বিকেল চারটের একটু পরে গত মঙ্গলবার ২৭শে নভেম্বর, কেন্দ্রীয় দিল্লির রাজীব চৌক মেট্রো স্টেশনের বাইরে একটা জমায়েত দেখা গেল। অটোরিকশা চালক, পড়ুয়া, সেলস্-এর লোকজন, মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী এবং অন্যান্য পেশার মানুষজন আছেন সেখানে। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে, তাঁরা দেশের কৃষির হালচাল নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। ২৯ এবং ৩০শে নভেম্বর কৃষিজীবীদের কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে তৈরি হওয়া নাগরিক মঞ্চ ‘কৃষকের জন্য ছাত্রছাত্রীরা’ এবং ‘কৃষকের জন্য শিল্পীরা’ ইত্যাদির স্বেচ্ছাকর্মীদের দেখা গেল কৃষি সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য ২১ দিন ব্যাপী সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি লেখা ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং পথচলতি মানুষের মধ্যে ইস্তাহার বিলি করতে। কাছাকাছি সেন্ট্রাল পার্কে বসে থাকা কিছু কৌতুহলী মানুষ স্বেচ্ছাসেবীদের দেখে আগামী কর্মসূচি এবং কৃষি সংকট বিষয়ে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। এভাবেই বার্তালাপ শুরু হল। তাঁদেরই কারও কারও কথা এখানে উঠে এসেছে:
![a computer operator at a Bata store in Connaught Place](/media/images/04-IMG_0887-SJ-Farmers_march-voices_from_a.max-1400x1120.jpg)
২8 বছর বয়সী সোনু কৌশিক কনট প্লেসের বাটা কম্পানির দোকানে কম্পিউটার অপারেটর। তিনি হরিয়ানার ঝাজ্জার জেলাএবং ব্লকের আহরি গ্রামের মানুষ। তাঁর কথায়, “গতবছর, আমার গ্রামের কৃষকরা এক কুইন্টাল বাজরা মাত্র ১০০০ টাকায় বেচতে বাধ্য হয়েছিল। কৃষকের তো বেঁচে থাকাই দায়। আমি আমার অনেক বন্ধুবান্ধবদের এই পদযাত্রায় নিয়ে আসব।” আশপাশের মানুষদের তিনি জিজ্ঞেস করেন কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন কেন। “একজন কৃষকের কোন ছুটি নেই, দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেও উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য তারা পায় না। এমনটা হবেই বা কেন?” তিনি আশপাশের মানুষদের ভেবে দেখতে বলেন যে কেন আবার কৃষকরা দিল্লিতে পদযাত্রার কর্মসূচি নিয়েছেন। রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে না দেখে বরং এই মুহূর্তটাকে গভীর সংকট হিসেবেই বিবেচনা করতে তিনি বলছেন।
![80-year-old homemaker](/media/images/05-IMG_0897-SJ-Farmers_march-voices_from_a.max-1400x1120.jpg)
দিল্লির পিতমপুরা অঞ্চলের অশীতিপর গৃহকর্ত্রী কমলেশ জলি বলছেন, “আগে আমি কৃষকদের দুর্দশার বিষয়ে অনেক বেশি অবগত ছিলাম। কিন্তু এখন আমার স্বাস্থ্যের কারণেই আমি এইসব কিছু থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি।” তিনি আমার কাছে এই কর্মসূচির স্থান এবং তারিখ জানতে চাইলেন। “আমি যোগ দেব,” তৎক্ষণাৎ তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন।
![studying for a master’s degree in Mathematics at Delhi University](/media/images/06-IMG_0884-SJ-Farmers_march-voices_from_a.max-1400x1120.jpg)
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র, ২২ বছর বয়সী দিব্যাংশু গৌতমের আদি নিবাস উত্তরপ্রদেশের উন্নাও জেলার সফিপুর শহরে। “চাষি পরিবার থেকে আসা আমার বন্ধুদের কাছে আমি শুনেছি যে তারা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য কখনই পায় না। তাদের কাছে আরও শুনেছি যে এই উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের জন্য আবশ্যক হিমঘরগুলি বেসরকারি সংস্থাগুলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় [যেখানে খরচ খুব বেশি]। এটা বন্ধ হওয়া উচিত এবং কৃষকদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে হিমঘরের বন্দোবস্ত করা উচিত।”
![works as a clerk at a Tis Hazari district court](/media/images/03-IMG_0893-SJ-Farmers_march-voices_from_a.max-1400x1120.jpg)
কেন্দ্রীয় দিল্লির তিস হাজরী জেলা আদালতের কেরানি ২৪ বছর বয়সী আকাশ শর্মা বলছেন, “শাক-সবজির দাম বাড়লেই মানুষ কৃষকদের দোষারোপ করে থাকে। কয়েক বছর আগে, যখন পেঁয়াজের দাম খুব বেড়েছিল তখন সবাই তাদের নামে এই বলে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছিল যে তারা পেঁয়াজ মজুদ করে রেখে কৃত্রিমভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। মিথ্যা অপবাদ না দিয়ে কৃষকদের সমস্যাটা অনুধাবন করা উচিত তাদের।”
![Top left-Jayprakash Yadav, an autorickshaw driver
Top right - A Nation for Farmer volunteer explaining to an auto rickshaw driver about the March
Bottom left - Artists for Farmers volunteers spreading awareness about the March
Bottom right - Nation for Farmers near the Rajiv Chowk metro station](/media/images/02abcd-SJ-Farmers_march-voices_from_a_Delh.max-1400x1120.jpg)
উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর জেলার বারসাথী ব্লকের মহুয়ারি গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ অটোরিকশাচালক আয়প্রকাশ যাদবের প্রশ্ন, “আবার কেন কৃষকেরা পথে নেমেছে? মুম্বইয়ের লংমার্চের [নাসিক থেকে, মার্চ ২০১৮] পর তাদের দাবিদাওয়া পূরণ হয়নি?” তারপর খানিক ভেবে যোগ করলেন, “কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে, কিন্তু তাদের উৎপাদিত ফসলের উচিত মূল্য তাদের জোটে না। আমি কয়েক ঘন্টা আমার অটো বন্ধ রেখে ২৯ এবং ৩০শের মিছিলে অংশ নেব।”
![freelance photographer from Delhi](/media/images/07-IMG_0876-SJ-Farmers_march-voices_from_a.max-1400x1120.jpg)
৩০ বছর বয়সী দিল্লির ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার ভিকি রায়ের কথায়, “জনগণকে বুঝতে হবে যে শহুরে এলাকার আমরা সবাই আমাদের কৃষকদের ভর্তুকিতেই বেঁচে আছি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের [ন্যায্য] মূল্য কখনই পায় না। আমাদের উচিত এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কৃষকদের সমর্থন করা।”
বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর