ছাগলছানারা বরাবরই এ জঙ্গলে থাকত, তবে তাতে কিস্যু যায় আসে না। হয়তো সে যুগ যুগান্তরের কথা, বাঘমামা আর নেকড়ের দল এসে পৌঁছনোর আগে থেকেই তারা আছে এখানে, কিংবা সুদূর কোনও দেশে হয়তো থাকত তারা এককালে, তারপর কোনও একটা কারণে বেঁচে থাকার আশায় এসে জুটেছিল এই বনে। মোটের উপর এরা সবাই জংলি, বাদবাকি কথায় কাজ নেই আর।
রসদের বড্ড অভাব এ জঙ্গলে, ভূমিসন্তান গাছগাছালি আর পশুপাখির দল একে তো টিকে ছিল কোনওমতে, তার উপর এসে জুটেছে এই উটকো আপদ, সুপবিত্র সনাতন পরিবেশ বিষিয়ে যাচ্ছে ছাগলছানাদের জ্বালায়। মারাত্মক সব অসুখবিসুখ বয়ে বেড়ায় এরা। কূলশীলগোত্রের নেই কোনও সাকিন হদিস, কোনও প্রমাণও নেই জাতপাতের। যুগ যুগ ধরে বেদখল করে বসে আছে বনানীর সনাতনী জমি। আর না! এবার সময় এসেছে ব্যাটাদের বনছাড়া করার। খোঁয়াড়ে ভরেও লাভ নেই এদের, দরকার জেলখানা। ইতিহাসের পাতা থেকে এদের মুছে ফেললেও খুব একটা সুবিধা হবে না, বরং কান ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে যে চুলোর থেকে এসেছিল সে চুলোয় পাঠাতে হবে। তালিকা বানাতে হবে, তলিকা! বনে-বাদাড়ে লুকিয়ে আছে শয়তানগুলো, নাম ধরে ধরে টেনে হিঁচড়ে বার করতে হবে, সে যতই তারা ব্যা-ব্যা করে পাড়া মাত করুক না কেন। ভবিষ্যতে যাতে এমন ভুঁইফোড়ের দল এসে হানা না দেয়, শেষমেশ কাঁটাতার দিয়ে বাঁধতে হবে জল-জঙ্গল।
নতুন সরকার এসেছে যে বনে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি চারিদিকে, মাইলের পর মাইল অত্যাধুনিক ইস্পাতে তৈরি ঝকমকে কাঁটাতারে আত্মনির্ভর হতে শিখবে গাছগাছালি। ঘৃণার গন্ধে থম মেরে থাকা বাতাস দেখতে না দেখতেই ফালা ফালা হয়ে গেল সে পবিত্র কাঁটায়। বাঁধা পড়ল হতবাক অরণ্য। তার থেকে ঝুলছে হাজারো কাটাছেঁড়া জন্তু, 'ম্যা...ম্যা...' – ঘরে ফেরার করুণ আর্তি যেন, তমসাঘন আকাশে তখন নোনতা গেরুয়া সূর্যের ছোপ।
ঘর-ওয়াপসির প্রার্থনা
সাচ্চা রে দেশপ্রেমী পায়ে পড়ি
তোর...
পথ গেছে হারিয়ে, ভিটেমাটি
ছাড়িয়ে,
খুঁজে দে ঠিকানা তবে রাত ঘনঘোর।
সূচনা, উৎস, তোরা যা ইচ্ছা বল
নড়েছে বাতাসে আদি ধর্মের কল।
পয়লা সে দেশগাঁ, আদিম স্থাবর
শুরুর আগে যে ছিল, একলা জঠর।
শিকড়ে ফেরার মোরও আছে অধিকার
রাখবি না কথা তুই শিকড় খোঁজার?
বিষ্ণু ব্রহ্মা হায়
উৎস খোঁজার দায়
জ্যোতির্লিঙ্গ জ্বলে জানিস
কোথায়?
হারায়েছি মাটিজল
এ দায় কে নেবে বল
আচ্ছা রে দেশপ্রেমী, ফেরাবি না
তাই?
ফরাসি দেশের মাটি হবেই আবার খাঁটি
আলজেরিয়ান ব্যাটা খুঁজে নেবে
পথ...
কুটুম্বকম্ ওগো বসুধা শপথ।
হক কথা বলি তাই
রোমাদের ঠাঁই নাই
স্বস্তিকা রাঙা ওই জার্মান
বুকে...
রোহিঙ্গা যাবে ফিরে মগের মুলুকে।
কুটুম্বকম্ হাঁকে বসুধা কাঙালি -
পাকিস্তানের পানে ছুটে যাবে
মোল্লা,
বাংলাদেশের পথে হাঁটিবে বাঙালি -
ঘরদোর ঘনঘোর পেটকাটা গোল্লা।
শেতাঙ্গ মার্কিনি ইউরোপে ফিরবে
ঠিক ঠিক যেইভাবে হিন্দুরা লড়বে
মরিশাস সুরিনাম,
লাশকাটা হরিনাম
মুম্বই থেকে ওই ফিরিয়াছে
ভাইয়া...
উৎস খোঁজার তাড়া, গুজ্জু
দিল্লিছাড়া
খুঁজে ফিরি আফ্রিকা "জয় হভা
মাইয়া!"
আদিবাসী খুঁজে নেবে জাঙ্গুলি জমি
তাঁর
(এই রে! সে জমিটা তো বাবুদের
দরকার!)
সাচ্চা রে দেশপ্রেমী, পাতিয়াছি
হাত,
ভিটেমাটি ছাড়া মোরা নেহাতই অনাথ।
তবে শুধু আমি কেন? চল তুইও চল...
ফিরিবো ফিরিবো ছিঁড়ে কালের আঁচল।
পিছনে পিছনে আরও, সময়ের
শুরুতে...
চারপায়ে হেঁটে যাবো ন্যাজঝোলা
গরুতে।
মগডালে চড়িয়া, কাদামাটি ভরিয়া,
আদিম পাতার খাঁজে ডুবুডুবু মরিয়া,
ফিতাকৃমি লিঙ্গমে
নিজ সাথে সঙ্গমে
মাছের কানকো থেকে ছেঁকে নেবো জল..
তবে শুধু আমি কেন? চল, তুইও চল...
আদিম সাগর পানি
এককোষী পোকা..
চিত্ত শূন্যযানি, শুধু ভেসে থাকা।
থাকে যদি ভগবান, মুছে ফেলে দেহখান
বস্তু পেরোনো জিনে হবো হবো এক।
এই মিছিলের শেষে,
পয়লা প্রাণের দেশে
বাজারি দামামা ছেড়ে আত্মাকে
দ্যাখ।
মারমার কাটকাট মজহবি ঝান্ডা,
এসবের চেয়ে ভালো ব্রহ্মের আন্ডা,
শুরুর সে মহানাদে চল ফিরে চল...
খিদের চেয়েও দামী
আত্মহত্যাকামী
কাচ্চা রে দেশপ্রেমী
পহেলা জঠর সেতো পোড়ামাটি জল।
শব্দার্থ:
ঘর-ওয়াপসি: এই হিন্দি শব্দবন্ধটির আক্ষরিক অর্থ 'ঘরে ফেরা'। তবে মূলত এটি বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনের দ্বারা খ্রিস্টান ও মুসলিমদের বলপূর্বক হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করার ঘৃণ্য প্রকল্পকেই বোঝায়।
জ্যোতির্লিঙ্গ: হিন্দুধর্মে শিবের একটি রূপ।
বসুধৈব কুটুম্বকম্: আক্ষরিক অর্থ 'সমগ্র বিশ্ব আমার আপন পরিবার'
অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)