সংবিধান অনুযায়ী কৃষিব্যবস্থা রাজ্যের অধীনে থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্র কোনও রকমের গণতান্ত্রিক নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তার পেশির জোরে তিনটি জনবিরোধী আইন পাশ করেছে পার্লামেন্টে, শতসহস্র কৃষক তাই ফেটে পড়েছেন আজ বিক্ষোভে। দিল্লির এই স্বৈরাচার এবং তার বিপক্ষে গ্রামীণ স্তর থেকে উঠে আসা এই স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ লাঙলের অভুক্ত ফলার মতন বিঁধেছে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য কবি ও শিল্পীর সত্তাকে। এই কবিতাটির আঁতুড়ঘর পাঞ্জাবে। এক ক্ষুদ্র চাষির দিনান্ত যুদ্ধের দিনলিপি এই লেখাটি। কবির যাপন এখানে অবলীলায় গর্ভে ধারণ করেছে কৃষিজীবনের দিগন্ত বিস্তৃত যন্ত্রণা, স্বপ্ন ও স্পর্ধাকে। আর এই বিদ্রোহ ও কবিতার দ্বৈরথকে যেন আরও আরও উজ্জীবিত করে তুলেছে বেঙ্গালুরুর এক তরুণী শিল্পীর অলংকরণ।

সুধন্য দেশপাণ্ডের কন্ঠে ইংরেজি অনুবাদে কবিতাটি শুনুন

অলংকরণ : অন্তরা রামন

কৃষাণ কাহিনি


বুনি বীজ, ধরি হাল, রাঙি কাস্তে সকাল,
রাখি প্রতিজ্ঞা মহী মোর
পায়ের তলায়।
এ জীবন
অনশন শুধু শরীর সাজায়।।

মাটি দিন, ঘেমো ঋণ,
হিয়া ঝড়ের সাকিন,
হেথা শীতরঙা বেনো রোদে
সূর্য হাজার কাঁদে,
আত্মা আমার নোনা যুদ্ধ জেতায়।
এ জীবন
অনশন শুধু শরীর সাজায়।।

প্রকৃতি যা পারে নাই, ন্যাংটা সে রাজা হায়
বুনিল পোয়াতি ধানে রঙ্গ তামাশা গানে
আত্মা চাঁড়ালি মোর কাকতাড়ুয়ায়।
এ জীবন
অনশন বাসি জঠর পোহায়।।

মুছে যাওয়া দিনগুলো, আমার শ্রমের ধুলো
স্বর্গ মর্ত্য সেথা ছিল একাকার,
ছিল কত কী বলার ----
হায়!
দু'বিঘা জমির শেষে তেভাগা ঋণের দেশে
জমেছে অতীত যেন খিদের নেশায়,
এ জীবন
অনশন শুধু শরীর সাজায়।।

সোনালী শ্যামল চাঁদে, এনেছি আনাজ বেঁধে
বাজারে উজাড় করে দিয়েছি পরাণ ----
তবু খণ্ড খণ্ড আশা, শূন্য এ ভালবাসা,
দেখেছি আকাশ ভরা মাটির উজান।
এ জীবন
আমরণ এঁটো ক্লান্তি মহান।।

ঠুনকো দেয়ালা ঝরে আধপেটা অক্ষরে
খুচরো স্বপ্ন সাজে ধূলার শিখায়,
হায়,
ছড়ানো জটিল দেহ, ভুখা সে খড়ের স্নেহ,
থিকথিকে রাত জমে হলদে শিরায়।
এ জীবন
অনশন মিছে গল্প জমায়।।

বন্ধকী সোনাদানা, খিদের নালিশ গোনা,
আত্মা হাঁসুলি জিনে পিছু ডাকে হায় ----
কথা রেখে না রাখায় ----
তবু জড়াবো গমের শিষে লাঙল পোহানো বিষে
শহুরে লোভের দানা গেঁয়ো কবিতায়।
এ জীবন
অনশন শুধু শরীর সাজায়।।

জড়োয়া ফসল দানে
দালাল বা মহাজনে
বাঁধিব কোথায় বলো এ ঋণ আমার?
দ্যাখো সীসার পাঁজরদিনে হৃদয় কাফন বোনে,
শুখা সে আঙারে কাঁদে মেঘলা জনার।

এ জীবন
অনশন শুধু বাতাস চেনার।।
বিদ্রোহ আজো বাকি,
এছাড়া উপায়টা কী?
হাঁড়িকাঠে জন্মেছে স্পর্ধা আমার,
ওই কাস্তে কোদালই হবে তীর তলোয়ার।
এ জীবন
অনশন শুধু মুক্তি পাওয়ার।।

কবির কন্ঠে মূল কবিতাটি পাঞ্জাবি ভাষায় শুনুন

কবিতাটি পাঞ্জাবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন অমৃতসরের জীনা সিং , যিনি পেশাগত পরিচয়ে একজন স্থাপত্যবিদ।

অঙ্কনশিল্পী অন্তরা রামন বেঙ্গালুরুর সৃষ্টি ইন্সটিটিউট অফ ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজির ভিজুয়াল কম্যুনিকেশন বিভাগ থেকে সদ্য উত্তীর্ণ একজন স্নাতক অন্তরার শিল্পচর্চা ও অলংকরণের মূল মন্ত্র হিসেবে উঠে আসে কন্সেপচুয়াল আর্ট এবং কথকতা

অডিও : জন নাট্য মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ও পরিচালক সুধন্য দেশপাণ্ডে , একই সঙ্গে লেফ্টওয়ার্ড বুকস্-এর একজন সম্পাদকও

বাংলা অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Sarbjot Singh Behl

Prof. Sarbjot Singh Behl is Dean, Academic Affairs, at Guru Nanak Dev University, Amritsar. An architect by training, he teaches at the School of Architecture and Planning and writes powerful poetry.

Other stories by Sarbjot Singh Behl
Translator : Joshua Bodhinetra

Joshua Bodhinetra is the Content Manager of PARIBhasha, the Indian languages programme at People's Archive of Rural India (PARI). He has an MPhil in Comparative Literature from Jadavpur University, Kolkata and is a multilingual poet, translator, art critic and social activist.

Other stories by Joshua Bodhinetra