“শিক্ষার্থীর প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা আর পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি। শিক্ষক জীবনে এটাই আমার উপলব্ধি!”

নম্র অথচ দৃঢ়ভাবে তাঁর বক্তব্য পেশ করলেন মেধা টেংশে। এই বিশেষ শিক্ষিকা সাধনা গ্রামের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন বৌদ্ধিক ক্ষমতাসম্পন্ন নানান বয়সের ৩০ জনেরও অধিক মানুষ বুনিয়াদি জীবনশিক্ষায় তালিম নেন এখানে — সঙ্গে থাকে খানিক শিল্প, সংগীত ও নৃত্য।

পুণে জেলার মুলশি ব্লকে অবস্থিত সাধনা গ্রাম। বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধতাযুক্ত পূর্ণবয়স্কদের জন্যই তৈরি হয়েছে এই আবাসিক প্রতিষ্ঠানটি। পড়ুয়াদের এখানে ‘বিশেষ মিত্র’ নামে ডাকা হয়। এখানকার ১০ জন আবাসিকের জীবনে গৃহমাতার ভূমিকা পালন করেন মেধা তাই (দিদি) — সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষিত এই মানুষটির কথায়: “একজন মা তো শিক্ষকও বটে।”

একই আবেগের শরিক পুণের ধাইরি স্কুল ফর হিয়ারিং ইম্পেয়ার্ডে একজন বিশেষ শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত সত্যভামা আল্হাটও। সেদিন ছিল ৫ই শ্রাবণ, অর্থাৎ নাগ পঞ্চমী। “আমাদের মতো একটা আবাসিক বিদ্যাপীঠে শিক্ষকেরা মা-বাবার ভূমিকাও পালন করেন, কারণ আমরা চাই না বাড়ির জন্য বাচ্চাদের মন-কেমন করুক।” পারিকে এটা বলেই জনাকয় মেয়েদের ফুগড়ি খেলা শেখানোর দিকে মন দিলেন সত্যভামা দেবী। ধাইরি প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক স্কুল, এখানকার ৪০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী ও ১২ জন অনাবাসিক পড়ুয়া মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে।

Left: Medha Tengshe, founder member of Sadhana Village says all teachers should visit at least one school for special children to see what can be achieved through gentle words.
PHOTO • Urja
Right: Kanchan Yesankar says, ‘All the 30 friends here fight but they also love each other’
PHOTO • Urja

বাঁদিকে: সাধনা গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য মেধা টাংশে জানাচ্ছেন, মৃদুভাষ্যের ক্ষমতা ঠিক কতখানি, সেটা বোঝার জন্য প্রত্যেক শিক্ষককেরই অন্তত একটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চাদের স্কুলে এসে ঘুরে যাওয়া উচিত। ডানদিকে: কাঞ্চন ইয়েশংকরের কথায়, ‘এখানে ৩০ জন বন্ধু সারাটাক্ষণ মারপিট করে, তবে একে অপরকে জান দিয়ে ভালোওবাসে’

Satyabhama Alhat is a special teacher at the Dhayari School for the Hearing Impaired in Pune . She plays phugadi and other traditional games with girls and boys as they celebrate Nag Panchami. ‘A teacher at a residential school like ours is also a parent,' she says
PHOTO • Urja
Satyabhama Alhat is a special teacher at the Dhayari School for the Hearing Impaired in Pune . She plays phugadi and other traditional games with girls and boys as they celebrate Nag Panchami. ‘A teacher at a residential school like ours is also a parent,' she says
PHOTO • Urja

পুণের ধাইরি স্কুল ফর দ্য হিয়ারিং ইম্পেয়ার্ডে কর্মরত বিশেষ শিক্ষক সত্যভামা আল্হাট। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ফুগড়ির মতন প্রথাগত খেলাধুলোর মাধ্যমে নাগ পঞ্চমী উদযাপন করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমাদের মতো একটা আবাসিক স্কুলের শিক্ষকেরা আদতে পড়ুয়াদের অভিভাবকও’

এই বিদ্যাঙ্গনের সু্যোগ-সুবিধা তথা শিক্ষকেরা যে কতখানি ভালো, তা পাশ করে বেরোনো পড়ুয়াদের থেকে অন্যান্য মা-বাবারা জানতে পেরে নিজেদের বাচ্চাকাচ্চাদের পাঠান এখানে। এটা সত্যভামা আল্হাটের থেকে জানতে পেরেছে পারি। মাস-মাইনের কোনও গল্প নেই, উপরন্তু হস্টেলও আছে — অভিভাবকের কাছে এসব এতটাই আকর্ষণীয় যে সাড়ে চার বছরের শিশুও দাখিল হয় ধাইরির স্কুলে। তাজ্জব ব্যাপার, ভর্তি হওয়ার অনুসন্ধান কিন্তু সবসময় শ্রবণশক্তিরহিত বাচ্চাদের থেকে আসে না। “আমাদের বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে শ্রবণসক্ষম সন্তানের বাবা-মায়েরাও ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে আসেন। আমরা তাঁদের ফেরত পাঠাতে বাধ্য হই,” জানালেন সত্যভামা তাই।

প্রতিবন্ধী মানুষদের যাঁরা তালিম দেন, তাঁদের ‘স্পেশাল এডুকেটর’ বা ‘বিশেষ শিক্ষক’ নামে ডাকা হয়। শিক্ষার্থীদের স্বাতন্ত্র, প্রতিবন্ধকতা ও বিশেষ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই তালিম দেন তাঁরা। পড়ুয়াদের তাঁরা স্বনির্ভরও করে তোলেন। অধিকাংশের বিশ্বাস, বিশেষ শিক্ষা কেবল আদব-কায়দা ও কৌশলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষক ও শিশুর মাঝে তৈরি হওয়া আস্থা ও বন্ধনই এর বুনিয়াদ। ২০১৮-১৯ সালে, মহারাষ্ট্রের ৩,০০,৪৬৭টি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী ১ম শ্রেণি থেকে ১২দশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ১,৬০০টি বিদ্যালয় আছে মহারাষ্ট্রে।

শিক্ষাজগতে বিশেষ শিশুদের প্রবেশে সহায়তার জন্য প্রতিটি ইস্কুলে কমপক্ষে একজন করে বিশেষ শিক্ষক বহাল করতে হবে — ২০১৮ সালে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য রাজ্য এমনই নীতি স্থির করেছে বটে, তবে সে বছর মুলশি ব্লকের ৯৬টি গাঁয়ে মোটে ৯ জন বিশেষ শিক্ষককে নিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানালেন মেধা তাই।

পড়ুয়াদের স্বাতন্ত্র, প্রতিবন্ধকতা ও বিশেষ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই তালিম দিয়ে তাদের স্বনির্ভর করে তোলেন বিশেষ শিক্ষকেরা

ভিডিও দেখুন: অনন্য পড়ুয়াদের পাশে বিশেষ শিক্ষকেরা

*****

একজন বিশেষ শিক্ষকের প্রয়োজন শিক্ষাপ্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা। ব্যাপারটা মোটেও জলভাত নয়, “বিশেষত, পড়ুয়ারা যদি আপনার মা-বাবার বয়সি হয় তাহলে এইটা খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে,” বললেন রাহুল ওয়াঙ্খেড়ে। ওয়ার্ধা থেকে আগত এই ২৬ বছর বয়সি সমাজকর্মী গতবছর থেকে এই গ্রামেই রয়েছেন। তাঁর সহকর্মী ২৭ বছর বয়সি কাঞ্চন ইয়েশংকরও ওয়ার্ধার মানুষ, শিক্ষকতায় ৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। তিনি বিশ্বাস করেন বিশেষ পড়ুয়ারাই তাঁকে খুশি হতে শিখিয়েছে।

বর্ডারলাইন বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত  বছর কুড়ির তরুণ কুণাল গুজর, বাঁহাতেও তেমন বল পান না। পুণের কাছেই, হাডশির কালেকর ওয়াড়ির দেভরাই কেন্দ্রে সাতটি বিশেষ বাচ্চার সঙ্গে তাঁরও ক্লাস নিতেন সমাজকর্মী ময়ূরী গায়কোয়াড় ও তাঁর সহকর্মীরা। “উনি আমায় গান আর নামতা শিখিয়েছেন, সঙ্গে ব্যায়ামও। হাত অসে করাইচে, মাগ অসে, মাগ তসে [হাতদুটো এভাবে নাড়ান, তারপর ওইভাবে],” জানাচ্ছেন কুণাল।

বিশেষ শিক্ষকের ভূমিকায় পা রাখতে হলে অপার স্নেহ আর বাচ্চাদের সঙ্গে একাত্ম হওয়া ভীষণ জরুরি বলে জানালেন ময়ূরী দেবী। তিনি পেশায় চাষি ও সামাজিক কর্মী, তার পাশাপাশি কাটকারি আদিবাসী শিশুদের সঙ্গে কাজ করেন, আবার একটি গ্রন্থাগারও চালান। প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের প্রতি অপত্যস্নেহ ও তাদের নিয়ে কাজ করায় স্বাচ্ছন্দ্য আছে বলেই দেভরাই কেন্দ্রে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন তিনি।

সংগীতা কালেকারের ছেলে সোহম মৃগীরোগে আক্রান্ত, হামেশাই হাতপায়ে খিঁচুনি ধরে। শিক্ষক বলতে মা বাদে আর কেউ নেই তার — উঠে বসা থেকে কথা বলে, সব সংগীতা দেবীই শেখান। “ও এখন দিব্যি ‘আই, আই’ বলে ডাকতে পারে,” জানালেন তিনি। একখান চাবি নিয়ে খেলায় মত্ত ছিল ১০ বছরের ছোট্ট সোহম। চাবিখানা বারেবারে মাটিতে ফেলছে, আর সেটা পড়তেই নানারকম আওয়াজ করছে।

At Sadhana Village, Rahul Wankhede (left) in a dance session with special friends. ‘We have to teach them according to their mood,’ he says. Kanchan Yesankar is a social worker and teacher and is seen here (right) in a dance session. ‘I try to use dance to get my students to be active. I also use many dance therapies,’ she says
PHOTO • Urja
At Sadhana Village, Rahul Wankhede (left) in a dance session with special friends. ‘We have to teach them according to their mood,’ he says. Kanchan Yesankar is a social worker and teacher and is seen here (right) in a dance session. ‘I try to use dance to get my students to be active. I also use many dance therapies,’ she says
PHOTO • Urja

সাধনা গ্রামে, বিশেষ মিত্রদের নৃত্যকলায় তালিম দিচ্ছেন রাহুল ওয়াঙ্খেড়ে (বাঁদিকে)। ‘ওদের মেজাজ-মর্জির কথা মাথায় রেখেই পড়াই,’ জানালেন তিনি। নাচের ক্লাসে দেখা যাচ্ছে সমাজকর্মী তথা শিক্ষক কাঞ্চন ইয়েশংকরকে (ডানদিকে)। ‘নাচের মধ্যে দিয়ে আমরা ছাত্রছাত্রীদের চনমনে করে তুলি। আমি বিভিন্ন প্রকারের ডান্স থেরাপিও ব্যবহার করি,’ বললেন তিনি

Left: Sangita Kalekar's 10-year-old son Soham has severe epileptic seizures and cannot speak much, but ‘he can now say aai, aai ,’ says his mother.
PHOTO • Urja
Right: In Hadshi, Phulabai Loyare (far left) with her daughter, Nanda, Sangita Kalekar (in red) with K unal Gujar and Mayuri Gaikwad (far right)
PHOTO • Urja

বাঁদিকে: মৃগীরোগের প্রকোপে ভয়ানক খিঁচুনির শিকার সংগীতা কালেকারের ১০ বছরের ছেলে সোহম, সে তেমন কথাও বলতে পারে না, তবে তার মা জানাচ্ছেন: ‘ও এখন আই, আই বলে ডাকতে পারে।’ ডানদিকে: হাডশি গ্রামে মেয়ে নন্দার সঙ্গে ফুলাবাই লোয়ারে (একেবারে বাঁদিকে), পাশে কুনাল গুজর ও ময়ূরী গায়কোয়াড়ের সঙ্গে সংগীতা কালেকার (লাল কামিজ গায়ে)

অবশ্য পুণের ধাইরি স্কুল ফর হিয়ারিং ইম্পেয়ার্ডের কথা আলাদা। পড়ুয়ারা কোনও শব্দ করলেই খুশিতে ভরে ওঠে শিক্ষকদের মন। কারণ শিক্ষার পথে তারা যে আরও এক কদম এগিয়েছে, এটা তার অকাট্য প্রমাণ। এই জাতীয় আওয়াজ ও অঙ্গভঙ্গি বাদে, “সমবয়সি ‘স্বাভাবিক’ বাচ্চাদের সঙ্গে ওদের কোনও পার্থক্য নেই,” বুঝিয়ে বললেন সত্যভামা আল্হাট। আজ ২৪ বছর ধরে তিনি এখানেই কর্মরত।

শ্রবণশক্তিরহিত শিক্ষার্থীদের জন্য এই স্কুলসহ ৩৮টি বিদ্যালয়ের গোড়াপত্তন করেছে সুহৃদ মণ্ডল নামে পুণে-কেন্দ্রিক একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি গত ৫০ বছর ধরে বিশেষ শিক্ষকদের তালিম দিচ্ছে। স্বেচ্ছায় নিজ নিজ কাঁধে শিক্ষকের গুরুদায়িত্ব তুলে নেওয়ার আগে এই শিক্ষকরা হয় বিএড কিংবা ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন।

ধাইরি বিদ্যাপীঠের চতুর্থ শ্রেণির কক্ষ। ব্ল্যাকবোর্ডে নিটোল ছাঁদে আঁকা বাড়িঘর, ঘোড়া, কুকুর আর একটি পুকুরের ছবি। ছাত্রছাত্রীদের আজ এই শব্দগুলোই শেখাতে চান মোহন কানেকর। ঝুলিতে ২১ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে টোটাল কমিউনিকেশন বা পূর্ণাঙ্গ কথোপকথনের কায়দা অনুসরণ করেন এই ৫৪ বছর বয়সি মানুষটি। শ্রবণশক্তিরহিত শিশুদের পড়াবার সময় পূর্ণাঙ্গ কথোপকথনের কায়দায় থাকে কথাবার্তা, লিপ্-রিডিং (ঠোঁটের নাড়াচাড়া দেখে কথা বোঝা), সংকেত ও লেখাজোকা। বিভিন্ন স্বর ও সুরে বারবার আউড়ে তাঁর প্রতিটা সংকেতের জবাব দেয় পড়ুয়ারা। সে আওয়াজ শুনে হাসিতে ঝলমল করে মোহন বাবুর চোখমুখ, সযত্নে ধরে ধরে প্রতিটি বাচ্চার উচ্চারণ শুধরে দেন তিনি।

At the Dhayari School for the Hearing Impaired, Aditi Sathe (left) using picture cards . Sunita Zine (right) is the hostel superintendent and is teaching colours and Marathi alphabets to the youngest students
PHOTO • Urja
At the Dhayari School for the Hearing Impaired, Aditi Sathe (left) using picture cards . Sunita Zine (right) is the hostel superintendent and is teaching colours and Marathi alphabets to the youngest students
PHOTO • Urja

ধাইরি স্কুল ফর দ্য হিয়ারিঅং ইম্পেয়ার্ডে ছবি-আঁকা তাস দিয়ে পড়াচ্ছেন অদিতি সাঠে (বাঁদিকে)। বিদ্যাপীঠের সবচাইতে কমবয়সি পড়ুয়াদের রং ও মারাঠি হরফ চেনাচ্ছেন হস্টেল অধ্যক্ষ সুনীতা জিনে (ডানদিকে)

Mohan Kanekar (left) is an experienced special teacher at Dhayari School for the Hearing Impaired. He is teaching Marathi words to Class 4. ‘You have to be good at drawing if you want to teach these students,’ he says. A group of girls (right) in his class following the signs and speech of their teacher
PHOTO • Urja
Mohan Kanekar (left) is an experienced special teacher at Dhayari School for the Hearing Impaired. He is teaching Marathi words to Class 4. ‘You have to be good at drawing if you want to teach these students,’ he says. A group of girls (right) in his class following the signs and speech of their teacher
PHOTO • Urja

ধাইরি স্কুল ফর দ্য হিয়ারিঅং ইম্পেয়ার্ডের একজন অভিজ্ঞ বিশেষ শিক্ষামিত্র মোহন কানেকর (বাঁদিকে)। তাঁর লব্জে: ‘নিজে ভালো না আঁকতে পারলে এই বাচ্চাদের শেখাতে পারবেন না।’ তাঁর ক্লাসে, শিক্ষকের সাংকেতিক মুদ্রা ও কথাবার্তা অনুসরণ করছে একদল মেয়ে (ডানদিকে)

অন্য একটি শ্রেণিকক্ষে, নিজের বাক প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে সাতটি শিশুর ‘তৃতীয় স্তরের’ ক্লাস নিতে থাকেন অদিতি সাঠে। সহায়ক রূপে এই স্কুলে তিনি ১৯৯৯ থেকে কাজ করছেন।

ওই হলঘরেরই অন্যদিকে এ বিদ্যালয়ের সবচাইতে খুদে খুদে পড়ুয়াদের ক্লাস নিচ্ছেন সুনীতা জিনে। তাদের কোলাহলে কিন্তু একফোঁটাও বিচলিত হচ্ছেন না অদিতি ও তাঁর শিক্ষার্থীরা। ৪৭ বছর বয়সি সুনীতা তাই হস্টেল-অধ্যক্ষ। দিদিমণি রং চেনাচ্ছেন, তাই ক্লাসময় ছোটাছুটি করে রংপেন্সিল হাতড়ে বেড়াচ্ছে পুঁচকেরা। নীল ব্যাগ, লাল শাড়ি, কালো চুল, হলুদ ফুল... আনন্দে আত্মহারা হয়ে চেঁচিয়ে উঠল ছাত্রছাত্রীরা — কেউ কেউ শব্দ করে, কেউ বা শুধুই হাত নেড়ে। চোখমুখের ইশারায় তাদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রশিক্ষিত এই বিশেষ শিক্ষিকা।

“আজ সমাজ ও স্কুলে স্কুলে হিংসা আর আগ্রাসনের মাত্রা বেড়েই চলেছে, তাই মেধা ও সাফল্য ঘিরে আমাদের যা যা ধারণা রয়েছে, সেগুলোকে যাচাই করতেই হবে। সঙ্গে শৃঙ্খলা ও শাস্তির বিষয়গুলোও,” জানাচ্ছেন মেধা তাই। সকল শিক্ষকের প্রতি তাঁর বিনীত আবেদন, তাঁরা যেন অন্তত একটিবার বিশেষ কোনও বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। নইলে তাঁরা কখনওই বুঝবেন না যে “মৃদুভাষ্যের জোরে যে ঠিক কতকিছু অর্জন করা যায়।”

নিবন্ধটির কাজে সহায়তার জন্য সুহৃদ মণ্ডলের ড. অনুরাধা ফাতরফোড়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন প্রতিবেদকদ্বয়।

Hand prints on the wall by special friends and volunteers working at Sadhana Village
PHOTO • Urja

দেওয়াল জুড়ে শোভা পাচ্ছে সাধনা গ্রামের বিশেষ বন্ধু ও স্বেচ্ছাকর্মীদের হাতের ছাপ


Special friends sharing happy moments with their teachers
PHOTO • Urja

বিশেষ শিক্ষকদের সঙ্গে কিছু খুশির মুহূর্ত ভাগ করে নিচ্ছে বিশেষ বন্ধুরা

A stall set up by special friends living at Sadhana Village selling rakhi and other handmade items like handbags and pouches made by them. ‘They like to make things with their hands,’ says Kanchan Yesankar, a social worker and teacher
PHOTO • Urja

সাধনা গ্রামের বিশেষ মিত্ররা একখান স্টল দিয়েছে, সেখানে নিজেদের হাতে বানানো ব্যাগ আর বটুয়া বিক্রি করছে। ‘ওরা হাতে করে এটাসেটা বানাতে খুব ভালোবাসে,’ বললেন সমাজকর্মী ও শিক্ষক কাঞ্চন ইয়েশংকর

A special friend showing mehendi on his hands on the occasion of Nag Panchami celebrated on the fifth day of Shravan
PHOTO • Urja

শ্রাবণের পঞ্চম দিনে উদযাপিত হয় নাগ পঞ্চমী, সেই উপলক্ষে হাতে আঁকা মেহেন্দির নকশা মেলে ধরেছে এক বিশেষ বন্ধু

Sunita Zine is a trained special teacher
PHOTO • Urja

সুনীতা জিনে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ শিক্ষক

Students learning to make signs for the Marathi alphabet
PHOTO • Urja

সাংকেতিক মুদ্রায় মারাঠি হরফ ব্যক্ত করতে শিখছে পড়ুয়ারা

Mohan Kanekar teaching words using Total Communication, a method that combines speech, lip-reading, sign and writing
PHOTO • Urja

কথাবার্তা, লিপ রিডিং, সংকেত ও লেখালেখির সমন্বয়ে টোটাল কমিউনিকেশন বা পূর্ণাঙ্গ কথোপকথনের তালিম দিচ্ছেন মোহন কানেকর

Girls learning signs from their teacher Mohan Kanekar respond to each sign and try and repeat the words in different notes and tones
PHOTO • Urja

মোহন কানেকরের কাছে সাংকেতিক ভাষা (সাইন ল্যাংগুয়েজ) শিখে প্রতিটি মুদ্রার জবাব দিচ্ছে মেয়েরা, ভিন্ন ভিন্ন স্বর ও সুর বসিয়ে শিক্ষকের শব্দগুলো নকল করছে তারা

Children at the Dhayari School for the Hearing Impaired chat with each other. ‘Sometimes, children come up with their own sign,’ says Satyabhama Alhat, a special teacher working with the school
PHOTO • Urja

আড্ডায় মশগুল ধাইরি বিদ্যালয়ের বাচ্চারা। এখানে কর্মরত বিশেষ শিক্ষিকা সত্যভামা আল্হাট জানাচ্ছেন, ‘একেকসময় তো বাচ্চারা নিজেরাই নিজের মতো সাংকেতিক মুদ্রা আবিষ্কার করে ফেলে’

A hearing impaired child joined the hostel at the Dhayari school. Not yet five years old, he is learning the names of animals while playing with the rubber models
PHOTO • Medha Kale

ওসমানাবাদ থেকে আগত শ্রবণশক্তিরহিত এই শিশু ধাইরি স্কুলের হস্টেলে দাখিলা নিয়েছে। বয়স তার এখনও পাঁচ হয়নি, রাবারের খেলনা নিয়ে খেলতে খেলতে পশুপাখির নাম শিখছে

Teachers use a blackboard for drawing and writing words. Here Aditi Sathe has drawn birds and instruments at the Dhayari school
PHOTO • Medha Kale

আঁকিবুকি ও লেখাজোকার জন্য ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করেন শিক্ষকেরা। ধাইরি বিদ্যাপীঠের ব্ল্যাকবোর্ডে অদিতি সাঠে পাখি আর নানান জিনিসপত্রের ছবি এঁকেছেন

Sudents following their teacher’s sign and learning the word kaavla (crow) through actions
PHOTO • Medha Kale

শিক্ষকের সংকেত দেখে, হাতপা নেড়ে কাওলা (কাক) শব্দটি শিখছে বাচ্চাকাচ্চার দল

A child learning to write numbers
PHOTO • Urja

সংখ্যা লিখতে শিখছে একটি শিশু


Sunita Zine teaching colours to the youngest class at Dhayari school
PHOTO • Medha Kale

ধাইরি স্কুলের কনিষ্ঠতম পড়ুয়াদের রং চেনাচ্ছেন সুনীতা জিনে

Students with Bairagi, their art teacher
PHOTO • Medha Kale

শিল্পশিক্ষক বৈরাগি স্যারের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা

A child shows a paper bunny
PHOTO • Urja

নিজের হাতে বানানো কাগজের খরগোশ দেখাচ্ছে জনৈক শিক্ষার্থী

At Dhayari school, art and artwork are part of the curriculum
PHOTO • Urja

ধাইরি বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে শিল্প ও শিল্পকর্ম – দুটিই আছে

Children from Class 1 show paper bunnies, paper boats and other artwork
PHOTO • Urja

হাতে বানানো কাগজের খরগোশ, নৌকা ও অন্যান্য শিল্পকর্ম দেখাচ্ছে প্রথম শ্রেণির পড়ুয়ারা

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Medha Kale

Medha Kale is based in Pune and has worked in the field of women and health. She is the Marathi Translations Editor at the People’s Archive of Rural India.

Other stories by Medha Kale
Photos and Video : Urja

Urja is Senior Assistant Editor - Video at the People’s Archive of Rural India. A documentary filmmaker, she is interested in covering crafts, livelihoods and the environment. Urja also works with PARI's social media team.

Other stories by Urja
Editor : Priti David

Priti David is the Executive Editor of PARI. She writes on forests, Adivasis and livelihoods. Priti also leads the Education section of PARI and works with schools and colleges to bring rural issues into the classroom and curriculum.

Other stories by Priti David
Translator : Joshua Bodhinetra

Joshua Bodhinetra is the Content Manager of PARIBhasha, the Indian languages programme at People's Archive of Rural India (PARI). He has an MPhil in Comparative Literature from Jadavpur University, Kolkata and is a multilingual poet, translator, art critic and social activist.

Other stories by Joshua Bodhinetra