PHOTO • Sonia Filinto

উত্তর গোয়ার পের্নেম তালুকে অবস্থিত হারমালের ইনাসিনা ফার্নানদেজ (৭২) ও লুই ফার্নানদেজ (৭৪) উভয়েই পেশাদার ফেনি প্রস্তুতকারক। পারিবারিক এই ব্যবসাটি আজ তিন প্রজন্ম ধরে চালাচ্ছেন তাঁরা

PHOTO • Sonia Filinto

ভোর হতে না হতেই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বনভূমির তিনটি চত্বর থেকে কাজুর ফল সংগ্রহ করা শুরু করেন তাঁরা, এর জন্য বাৎসরিক ৪০,০০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। ইনাসিনার কথায়: 'গাছ থেকে কাজু পাড়ি না। এ ফলের রস গায়ে লাগলে চুলকায়, পড়ে থাকা কাজু থেকে এমনটা হয় না, ফেনি বানাতে তাই ওগুলোই কাজে লাগে।' ফার্নানদেজ দম্পতির পাঁচটি ছেলে, তবে পারিবারিক মদভাটিতে কাজ করেন একা বোস্তিয়াও। বেলা একটু গড়ালে মা-বাবার সংগ্রহ করা ফল বাড়িতে বয়ে আনেন তিনি

PHOTO • Sonia Filinto

বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার এই খড়ে-ছাওয়া কুঁড়েঘরটিই তাঁদের ফেনি প্রস্তুতির প্রাণকেন্দ্র। প্রতিবছর ডিসেম্বর নাগাদ স্বহস্তে এটি নির্মাণ করে ফার্নানদেজ পরিবার, আর বর্ষার ঠিক আগেই, অর্থাৎ মে মাসের শেষের দিকে আবারও ভেঙে দেন। পাতনক্রিয়ার যাবতীয় সাজ-সরঞ্জাম তাঁরা নিজেরাই সাজিয়ে নেন, বর্ষা নামলে এসব ছেড়ে যান বটে, তবে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে যেতে ভোলেন না

PHOTO • Sonia Filinto

ইনাসিনা ও লুইয়ের কাছে এই কুঁড়েটি তাঁদের দ্বিতীয় গেরস্থালি। রোজরোজ ফল সংগ্রহ করা আর সারারাত ধরে কাঠের আগুন জ্বেলে রাখা – এসকল কাজে সুবিধা হয় বলে প্রতিবছর মাস চারেক এখানেই কাটান তাঁরা। 'জঙ্গলে অজস্র জন্তু-জানোয়ার আছে, রাত হলে প্রায়শই ওদের ডাক শুনতে পাই, তবে ওসব গা-সওয়া হয়ে গেছে,' জানালেন ইনাসিনা

PHOTO • Sonia Filinto

পরম্পরাগতভাবে ফার্নানদেজ পরিবার মৎস্যজীবীও বটে। বর্ষা ফুরিয়ে যাওয়া থেকে জানুয়ারি অবধি নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বোস্তিয়াও। তারপর জানুয়ারি থেকে মে অবধি ভাড়ায় খাটে মজদুরের দল। ইনাসিনা ও লুই যখন ব্যস্ত থাকেন কাজুর ফসল নিয়ে, প্রতিদিনই টাটকা মাছ ধরে দিয়ে যান সেই মজদুরের দল। যেসব দিন প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ে, সেদিনগুলোয় স্থানীয় মেছুয়াপট্টিতে বেচতে যান ইনাসিনা। ডানদিকে: বেলা করে কাছেই একটা ঝর্ণায় গিয়ে স্নান-টান সেরে সারাদিনের জলটুকু প্লাস্টিকের বোতল আর ইস্পাতের ডাব্বায় ভরে আনেন ফার্নানদেজ দম্পতি

PHOTO • Sonia Filinto

সকালের সংগ্রহ: সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কাজু যে মরসুমে ফলে, ফল কুড়োতে তখন দিনে বার দুই জঙ্গলে যান ইনাসিনা ও লুই। 'অনেক আত্মীয়স্বজন আসে দেখা করতে, বন্ধুরাও এসে হাজির হয়, কিন্তু ফসলি মরসুম এলে কারও সঙ্গে আড্ডা মারার সময় থাকে না,' বলে উঠলেন ইনাসিনা

PHOTO • Sonia Filinto

কাজুবাদামের স্থানীয় চাহিদা যেমন ব্যাপক, ততটাই লাভজনক রপ্তানির কারবারেও। গোয়ার পাইকারি ব্যবসাদারের কাছে কিলো-পিছু ১১০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয় এই বাদাম। তবে মরসুমের শুরু আর শেষের দিকেই সবচেয়ে চড়া দাম মেলে, যখন এ ফসলের সরবরাহ অপেক্ষাকৃত কম থাকে আর কি। জমির মালিককে সারাটা ঋতু জুড়ে কুড়িয়ে আনা বাদামের দাম ধরে দেন ফার্নানদেজ দম্পতি – তাই মরসুমের শেষে যখন দামটা সবচাইতে চড়া হয়, সারাটা ঋতু জুড়ে সংগৃহীত বাদাম সেই দামেই বিক্রি করেন তিনি
মোট মুনাফার ১০-১৫% শতাংশ পায় ফার্নানদেজ পরিবার। লুইয়ের কথায়: 'ঈশ্বরের দয়া আর আমার প্রয়াত মায়ের আশীর্বাদে দিব্যি খেয়েপরে বেঁচেবর্তে আছি।' ২০১৬ সালে তাঁরা ২০০ কিলো কাজুবাদাম কুড়িয়ে এনেছিলেন। এ মরসুমে কতটা সংগ্রহ হয়েছে, সেটা এখনও পর্যন্ত হিসেব করে উঠতে পারেননি এঁরা। কয়েকদিন বাদেই বর্ষা নামবে, তাই আপাতত কামকাজ গুছিয়ে নিতেই ব্যস্ত ফার্নানদেজ পরিবার। তবে এবছর ব্যাপক হারে কাজু ফলেছে, তাই মোট পরিমাণ আগের চাইতে বেশিই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে

PHOTO • Sonia Filinto

ফলের থেকে রস বার করা দিয়েই শুরু হয় ফেনি বানানোর কাজ। প্রথাগতভাবে মাড়ানোর কাজটি এখানে পা দিয়েই করা হয়। বছর তিনেক আগে ফার্নানদেজ পরিবার একটি মাড়াই-যন্ত্র বসিয়েছিল বটে, তবে মরসুমের গোড়াতে যখন অল্প বই ফল মেলে না, তখন পা দিয়েই মাড়ানো পছন্দ করেন বোস্তিয়াও

PHOTO • Sonia Filinto

দ্বিতীয়বার মাড়াই করার পর 'নীরো' নামক একধরনের স্বাদু পানীয়র সৃষ্টি হয়। এটি ১২ ঘণ্টার বেশি রাখা যায় না, হয় বাড়ির লোকজন খেয়ে ফেলে কিংবা ইয়ার-দোস্তদের মাঝে বিলিয়ে দেয়

PHOTO • Sonia Filinto

প্রথম মাড়াইয়ের রসটা প্লাস্টিকের গামলায় ভরে ৪৮ ঘণ্টা ফেলে রাখা হয় যাতে প্রাকৃতিক নিয়মে সেটি পচতে পারে। এরপর সেটি পেল্লায় চেহারার মাটির পাত্রে (আজকাল অবশ্য তামার পাত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে) ভরে ধিকিধিকি আঁচে রাখা হয় সারারাত। ডানদিকে: তাপটা যাতে বেরোতে না পারে, সেজন্য শক্ত করে ঢাকনা এঁটে রাখা হয়, তারজন্য ভারি একখান পাথরের চাঙড়ে কাপড় জড়িয়ে কাদামাটি লেপে দেওয়া হয়

PHOTO • Sonia Filinto

পাতন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট বাষ্প একটা প্যাঁচানো নল বেয়ে জমা হয় ভূগর্ভস্থ একখান বিশাল পাত্রে। সে বাষ্প যাতে তরলে পরিণত হয়, তার জন্য প্যাঁচানো নলটিকে চুবিয়ে রাখা হয় ঠান্ডা জলে। একপ্রস্থ পাতনের ফলে তৈরি হয় উরাক নামক পানীয়, এতে অ্যালকোহলের মাত্রা অল্প। এটি ৪ মাস অবধি তাজা রাখা যায়, লিটার-পিছু এর দাম ১০০ টাকা এবং স্থানীয় মাতালদের মধ্যে এটির চাহিদা মারাত্মক। এরপর দ্বিতীয় একটি পাত্রে রাখা প্রথম মাড়াইয়ের রসের সঙ্গে মেশানো হয় উরাক। আবারও সময় কাটে ধিকিধিকি আগুনের আঁচে, শেষে অন্য একটি প্লাস্টিকের পাত্রে এসে জমা হয় ফেনি
ডানদিকে: এইবছর কাজুফলের উৎপাদন ছিল বেশ ভাল। পরিবারের আন্দাজ, ১,০০০ লিটার ফেনি তো মিলবেই। এর দাম ১,২০০ টাকা প্রতি কৌসো (পরিমামের একটি প্রাচীন একক, এক কৌসোতে ৭৫০ মিলিলিটার মাপের ২০টি বোতল ধরে)। তবে ফার্নানদেজ পরিবার কিন্তু এই বস্তুটি দোকান, শুঁড়িখানা কিংবা বৃহত্তর পাতনকারীদের বেচেন না। গোয়ানিজ পরিবারবর্গের মধ্যে বাঁধাধরা কিছু খদ্দের আছে ইনাসিনা, লুই ও বোস্তিয়াওয়ের, যাঁরা বর্ষা নামার আগেই সারা বছরের মতন ফেনি মজুত করে রাখতে ভালোবাসেন

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Translator : Joshua Bodhinetra

Joshua Bodhinetra has an MPhil in Comparative Literature from Jadavpur University, Kolkata. He is a translator for PARI, and a poet, art-writer, art-critic and social activist.

Other stories by Joshua Bodhinetra