প্রত্যেকদিন সকাল দশটায় উত্তর সুরাটের মিনা নগর এলাকায় অবস্থিত রেনুকা প্রধানের এক কামরার ঘরটা তাঁর কর্মস্থলে বদলে যায়। রংবেরঙের শাড়ির গাঁটরি রাখা আছে সারাটা ঘর জুড়ে - রান্নাঘরের বেসিনের তলায়, ঘরের দোরগোড়ায়, খাটিয়ার নিচে। রেনুকা তৎপর হাতে গাঁটরি খুলে তার থেকে টকটকে গোলাপি আর নীল রঙা একটা পলিয়েস্টার শাড়ি বার করে ঘরের বাইরের জলের পাইপের উপর টাঙিয়ে রাখলেন।

শাড়িগুলি রেনুকার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নিকটবর্তী বেদ রোডের এক কাপড়কল থেকে। মেশিনে এমব্রয়ডারি করার সময় পলিয়েস্টার শাড়ির উল্টোপিঠে আলগা সুতো রয়ে যায়। কাপড়গুলো কারখানার ইস্তিরি ও ভাঁজ করার বিভাগে পাঠানোর আগে এই আলগা সুতোগুলি খুব সাবধানে টেনে বের করে নিতে হয়। রেনুকার মতো ঘরে বসে কর্মরত শ্রমিকদের ঠিক এইখানেই দরকার পড়ে।

প্রতিদিন রেনুকা পঁচাত্তরটিও বেশি শাড়ি থেকে আলগা সুতো টেনে বের করেন, কেবল তর্জনী ও বুড়ো আঙুলের সাহায্যে। শাড়িগুলি অপেক্ষাকৃত দামি পলিয়েস্টার সিল্কের তৈরি হলে, সেক্ষেত্রে রেনুকা ছুরির সাহায্যে সুতো কাটেন। রেনুকার কথায়, “সুতো বেশি টেনে ফেললে তাতে কাপড়ের ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রে ঠিকাদারকে আমায় পুরো শাড়ির দাম ধরে দিতে হবে। তাই খুব সাবধানে কাজ করতে হয়।”

শাড়ি প্রতি দুটাকা রেটে রেনুকার দৈনিক রোজগার দাঁড়ায় দেড়শো টাকা। কাজে ত্রুটি থাকলে তার খেসারত দিতে প্রায় পাঁচদিনের বেতন চলে যায়। “আটঘণ্টা কাজের পর আঙ্গুলে আর সার পাই না,” রেনুকা বলেন।

Renuka Pradhan’s one-room home in the Mina Nagar area of north Surat turns into her working space every morning. She cuts threads out of more than 75 saris every day. The constant work has led to cuts and bruises on her fingers
PHOTO • Reetika Revathy Subramanian
Men getting bundles of saris to the ladies who work on them
PHOTO • Reetika Revathy Subramanian

রেনুকা প্রধান প্রতিদিন পঁচাত্তরটিরও বেশি শাড়ির আলগা সুতো কাটার কাজ করেন। শাড়ির গাঁটরিগুলি (ডানদিকে) রোজ সকালে এই কর্মী মহিলাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়

পাওয়ারলুমে কর্মরত স্বামী এবং চার সন্তান নিয়ে বিগত সতেরো বছর সুরাটে বাস করছেন ওড়িশার গঞ্জাম জেলার পলাসারা ব্লকের সনবড়গাম গ্রামের অভিবাসী শ্রমিক পঁয়ত্রিশ বছরের রেনুকা। মোটামুটি গণনা করে দেখা গেছে আনুমানিক ৮ লক্ষ ওড়িয়া পরিযায়ী শ্রমিক সুরাটে বসবাস করেন (আরো পড়ুন: কৃত্রিম কাপড়, অকৃত্রিম হতাশা এবং তাঁতঘরের পাশে যাদের ঘর ) এঁদের অধিকাংশই দেশের বস্ত্রশিল্পের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত শহর সুরাটে পাওয়ারলুমে ও বস্ত্রশিল্পে কর্মরত। ফেডারেশন অফ গুজরাট উইভার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং তার সহায়ক সংস্থা পান্ডেসরা উইভার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুরাটের বস্ত্রশিল্পের বার্ষিক অর্থমূল্য বা টার্নওভার পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা।

এই হাজার হাজার অদৃশ্যপ্রায় গৃহবাসী কর্মীর মধ্যে রেনুকা প্রধানও একজন যাঁরা উত্তর সুরাটের শিল্পাঞ্চলের ভিতর অথবা কাছাকাছি এলাকায় বাস করেন ও কাজ করেন। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই অভিবাসী ওড়িয়া পাওয়ারলুম কর্মীদের গৃহিণী। এঁদের শ্রমের বিভাগটি হল ‘ধাগা কাটিং’ (আলগা সুতো কাটা) এবং কাপড়ে ‘ডায়মন্ডস’ (রঙিন চুমকি) লাগানো। এঁরা না পান কাজের জন্য কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম, না এঁদের চোখের ধকল, কাটাছেঁড়া, বা পিঠে ব্যথা জাতীয় শারীরিক জ্বালাযন্ত্রণার জন্য কোনও ক্ষতিপূরণমূলক সহায়তা দেওয়া হয়। লিখিত বেতনচুক্তি অথবা আইনত সামাজিক নিরাপত্তা, কিছুই এঁদের জোটে না, এবং সাধারণত মালিকপক্ষের সঙ্গে দর কষাকষি বা আলোচনার ক্ষমতাও থাকে না এঁদের।

“আমি প্রায় পনেরো বছর কাজ করছি, কিন্তু আমি আমার নিয়োগকারী সংস্থা বা তার মালিকের নাম জানি না। প্রতি সকালে আমাদের শাড়ির গাঁটরি পৌঁছে দেওয়া হয়, এবং প্রতি পনেরো দিন অন্তর আমি আমার কাজ বাবদ নগদ মজুরি পাই,” রেনুকা আমাকে বললেন।

রেনুকার বাড়ির কয়েক মিটার দূরে বাস করেন শান্তি সাহু। একই কাজের সঙ্গে যুক্ত শান্তি সুরাট এসেছেন গঞ্জাম জেলার ব্রহ্মপুর ব্লকের বুদুকা গ্রাম থেকে। চল্লিশ বছর বয়সী শান্তি ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে তাঁর মিনা নগরের বন্ধুদের সঙ্গে নিকটবর্তী সুলভ শৌচালয়ে যান। পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা কাটে জল তোলা, রান্না করা, কাপড় কাচা এবং পাওয়ারলুমে রাতের শিফ্টে কাজ করে সদ্য ঘরে ফেরা স্বামী অরিজিৎ সাহুর দেখভাল করার মতো বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজকর্মে।

Shanti Sahu and her daughter Asha have fixed a rope outside their one room home in Mina Nagar to begin work on the saris that have been sent for the day. Shanti’s husband, Arijit, looks on.
PHOTO • Reetika Revathy Subramanian
Shanti Sahu and her daughter Asha have fixed a rope outside their one room home in Mina Nagar to begin work on the saris that have been sent for the day. Shanti’s husband, Arijit, looks on.
PHOTO • Reetika Revathy Subramanian

শান্তি সাহু এবং তাঁর মেয়ে আশা, দামি শাড়ি হলে তাঁরা একজোটে কাজ করেন। শান্তির বর অরিজিৎ সবে তাঁর পাওয়ারলুমের শিফ্ট সেরে বাড়ি ফিরেছেন

ইতিমধ্যে তাঁর মেয়ে আশা শাড়ির গাঁটরি খুলতে আরম্ভ করে দিয়েছে। তেরো বছরের মেয়ের দিকে ইঙ্গিত করে শান্তি বললেন তাঁরা দুজন একজোট হয়ে কাজ করেন। আশাকে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছে, কারণ সুরাট পৌরসভার ওড়িয়া মাধ্যম স্কুলে কেবল ক্লাস এইট অবধি পড়ানো হয়; বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করানোর সাধ্য তার বাবা-মায়ের নেই। মা-মেয়ে মিলে অপেক্ষাকৃত দামি শাড়ি যেইগুলোতে সুক্ষ্ম কাজ বেশি, সেইসব শাড়ির আলগা সুতো ছাড়িয়ে শাড়িপিছু পাঁচ থেকে দশ টাকা রোজগার করেন। তাই ভুলত্রুটির দায় আরও বেশি। শান্তি জানান, “আমাদের ঘরে নিচু ছাদ আর আলো কম, এই কারণে ভিতরে কাজ করাটা খুব সমস্যাজনক। আমরা বাইরে উঁচুতে শাড়ি টাঙিয়ে প্রায় গোটা দিনটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করি। শাড়িতে কোনও দাগ লাগলে, আমাদেরই মজুরি থেকে কাটা যাবে।”

বস্ত্রশিল্পে কর্মরত মহিলারা অত্যন্ত প্রান্তিক একটি গোষ্ঠী এবং সরকারি নথিপত্রে তাঁদের অস্তিত্ব অদৃশ্যপ্রায় হওয়ায় কতজন বাড়ি বসে কর্মরত নারী এই কাজে যুক্ত, তার কোনও পরিষ্কার হিসাব নেই। আজীবিকা ব্যুরো হল একটি বেসরকারি সংস্থা যেটি পশ্চিম ভারতে কর্মরত ওড়িয়া অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করে। সংস্থার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সঞ্জয় প্যাটেলের বক্তব্য, “এঁদের কারও কাছেই লিখিত চুক্তি নেই, ঠিকাদারের নামও জানেননা এঁনারা। অনেকক্ষেত্রেই এঁদের শ্রমকে এঁদের পরিবারের মানুষেরাই কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেন না, এমনকি এঁরা নিজেরাও দেন না, কাজটা যেহেতু বাড়ি বসে করা হয়। সন্তানদেরও এই কাজে জুড়ে নেওয়া হয় প্রত্যেকদিনের ধার্য শাড়িপ্রতি টাকার লক্ষ্যে পৌঁছানোর তাগিদে। এইজন্যে তাঁরা মালিকপক্ষের সঙ্গে মজুরি নিয়ে কোনও আলোচনাও করেন না।”

গুজরাট ন্যূনতম মজুরি আইন অনুযায়ী (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৯, ছয় মাস অন্তর মজুরির পুনর্মূল্যায়ন করা হয় মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে) অদক্ষ শ্রমিক, যাঁরা রেডিমেড পোশাক বা তার আনুষাঙ্গিক উপাদান উৎপাদন এবং দর্জি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, আট ঘণ্টা কাজের জন্য তাঁদের প্রাপ্য তিনশো পনেরো টাকা। কিন্তু রেনুকা, শান্তি বা ওড়িশার অন্যান্য মহিলারা যাঁরা এই কাজ বাড়ি থেকে করেন, তাঁদের শাড়িপিছু টাকা দেওয়া হয় ন্যূনতম মজুরির থেকে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কম হারে। যে মহিলারা একই সুতো কাটার কাজ কারখানায় বসে করেন, তাঁরা মাসে গড় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা রোজগার করেন এবং তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তামূলক সুবিধা যেমন অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি মজুরি বা ওভারটাইম, কর্মীবিমার অধিকার লাভ করেন। অন্যদিকে বাড়িতে কর্মরত কর্মীরা তিন হাজার টাকার বেশি রোজগার করে উঠতেই পারেন না, উপরন্তু কাজ সংক্রান্ত খরচ তাঁরা নিজেরাই বহন করেন।

“দশ বছর আগেও, আমি শাড়ি পিছু দুটাকা করে পেতাম। ঠিকাদারের সঙ্গে দর করতে গেলে সে পাল্টা বলত যে আমি বাড়ি থেকে কাজ করি, আর এই কাজের জন্য নাকি কোনও দক্ষতা লাগে না। কিন্তু বিদ্যুতের বিল এবং বাড়িভাড়ার টাকা তো আমাকেই দিতে হয়,” অভিযোগের সুরে প্রশ্ন তুললেন তিরিশ বছরের গীতা সমল গোলিয়া, তাঁর স্বামী রাজেশ পাওয়ারলুম কর্মী। তাঁরা মিনা নগর থেকে চার কিলোমিটার দুরে বিশ্রাম নগরে থাকেন।

Geeta Samal Goliya, 32, a resident of Vishram Nagar, has been earning Rs 2 per saree for the past ten years. Her husband is employed in a powerloom in the neighbourhood.
PHOTO • Reetika Revathy Subramanian
Women workers receive one kilogram of sequins and fabric glue every fortnight. The dress materials reach them every morning. They end up sticking up to 2,000 sequins per day, earning an average of Rs. 200 every day (one rupee/10 sequins).
PHOTO • Reetika Revathy Subramanian

(বাঁদিকে) গীতা গোলিয়ার বক্তব্য যে ঠিকাদার ও অন্যান্যরা তাঁর কাজটাকে অদক্ষ শ্রম বলে মনে করে। (ডানদিকে) মহিলা কর্মীরা প্রতি পনেরো দিন অন্তর এক কিলো চুমকি ও কাপড়ে বসানোর জন্য আঠা পান

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ইউনিভার্সিটির টেন্টেড গার্মেন্টস: দি এক্সপ্লয়টেশন অফ উমেন এন্ড গার্লস ইন ইন্ডিয়াস হোম-বেস্ড গার্মেন্ট সেক্টর নামে একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতবর্ষের গৃহভিত্তিক বস্ত্রশিল্পে নিযুক্ত প্রায় ৯৫.৫ শতাংশ কর্মী হলেন মহিলা। এই প্রতিবেদন, যার মুখ্য গবেষক সিদ্ধার্থ কারা আধুনিক দাসত্ব নিয়ে গবেষণা করেন, আরো বলছে যে এঁদের মধ্যে কোনও কর্মী কর্মস্থলে আঘাত পেলে তাঁর চিকিৎসা হয় না, এঁদের কেউ কোনও ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য নন, না এঁদের কোনও লিখিত কর্মচুক্তি আছে।

বাড়ি থেকে কাজ করেন এবং বাড়িটাই যাঁদের কর্মস্থল, সুরাটের বস্ত্রশিল্পোদ্যাগে কর্মরতা এমন নারীদের কাজ বিধিবৎ কর্মসংস্থান হিসাবে গণ্য হয় না। তার ফলে এঁরা শ্রমজীবীদের সুরক্ষার্থে নিয়োজিত কারখানা আইন ১৯৪৮ ইত্যাদির আওতায় পড়েন না।

“এইভাবে বাড়ি থেকে কাজ করাটা একধরনের ঘরোয়া বন্দোবস্ত (নিয়োগকর্তা - কর্মী সম্পর্ক নয়) যেখানে শ্রম আইন প্রযোজ্য হয় না। উপরন্তু, এক্ষেত্রে কাজগুলো অন্য কোনও মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে বায়না করা, ফলে নিয়ম পালন হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ের কোনও পদ্ধতি নেই,” জানালেন সুরাট অঞ্চলের সহকারী শ্রম কমিশনার জি.এল. প্যাটেল।

“বিমা ও ক্ষতিপূরণ তাঁদেরই দেওয়া যায় যাঁরা আইনের চোখে স্বীকৃত কর্মক্ষেত্রে আহত হয়েছেন,” জানালেন, ভারত সরকারের বস্ত্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পাওয়ারলুম সার্ভিস সেন্টারের সহকারী পরিচালক সিদ্ধেশ্বর লোম্বে। “যদিও সকলেই জানেন যে গৃহ-ভিত্তিক কর্মী মহিলারা এই শিল্পোদ্যগের অংশ, কিন্তু তাঁদের কর্মসময়, কর্মাবস্থা বা কর্মসূত্রে পাওয়া আঘাতের নথিকরণ করা দুরহ ব্যাপার কারণ তাঁরা নিজেদের বাড়িতে থেকে ধরাবাঁধা সময়ের বাইরে নিজেদের সুবিধে মতো কাজ করেন।”

As the only “woman Odia agent’ in Vishram Nagar, Ranjita Pradhan sub-contracts diamond-sticking work from three garment factory owners to nearly 40 women in the neighbourhood since 2014. She delivers one kilogram of sequins, fabric glue and the dress materials to the women workers.
PHOTO • Reetika Revathy Subramanian
Women at work in a textile factory in Mina Nagar as they cut extra threads off the saris. They clock in 8 hours of work every day between 9am to 5pm, and earn an average of Rs. 5,000-7,000 per month
PHOTO • Reetika Revathy Subramanian

(বাঁদিকে) বিশ্রাম নগরের একমাত্র ‘ওড়িয়া মহিলা প্রতিনিধি’ রঞ্জিতা প্রধান। (ডানদিকে) সুরাটের বস্ত্র কারখানায় কর্মরতা মেয়েরা অপেক্ষাকৃত বেশি রোজগার করেন

প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা কবচ ও সামাজিক সহায়তার অভাবে, গঞ্জামের বুগুদা ব্লকের ভোগদা গ্রাম থেকে আগত তিরিশ বছরের রঞ্জিতা প্রধান “ওড়িয়া মহিলা প্রতিনিধি” খেতাব অর্জন করেছেন। ১৩ বছর আগে গৃহভিত্তিক কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করা রঞ্জিতা জানালেন, “পুরুষ ঠিকাদারদের সঙ্গে কাজ করা খুবই কষ্টকর। আমরা সময় মতো মজুরি পেতাম না। কোনও কারণ ছাড়াই টাকা কেটে নিত।”

২০১৪ সালে রঞ্জিতা সরাসরি বেদ রোডের এক কাপড়ের কারখানার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং রঞ্জিতাকে সরাসরি নিয়োগ করার শর্তে তাঁকে গুণমান মেনে কাজের প্রতিশ্রুতি দেন। তখন থেকে রঞ্জিতা তিনজন কারখানার মালিকের দেওয়া শাড়িতে চুমকি বসানোর কাজ অঞ্চলের প্রায় চল্লিশজন মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অলিখিত চুক্তি অনুসারে রঞ্জিতা প্রতি পনেরোদিন অন্তর এক কিলো চুমকি ও কাপড়ে সাঁটানোর আঠা এই গৃহভিত্তিক কর্মীদের বাড়ি পৌঁছে দেন। প্রত্যেক কর্মী দিনে দুহাজার চুমকি কাপড়ে বসান এবং তার থেকে দৈনিক গড় দুশো টাকা (প্রতি দশটা চুমকি বসানো বাবদ এক টাকা) আয় করেন।

রঞ্জিতার কথায়, “ওরা আমার উপর ভরসা রাখে কারণ ওরা জানে আমি ওদেরই একজন। এই কাজে মেয়েদের টানা পিঠ ঝুঁকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সুক্ষ্ম নকশা ভরাট করতে হয়, ফলে তাদের পিঠে ব্যথা আর চোখের সমস্যা হয়। অথচ নালিশ করলে আমাদের নিজেদের স্বামীরাই বলে এটা নাকি ‘টাইম-পাস’, আমরা আসলে কোনও কাজের কাজ করি না।”

সন্ধে সাতটা বাজে, রঞ্জিতা তাঁর বর ভগবানের পাওয়ারলুম থেকে বাড়ি ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন। তাঁর সারাদিনের কাজের শাড়িকাপড় তিনি আবার গাঁটরিতে বেঁধে রেখেছেন। এটাই তাঁর বিগত তেরো বছরের দৈনন্দিন কাজ। “সুরাটে এসেছিলাম এই ভেবে যে গঞ্জাম ফিরে নিজেদের জন্য সেখানে বাড়ি তৈরি করতে পারব একদিন। কিন্তু এখানে বেঁচে থাকতেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সঞ্চয় আর করব কথা থেকে!”

অনুবাদ: ঈশানী সেনগুপ্ত

Reetika Revathy Subramanian

रीतिका रेवथी सुब्रमण्यम मुंबई स्थित पत्रकार और शोधकर्ता हैं। वह पश्चिमी भारत में अनौपचारिक क्षेत्र में मज़दूरों के पलायन पर काम कर रहे एनजीओ, आजीविका ब्यूरो के साथ एक वरिष्ठ सलाहकार के रूप में काम कर रही हैं

की अन्य स्टोरी Reetika Revathy Subramanian
Translator : Ishani Sengupta

Ishani Sengupta has a day job as a lawyer, and outside of it, seeks to find out the meaning of life, universe and everything.

की अन्य स्टोरी Ishani Sengupta