২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে দারিবায় ভোলি দেবী বিষ্ণোইকে ডাইনি বলে চিহ্নিত করা হয়। তারপর কেটে গেছে একে একে ১৫টা বছর। সেদিন তিনজন মহিলা ভোলির বিরুদ্ধে এই মর্মে নালিশ জানান যে ভোলির তুকতাকের ফলে তাঁদের বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পুরো গ্রামের সামনে তাঁকে ডাইনি বলে দাগানো হয়, বলা হয় তিনি নাকি অন্যের শরীরে প্রবেশ করে তাদের দেহে রোগ দিয়েছেন।

এই ঘটনার চার মাস পর ভোলি আর তাঁর পরিবারকে তাঁদের ভিটেবাড়ি থেকে তাড়ানো হয়। সুয়ানা ব্লকের দারিবায় প্রায় ৫০০টি পরিবারের বাস। দারিবা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ভিলওয়াড়া শহরে চলে যেতে বাধ্য হয় ভোলি দেবীর পরিবার।

এখন ভোলির বয়স ৫০, ঘরের কাজকর্ম করার সঙ্গে তিনি চাষাবাদের কাজও করেন। তিনি জানালেন যে নিজে ডাইনি প্রথায় বিশ্বাস করেন না। কিন্তু তাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘ডায়ন’ (‘ডাকন’) বলে। প্রথা মাফিক যে মহিলা তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিয়েছেন, তিনি ভোলির হাত থেকে প্রসাদ খেলে তবেই নাকি তাঁর ‘কলঙ্কমুক্তি’ ঘটবে।

অনেকদিন ধরে ভোলি তাঁর আত্মীয়স্বজন এবং অন্যান্যদের কথা মতো ওই মহিলাকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করেছেন। পুষ্কর, হরিদ্বার, কেদারনাথে তীর্থযাত্রা, গঙ্গাস্নান ও বিশেষ তিথিতে উপবাস করেছেন। তাঁকে বলা হয়েছিল যে এইসব করলে তবেই তিনি ডাইনির অপবাদ থেকে তিনি মুক্তি পাবেন।

“এই তীর্থযাত্রা ও উপোস করার পর কয়েকজন দম্পতিকে নিমন্ত্রণ করে ভোজ দেবার প্রথা আছে। কিন্তু আমাদের বাড়িতে কেউই তা রক্ষা করতে এল না,” জানালেন ভোলি। ভোলির পরিবার তাঁদের বাড়ি এবং গ্রামে স্থানীয় উৎসবের সময় খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁদের আশা ছিল যে এর ফলে তাঁদের যে একঘরে করে দেওয়া হয়েছিল, সেটা থেকে নিস্তার মিলবে। ভোলির মতে এতবছর ধরে এইসব ভোজ দিতে গিয়ে তাঁদের প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে।

ভিলওয়াড়ায় কর্মরত সামাজিক কর্মী তারা আহলুওয়ালিয়া জানালেন যে, এরকম একঘরে করে দেওয়া ভিলওয়াড়া জেলায় মোটেই বিরল ঘটনা নয়। ২০০৫ সালের এই ঘটনার কয়েকদিন পরে তিনি ভোলি ও তাঁর পরিবারের তরফ থেকে আদালতে দরখাস্ত করে এফআইআর দায়ের করেন।

Left: Bholi and her family were forced to leave their home in Dariba village four months after the incident. Right: She moved with her husband Pyarchand (right) and family (including daughter-in-law Hemlata, on the left) to Bhilwara city
PHOTO • People's Archive of Rural India
Left: Bholi and her family were forced to leave their home in Dariba village four months after the incident. Right: She moved with her husband Pyarchand (right) and family (including daughter-in-law Hemlata, on the left) to Bhilwara city
PHOTO • Tara Ahluwalia

বাঁদিকে: ঘটনাটি ঘটার চার মাস পরে ভোলি আর তাঁর পরিবারকে দারিবা গ্রামে নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। ডানদিকে: ভোলি দেবী তাঁর স্বামী প্যারচাঁদ (ডানদিকে) এবং পুরো পরিবার (পুত্রবধূ হেমলতা সহ, বাঁদিকে) সমেত ভিলওয়াড়া শহরে চলে যান। ছবিটি ২০১৭ সালে তোলা

থানায় ২০০৫ সালের ২৮শে জানুয়ারি এফআইআর দায়ের করা হয় এই মর্মে - একটি পরিবারের ৭ জন সদস্য ভোলিকে ডাইনি বলে চিহ্নিত করেছেন এবং এর পিছনে প্রকৃত অভিসন্ধি ছিল দারিবা গ্রামে তাঁদের পরিবারের ৩ বিঘা (১.২ একর) জমির দখল নেওয়া। ভোলির পরিবারটির মতো এই হেনস্থাকারী পরিবারটিও বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের। এটি রাজস্থানে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি হিসেবে চিহ্নিত। ভোলির স্বামী প্যারচাঁদ বিষ্ণোই জানিয়েছেন যে বহু বছর ধরেই অন্য পরিবারটি নিজেদের জমিতে যাতায়াতের জন্য ভোলিদের জমির ভিতর প্রবেশাধিকার দাবি করে আসছিল। এই জমি ভাগচাষিদের ইজারা দেওয়া ছিল। প্যারচাঁদ এই দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং যখন তাঁদের অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে অনুরোধ করেন, তখন তুমুল বিবাদ বাধে। এরই ফলস্বরূপ ভোলিকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়।

এই ডাইনি চিহ্নিত করার ঘটনাগুলির পিছনে আদতে অন্য কারণ থাকে বলে ভিলওয়াডার পুলিশ সুপারেন্টেডেন্ট, হরেন্দ্র কুমার মাহাওয়ারের পর্যবেক্ষণ। তিনি জানালেন, “বেশিরভাগ অপবাদই মিথ্যা এবং এর মূলে থাকে জমি নিয়ে বিবাদ। এই এলাকার চিরাচরিত সামাজিক রীতিনীতি থেকেই এই প্রথার জন্ম।”

অনেক সময়ে দেখা যায় যে গ্রামের প্রভাবশালী লোকে কোনও মহিলাকে হেনস্থা করতে হলে তাঁকে ডাইনি চিহ্নিত করে দেয়, বিশেষ করে স্বামীহারা বিধবা বা একা মহিলা যাঁরা আর্থিক কারণে আইনের দ্বারস্থ হতে পারবেন না। বেশিরভাগ সময়ে এগুলো এই মহিলাদের জমি দখল করার ষড়যন্ত্র মাত্র। বাল এবম মহিলা চেতনা সমিতি নামে একটি অলাভজনক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আহলুওয়ালিয়া আমাদের এই কথা জানালেন। তিনি ভিলওয়াড়া জেলায় ১৯৮০-এর দশক থেকে এই ডাইনি প্রথার বিরুদ্ধে নিরলসভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

পারিবারিক শত্রুতা ও দ্বন্দ্বের ফলেও অনেক সময়ে মহিলাদের উপর দোষারোপ করা হয়। যেহেতু আগেকার দিনে এই সমস্যাগুলিকে সামাজিক সমস্যা হিসাবে ধরা হত, তাই গ্রাম পঞ্চায়েতই এগুলোর মীমাংসা করত। আহলুওয়ালিয়া জানালেন, “পঞ্চায়েতের সদস্যদেরও এই ডাইনি প্রথার পিছনে মদত আছে।”

২৫ বছর ধরে নিরলস প্রচারের ফলে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে রাজস্থান সরকার রাজস্থান প্রিভেনশান অফ উইচ হান্টিং অ্যাক্ট পাস করে। এই আইন মোতাবেক কাউকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। সাজা বাবদ হাজতবাস ও আর্থিক জরিমানা হতে পারে। ডাইনি অপবাদ দিলে এক থেকে পাঁচবছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০,০০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে।

PHOTO • Madhav Sharma

২০১৫ সালে আইন বলবৎ হওয়ার পর থেকে রাজস্থানে ২৬১টি ডাইনি সংক্রান্ত অভিযোগ রুজু হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কেবলমাত্র ১০৯টি ঘটনায় চার্জশিট দাখিল করেছে। এবং আজ পর্যন্ত কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি

রাজস্থান পুলিশের তথ্য অনুযায়ী এই আইন প্রণীত হওয়ার পর থেকে কেবলমাত্র ভিলওয়াড়া জেলা থেকেই ৭৫টি অভিযোগ আসে। (মাহাওয়ার জানালেন মাসে ১০-১৫টি অভিযোগ আসে বটে, তবে সবগুলিই যে মামলা অবধি গড়ায়, এমন নয়।) ২০১৫ সালে আইন বলবৎ হওয়ার পর থেকে রাজস্থানে ২৬১টি ডাইনি সংক্রান্ত অভিযোগ রুজু হয়েছে। ২০১৫ সালে ১২, ২০১৬ সালে ৬১, ২০১৭ সালে ১১৬, ২০১৮ সালে ২৭ এবং নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ৪৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ কেবলমাত্র ১০৯টি ঘটনায় চার্জশিট দাখিল করেছে।

আহলুওয়ালিয়া বুঝিয়ে বললেন, “আদতে এই আইন কিন্তু যথাযথভাবে বলবৎ হয়নি। তাই সমগ্র রাজস্থানে আজ পর্যন্ত কেউ এই অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়নি।” তিনি একথাও জানালেন যে গ্রামাঞ্চলে পুলিশকর্মীরা অনেকক্ষেত্রেই এই আইন বিষয়ে অবগত নন। তাঁরা এই ডাইনি চিহ্নিত করার ঘটনাগুলিকে সাধারণ বিবাদের মতোই ধরে নেন।

দলিত আদিবাসী এবম ঘুমন্তু অধিকার অভিযান, রাজস্থান নামক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ভিলওয়াড়া-ভিত্তিক সামাজিক কর্মী রাকেশ শর্মা এই ব্যাপারে সম্মতি জানালেন যে, পুলিশ এইসব ঘটনাগুলির যথাযথ তদন্ত করে না। ভারতীয় দণ্ডবিধির সঠিক ধারাতে এগুলিকে নথিভুক্তও করা হয় না। শর্মার অভিযোগ, কিছু কিছু পুলিশ কর্মী অভিযুক্ত পক্ষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে মামলাটিকেই দুর্বল করে দেয়। “এই প্রথার দুটি দিক আছে – সামাজিক ও আইনগত। সামাজিক কুপ্রথার ফলে যদি কোনও মহিলা ডাইনি চিহ্নিত হন তাহলে আইনের কর্তব্য হল দোষীদের দণ্ডিত করা। দুর্ভাগ্য এটাই যে এমনটা হচ্ছে না। পুলিশ তাদের কাজ ঠিকমতো করছে না। অতএব নির্যাতিতা মহিলা সমাজে ফিরে আসতে পারছেন না এবং যারা দোষী, তাদের অপরাধও প্রমাণিত হচ্ছে না।”

ভোলির এই মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে এটি নিম্ন আদালতেই পড়ে আছে। প্যারচাঁদ জানালেন, “আমরা ৪-৫ বার ভিলওয়াড়া জেলা আদালতে গিয়েছি। প্রথমদিকে আমাদের একজন সরকারি উকিলকে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই শুনানি বন্ধ হয়ে যায় কারণ অভিযুক্তের তরফ থেকে কেউ আসছিল না।” ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ভোলির মামলার শেষবার শুনানি হয়েছিল।

PHOTO • Madhav Sharma

৬৮ বছর বয়সী প্যারচাঁদ দারিবা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে কুমারিয়া খেরা গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন, এই কাজ থেকে তিনি ২০০৬ সালে স্বেচ্ছাবসর নেন। তাঁর স্ত্রীকে ডাইনি অপবাদ দেওয়ার ঘটনার পর তিনি সামাজিক লজ্জা আর বদনামের হাত থেকে বাঁচতে এই পথ নেন। অবসর নেওয়ার সময় তাঁর মাইনে ছিল ৩৫,০০০ টাকা। এই মাইনের টাকা, তাঁদের সঞ্চয় এবং তিন ছেলের রোজগার দিয়ে তিনি এবং ভোলি গ্রামের লোকেদের সন্তুষ্ট করার জন্য একাধিকবার করতে ‘প্রায়শ্চিত্ত’ ভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন।

পরিবারটি নিজের গ্রাম ছেড়ে ভিলওয়াড়া শহরে চলে যায়। কিন্তু সমস্যা তাঁদের পিছু ছাড়ল না। ২০১৬ সালের ১৪ই অগস্ট এক প্রতিবেশী ভোলিকে শারীরিক নিগ্রহ করেন এই অভিযোগে যে ভোলি কালাযাদু করে তুকতাক করায় ফলে তাঁর হাঁটুতে ব্যথা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই প্রতিবেশী সেদিনই একটি স্থানীয় খবরের কাগজে দারিবা গ্রামে ভোলিকে ডাইনি চিহ্নিত করার খবরটি পড়েছিলেন।

“আমার গ্রামের লোকেরা ও আমাদের শহরের প্রতিবেশীরা আমাকে মার্কামারা ডাইনি বলে ধরে নিয়েছে। এর ফলে আমার বৌমা হেমলতাকেও সেদিন ওরা ডাইনি বলল। ১২ বছর ধরে একঘরে করে রাখার পর এখন ওকে সমাজে ফিরতে দিয়েছে এই শর্তে যে হেমলতা আমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখতে পারবে না,” জানালেন ভোলি। তাঁর ছেলে তথা হেমলতার স্বামী ওমপ্রকাশ এবং তাঁদের চার সন্তানের এখন ভোলির সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ নিষিদ্ধ।

৩৫ বছরের হেমলতাকে যখন ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়, তখন তাঁকে ভিলওয়াড়ায় নিজের বাপের বাড়ির সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়। “ওখানে গিয়ে দেখি আমি যেন অস্পৃশ্য! খবরের কাগজে যখন আমার শাশুড়ির কথা বের হল, তখন আমাদের পরিবারটাও হেনস্থার সম্মুখীন হয়। পাড়ার লোকে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি,” বললেন হেমলতা। ৪০ বছরের ওমপ্রকাশ একটি ট্রাকটারের শোরুমে ২০০০০ টাকা বেতনে কাজ করেন। তিনি আরও জানালেন যে ওমপ্রকাশ সর্বদা তাঁর আর মায়ের পাশে থেকেছেন। হেমলতা ১৫০০০ টাকা তাঁর মাসিক বেতনে শহরের একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

২০১৬ সালে অবস্থা এমনই দাঁড়াল যে ভোলি এবং প্যারচাঁদ ভিলওয়াড়ার জহরনগরে ৩০০০ টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিতে বাধ্য হলেন। প্যারচাঁদ তাঁর বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে একই পাড়ায় একটি বাড়ি পেয়েছিলেন, সেখানে ওমপ্রকাশ ও হেমলতা তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকেন। প্যারচাঁদ তাঁর পেনশনের টাকায় নিজের আর ভোলির খরচ চালান। এছাড়া প্যারচাঁদ ভিলওয়াড়ার কাছেই নিজের ১.৬ একর জমিতে সর্ষে ও ছোলা চাষ করেন।

“আমাদের কোনও আত্মীয়স্বজন দেখা করতে আমাদের বাড়ি আসে না। আমার বাপেরবাড়ি থেকেও কেউ আসে না,” ভোলি জানালেন। এই অপবাধের ফলস্বরূপ তাঁর অপর দুই ছেলে, ৩০ বছরের পাপ্পু এবং ২৮ বছরের সুন্দরলালের স্ত্রীরা তাঁদের স্বামীদের ছেড়ে চলে গেছেন। সুন্দরলাল এখন যোধপুরে একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। পাপ্পু বাবার সঙ্গে জমিতে চাষের কাজ করেন আর ভিলওয়াড়ায় ওমপ্রকাশের সঙ্গে থাকেন।

'People from my village as well as neighbours in the city have marked me with this stigma', says Bholi
PHOTO • Madhav Sharma

ভোলি বললেন, ‘আমার গ্রামের লোকে তো এই কলঙ্ক দিয়ে আমাকে দেগেই দিয়েছে, শহরের প্রতিবেশীরাও এই অপবাদ দিতে ছাড়েনি’

ভোলির পরিবার সর্বদা তাঁর পাশে ছিল। কিন্তু বহুক্ষেত্রেই এই ডাইনি বলে চিহ্নিত হওয়া মহিলারা পরিবারের সহায়তা পান না। একা থাকতে বাধ্য হন তাঁরা। আহলুওয়ালিয়া জানালেন, “গত দুইবছরে ডাইনি বলে চিহ্নিত সাত জন মহিলার মৃত্যু হয়েছে।” তাঁর বিশ্বাস যে আপাতদৃষ্টিতে এই মৃত্যুর ঘটনাগুলি স্বাভাবিক মনে হলেও, আদতে এর পিছনে আছে মানসিক অবসাদ, নিঃসঙ্গতা ও দারিদ্র।

হেমলতার সংযোজন, গ্রামাঞ্চলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার থেকে বেদনাদায়ক ব্যাপার আর কোনও কিছু হয় না।

ডাঃ রাজীব গুপ্ত জয়পুরের রাজস্থান বিশ্ববদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তিনি বুঝিয়ে বললেন, যে ডাইনি অপবাদ দেওয়া বা তুকতাক করা ঘিরে অনেক গল্পগাথার সৃষ্টি হয় যা থেকে ভীতি উৎপন্ন করা যায়। “এই প্রথা বিভিন্ন ধরনের আশংকা ও নিরাপত্তাহীনতার বাতাবরণ সৃষ্টি করে। এই কারণে সমাজ উৎপীড়িত মহিলার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে দ্বিধা করে। এই ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা পরের প্রজন্মতেও প্রবাহিত হয়,” বললেন তিনি।

আবহমান কাল থেকে রাজস্থানে ডাইনি প্রথার প্রচলন আছে এবং সেখানে ২০০৫ সালে এটি আইনত অপরাধ বলে স্বীকৃত হয়, অথচ এই রাজ্যের সামাজিক ন্যায় ও সশক্তিকরণ মন্ত্রী মাস্টার ভানোয়ারলাল মেঘওয়াল এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ওয়াকিবহল নন। তাঁর বক্তব্য, “কোনও মহিলার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আমি কথা বলব।”

ন্যায়বিচারের অনন্ত অপেক্ষায় আছেন ভোলি। সজল চোখে ভোলির জিজ্ঞাসা, “কেন কেবলমাত্র স্ত্রীলোককেই ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়? পুরুষদের নয় কেন?”

মূল কাহিনি হিন্দিতে লেখা। ইংরেজি অনুবাদ করেছেন শফিক আলম।

অনুবাদ: মহুয়া মহারানা

Madhav Sharma

Madhav Sharma is a freelance journalist based in Jaipur. He writes on social, environmental and health issues.

Other stories by Madhav Sharma
Translator : Mahua Maharana

Mahua Maharana spent more than two decades in a financial PSU and a decade in social development sector. Currently she is enjoying her retired life with her husband and dog. She loves to read, play solitaire games and does occasional translation work and content writing.

Other stories by Mahua Maharana