“এই আইনের অধীনে সদিচ্ছা সহযোগে যা করা হবে, বা করার ইচ্ছা থাকবে, তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার বা সরকারি কর্মী বা কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধেই কোনও মামলা মোকদ্দমা বা আইনি কার্যকলাপ করা যাবে না।”
কৃষিপণ্য ব্যবসা – বাণিজ্য (উৎসাহ ও সুযোগসুবিধা দান) আইন, ২০২০ , (আদতে কৃষিজ পণ্য বিপণন কমিটি, এপিএমসি-গুলিকে নিষ্ক্রিয় করাই যার লক্ষ্য!) ১৩ নম্বর ধারায় আপনাকে স্বাগত।
আর আপনি ভাবলেন, এই নতুন আইনগুলো শুধুই চাষিদের জন্য? এটা ঠিক আরও নানা আইন আছে, যেখানে সরকারি কর্মচারীদের আইনি কর্তব্য করার ব্যাপারে ছাড় আছে। কিন্তু এই নতুন আইনে সব সীমাই ছাড়িয়ে গেছে। কারণ, যে কোনও কিছুর নিরিখে, যা কিছু তথাকথিত সদিচ্ছা বা ‘গুড ফেইথে’ করা হবে, তা গ্রহণযোগ্য। এমন কি, সেই ‘গুড ফেইথে’ যদি কেউ কোনও অপরাধও করে, তাহলেও তার বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না, কেউ যদি সেই ‘গুড ফেইথে’ তেমন কিছু করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তাহলেও তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না।
আপনার চোখে যদি না পড়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে এটাও উল্লেখ করা দরকার, আপনার আদালতে যাওয়ারও কোনও উপায় নেই। কারণ ১৫ নং ধারা বলছে,
“এই আইনের অধীনে কোনও বিষয় নিয়ে কোনও মামলা গ্রহণ করা বা প্রত্যাখ্যান করার এক্তিয়ার কোনও সিভিল কোর্টের নেই।”
এবার বিষয় হল এই “যে কোনও ব্যক্তি” যে কি না “গুড ফেইথ” বা সদিচ্ছার জায়গা থেকে কিছু করলে পর, যাকে আইনি ফ্যাসাদে ফেলা যাবে না, সেই ব্যক্তিটি কে? ইশারা হল - বড়ো বড়ো বহুজাতিক সংস্থাগুলি, যেগুলির নাম নিচ্ছেন প্রতিবাদী কৃষকরা। এটা আসলে খুব বড়ো ব্যবসায়ীর কারবার চালানোর পথকে সোজা করে দেওয়া।
“কোনও মামলা করা যাবে না”, শুধুমাত্র চাষিরা করতে পারবেন না নয়, অন্য কেউ-ই করতে পারবেন না। এটা জনস্বার্থ মামলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কোনও অ-লাভজনক সংস্থা, কোনও কৃষক সংগঠন বা কোনও নাগরিক (সে তিনি সদিচ্ছায় করুন বা অসৎ-ইচ্ছায়) এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
ফলে এই আইনে প্রতিটি ভারতীয়ই ক্ষতিগ্রস্ত। এই আইনি লব্জকে বোধগম্য ভাষায় তর্জমা করলে বোঝা যাবে (অধস্তন) প্রশাসনিক কর্তাকে বিচারব্যবস্থায় পরিণত করে দেওয়া হল। আদতে একই অঙ্গে তিনি জজ, জুরি এবং জল্লাদের ভূমিকায় অধিষ্টিত হবেন। এটা চাষি ও বড়ো বহুজাতিক সংস্থাগুলির মধ্যে ক্ষমতার যে চরম অন্যায় ব্যবধান, তাকেই আরও প্রকট করে তুলবে, চাষিদের লড়তে হবে বাণিজ্য সংস্থাগুলির সঙ্গে।
দিল্লির বার কাউন্সিল এটার বিপদ টের পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠিতে লিখেছে , “নাগরিক স্তরের সঙ্গে সঙ্গতি রয়েছে এমন কোনও মামলা যার সঙ্গে প্রশাসনিক কাঠামো যুক্ত, প্রশাসনিক দায় যুক্ত, তা কী ভাবেই ব বা আবার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হতে পারে?”
(এই প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে রয়েছেন মহকুমা শাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসকরাও – যে তথাকথিত স্বাধীনচেতা স্বনামধন্য কর্তাব্যক্তিদের কথা ভারতীয়মাত্রেই জানেন!) দিল্লি বার কাউন্সিল বলেছে, বিচার ক্ষমতা প্রশাসনিক কর্তাদের হাতে দেওয়াটা “বিপজ্জনক ও ভুল।” এবং আইন জীবিকার উপরেও এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করেছে তারা - “এটা বিশেষ করে জেলা আদালতগুলির ভয়ঙ্কর ক্ষতি করবে, এবং আইনজীবীদের বিপন্ন করবে।”
এখনও ভাবছেন এই আইন শুধু চাষিদের ব্যাপার?
প্রশাসনিক কর্তাদের হাতে এমন বিচার ক্ষমতা প্রতিস্থাপনের নজির আছে চুক্তি সম্পর্কীয় আইন - মূল্য নিশ্চয়তা ও কৃষি পরিষেবা বিষয়ে কৃষক (ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা) চুক্তি আইন, ২০২০ -তে (দ্য ফার্মার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যাশিয়োরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিস অ্যাক্ট)।
সদিচ্ছা বা “ইন গুড ফেইথ” এর ধারণাটিকেই ১৮ নম্বর ধারা পুনর্গঠন করছে।
১৯ নম্বর ধারা বলছে, “এই আইনের দ্বারা বা এই আইনের অধীনে ক্ষমতাসীন মহকুমা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ বা আপিল কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে কোনও অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা হলে তা গ্রহণ করার অধিকার সিভিল কোর্টের থাকবে না এবং এই আইনের বলে গৃহীত কোনও পদক্ষেপের ব্যাপারেই আদালত বা কোনও কর্তৃপক্ষই কোনও স্থগিতাদেশ দিতে পারবে না [নজরটান সংযুক্ত হয়েছে]।”
অন্যদিকে, ভারতীয় সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা ভাবা যাক। সেখানে বলা হচ্ছে বাক স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ জমায়েত, আন্দোলন করার স্বাধীনতা, ইউনিয়ন করার স্বাধীনতা ইত্যাদি অধিকার বিষয়ে....
কৃষক আইনের ১৯ নম্বর বিভাগটি আঘাত করছে সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদকেও, যেখানে সাংবিধানিক প্রতিকার তথা আইনি সাহায্য নেওয়ার অধিকারের কথাও বলা আছে। ৩২ নম্বর ধারাটিকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বলে মনে করা হয়।
মূলধারার ‘গণমাধ্যম’ (অদ্ভুত ব্যাপার যে এহেন নাম যে প্ল্যাটফর্মটির তাতে যে বিষয়গুলি ছাপা হয়, তার থেকে গোটা জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই আদতে বাদ) ভারতীয় গণতন্ত্রের উপর এই নতুন কৃষি আইনের কী প্রভাব হবে, ভালোই জানে। কিন্তু স্রেফ লাভের জন্য তারা জনস্বার্থ বা গণতন্ত্রের মূল নীতিগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকছে।
স্বার্থের সংঘাত নিয়ে কোনও রকম কোনও ভ্রান্তি রাখার জায়গা নেই। এই মিডিয়াগুলো নিজেই তো এক একটা বাণিজ্য সংস্থা। ভারতের সব থেকে বড়ো বাণিজ্যিক সংস্থার মাথা, একইসঙ্গে এ দেশের সবচেয়ে ধনী ও সবচেয়ে বড়ো মিডিয়া সংস্থার মালিকও। দিল্লি গেটের কাছে স্লোগানে যাদের নাম নিচ্ছেন কৃষকরা, তাদের মধ্যে আম্বানি অন্যতম। তুলনামূলক নিচু স্তরেও দেখা যাচ্ছে, অনেকদিন ধরেই রিয়েল এস্টেট আর ফোর্থ এস্টেট (গণমাধ্যম) – এর কোনও পার্থক্য নেই। এই ‘মূলধারা’র গণমাধ্যম এই জগতে এতটাই নিমজ্জিত যে বাণিজ্য সংস্থার স্বার্থের বাইরে তারা নাগরিকের (আলাদা করে চাষিদের কথা বাদই থাক না হয়!) স্বার্থের দিকে নজরই দিতে পারছে না।
পত্রপত্রিকায় এবং চ্যানেলগুলির রাজনৈতিক প্রতিবেদনে (কিছু অত্যন্ত ভালো, পরিচিত ব্যতিক্রম বাদে) চাষিদের অবিরাম কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, খলনায়ক প্রতিপন্ন করা হচ্ছে — ধনী কৃষক, শুধু পঞ্জাব থেকে আসা লোক, খালিস্তানি, ভণ্ড, কংগ্রেসি ষড়যন্ত্রী ইত্যাদি বলে।
যদিও বড়ো মিডিয়ার সম্পাদকীয়গুলিতে অন্য ধরনের কৌশল নেওয়া হচ্ছে। সেটা বস্তুত কুমিরের কান্না। সেগুলির মোদ্দা কথা হল, সরকার এটাকে অন্যভাবে, আরও ভালোভাবে সমাধান করেত পারত। যেন বা চাষিরা কিছুই জানেন না, তাঁরা দেখতে পারছেন না, তাঁদেরকে বোঝাতে হবে; প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতিবিদদের অসামান্য মেধা যে তাঁরা এমন ভালো আইন করেছেন, যা কিনা চাষিদের জন্য ও বৃহত্তর অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ! আদতে তারা বলছে: এই আইনগুলো গুরুত্বপূর্ণ, জরুরি এবং লাগু হওয়া উচিত।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ -এর সম্পাদকীয়তে লেখা হচ্ছে, ‘‘গোটা প্রক্রিয়ার ভুলটা সংস্কারে নেই [নজরটান দিয়ে বলা হচ্ছে], বরং গলদটা এই যে পদ্ধতিতে আইন পাশ হয়েছে, এবং যে কৌশলে সরকার এটা জানিয়েছে, বা জানাতে পারেনি সেখানে।” ওই পত্রিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, এমন ভুলভাবে পরিস্থিতিটাকে সামলানোর ফলে ‘‘এই তিনটি কৃষি আইনের মতো” ভালো পরিকল্পনাগুলি আহত হবে, এবং “ভারতীয় কৃষির প্রকৃত সম্ভাবনাকে বিকশিত করার জন্য সংস্কার জরুরি।”
‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ বলছে, সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব হল “ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার ব্যবস্থা শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কৃষকদের মধ্যে যে ভুল ধারণা রয়েছে, সেটিকে দূর করা...” আদতে “কেন্দ্রের সংস্কারের প্যাকেজ হল কৃষি বাণিজ্যে বেসরকারি অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করা। কৃষিতে আয় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার আশা পূরণ হওয়ার ব্যাপারটা নির্ভর করছে এই নতুন সংস্কারগুলির সাফল্যের উপরে” এবং ‘‘এই ধরনের সংস্কারগুলি ভারতের খাদ্য বাজারের ক্ষতিকর দিকগুলিকে সংশোধন করে দেবে।”
‘হিন্দুস্তান টাইমস’ -এর সম্পাদকীয় বলছে: “এই পদক্ষেপের (নতুন আইনগুলি) পিছনে জোরালো কারণ আছে। চাষিদের বুঝতে হবে আইনগুলির বাস্তবতা বদলাবে না।” অবশ্য তারাও সংবেদনশীল হওয়ার কথা বলছে। কিন্তু তাদের চোখে কৃষকরা “অতিরিক্ত পরিচয়বাদী বিষয়গুলি নিয়ে আসক্ত” এবং তারা নাকি চরমপন্থী কথা ও কাজের সঙ্গে যুক্ত।
সরকারেরও হয়তো প্রশ্ন আছে, কোন দলের ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিনিধিত্ব না জেনে করছেন কৃষকরা, কাদের হয়ে তাঁরা কাজ করছেন। কিন্তু যাঁরা সম্পাদকীয় লিখছেন, তাঁরা খুব ভালো করেই জানেন তাঁরা নিজেরা কাদের ধামাধরা, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের থাবায় দাঁত বসানোর ভুল তাঁরা মোটেই করবেন না, কারণ সেটাই তাঁদের আশ্রয়।
এমনকী এদের মধ্যে সেরা যারা, তুলনামূলকভাবে যাদের ভাবনা খানিকটা খোলামেলা— সেই টিভি চ্যানেলগুলিতেও আলোচনা সবসময় আবর্তিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর ভিতরেই এবং দরবারি বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবী মহলের মধ্যেই।
একবারের জন্যও কেউ এই প্রশ্নটা করছেন না, এখন কেন? এত তাড়াহুড়ো করে শ্রম আইন বদলানোরই বা কারণ কী? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেষ নির্বাচনে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। যেটা আগামী ২-৩ বছর অন্তত তাঁর কাছেই থাকবে। তাহলে কেন বিজেপি ভাবল, এই অতিমারির সময়টাই এই আইনগুলো পাশ করানোর সবচেয়ে ভালো সময় — যখন নাকি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই সময়ে নজর দেওয়া জরুরি?
বেশ। হিসাবটা ছিল এই যে, কোভিড ১৯ এ বিপন্ন, অতিমারি পরিস্থিতিতে কার্যত পঙ্গু হয়ে যাওয়া কৃষক শ্রমিকরা এইসময়ে জোরদারভাবে সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ করতে পারবেন না। আসলে, এটা শুধু ভালো সময় ছিল না, এটা আসলে মোক্ষম সময় ছিল। এ ক্ষেত্রে তাঁদের বিশেষজ্ঞরা তাঁদেরকে বুঝিয়েছেন, যাঁদের একাংশ পরিস্থিতিটাকে ‘দ্বিতীয় ১৯৯১ মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছেন, যেখানে সকলে যখন বিধ্বস্ত, অবসন্ন, নিরুৎসাহ এবং একটা চরম অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে আছে, তখনই এই মূলগত সংস্কারগুলি করার সুযোগ নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এর নেপথ্যে অনেক সম্পাদকও রয়েছেন, যাঁরা “একটা ভালো সংকটকালকে অযথা বয়ে যেতে দেবেন না” বলে এই শাসকদের বুঝিয়েছেন, আর আছেন নীতি আয়োগের প্রধান, যিনি কিনা ভারত দেশটাকে নিয়ে নিজে খুবই বিরক্ত বলে ঘোষণা করেছেন, কারণ ‘‘ভারতে গণতন্ত্র অতিরিক্ত মাত্রায় বিদ্যমান!”
আর আইনগুলি যে অসাংবিধানিক হয়ে পড়ছে, সেই ব্যাপারে ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোছের গা বাঁচানো এবং অসংবেদনশীল কথা হচ্ছে। আর এদিকে, আইন করে রাজ্যের বিষয়গুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ চলছে, যা করার অধিকার তাদের আদৌ নেই।
সম্পাদকীয়গুলিতে এই আলোচনাও নেই যে, কেন কৃষকরা অত্যন্ত অবজ্ঞার সঙ্গে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন সরকারের কমিটি করে আলোচনা করার প্রস্তাব, যে কমিটিটি আসলে মৃত্যুঘন্টা বাজানোর কমিটি বই কিছুই নয়! গোটা দেশের কৃষকরা যদি কোনও একটা কমিটি-রিপোর্টের কথা জানেন, সেটার রূপায়ণ দাবি করেন, সেটা হল, কৃষকদের জন্য জাতীয় যে কমিশন গড়া হয়েছিল— অর্থাৎ ‘স্বামীনাথন রিপোর্ট’। ২০০৪ থেকে কংগ্রেস ও বিজেপি চেষ্টা করে গেছে, কী ভাবে রিপোর্টটাকে ধামাচাপা দেওয়া যায়। অথচ প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে যে তারা এই রিপোর্টের প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করবে।
আর হ্যাঁ, ২০১৮ সালের নভেম্বরে গোটা দেশ থেকে এক লক্ষেরও বেশি চাষি জড়ো হন সংসদের কাছে, দাবি ছিল রিপোর্টের মুখ্য প্রস্তাবগুলি কার্যকর করতে হবে। আরও দাবি ছিল তাঁদের, যেমন ঋণ মকুব, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের নিশ্চয়তা, আর সংসদে কৃষি সংকট নিয়ে বিশেষ অধিবেশন পর্যন্ত। সংক্ষেপে, এখন দিল্লি দরবারে যে প্রতিবাদটা হচ্ছে, যে সব দাবি করা হচ্ছে, তারই অনেক দাবি উঠে এসেছিল সেই সময়। এবং তাঁরা ২২টা রাজ্য এবং ৪টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল থেকে এসেছিলেন — শুধু পঞ্জাব নয়।
যে কৃষকরা সরকারের থেকে এক কাপ চা নিতেও অস্বীকার করছেন, তাঁরা আসলে এটাই দেখিয়ে দিচ্ছেন, সরকার তাঁদের ভয় দেখিয়ে বা আলোচনা করে যেভাবে বেঁধে ফেলবে ভেবেছিল, তা কতটা ভুল ছিল। তাঁরা তখনও তাঁদের অধিকারের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। উঠে দাঁড়াবেনও, শুধু তাঁদের অধিকারের জন্য নয়, আমাদের অধিকারের জন্যও। তাঁরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই আইনগুলির প্রতিরোধে নেমেছেন।
এছাড়াও তাঁরা বারবার একটা কথা বলছেন, যেটাতে ‘মূলধারার’ গণমাধ্যম গুরুত্ব দিচ্ছে না। খাদ্যের উপর বাণিজ্যিক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ আমাদের দেশে কতটা প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে তাঁরা আমাদের সতর্ক করছেন। দেখেছেন এ বিষয়ে একটাও সম্পাদকীয়?
অথচ তাঁদের মধ্যে অনেকেই জানেন, চাষিরা যে জন্য লড়ছেন সেটা তিনটে আইন প্রত্যাহারের দাবির চেয়েও বড়ো কারণে, শুধু তাঁদের নিজেদের জন্য বা পঞ্জাবের জন্য নয়। আইন প্রত্যাহার হলে আমরা যেমন ছিলাম তেমনই থাকব, সেটাও খুব ভালো কোনও পরিস্থিতি ছিল না। কারণ কৃষির সংকট ভয়ঙ্কর, এবং সেটা ছিলই, থাকবেও। কিন্তু আইন প্রত্যাহার হলে, সেটা সেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-টাকে আটকাবে, যতটা তাড়াতাড়ি সংকট গভীর হত, সেটা একটু বিলম্বিত হবে। আর হ্যাঁ, এই ‘মূলধারা’র গণমাধ্যম যেটা দেখতে পাচ্ছে না, সেটা এই কৃষকরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন — সেটা হল, এই আইনগুলি নাগরিকের আইনের কাছে আশ্রয় নেওয়ার জায়গা সংকুচিত করছে, আমাদের অধিকারগুলো নষ্ট করছে। এবং তাঁরা যদি বিষয়টাকে সেভাবে নাও বলেন, তাহলেও, তাঁদের বক্তব্যের মধ্যে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার স্পষ্ট প্রয়াস আছে।
প্রচ্ছদ চিত্র: নিউ-মিডিয়া শিল্পী প্রিয়াঙ্কা বোরার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে ভাব এবং অভিব্যক্তিকে নতুন রূপে আবিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত আছেন। তিনি শেখা তথা খেলার জন্য নতুন নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করছেন; ইন্টারেক্টিভ মিডিয়ায় তাঁর সমান বিচরণ এবং সেই সঙ্গে কলম আর কাগজের চিরাচরিত মাধ্যমেও তিনি একই রকম দক্ষ।
এই নিবন্ধটির একটি সংস্করণ ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর, ‘দ্য ওয়্যার’-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
বাংলা অনুবাদ : রূপসা