purusottam Thakur

বাঁদিকে: কীর্তি (ছবির অগ্রভাগে) ফুটাহামুডার সরকারি ইস্কুলের তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। ডানদিকে: বিদ্যালয়ের হেঁশেল সংলগ্ন এই বাগানটি শাকসবজির উৎস

ছত্তিশগড়ের ফুটাহমুডা গ্রাম, এখানকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোটে ১০ জন পড়ুয়ার দেখা মেলে। প্রত্যেকেই কামার জনজাতির মানুষ, এ রাজ্যে যাঁরা পিভিটিজি (পার্টিকুলারলি ভালনারেবল্ ট্রাইবাল গ্রুপ) রূপে চিহ্নিত। শিক্ষক রুবিনা আলির কথায়: “বনজ সামগ্রী আর জ্বালানির কাঠের খোঁজে হররোজ জঙ্গলে যান কামার মানুষজন। ওঁদেরকে ভরসা দিই যে বাচ্চাকাচ্চারা ইস্কুলে এলে পেটভরে খেতেও পাবে, আবার লেখাপড়াও করবে।” ধামতারি জেলার নাগরি ব্লকে অবস্থিত এই ছোট্ট ইস্কুলটির দায়দায়িত্ব সব তাঁর একার ঘাড়ে।

আসুন, এবার অন্য একটি জঙ্গলাকীর্ণ এলাকার দিকে নজর ফেরানো যাক — তামিলনাড়ুর সত্যমঙ্গলম। ইরোড জেলার গোবিচেত্তিপালাইয়ম তালুকের থালাইমালাই গাঁয়ে রাজ্য-দ্বারা পরিচালিত ট্রাইবাল রেসিডেনশিয়াল স্কুলে ফি দিন সম্বর মেখে ভাত খায় ১৬০টি বাচ্চা, হপ্তায় দুয়েকদিন ডিমের ঝোলও থাকে। পড়ুয়াদের অধিকাংশই সোলিগা ও ইরুলা জনজাতির সদস্য (উভয়েই তফসিলি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত)।

২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অবধি মোট ১৩০,৭৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে পিএম পোষণের খাতে — যেটা কিনা কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে ভাগাভাগি করে নেওয়ার কথা। অথচ তহবিল বণ্টন ও খাদ্যশস্য হস্তান্তরে (ছয় লাখ মেট্রিক টনেরও অধিক) মাঝেমাঝেই দেখা দেয় গড়বড়, তখন নিজের নিজের গাঁটের কড়ি খসিয়ে বাজার থেকে শস্যদানা কিনতে বাধ্য হন শিক্ষক তথা রাঁধুনিরা। হরিয়ানার ইগরাহ গ্রামে, রাজ্য-দ্বারা পরিচালিত শহীদ হাবিলদার রাজকুমার আরএমভি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক পারি-কে জানান যে এমনটা হলেই, “আমরা টিচাররা মিলে চাঁদা তুলি, বাচ্চাগুলো যাতে ক্ষুধার্ত না থেকে যায়।” হরিয়ানার জিন্দ জেলার এই ইস্কুলটিতে কাঠুরে, দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক সহ বিভিন্ন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়তে আসে। পোলাও, ভাত-ডাল ও রাজমা-ভাত খেতে দেওয়া হয় তাদের।

এ দেশের দরিদ্রতম শিশুদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়ার এই প্রকল্পটি আরও আগে শুরু করা উচিত ছিল। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা ২০১৯-২১ ( এনএফএইচএস-৫ ) অনুযায়ী অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে ৩২ শতাংশই আন্ডারওয়েট, অর্থাৎ বয়সের অনুপাতে তাদের ওজন কম। এ দেশে মারা যাওয়া যে শিশুদের বয়স পাঁচেরও কম, তাদের ৬৯ শতাংশই অপুষ্টির শিকার — ২০১৯ সালের ইউনিসেফের একটি রিপোর্টে লেখা আছে একথা।

PHOTO • Ritayan Mukherjee
PHOTO • Ritayan Mukherjee

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট ২ ব্লক, দীপাবলির ছুটি চললেও দুপুরের খাবার নিতে আন্দুল পোঁতা গ্রামের (বাঁয়ে) ধোপাবেড়িয়া শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে এসেছিল বাচ্চারা। নিজের ভাগের খিচুড়ি নিতে এসেছিল রনি সিংহও (ডাইনে)

ভয়াবহ এই বাস্তবটি মাথায় রাখলে খুব সহজেই বোঝা যায় যে কেন ছুটির সময়েও মায়ের হাত ধরে নিজের ভাগের খিচুড়িটুকু নিতে পশ্চিমবঙ্গের আন্দুল পোঁতা গ্রামের ধোপাবেড়িয়া শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে আসে রনি সিংহ (৮)। স্থানীয়দের লোকজন অবশ্য এটিকে ‘খিচুড়ি স্কুল’ বলেই চেনেন। বিদ্যালয়ের তালিকায় নাম রয়েছে ৭০টি বাচ্চার। অক্টোবরের শেষের দিকে পারি যখন উত্তর ২৪ পরগনার এই ইস্কুলটিতে যায়, তখন দীপাবলির ছুটি চলছে — বাচ্চারা কিন্তু মিড-ডে মিলের জন্য প্রতিদিনই আসছিল, কেউ কেউ বসে খেতে, কেউ বা বেঁধে নিয়ে যেতে।

পড়ুয়াদের সিংহভাগ নিম্নবুনিয়াদি পরিবারের সন্তান, মা-বাবারা কাজ করেন স্থানীয় ভেড়িতে। রনির মা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছিলেন: “[কোভিড-১৯] অতিমারির সময় এই ইস্কুলটা থেকে বিশাল সহায়তা পেয়েছি, নিয়মিত রান্না করা খাবার দিত।”

মার্চ ২০২০ সালে হানা দেয় কোভিড-১৯, বেশ কয়েকটি রাজ্যে বন্ধ হয়ে যায় মিড-ডে মিল। ঝাঁপ পড়ে যায় অসংখ্য ইস্কুলে, আক্রান্ত হয় লাখ লাখ শিশু। কর্ণাটকের উচ্চ আদালত জানায় — শিক্ষার বুনিয়াদি অধিকারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মধ্যাহ্নভোজন।

তেলেঙ্গানার গাচিবৌলির কাছেই পি.জনার্দন রেড্ডি নগর নামের একটি আবাসন আছে নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য, সেখানকার একটি প্রাথমিক ইস্কুলে পড়ে ঐশ্বর্য। রাঙ্গা রেড্ডি জেলার বিভিন্ন নির্মাণস্থলে দিনমজুরি করে ফেরেন তার বাবা। মা একজন গৃহকর্মী। ক্ষুধার্ত সেই ৯ বছরের বাচ্চা মেয়েটি বলেছিল, “ইস্কুলে যদি রোজ-রোজ ডিম খেতে দিত, কি ভালোই না হত। দিনে একটার বেশি করে ডিম দিক, এটাই আমি চাই।”

সংখ্যাতীত শিশুর মুখে একটু খাবার তুলে দেওয়ার যুদ্ধে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করছে মিড-ডে মিল — অথচ দূর্নীতি, ভেজাল, গুণমানহীন ও একঘেয়ে খাবার তথা জাতপাতের বৈষম্যে জেরবার হয়ে গেছে এই প্রকল্পটি। এই তো, গতবছরই দলিত জাতির রাঁধুনির হাতে রান্না করা খাবার খেতে অস্বীকার করেছিল গুজরাত ও উত্তরাখণ্ডের পড়ুয়ারা। একটি ইস্কুলে তো শোনা যায় যে একজন দলিত রন্ধনকর্মী তাঁর চাকরিটিও খুইয়েছিলেন এর জেরে।

PHOTO • Amrutha Kosuru
PHOTO • M. Palani Kumar

বাঁদিকে: তেলেঙ্গানার সেরিলিঙ্গমপল্লি মণ্ডলে তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরও ঘনঘন ডিম পরিবেশন করলে খুব ভালো হত বলে মনে করে ছোট্ট ঐশ্বর্য। ডানদিকে: তামিলনাড়ুর সত্যমঙ্গলম অরণ্যাঞ্চল, থালাইমালাইয়ের ট্রাইবাল রেসিডেনশিয়াল স্কুলে মিড-ডে মিল দেওয়া হচ্ছে শিশুদের

অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে অপর্যাপ্ত মাত্রায় শারীরিক বৃদ্ধি হয়েছে, কর্ণাটকে এমনতর শিশুর সংখ্যা মোটে এক এক শতাংশ কমেছিল ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ সালের মাঝে — ৩৬ থেকে ৩৫ ( এনএফএইচএস‌‐৫ )। এছাড়াও ২০২০ সালের একটি সরকারি রিপোর্টে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে কোডাগু ও মহীশূর (মাইসোর) জেলায় কেমনভাবে অপুষ্টির শিকার হচ্ছে বাচ্চারা। এতকিছুর পরেও — মধ্যাহ্নভোজের পাতে ডিম পড়লে সেটা আমিষ না নিরামিষ, কেবল সেটা নিয়েই কোন্দলে ব্যস্ত আমাদের রাজনৈতিক দলগুলি।

ইস্কুল বন্ধ হওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে মহারাষ্ট্রে — ভারতের পুষ্টিজনিত সংকটের নিরিখে এটা সত্যিই বেশ বিচিত্র, বিশেষ করে এ রাজ্যে যখন ৬.১৬ লাখ বাচ্চা অপুষ্টির শিকার, অর্থাৎ ভারতের মোট অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুর পাঁচভাগের খানিক কম। এমনই একটি ইস্কুল রয়েছে আহমদনগর জেলার গুন্দেগাঁও গ্রামে, অধিকাংশ পড়ুয়াই পারধি জনজাতির। ডিনোটিফায়েড ট্রাইব রূপে স্বীকৃত পারধি সমাজ এ রাজ্যের দরিদ্রতম তথা সবচাইতে পিছিয়ে পড়া জনজাতিসমূহের মধ্যে অন্যতম।

পৌটকাবাস্তি গুন্দেগাঁও প্রাথমিক জেলা পরিষদ স্কুলের প্রিন্সিপাল কুসলকর জ্ঞানদেব গঙ্গারামের লব্জে: “বিদ্যালয়ের দরজায় দরজায় তালা পড়লে এই বাচ্চাগুলি যে শুধুই ইস্কুলছুট হয়ে পড়বে তা নয়, পুষ্টিকর খাবারদাবারও চিরতরে হাতছাড়া হয়ে যাবে ওদের। এর ফলে জনজাতি তথা নিম্নআয়ের সমাজগুলি থেকে আগত বাচ্চাদের মধ্যে অপুষ্টি বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে ইস্কুলছুটের সংখ্যাও।”

এই ইস্কুলটিতে মোট ১৫ জন পারধি শিশু পড়ে, মঞ্জুর ভোসালের আট বছর বয়সি কন্যা ভক্তিও রয়েছে তাদের মধ্যে। “ইস্কুল না থাকলে খাবারদাবারও মিলবে না। তিন-তিনটে বছর করোনার হাতে নাজেহাল হয়ে গেছি,” জানালেন মঞ্জুর, “স্কুল-টুল যদি আবার বন্ধ হয়ে যায়, আমাদের বাচ্চাগুলো কেমনভাবে বড়ো হবে বলুন তো?”

PHOTO • Jyoti Shinoli
PHOTO • Jyoti Shinoli

মহারাষ্ট্রের আহমদনগর জেলায় পৌটকাবাস্তি গুন্দেগাঁও প্রাথমিক জেলা পরিষদ ইস্কুলে পড়ে ভক্তি ভোসলে (বাঁয়ে)। অবিলম্বেই পাততাড়ি গোটাতে চলেছে এই বিদ্যালয়টি, ফলত ভক্তির মতো সমস্ত পড়ুয়ার জীবন থেকে মুছে যেতে চলেছে মধ্যাহ্নভোজনের পালা


PHOTO • Jyoti Shinoli

পড়ুয়াদের মাঝে দাঁড়িয়ে গুন্দেগাঁও প্রাথমিক জেলা পরিষদ স্কুলের প্রিন্সিপাল কুসলকর জ্ঞানদেব গঙ্গারাম জানালেন, ‘বিদ্যালয়ের দরজায় তালা পড়লে এই বাচ্চাগুলি যে শুধুই ইস্কুলছুট হয়ে পড়বে তা নয়, পুষ্টিকর খাবারদাবারও চিরতরে হাতছাড়া হয়ে যাবে ওদের’


PHOTO • Amir Malik

হরিয়ানার জিন্দ জেলা, মিড-ডে মিলের ইস্কুল-তহবিলে টান পড়লে বাচ্চারা যাতে অভুক্ত না থাকে, তার জন্য নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচা করেন ইগরাহ গাঁয়ের শহীদ হাবিলদার রাজকুমার আরভিএম বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ


PHOTO • Amir Malik

মিড-ডে মিলের খাবার তুলে দেখাচ্ছে ইগরাহ গ্রামের শহীদ হাবিলদার রাজকুমার আরভিএম ইস্কুলের পড়ুয়া শিবানী নাফ্রিয়া


PHOTO • Amir Malik

একত্রে খেতে বসেছে শহীদ হাবিলদার রাজকুমার আরভিএম ইস্কুলের কচিকাঁচার দল


PHOTO • Purusottam Thakur

ছত্তিশগড়ের মাটিয়া গ্রাম, সবেমাত্র মধ্যাহ্নভোজের পালা চুকিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যশ, কুণাল ও জগেশ


PHOTO • Purusottam Thakur

রাইপুর জেলার মাটিয়া গ্রাম, খেয়েদেয়ে ক্লাসের দিকে পা বাড়িয়েছে সরকারি প্রাথমিক ইস্কুলের পড়ুয়ারা


PHOTO • Purusottam Thakur

মাটিয়ায় ভাত, ডাল ও সবজি সহযোগে দুপুরের খাবার


PHOTO • Purusottam Thakur

ছত্তিশগড়ের মাটিয়া গাঁ, সরকারি প্রাথমিক ইস্কুলে মিড-ডে মিলের শেষে তার সহপাঠীদের সঙ্গে থালা ধুচ্ছে পাখি (ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে যে)

PHOTO • Purusottam Thakur

ছত্তিশগড়ের ধামতারি জেলার ফুটাহামুডা গ্রাম, মিড-ডে মিলের অপেক্ষায় উৎসুক হয়ে আছে গভর্নমেন্ট প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাকাচ্চারা


PHOTO • Purusottam Thakur

ফুটাহামুডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিবেশিত হচ্ছে মধ্যাহ্নভোজ


PHOTO • Purusottam Thakur

ফুটাহামুডার ইস্কুলে একসঙ্গে খেতে বসেছে শিশুর দল


PHOTO • Amrutha Kosuru
PHOTO • Haji Mohammed

তেলেঙ্গানার রাঙ্গা রেড্ডি জেলার সেরিলিঙ্গমপল্লির মণ্ডল পরিষদ প্রাথমিক ইস্কুল (বাঁয়ে) ও হরিয়ানার জিন্দ জেলার রাজকীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (ডানদিকে) দেওয়ালে আঁকা রয়েছে মধ্যাহ্নভোজের খাদ্যতালিকা


PHOTO • Amrutha Kosuru

সেরিলিঙ্গমপল্লির মণ্ডল বিদ্যালয়ের রান্নাঘর, এখানেই রাঁধা হয় মিড-ডে মিল


PHOTO • S. Senthalir

বেঙ্গালুরুর নাম্মুরা গভর্নমেন্ট লোয়ার প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করে সঞ্জনা এস.। বিসি বেলে বাঠ খেতে বড্ড ভালোবাসে মেয়েটি, দুপুরে খেতে বসে দুবার করে চেয়ে নেয় সে


PHOTO • S. Senthalir

বেঙ্গালুরুর পাট্টানাগেরে মহল্লার নাম্মুরা সরকারি নিম্ন প্রাথমিক ইস্কুলে একসাথে পড়ে ঐশ্বর্য চেন্নাপ্পা ও আলিজা. এস., এছাড়া তারা একে অপরের পড়শিও বটে। ইস্কুলে মিড-ডে মিলের সময় পাশাপাশি খেতে বসে তারা দুজন


PHOTO • Pinku Kumar Das

আসামের নলবাড়ি জেলার নংং ৮৫৮ নিজ খগতা এলপি স্কুলে মিড-ডে মিল খেতে বসেছে অণীশা, রুবি, আয়েশা ও সেহনাজ (বাঁদিক থেকে ডানদিক)


PHOTO • Haji Mohammed

রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলার কারেদা ব্লক, যোধগড় গ্রামের রাজকীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একত্রে দুপুরের খাবার খেতে বসেছে পড়ুয়ারা


PHOTO • M. Palani Kumar

ইরোড জেলার থালাইমালাইয়ের ট্রাইবাল রেসিডেনশিয়াল স্কুলের পড়ুয়া-সংখ্যা মোট ১৬০, এদের অধিকাংশই সোলিগা ও ইরুলা জনজাতির মানুষ


এই প্রতিবেদনটির পিছনে সাংবাদিকের ভূমিকায় ছত্তিশগড় থেকে রয়েছেন পুরুষোত্তম ঠাকুর ; কর্ণাটক থেকে এস. সেন্থলির ; তেলেঙ্গানা থেকে অমৃতা কোসুরু ; তামিলনাড়ু থেকে এম. পালানী কুমার ; হরিয়ানা থেকে আমির মালিক ; আসাম থেকে পিঙ্কু কুমার দাস ; পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঋতায়ন মুখার্জি ; মহারাষ্ট্র থেকে জ্যোতি শিনোলি ; রাজস্থান থেকে হাজি মহম্মদ । সম্পাদনা করেছেন প্রীতি ডেভিড বিনুতা মাল্য , সম্পাদনায় সাহায্য করেছেন সম্বিতি আইয়ার । আলোকচিত্র সম্পাদনা করেছেন বিনাইফার ভারুচা

প্রচ্ছদচিত্র: এম. পালানী কুমার

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Translator : Joshua Bodhinetra

जोशुआ बोधिनेत्र, पीपल्स आर्काइव ऑफ़ रूरल इंडिया के भारतीय भाषाओं से जुड़े कार्यक्रम - पारी'भाषा के कॉन्टेंट मैनेजर हैं. उन्होंने कोलकाता की जादवपुर यूनिवर्सिटी से तुलनात्मक साहित्य में एमफ़िल किया है. वह एक बहुभाषी कवि, अनुवादक, कला-समीक्षक और सामाजिक कार्यकर्ता भी हैं.

की अन्य स्टोरी Joshua Bodhinetra