“বৈষম্য জিনিসটা খারাপ কেন?” বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি স্কুলে পারি নিয়ে প্রেজেন্টেশন চলাকালীন এক কিংকর্তব্যবিমূঢ় পড়ুয়া ঠিক এই প্রশ্নটাই করেছিল।

তারপর, নিজের মতো যুক্তি সাজিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সে বলেছিল, “কিরানা [মুদিখানা] মালিকের দোকানটা ছোট্ট, আর আম্বানি বিশাল খাটাখাটনি করে বলে তার ইয়াব্বড় ব্যবসা। যারা যারা বিস্তর খাটে, তারাই সফল হয়।”

এই পরিসরে ‘সাফল্য’ নামের বস্তুটির বিনির্মাণ করা যায়, কারণ পারির বহু গল্পে ফুটে ওঠে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও বিচার ঘিরে চলতি বৈষম্যের কথা। খেত-খামার, বনজঙ্গল, শহরের আবছায়া গলিঘুঁজি — এমন নানান জায়গায় যাঁরা অনবরত ঘাম ঝরিয়ে চলেছেন, ক্লাসরুমে তাঁদেরই জীবনকথা তুলে ধরি আমরা।

নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সাম্প্রতিক কালের বিষয়-সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা বলতে পারির সাংবাদিকেরা বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে হাজির হন — এটাই আমাদের শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি। সে বিদ্যালয় হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়, শহর হোক বা গ্রাম, ঝুলি থেকে একের পর এক কাহিনি, ছবি, তথ্যচিত্র, গান ও শিল্পকর্ম বার করতে থাকি — যাতে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তব প্রকাশ পায়।

চেন্নাইয়ের এক উচ্চবিদ্যালয়ের পড়ুয়া অর্ণব শেষমেশ স্বীকার করেছিল, “আমরা ওঁদের [স্বীয় আর্থসামাজিক স্তরের নিচে] কেবলই পরিসংখ্যান বলে ধরে নিই; তাঁরা যে রক্তমাংসের মানুষ, আমাদের মতোই হাজারটা ঝড়ঝাপ্টা সামলাচ্ছেন, এভাবে ভাবিই না।”

Left: At a session in Punjabi University, Patiala, on the need for more rural stories in mainstream media.
Right: At a workshop with young people at the School for Democracy in Bhim, Rajasthan on how to write about marginalised people
PHOTO • Binaifer Bharucha

বাঁদিকে: পাতিয়ালার পঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পারি এডুকেশনের ক্লাস। বিষয়: মূলধারার মিডিয়ায় নৈতিক গ্রামীণ প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা। ডানদিকে: রাজস্থানের ভীম, স্কুল ফর ডেমোক্রেসির কমবয়সি পড়ুয়াদের নিয়ে একটি কর্মশালা। বিষয়: প্রান্তবাসী মানুষদের নিয়ে কেমনভাবে লেখা উচিত

সামাজিক বিষয়-সমস্যাগুলো বেশ জটিল বটে, তবে কখনও সখনও একখান প্রতিবেদনেই তাদের জট খুলে যায়: আখ কেটে কাবার ২,০০০ ঘ ণ্টা গল্পটি মহারাষ্ট্রের বীড জেলার চাষিদের নিয়ে, যাঁরা রুজিরুটির সন্ধানে এক আখ-খেত থেকে আরেক আখ-খেতে ঘুরে বেড়ান — প্রতিদিন ১৪ ঘণ্টা ধরে চলে চিমোড় পাকা আখ কাটার পালা। এই দাস্তানে রয়েছে তাঁদের ব্যক্তিগত কিছু আখ্যান, রয়েছে কাজের খোঁজে ঘুরে বেড়ানোর হাড়হিম করা ছবি — যার থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে কেন মারাঠওয়াড়ার ৬ লাখ খেতমজুর আখ-কাটার তাগিদে বছর বছর অভিবাসী হন।

আখ-মজুররা এক দিনকে দিন প্রখর হতে থাকা বৃহত্তর কৃষি-সংকটের কথা বলেন, যার পিছনে লুকিয়ে আছে দূর্বল নীতি, বাড়তে থাকা চাষের খরচ, খামখেয়ালি আবহাওয়া সহ নানান কারণ। মা-বাবার পিছু পিছু ঘর ছাড়ে পরিযায়ী পরিবারের বাচ্চাকাচ্চারাও, বছর বছর একটা লম্বা সময় ধরে স্কুলছুট হয়ে পড়ে তারা — যার প্রভাব এসে পড়ে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায়, অনিশ্চিত হয়ে যায় ভবিষ্যৎ, বাবা-মায়ের মতো একই জাঁতাকলে পেষাই হতে থাকার সম্ভাবনাটাও বেড়ে চলে।

বাচ্চারা যদি সরাসরি বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে, তাহলে পাঠ্যপুস্তকে হামেশাই উঁকি মারা একটি শব্দবন্ধ জলজ্যান্ত উদাহরণের বলে রক্তমাংসের বাস্তব হয়ে ওঠে — ‘নির্মম দারিদ্র্যচক্র’।

এই জাতীয় গল্প পড়লে একটি চিরাচরিত ভুল ধারণা কাটবেই — যে অর্থনৈতিক সাফল্য কেবল সার্মথ্যের উপরেই নির্ভরশীল।

শ্রেণিকক্ষের অন্দরে, উপরোক্ত ‘সাফল্য’-এর বিরুদ্ধে শানিয়ে ওঠে এক শিশুর কণ্ঠ: “কিন্তু একজন রিকশাওয়ালাও তো বিস্তর খাটেন।”

মৌলিক কাহিনি, ব্যক্তিগত গপ্প, যাচাই করা তথ্য ও কথকতার মাধ্যমে আমরা শুধুই যে বিশ্লেষণমূলক চিন্তাভাবনার প্রচার করতে চাই তা কিন্তু এক্কেবারে নয়। ছাত্রদের নিজস্ব আরামের জায়গা থেকে বার করে তাদের মনে করুণার বীজও রোপন করতে চাই। দিল্লির এক কলেজপড়ুয়া আমাদের জানিয়েছিল, “আপনারা জোরাজুরি না করলে জানতেই পারতাম না যে আমার জিন্দেগির বাইরেও জীবন আছে।”

Sugarcane workers are affected by an agrarian crisis caused by poor policies and unpredictable climate. Their children miss school due to travel. 'Success' isn't just about hard work
PHOTO • Parth M.N.
Sugarcane workers are affected by an agrarian crisis caused by poor policies and unpredictable climate. Their children miss school due to travel. 'Success' isn't just about hard work
PHOTO • Parth M.N.

দূর্বল নীতি ও খামখেয়ালি আবহাওয়ায় সৃষ্ট কৃষি-সংকটে জেরবার হয়ে উঠেছেন আখ-মজুররা। অভিবাসনের ফলে স্কুলছুট হয়ে পড়ছে তাঁদের সন্তান-সন্ততি। ‘সাফল্য’ শুধুই মেহনতের ভাগশেষ নয়


আমরা চলে যাওয়ার পর আমাদের ফেলে রাখা সুতোর খি বুনে বুনে পড়াতে সক্ষম, এমন শিক্ষকও আছেন — আমরা তাঁদের সঙ্গেও কাজ করি। তাপবিদ্যুৎ ও গ্রিন এনার্জি (উদাহরণস্বরূপ) পড়াবার সময় তাঁরা আসেন পারির মহাফেজখানায়, তুলে আনেন জীবিকা ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত ক্ষুদ্র তথ্যচিত্র, পরিষ্কার হয়ে ওঠে পাঠ্যক্রম। কাহিনির নিপুণ তর্জমা, যা কিনা পাঠ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে, সেসব হাতে পেয়ে আনন্দ আটখানা হয়ে যান ভাষাশিক্ষকরা। তাঁরা জিজ্ঞেস করেন: “এই নিবন্ধটার পঞ্জাবি সংস্করণ আছে আপনাদের?” হ্যাঁ, আছে বৈকি! একটা নয়, দুটো নয়, ১৪টা ভাষায় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের জন্যও ফ্রি-টু-অ্যাক্সেস গ্রন্থাগারের মতন নানান রসদ মজুত রয়েছে পারির আকরে।

*****

বিশ্ব প্রেস স্বাধীনতা সূচকের তালিকায় পিছু হটতে হটতে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬১তম স্থানে এসে ঠেকেছে ভারতের তরী। আন্তর্জাতিক মিডিয়া পর্যবেক্ষক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার্সের একটি রিপোর্ট থেকে এটি জানা যায়।

আজ যেখানে প্রকৃত সাংবাদিকরাও পায়ের তলায় জমি হারাচ্ছেন, সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ার মজলিসে ২৪ ঘণ্টা মিথ্যে খবরে বুঁদ হয়ে থাকা নবীন প্রজন্মের মনে কেমনভাবে এই ‘অগণতান্ত্রিক’ বাস্তবটা গাঁথা যায় বলুন তো?

বিশ্ববিদ্যালয়ে সে পরিসর থাকলেও স্কুলের শ্রেণিকক্ষে তা অমিল, দুয়েকটা ব্যতিক্রম পর্যন্ত মেলে না।

ইতিবাচক সাংবাদিকতায় ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের সত্য উদ্ঘাটন থেকে সত্যবাদীর ক্ষমতায়ন, অনেক কিছুই সম্ভব। কলম, ক্যামেরা, ভিডিও ও বহুভাষিক প্রতিবেদনের জোরে সেটা বারবার দেখাতে থাকি আমরা।

লোকশিল্পী, ডাক হরকরা, স্থানীয় সংরক্ষণবিদ, রাবার সংগ্রহক, ছাঁট কয়লা কুড়িয়ে আনা মহিলা, দক্ষ কারিগর — পাঠ্যপুস্তকের সীমানা ছাড়িয়ে এমন বহু মানুষের দাস্তান মন দিয়ে শুনতে ও পড়তে শিখে প্রচলিত জ্ঞানের কাঠামোকে প্রশ্ন করতে শেখে পড়ুয়ারা।

Left: PARI at the Chandigarh Children's Literature Festival, engaging with students on stories about people in rural India.
PHOTO • Chatura Rao
Right: After a session with the Sauramandala Foundation in Shillong, Meghalaya, on the role of the media in democracies
PHOTO • Photo courtesy: Sauramandala Foundation

বাঁদিকে: গ্রামীণ ভারতীয়দের গল্প নিয়ে চণ্ডীগড়ের শিশুসাহিত্য উৎসবে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথোপকথনে পারি। ডানদিকে: মেঘালয়ের শিলংয়ে, সৌরমণ্ডল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে গণতন্ত্রের সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সদ্য সদ্য আলোচনা শেষ হয়েছে

নাহ্, কোনও বিষয়েই নিজেদের পণ্ডিত বলে জাহির করি না। আমরা কেবলই ক্লাসরুমে উপস্থিত সাংবাদিক, আমাদের লক্ষ্য এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা যেখানে কমবয়সি পড়ুয়াদের প্রশ্নবাণে ঝাঁঝরা হয়ে যায় রাষ্ট্রশক্তি, মিডিয়ায় প্রচলিত ছাঁচিকরণ ও পক্ষপাতিত্ব এবং জাতপাত ও শ্রেণিগত বিশেষাধিকার। নইলে বিরাসতে পাওয়া জগতটার খোলনলচে তারা বুঝবে কেমন করে?

কখনও কখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাধা দেন। আসলে ক্লাসরুমে জাতপাতের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে অনেকেরই বাধে তো, তাই...

কিন্তু এই ধরনের প্রতিবেদনের উপর যদি জোর না দেওয়া হয়, যদি এগুলি শ্রেণিকক্ষে সামিলই না করি, তাহলে আগামী প্রজন্মের নাগরিক তো জাতপাতের সূক্ষ্ম ও প্রচলিত হিংসা বিষয়ে কোনওদিন জানতেই পারবে না, আজীবন অচেতন রয়ে যাবে।

নর্দমার পাঁকে পড়ে কেউ যেন জীবন না খোয়ায় ’ গল্পটি পড়ে ছাত্ররা জানতে পারে এক হতভাগ্য সাফাইকর্মীর কথা, যিনি এদেশের রাজধানীর ঝাঁ-চকচকে বসন্ত কুঞ্জ মলে নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়ে জান দিয়েছিলেন। প্রতিবেদনটি পড়ে ওরা হতভম্ব হয়ে যায় — এমন খুনি বেআইনি চাকরিও থাকতে পারে? উপরন্তু দুর্ঘটনাস্থলটি তাদের স্কুল থেকে যে মোটে কয়েক কিলোমিটার দূরে!

ক্লাসরুমের পরিসর থেকে এই বিষয়-সমস্যাগুলি ‘আড়াল’ করে ‘অবহেলায়’ চুবিয়ে রাখলে ‘উজ্জ্বল ভারত’ নামের মিথ্যে তসবিরটা গাঢ় বই ফিকে হবে না।

পড়ুয়াদের এমন কাহিনি পড়ালে ওরা হরবখত একটাই সওয়াল করে — ‘কেমনভাবে একটুখানি সাহায্য করতে পারি বলুন তো?’

Left: ' No life in the gutter' told students a story about a worker who died in the drain in a Vasant Kunj mall.
PHOTO • Bhasha Singh
Right: Masters student at Azim Premji University, Dipshikha Singh, dove right into the deep end with her uncovering of female dancers' struggles at Bihar weddings
PHOTO • Dipshikha Singh

বাঁদিকে: ‘নর্দমার পাঁকে পড়ে কেউ যেন জীবন না খোয়ায়’ গল্পে ছাত্রছাত্রীরা জেনেছিল এক সাফাইকর্মীর কথা যিনি বসন্ত কুঞ্জ মলে নর্দমা সাফ করতে গিয়ে প্রাণ খুইয়েছেন। মহিলা নৃত্যশিল্পীরা বিহারের বিয়েশাদির অনুষ্ঠানে যে পরিমাণে হেনস্থার শিকার হন, এটা জনগোচরে আনতে গিয়ে সরাসরি বোলতার চাকে ঢিল ছুঁড়েছিল আজিম প্রেমজি ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া দীপশিখা সিং

হ্যাঁ, ওদের সাততাড়াতাড়ি সমাধান করার এই ইচ্ছেটা দেখে বড্ড ভালো লাগে ঠিকই, তবে মাটিতে নেমে কাজ করা প্রতিবেদক তথা সাংবাদিক বলে আমাদের লক্ষ্যটা খানিক আলাদা: কেমন করে চটজলদি মুশকিল-আসানের বদলে চারপাশের জিন্দেগিটা বারংবার পরীক্ষা ও পুনর্পরীক্ষা করার খিদেটা বাড়ানো যায়।

ছাত্ররা বিনাপ্রশ্নে আমাদের মুখের কথা মানুক, এটা চাই না কখনও আমরা। বরং ওদের উদ্বুদ্ধ করি যাতে পড়ুয়া থাকাকালীন ওরা নিজের নিজের চৌকাঠ ডিঙিয়ে চারধারের দুনিয়ার দস্তাবেজিকরণে ব্রতী হয়। ২০১৮ সালে পথচলা শুরু পারি এডুকেশনের, এ অবধি ২০০টিরও অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাজার হাজার পড়ুয়ার সঙ্গে কাজ করেছি আমরা। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওদের লেখা প্রকাশ করি, সে স্নাতকোত্তর হোক বা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র, সব্বাই হাতেনাতে খেটে শিখছে। পারির ওয়েবসাইটে তাদের প্রত্যেকটা লেখা পড়তে পারেন।

এটাই আমাদের ‘আনসেল্ফি’ বা ‘নিজস্বী-থেকে দূরে’ আঙ্গিক। আমাদের তাড়নায় আজ তারা নিজেদের নিয়ে ব্লগ না কপচিয়ে অন্য কারও জীবন নিয়ে লিখছে, অন্যের কণ্ঠ জোরদার করে তুলছে, তাদের জীবন ও জীবিকার থেকে নিচ্ছে বেঁচে থাকার পাঠ।

বলিউডের গ্ল্যামারপূর্ণ আইটেম নাম্বারে যাঁদের বাস্তবটা চুনকাম করে পরিবেশিত হয়, সেই মহিলা নৃত্যশিল্পীরা বিহারের বিয়েশাদিতে যে কতখানি হেনস্থার শিকার হন, এটা গোচরে আনতে গিয়ে সরাসরি বোলতার চাকে ঢিল ছুঁড়েছিল আজিম প্রেমজি ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া দীপশিখা সিং। পরিচয় গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি পেয়ে একজন নর্তকী জানিয়েছিলেন : “কমর পর হাথ রাখনা ইয়া ব্লাউজ মে হাথ ঘুসানে কি কোসিস করনা ইহাঁ মরদো কি রোজমররা কি হরকতে হ্যায় [কোমরে হাত রাখা কি ব্লাউজের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করাটা তো এখানে পুরুষদের রোজকার ব্যাপার]।” হররোজ হয়ে চলা আর্থসামাজিক হেনস্থার এ এক বীভৎস দাস্তান।

দীপশিখা আজ সামাজিক ক্ষেত্রে কর্মরত। নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে দেখা করা, কথা বলা, তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া — এটাই ছিল তাঁর পাঠ। “এই অভিজ্ঞতাটা [দস্তাবেজিকরণের] আমার লেখক জীবনের একটা স্মরণীয় মাইলফলক, তাছাড়া এটা আমায় উদ্বুদ্ধও করেছে এরকম আরও গুরুত্বপূর্ণ গল্প বলে যেতে...আমার উমিদ, পারির মিশনে যেন আরও অবদান রাখতে পারি,” আমাদের লিখে জানিয়েছিলেন তিনি।

এছাড়াও গ্রামীণ ছাত্রছাত্রীরা যাতে আপন গৃহস্থালি ও হৃদয়ের কাছাকাছি ছড়িয়ে থাকা বিষয় আপন মাতৃভাষায় লিপিবদ্ধ করতে পারে, সেজন্য গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্কুলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে পারি এডুকেশন। একদল কিশোর পড়ুয়া যেমন দল বেঁধে ওড়িশার জুরুডি গাঁয়ের সাপ্তাহিক হাট নিয়ে লিখেছিল। প্রতিবেদনটি লেখার সময় তারা বারবার হাটে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছিল।

Left: In Jurudi, Odisha, school reporters document the people and produce they sell at a vibrant weekly haat (market)
Right: Student reporter Aysha Joyce profiles N. Saramma, a waste collector who runs an open kitchen in Trivandrum. Saramma's story touched thousands of readers across India, many offering to support her work via donations
PHOTO • Aysha Joyce

বাঁদিকে: ওড়িশার জুরুডির জমজমাট হাটে গিয়ে হাটুরে মানুষ ও বিক্রি হওয়া সবজি-ফসলের কথা লিপিবদ্ধ করেছিল স্কুলপড়ুয়া চার সাংবাদিক। ডানদিকে: ছাত্র-সাংবাদিক আয়েশা জয়েসের কলমে উঠে এসেছে এন. সরম্মার দাস্তান — এই সাফাইকর্মীটি ত্রিবান্দমে একটি মুক্ত হেঁশেল চালান। পাঠকমহলের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল সরম্মা দেবীর কাহিনি, অনেকেই অনুদানের মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন

পারিকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিল সেই খুদে সাংবাদিকরা — অনন্যা টোপনো, রোহিত গাগরাই, আকাশ একা ও পল্লবী লুগুন: “এধরনের [গবেষণামূলক] কাজ করার অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। আমরা জানি সবজি চাষ কতটা কঠিন, তাই খদ্দেররা কেমনভাবে দরাদরি করে সেটা স্বচক্ষে দেখেছি। চাষিদের সঙ্গে দাম নিয়ে কেন যে লোকে তর্ক করে, তা বুঝি না।”

এমনকি যে পড়ুয়াদের বিচরণ গ্রামভারতের বাইরে, তাদেরকেও কলম শানানোর জায়গা দেয় পারি। এন. সরম্মার কথাই ধরুন না, এই সাফাইকর্মীটি ত্রিবান্দমে একটি উন্মুক্ত হেঁশেল চালান। প্রতিবেদনে ধরা পড়েছিল তাঁর এক ধনুকভাঙা পন: “খোদ ছোটবেলায় মারাত্মক গরিবি সয়েছি তো, তাই প্রতিজ্ঞা করেছি যে কাউকে ভুখা থাকতে দেব না।”

আয়েশা জয়েসের লেখা এই কাহিনিটি হাজার হাজার লাইক ও মন্তব্য কুড়িয়েছিল পাঠকমহলে, অনেকে সাহায্যের হাতও বাড়িয়েছিলেন। সরম্মা দেবীর মেয়েও কেন আম্মার মতো আবর্জনা সাফ করছে? তার জবাব এসেছিল, “দলিতদের কে চাকরি দেবে?” তারপর আয়েশাকে জানিয়েছিলেন, “অন্যের নিরিখে তুমি কে, লোকে এটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বার করবেই। যতই বুদ্ধি করে কদম ফেলি না কেন, সে যা-ই করি, কোনও মুক্তি নেই।”

পড়ুয়াদের বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রশিক্ষিত করি আমরা, যেমন সাক্ষাৎকারের আদবকায়দা, বুঝিয়ে সুঝিয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর অনুমতি নেওয়া এবং পাঠকের মন কাড়তে বহুমাত্রিক তথ্য সংগ্রহের গুরুত্ব। সর্বোপরি ছাত্ররা এই জাতীয় প্রতিবেদন লিখতে ও গড়তে শেখে যাতে সেগুলি ব্যক্তিগত ব্লগের বদলে সার্বিক হয়ে উঠতে পারে।

এটা ঠিকই যে অধিকাংশ সময় লোকে জার্নালিজম বলতে একাধিক উৎস ও তথ্যে সমৃদ্ধ তদন্তমূলক নিবন্ধ বোঝে। তবে আমরা কিন্তু সাদামাটা শব্দে মানুষের আখ্যান ফুটিয়ে তুলতে উৎসাহ দিই পড়ুয়াদের। এধরনের আখ্যানে থাকে জনতার দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, তাঁদের কামকাজের রকম, দৈনিক মজদুরির সময়, তাঁদের আনন্দ, তাঁদের সংগ্রাম, হাজার বাধা-বিপত্তির সম্মুখে তাঁদের জেদ, জীবনের অর্থনীতি ও সন্তানদের ঘিরে তাঁদের খোয়াবনামা।

পারি এডুকেশন এক অনন্য প্রয়াস, যাতে নতুন প্রজন্ম সৎ সাংবাদিকতার সাহায্যে সামাজিক বিষয়-সমস্যা গভীর ভাবে অনুধাবন করতে পারে। আম জনতা ও তাঁদের কিস্সার মধ্যে দিয়েই পড়ুয়ারা সাংবাদিকতার জগৎ ও নিজেদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনছে মানবিকতা।

আপনার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পারি কাজ করুক এমনটা চাইলে দয়া করে এই মেইল-আইডিতে লিখুন: [email protected]

এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিগুলি পারির চিত্র সম্পাদক বিনাইফার ভারুচার তোলা।

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র

Vishaka George

Vishaka George is Senior Editor at PARI. She reports on livelihoods and environmental issues. Vishaka heads PARI's Social Media functions and works in the Education team to take PARI's stories into the classroom and get students to document issues around them.

Other stories by Vishaka George
Editor : PARI Desk

PARI Desk is the nerve centre of our editorial work. The team works with reporters, researchers, photographers, filmmakers and translators located across the country. The Desk supports and manages the production and publication of text, video, audio and research reports published by PARI.

Other stories by PARI Desk
Translator : Joshua Bodhinetra

Joshua Bodhinetra is the Content Manager of PARIBhasha, the Indian languages programme at People's Archive of Rural India (PARI). He has an MPhil in Comparative Literature from Jadavpur University, Kolkata and is a multilingual poet, translator, art critic and social activist.

Other stories by Joshua Bodhinetra