সকালে স্বামী কাজে বেরোবার আগে ২৪ বছর বয়সী নেহা তোমার (আসল নাম নয়) তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন। এটা অবশ্য তিনি রোজ করেন না — করেন কেবল কোনও বিশেষ কাজে বাইরে বেরোতে হলে। “এই ধরুন আমার মা-বাবার বাড়ি যাওয়ার আগে করি,” ভেতুয়া ব্লকের সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিঁড়িতে বসে জানালেন নেহা।
নেহা, আমেথি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেছেন নিজের শাশুড়ির সঙ্গে — নেহার চতুর্থ সন্তান - তিন মাসের শিশুপুত্রটি শাশুড়ির কোলে। এখনও তার নামকরণ হয়নি। উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর জেলার ভেতুয়া গ্রাম থেকে তাঁরা এসেছেন। নেহা এবং তাঁর স্বামী আকাশ (নাম পরিবর্তিত) অবশেষে ঠিক করেছেন যে তাঁরা আর সন্তান আনবেন না, আকাশ পেশায় খেতমজুর। “এইটুকু মত তো আমরা দিতেই পারি,” কথাকটি বেশ জোরের সঙ্গে বলে নেহা বোঝাতে চাইলেন যে একের পর এক চারটি সন্তান হওয়ার পর তাঁদের এ বিষয়ে মত প্রকাশের অধিকার আছে। পাঁচ ও চার বছর বয়সী দুটি মেয়ের পর দেড় বছর বয়সী একটি ছেলে, এবং তারপর এই শিশুটি। “এটিও এঁর জন্যই হয়েছে”, শিশুকোলে বসে থাকা ঠাকুমাকে দেখিয়ে বললেন নেহা।
নেহার ছয় বছরের বিবাহিত জীবনে জন্ম নিয়ন্ত্রণ অথবা সন্তান জন্মানোর মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যবধান রাখা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। “বিয়ের পর স্বামী আর তার পরিবারের কথা মেনে চলতে হবে — এছাড়া আর কোনও কথা আমাকে কেউ বলে দেয়নি,” বললেন নেহা। প্রথম দুই সন্তানের পর তিনি বুঝতে পারেন যে মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পরের দুই সপ্তাহ (ডিম্বস্ফোটনের সময়ে) সহবাস না করলে সন্তান সম্ভবনা কমে। “আমি পেটব্যথার ভান করতাম বা ঘরের কাজ শেষ করতে দেরি করতাম কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আমার শাশুড়ি বুঝে ফেললেন আমি কী করছি,” নেহা বললেন।
মাঝে মাঝে সহবাস থেকে বিরত থাকা, ‘নিরাপদ সময়’ নির্বাচন করে সহবাসের সময় নির্বাচন করার মতো জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রথাগত পদ্ধতি, যা নেহা করেছেন, তা ভারতবর্ষের অন্যান্য স্থানের তুলনায় উত্তর প্রদেশে বেশি পালিত হয়। জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা থেকে তথ্য নিয়ে প্রজনন-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য পত্রিকা -এ ২০১৯ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ জানাচ্ছে যে যেখানে সারা দেশে প্রথাগত পদ্ধতি অবলম্বন করেন ৯ শতাংশ জন পক্ষান্তরে উত্তর প্রদেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওই প্রথা অবল্মবন করেন ২২ শতাংশ জন। বস্তুত, উত্তর প্রদেশে মাত্র ৫০ শতাংশ বিবাহিত মহিলা, পরিবার পরিকল্পনার জন্য কনডোম, পিল, অথবা বন্ধ্যাকরণের মতো আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করেন; এই সব পদ্ধতি গ্রহণের জাতীয় গড় ৭২ শতাংশ বলে জানাচ্ছে প্রবন্ধটি।
একটি দুর্ঘটনার পর আকাশের পা ভেঙে যাওয়ায় যখন তিনি উপার্জন করার ক্ষমতা হারান তখন নেহা সাহসে ভর করে তাঁর কাছে ‘অস্ত্রোপচার’ করাবার কথা তোলেন। টিউবাল লাইগেসনের মাধ্যমে মেয়েদের ফালোপিয়ান টিউব-এর মুখ বন্ধ করে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতিকে ওই নামেই উল্লেখ করা হয়। শাশুড়ি অমত সত্ত্বেও এসেছেন নেহার সঙ্গে, তিনি তখনও আশা ছাড়েননি। “বাচ্চা আর ভগবানের মধ্যে কারও আসা উচিত না,” তিনি আপন মনে বিড়বিড় করছিলেন কিংবা হয়তো স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপস্থিত নেহা সহ আশপাশের বান্দোইয়া, নৌগিরওয়া, সানাহা ও টিক্রি গ্রাম থেকে আসা আরও ২২ জনকেই হয়তো শোনাচ্ছিলেন।
নভেম্বর মাসের একটি ফুরফুরে দিন — বেলা তখন সবে ১০টা। বেশিরভাগ মহিলাই সকাল ৯টার মধ্যেই এসে উপস্থিত হয়েছেন। বেলার দিকে আরও অনেকে আসবেন। “মহিলা নাসবন্দি দিবসে, বিশেষত নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ৩০-৪০ জন আসেন। তাঁরা এই মাস গুলিতেই অস্ত্রোপচার করাতে পছন্দ করেন। এই সময়ে ঠান্ডা থাকে, সেলাই শুকোয় দ্রুত, সংক্রমণের সম্ভবনাও কম থাকে,” জানালেন ডঃ অভিমন্যু ভর্মা, ভেতুয়া সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক-আধিকর্তা।
ছত্তিশগড়ের বিলাসপুর জেলার তাখতপুর ব্লকে ২০১৪ সালের ৮ই নভেম্বর দুঃখজনক ঘটনার পর লক্ষ্য-নির্দিষ্ট ‘ক্যাম্প’ বসানো ঘিরে জনরোষ আছড়ে পড়ে। ওই দিন ক্যাম্পে ১৩ জন মহিলার মৃত্যু হয় ও আরও অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়
ছত্তিশগড়ের বিলাসপুর জেলার তাখতপুর ব্লকে ২০১৪ সালের ৮ই নভেম্বর দুঃখজনক ঘটনার পর লক্ষ্য-নির্দিষ্ট ‘ক্যাম্প’ বসানো ঘিরে জনরোষ আছড়ে পড়ে। ওই দিন ক্যাম্পে ১৩ জন মহিলার মৃত্যু হয় ও আরও অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। জেলা হাসপাতালের এক ডাক্তার এসে মাত্র ৯০ মিনিটে ৮৩টি টিউবেকটমি করেন একটি অপরিষ্কৃত পরিত্যক্ত ঘরে। ওই ডাক্তার একটিই ল্যাপ্রোস্কোপ ব্যবহার করেছিলেন সবার জন্য এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে কোনও সাবধানতাও গ্রহণ করেননি।
মহিলাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দিকে সম্পূর্ণ উদাসীন থেকে এমন গণহারে অস্ত্রোপচার আগেও হয়েছে। ৭ই জানুয়ারি ২০১২ সালে, টর্চের আলোয় একটি স্কুল-বাড়িতে একই রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, বিহারের আরারিয়া জেলার কুর্সাকান্টা ব্লকের কপরফোরা জনপদের ৫৩ জন মহিলার বন্ধ্যাত্বকরণ অপারেশন করা হয়।
২০১২ সালের আরারিয়ার ঘটনার পর স্বাস্থ্য পরিষেবার অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী, দেবিকা বিশ্বাস একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার পর সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলিকে আদেশ দেয় এ ধরনের বন্ধ্যাত্বকরণ শিবির তিন বছরের মধ্যে নিষিদ্ধ করে তার বদলে পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার অধীনে প্রাপ্য স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি যাতে অধিক সংখ্যক মানুষ পান সেদিকে নজর দিয়ে সাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করতে। উচ্চতম ন্যায়ালয়ে শুনানি চলাকালীন উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র সহ অন্যান্য রাজ্যের বন্ধ্যাত্বকরণ শিবিরগুলির অস্বাস্থ্যকর অবস্থার কথাও উঠে আসে।
সুতরাং বন্ধ্যাত্বকরণ ক্যাম্পের জায়গায় এলো ‘নির্দিষ্ট দিনের পরিষেবা’ — অর্থাৎ নারী পুরুষ, উভয়েই চাইলে সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসতে পারেন নাসবন্দি বন্ধ্যাত্বকরণ/নির্বীজকরণের জন্য। আশা ছিল এর ফলে ব্যবস্থাটি সুনিয়ন্ত্রিত হবে। যদিও এটি সাধারণ বন্ধ্যাত্বকরণ/নির্বীজকরণ দিবস, পুরুষরা ভাসেক্টমি করাতে কমই আসেন ফলে দিনটি মহিলা নাসবন্দি দিবস হিসাবেই এখন পরিচিত।
আদতে দেখা যাচ্ছে কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি মূলত মহিলাদের বন্ধ্যাত্বকরণের উপরেই টিকে আছে।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ২০১৭ সালের একাদশ সাধারণ নিরীক্ষা মিশনের (কমন রিভিউ মিশন) রিপোর্ট অনুসারে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য যত অস্ত্রোপচার হয় তার ৯৩.১ শতাংশই হয় মেয়েদের উপর। ২০১৬-১৭তেও ভারতবর্ষে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য বরাদ্দ অর্থের ৮৫ শতাংশ ব্যয় করা হয় মেয়েদের বন্ধ্যাত্বকরণের জন্য। ২০১৯-এর প্রজনন-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট অনুসারে (১৯৮৯-৯৯ সালের তুলনায়) উত্তরপ্রদেশে যদিও এই প্রক্রিয়ার প্রচলন কমেছে, উচ্চ জন্মহার সম্বলিত জেলাগুলিতে এখনও জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ ও কম জন্মহার সম্বলিত জেলাগুলিতে ৪১ শতাংশ এই পথই অবলম্বন করেন।
সুলতানপুর জেলায় বন্ধ্যাত্বকরণের পুরো দায়িত্বটাই দুতিন জন ডাক্তারের উপর ন্যস্ত থাকে। জেলা বা তেহসিল স্তরের পরিবার পরিকল্পনা সমন্বয়কারীর প্রস্তুত করা তালিকা অনুসারে তাঁরা ১২-১৫টি ব্লকের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে কাজ করেন। প্রতিটি সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র মাসে একটি করে নাসবন্দি ক্যাম্প করতে পারে যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়েই বন্ধ্যাত্বকরণ বা নির্বীজকরণের জন্য যেতে পারেন।
ভেতুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাসবন্দির দিনই বোঝা গিয়েছিল যে মেয়েদের নাসবন্দির জন্য যে কয় দিন বরাদ্দ থাকে তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। একটি সরকারি স্বাস্থ্য মেলায় আটকে পড়ার কারণে ডাক্তার যখন বিকেল ৪টের সময় এলেন তখন নাসবন্দি করাতে আসা মহিলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩০-এ। এঁদের মধ্যে দুজনকে প্রাথমিক পরীক্ষার পর অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন বোঝা যাওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়।
দূরে এক দিকে অস্ত্রোপচার কক্ষের মতো একটি ঘর সারা দুপুর তৈরি করে রাখা ছিল। জানালায় লাগানো একটা পাতলা পর্দার মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো ঘরে ছড়িয়ে পড়লেও বেশ শীত করছিল। অস্ত্রোপচারের জন্য তিনটি টেবিল রাখা ছিল। সেগুলির একটি দিক ইট দিয়ে উঁচু করা ছিল যাতে ডাক্তাররা ঠিকমতো নাগাল পান।
“ডাক্তারি পড়তে গিয়ে আমরা ট্রেন্ডেলেনবুর্গ সুবিধাযুক্ত টেবিলের কথা পড়েছি। সেগুলি হেলানো যায়। এখানে পাঁচ বছরের মধ্যে আমি এমন জিনিস দেখিনি; তাই আমরা আমাদের মতো করে এই ব্যবস্থা করে নিই,” ইটগুলির দিকে ইঙ্গিত করে জানালেন ডঃ রাহুল গোস্বামী (নাম পরিবর্তিত)। তিনি আরও বললেন, “অস্ত্রোপচারের সময়ে ভুল দেহভঙ্গির কারণে পরে সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
নেহা ছিলেন অস্ত্রোপচারের জন্য ঘরে আনা প্রথম তিন জনের একজন। তাঁর শাশুড়িকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। তিন জনের কেউই কখনও আধুনিক কোনও জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেননি। নেহা অন্তত সেগুলির কথা জানতেন যদিও তা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তাঁর অস্বস্তি ছিল। “আমি জানি ওগুলির বিষয়ে কিন্তু বড়ি খেলে গা গুলোয় আর কপার টি শুনলেই ভয় করে। ওটা তো একটা লম্বা রড,” ইন্ট্রাউটেরিন যন্ত্রটি (আই ইউ ডি) সম্বন্ধে এভাবেই তিনি বললেন।
সরকারি স্বীকৃতি প্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মী (আশা), দীপলতা যাদব যিনি অন্য দুই মহিলাকে নিয়ে এসেছেন, ওই কথা শুনে মৃদু হেসে বললেন, “কপার ইন্ট্রাউটেরিন সম্বন্ধে এভাবেই এঁরা সাধারণত বলেন। আসলে যন্ত্রটি খুবই ছোট এবং ইংরাজি টি আকৃতির কিন্তু মোড়কটি এতো বড়ো যে এঁরা ভাবেন পুরোটাই বুঝি ঢোকানো হবে,” বললেন যাদব। তাঁর কাজ ওই দিনের মতো শেষ, এবার তিনি যে মহিলাদের এনেছেন তাঁদের জনপ্রতি ২০০ টাকা করে উৎসাহ ভাতা পাবেন। কিন্তু যাদব আরও খানিকক্ষণ থেকে মহিলাদের বিছানায় উঠতে সাহায্য করেন আর তারপর অ্যানেস্থেসিয়া কাজ করতে শুরু করা অবধি অপেক্ষা করেন।
অস্ত্রোপচার টেবিলে শোয়ানোর পর তাঁদের সবাইকে এক রকম দেখতে লাগে। ডাক্তার টেবিলে এসে পৌছালে ভয় ও ক্লান্তিতে তাঁদের মাথা হেলে পড়ে। তাঁদের সকলেই এইরকম একটা ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থায় এই অপারেশন প্রক্রিয়া এক ঘরে একসঙ্গে থাকতে বাধ্য হন। কিন্তু এইসব ভাবার তখন সময় থাকে না। অস্ত্রোপচার চলাকালীন দরজা বহুবার খোলা বন্ধ হয় ফলে গোপনীয়তা রক্ষার কোনও সুযোগই তাঁদের নেই।
ঘরের মধ্যে শোনা যায় তাঁদের নিশ্বাস-প্রশ্বাস আর যন্ত্রপাতির ঠুংঠাং শব্দ। একজন সহায়ক তাঁদের শাড়ি আর শারীরিক অবস্থান এমনভাবে ঠিক করে দিলেন যাতে ডাক্তার সহজে অস্ত্রোপচার করতে পারেন।
ছেদন, তাকে বন্ধ করা এবং ল্যাপ্রস্কোপি যন্ত্রের সাহায্য ফালোপেন টিউবের উপর কাজ করা — বন্ধ্যাত্বকরণের এই তিনটি স্তরেই পর্যাপ্ত আলোর দরকার হয়,” বললেন ডঃ গোস্বামী। দুপুরবেলার চড়া সূর্যালোক আবছা হয়ে আসছিল অথচ কেউ ঘরে রাখা ইমারজেন্সি আলো জ্বালিয়ে দিল না।
পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে একটি অপারেশন শেষ করে ডাক্তার পরের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন। ওই মহিলাকে টেবিল থেকে নামিয়ে পরের দলটিকে প্রস্তুত করার জন্য ইঙ্গিত হিসাবে সহায়ক ও আশা কর্মীকে তিনি বললেন, “হয়ে গেছে।”
পাশের ঘরে তোশক পাতা আছে। ঘরের হলুদ রঙের স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়ালে শ্যাওলার দাগ। শৌচাগার থেকে সোঁদা গন্ধ আসছিল। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর নেহাকে নিয়ে আসা হল সেই ঘরে শুয়ে বিশ্রাম করার জন্য, তারপর তাঁকে ও অন্য তিন মহিলাকে অ্যাম্বুলেন্স করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার সময়েও নেহা ঘোরের মধ্যে ছিলেন কারণ সব কিছু এত তাড়াহুড়োয় হল, তার উপর আবার তাঁকে পুরোপুরি অজ্ঞানও করা হয়নি।
শাশুড়ির উপর ভর দিয়ে যখন তিনি বাড়ি পৌঁছালেন তখন আকাশ তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। “পুরুষ মানুষেরা আশা করে তাদের মা, স্ত্রী, বাচ্চাকাচ্চা আর কুকুর তাদের জন্য অপেক্ষা করবে, উল্টোটা নয়,” তাঁর শাশুড়ি বললেন। বলেই বাড়ির একটি ছোট্ট কোণায় যেখানে রান্নাঘর সেখানে চলে গেলেন নেহার জন্য চা বানাতে।
“ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরও ব্যথা করছিল,” ক্ষতস্থান ঢেকে রাখার জন্য পেটের যেখানে একটুকরো চৌকো ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল সেইখানে হাত রেখে বললেন তিনি।
দিন দুয়েক পর নেহা উবু হয়ে বসে রান্নাঘরের কাজ শুরু করে দিলেন। ব্যান্ডেজটা তখনও ছিল, মুখে স্পষ্ট অস্বস্তির চিহ্ন, সেলাই তখনও শুকোয়নি। নেহা বললেন, “যাই হোক ঝামেলা চুকল।”
প্রচ্ছদ চিত্র: নিউ-মিডিয়া শিল্পী প্রিয়াঙ্কা বোরার নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে ভাব এবং অভিব্যক্তিকে নতুন রূপে আবিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত আছেন। তিনি শেখা তথা খেলার জন্য নতুন নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করছেন ; ইন্টারেক্টিভ মিডিয়ায় তাঁর সমান বিচরণ এবং সেই সঙ্গে কলম আর কাগজের চিরাচরিত মাধ্যমেও তিনি একই রকম দক্ষ।
পারি এবং কাউন্টার মিডিয়া ট্রাস্টের গ্রামীণ ভারতের কিশোরী এবং তরুণীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দেশব্যাপী রিপোর্টিং প্রকল্পটি পপুলেশন ফাউন্ডেশন সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য প্রান্তবাসী এই মেয়েদের এবং সাধারণ মানুষের স্বর এবং যাপিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই অত্যন্ত জরুরি বিষয়টিকে ঘিরে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা।
নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে [email protected] – এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন [email protected] – এই আইডিতে।
বাংলা অনুবাদ : চিলকা