চিত্রগুপ্ত তাঁর খাতা খুলে এক এক করে জেলা ধরে মেলাচ্ছিলেন মৃত প্রাথমিক শিক্ষক ও সহায়কদের নাম, এই নিয়ে পঞ্চাশ বার, ঠিক এমনটাই তিনি করেছিলেন কয়েক হপ্তা আগে নির্বাচন চলাকালীন। যন্ত্রের উপর একফোঁটাও ভরসা নেই না তাঁর। এ যে গুরুদ্বায়িত্ব! সব হিসেবনিকেশ মেলানো হলে তবেই তিনি পাঠাবেন এই তালিকা তাঁর মুখ্যসচিবের আপিস এবং আরও ওপরমহলে।

সারি সারি অশরীর দাঁড়িয়ে আছে পারিতোষিকের অপেক্ষায়, কিন্তু তাড়াহুড়ো করা চলবে না মোটেই, প্রত্যেকটি আত্মার কর্মফল মিলিয়ে দেখে তবেই চিত্রগুপ্ত ঠিক করবেন কার কোন আসন প্রাপ্য। এক একটা করে ভুল, আর গগনভেদী তার মাশুল – তাই তিনি লাশের নামতা গুনছেন তো গুনেই চলেছেন। তবে গুনতে গুনতে তাঁর খেয়াল হল যে কয়েক সেকেন্ড বাদে বাদেই একগুচ্ছ করে নতুন নাম জুড়ে যাচ্ছে অনন্ত এই তালিকায়। মুচকি হেসে চিত্রগুপ্ত ভাবেন এদেরকে যদি তাঁর পাতাললোকের আপিসের বাইরে লাইন করে দাঁড় করানো যায়, তাহলে সে লাইন এঁকেবেঁকে পৌঁছে যাবে প্রয়াগরাজের এক্কেবারে দোরগোড়ায়।

সুধন্য দেশপাণ্ডের কণ্ঠে মূল কবিতাটি শুনুন

illustration
PHOTO • Labani Jangi

দুই দুগুণে চার, রাজা তুই গদ্দার!

দুই দুগুণে চার,
চার দুগুণে আট,
আট দুগুণের ষোলকলা হাড়কাটানির মাঠ...
তার সাথে রয় দশ,
হাজার ছশোর প্রাণ,
লালচে সেলেট রাবার পেলেট হাট্টিমাটিম গান...
অঙ্ক খাতাই জানে
আঙুল নাচায় কারা,
রগরগে তার ফুলকি রাগে হাড়কাটানির ছড়া...
ভয় দুগুণের জলে
যোগ বিয়োগের শেষ,
রাম লক্ষ্মণ বুকে আছে কুনকি রাজার দেশ।
চকখড়ি তোর কালো,
শিখলি কী তুই বল,
শ্মশানঘাটে ক্যামনে হাঁটে ব্যালটশিশুর দল?

মার্চ, এপ্রিল, মে,
মুখস্থ কর মাস,
আঁশটানি এই হপ্তা গোনে জলছড়ানির লাশ...
মরশুমি তোর দুখে
নির্বাচনের নাম,
কোন গাঁয়ে তোর চামড়া মেটায় কুনকি রাজার দাম?
ক্লাসরুমে কড়িকাঠে
ঘন্টাচাচার ঢং,
রাখিস মনে দুই দুগুণে আধলা ইঁটের রঙ...
সবেধন দিদিমণি,
শেষ গোসলের শ্লোক,
চক ভেঙে খাই, ভুলিসনে ভাই, হোক পুড়ে ছাই চোখ!

আঁটকুড়ি হাওয়াকলে
গিরিশ স্যারের ক্লাস,
করিস রে বোন আঙার যাপন, সুনিতা ম্যামের লাশ।
জভন্ত্রী মিস কোথা?
রামদাদা? আব্দুল?
কবরে ফাঁপা ফরিদা আপা, কুনকি রাজার ভুল।

নিঃশ্বাসে পরিহাসে
কাফনের অভিনয়,
জিতছে রাজা, দিচ্ছে সাজা, কালসিটে কতিপয়...
দুই দুনি পেনসিলে
কাটাকুটি ইরেজার,
কুনকি রাজার ন্যাংটা আঁধার, বেচে খাবো অধিকার?
নয় দুগুণে ভয়,
গিরিশ স্যারের কথা,
ওই অশরীর সুনিতা দিদির, ক্ষমতার চিলেকোঠা...
জভন্ত্রী ম্যাম নেই?
আব্দুল? রামদাদা?
হয়েছে রে খুন ফরিদা খাতুন, লাল সেলেটের ধাঁধা।

অ আ ক খ কবেকার
সেনোটাফে কথা কয়,
কান্নাকাটির ঘুমপাড়ানির নির্জলা পরিচয়...
এ বি সি ডি ফাঁকা মাঠ,
উনুনের ক্লাসরুম,
তেলচিটে তাই হলদে শিখায় রাত জাগে মাশরুম...
দেশ দেশ দেশ কেন?
দশগুণে ভগবান?
ঠুনকো মাটির ওই যে ফকির, হাড়গিলে পালোয়ান!
প্রশ্ন সে লাখে লাখ
অসুখের অবসর,
বুঝবি সেদিন কোন বেদুইন জ্বেলেছিল কাবাঘর।

ভয় দুগুণে রাগ
পুড়ছে গিরিশ স্যার,
রখ্ রখ্ ইয়াদ সুনিতা মিস্-কি লহু সে লিপটি প্যার।
জভন্ত্রী দিদি কঁহা?
রামদাদা? আব্দুল?
ফরিদা মায়ের উড়কি ছাইয়ের লাশকাটি ইস্কুল।

অডিও: সুধন্য দেশপাণ্ডে জন নাট্য মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ও পরিচালক, একই সঙ্গে তিনি লেফ্টওয়ার্ড বুকস্-এর একজন সম্পাদকও।


অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Pratishtha Pandya

কবি এবং অনুবাদক প্রতিষ্ঠা পান্ডিয়া গুজরাতি ও ইংরেজি ভাষায় লেখালেখি করেন। বর্তমানে তিনি লেখক এবং অনুবাদক হিসেবে পারি-র সঙ্গে যুক্ত।

Other stories by Pratishtha Pandya
Painting : Labani Jangi

২০২০ সালের পারি ফেলোশিপ প্রাপক স্ব-শিক্ষিত চিত্রশিল্পী লাবনী জঙ্গীর নিবাস পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায়। তিনি বর্তমানে কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে বাঙালি শ্রমিকদের পরিযান বিষয়ে গবেষণা করছেন।

Other stories by Labani Jangi
Translator : Joshua Bodhinetra

জশুয়া বোধিনেত্র পিপলস আর্কাইভ অফ রুরাল ইন্ডিয়ার (পারি) ভারতীয় ভাষাবিভাগ পারিভাষার কন্টেন্ট ম্যানেজার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে এমফিল উত্তীর্ণ জশুয়া একজন বহুভাষিক কবি তথা অনুবাদক, শিল্প সমালোচক এবং সমাজকর্মী।

Other stories by Joshua Bodhinetra